Ajker Patrika

লেখাটি আর পাওয়া হলো না

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৩৬
লেখাটি আর পাওয়া হলো না

জালাল ভাইয়ের (জালাল আহমেদ চৌধুরী) সঙ্গে সর্বশেষ কথা গত ২৭ আগস্ট। ঢাকা প্রথম বিভাগের ক্রিকেটার শহীদ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম। ব্যক্তিগতভাবে শহীদকে জালাল ভাই চিনতেন।

ফোনের এ প্রান্তে স্পষ্ট বুঝতে পারছি, জালাল ভাই কাশির দমকে কথা বলতে পারছেন না ঠিকঠাক! তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে উদ্বেগভরা কণ্ঠে জানতে চাইলাম, ‘আপনার শরীরটা ভালো আছে?’ হাল ছেড়ে দেওয়া কণ্ঠে বললেন, ‘আর শরীর...!’ শরীরের ওপর জালাল ভাই নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে হারাচ্ছেন, বুঝতে পারছিলাম কয়েক মাস ধরেই। গত জুনের মাঝামাঝি তাঁকে ফোন করেছিলাম একটা লেখা চেয়ে। আজকের পত্রিকা বাজারে আসছে ২৭ জুন, একটা লেখা দিতেই হবে—বলতেই খুব অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন জালাল ভাই। বললেন, ‘শরীরটা ভালো যাচ্ছে না! একটু সুস্থ হয়ে নিই, দেব।’

জালাল আহমেদ চৌধুরী, আমাদের প্রিয় জালাল ভাই—দেশের খেলার লেখকদের কাছে এক সম্মানীয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, যিনি একইভাবে সম্মানিত দেশের ক্রিকেটাঙ্গনেও। ষাট ও সত্তরের দশকের খেলোয়াড়িজীবন কেটেছে ওপেনিং ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার হিসেবে। পরে কোচ আর ক্রীড়ালেখক—দুটি পরিচয় সমান্তরালে এগিয়ে নিয়েছেন। কোচ হিসেবে কাজ করেছেন জাতীয় ও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের আবাহনী, মোহামেডান,  ভিক্টোরিয়া, সাধারণ বীমা, আজাদ স্পোর্টিং, পিডব্লিউডি, ধানমন্ডি ক্লাব ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে। ‘কাজ করেছেন’ বলা হলেও নিরহংকার, সদালাপী, মিশুক মানুষটির অর্থবিত্তের প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ ছিল না। সাধারণ এক জীবনযাপনে অভ্যস্ত জালাল ভাই তাঁর বিপুল ক্রিকেট প্রজ্ঞায় খেলোয়াড়দের যেমন শিখিয়েছেন, একইভাবে মুগ্ধ করা সব লেখায় শিখিয়েছেন খেলার লেখকদের। শেষ দিকে তাঁর একাকিত্ব জীবনে ফেসবুক ছিল বড় সহায়। মনের ভেতরে গুঞ্জরিত সব ভাবনা, কথা নান্দনিকভাবে তুলে ধরেছেন ‘নীল বই’য়ের পাতায় পাতায়। আর তাতে মিলেছে নতুন নতুন কত শব্দ; তা দিয়ে শিরোনামও হয়েছে সংবাদপত্রে। কখনো কখনো ক্রিকেট বোর্ডের অসংগতি, অনিয়ম দেখে চুপ থাকতে পারেননি। শৈল্পিক লেখনীতে উচ্চকণ্ঠে জানিয়েছেন কড়া প্রতিবাদ।

সেই জালাল ভাইয়ের একটা লেখা দিয়েই যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিল আজকের পত্রিকার খেলা বিভাগ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে লেখাটা আর পাওয়া হয়নি। লেখাটা না দিতে পেরে নিজের ভেতরও হয়তো অস্বস্তি কাজ করছিল তাঁর। এটি নিয়ে ফেসবুকে এক সন্ধ্যায় লিখলেন, ‘রানা, দিনের বেলা অভিনন্দন জানাইনি। তোমার কাছে খানিকটা লজ্জা জমা আছে, সে লজ্জা ঢাকতে সন্ধ্যার আড়ালে অভিনন্দিত করছি। কামনা করি তোমার যোগ্য হাতে আজকের পত্রিকার নিত্যদিনের খেলার পাতা গুণে মানে আমাদের দৈনিক পত্রিকার জগৎকে প্রতিযোগিতা কাতর করে তুলুক। অচিরেই যুক্ত হবার বাসনা রাখি।’

বাসনা থাকলেও ‘যুক্ত’ আর হতে পারলেন না জালাল ভাই। গতকাল সূর্য যখন মধ্যগগনে, তখন নিভেছে তাঁর জীবনের আলোটা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত