Ajker Patrika

যে কারণে বহিষ্কার হলেন মেয়র জাহাঙ্গীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
যে কারণে বহিষ্কার হলেন মেয়র জাহাঙ্গীর

মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে এখনো পার্টি থেকে জানানো হয়নি। আমি কোনো কাগজও পাইনি।’

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তাঁর একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। যদিও মেয়র দাবি করেছিলেন, তাঁর আলাদা আলাদা বক্তব্যকে একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে।

৪ মিনিট ৪ সেকেন্ডের এ ভিডিওর শুরুতে দেখা যায় তিনি চেয়ারে বসে কথা বলছেন। পাশ থেকে তা গোপনে ধারণ করা হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড পরে ভিডিওতে জাহাঙ্গীরের ছবি দেখা যায়নি। শুধু কথা শোনা যায়। সেখানে জাহাঙ্গীরকে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ (মুক্তিযোদ্ধা) মারাইছে। ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার করে মরেছে প্রতি জেলায়। তাঁর স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়েছে।’

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ভাওয়ালের রাজার ৩৫ হাজার একর সম্পত্তি ছিল। আমি রাসেল সাহেবকে এ কারণেই ফেলছি। আমি চাইছি সে ভুল করুক। পলিসি ডায়ালগে সে ভুল করুক। আজমত উল্লাহ আমাকে মারার জন্য লোক ভাড়া করেছে। এখন সে আমার কর্মী হয়েছে।’ তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমি বিএনপি, জামায়াত সবার সঙ্গেই চলি। ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী ৪৭ মিনিট কথা বলেছেন। সে আসতে চায়। আমার এখানে সাড়ে ৩০০ বিঘা জমি আছে। নির্বাচনের সময় ১০ হাজার কোটি টাকা আনছি।’

এই ভিডিওর ব্যপারে তখন জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘আমি জাতির পিতার নামে অসম্মানজনক কোনো মন্তব্য করিনি। একটি মহল আমার জনপ্রিয়তায়, এলাকার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি পাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি দেশের বাইরে থাকায় একটি মহল আমার বিভিন্ন সময়ের আলাদা আলাদা বক্তব্য বা কথাকে একসঙ্গে যুক্ত করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘যারা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে, আমি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

এ ঘটনার পর ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। সেখানে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁকে জবাব দিতে বলা হয়। জাহাঙ্গীর নোটিশের জবাবও দিয়েছেন।

নোটিশের জবাব নিয়ে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তাঁর শোকজের জবাব নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম। তাঁর জবাব আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। অনেকটা দায়সারা মনে হয়েছে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়র পদটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে।’ চিঠির জবাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর চিঠিতে দাবি করেছেন, তাঁর বক্তব্যগুলো জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। শেষে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন।’

মেয়রের দায়িত্ব থেকে অপসারণ
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সংবিধানবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তাঁর শপথ ভঙ্গ হবে না। কারণ, মেয়র পদটি সাংবিধানিক নয়। তিনি শপথ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন। জাহাঙ্গীরকে পদ থেকে অপসারণ করতে হলে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত