Ajker Patrika

আত্মগোপন করতেই ঢাকায় এসেছিলেন শাহানশাহ: র‍্যাব

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৫
আত্মগোপন করতেই ঢাকায় এসেছিলেন শাহানশাহ: র‍্যাব

মামলার পর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার বরখাস্ত মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহ ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সেই সঙ্গে তিনি নিজের দলের বিভিন্ন সিনিয়র নেতাকর্মীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং সহযোগিতা চান। কিন্তু তাঁকে কেউ সহযোগিতা করেননি। এমনকি কোনো জায়গা থেকেই সাপোর্ট পাননি তিনি। পরে আত্মগোপন করতেই ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তারের পর উত্তরার হোটেল ডি মেরিডিয়ানের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন। 

এর আগে সকালে রাজধানীর উত্তরার ওই হোটেল থেকে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল এবং র‍্যাব-১-এর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকালে তাঁর কাছ থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা এবং মাদক সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। 

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, মামলার পরই র‍্যাবের গোয়েন্দারা তাঁকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে, পৌর মেয়র উত্তরার এই হোটেলে অবস্থান করছেন। পরে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকালে তাঁর কাছ থেকে যে মাদক পাওয়া গেছে, তা ছিল তার নিজের ব্যক্তিগত সেবনের জন্য। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, শাহানশাহর মধ্যে আত্মগোপন করার অপপ্রয়াস ছিল। কোথাও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে মূলত ঢাকায় এসেছিলেন আত্মগোপন করার উদ্দেশ্যে। 

মুখপাত্র আরও বলেন, ‘শাহনেওয়াজ শাহানশাহর মধ্যে দাম্ভিকতা ছিল। সেই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করার তথ্য আগেও আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ইতিপূর্বের পাঁচটি মামলা পেয়েছি, যেখানে বিভিন্ন ধরনের মারামারির মামলাও রয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্টেরও মামলা রয়েছে। তাঁর এসব অভ্যাস আগে থেকেই ছিল।’ 

হামলার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগেও যেহেতু তিনি এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে অভ্যস্ত ছিলেন, সেহেতু বিষয়টিকে তিনি তুচ্ছ মনে করেছিলেন। আবার মাদক সেবনের কারণেও হামলার ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। 

বরখাস্ত পৌর মেয়র দেশত্যাগের চেষ্টা করছিলেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের মুখ্যপাত্র বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেশত্যাগের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তারকালে তাঁর কাছ থেকে পাসপোর্টও পাওয়া যায়নি। 

গ্রেপ্তারকৃত মেয়র শাহনেওয়াজ শাহানশাহখন্দকার আল মঈন বলেন, মেয়রের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দল থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন এবং নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করতেন। 

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁকে যে নিয়মিত মাদক দিত, তার সম্পর্কেও আমরা তথ্য পেয়েছি। তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

গ্রেপ্তারকৃত পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে পুরাতন মামলায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হবে বলেও জানান র‍্যাবের মুখ্যপাত্র। 

প্রসঙ্গত, দেওয়ানগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে উপজেলা প্রশাসন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের দায়িত্ব পান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মেহের উল্লাহ। উপস্থাপক হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মাইকে প্রশাসন ও বিভিন্ন সংগঠনের নাম ঘোষণা করছিলেন। এ সময় পৌরসভার নাম ৫ নম্বরে ঘোষণা করায় মেয়র প্রকাশ্যে ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং থাপ্পড় মারেন। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ এ ঘটনার প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। পরে ওই পৌর মেয়রের শাস্তির দাবিতে রোববার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেন উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ। 

সরকারি দায়িত্ব পালনরত মো. মেহের উল্লাহকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করায় পৌর মেয়র মো. শাহনেওয়াজ শাহানশাহর বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরই মধ্যে মেয়রের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত