ভজন সরকার
বাঙালির ভুল এবং অনুশোচনার ফিরিস্তি বিশাল। দূর অতীত তো বটেই, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ বিবেচনায় নিলেও অনুশোচনার ফিরিস্তি লিখতে কয়েক দিস্তা কাগজ লেগে যাবে। দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি বাঙালির আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেউই পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিলেন না। এমনকি পূর্ববঙ্গের প্রায় সব নেতাই পক্ষে ছিলেন হাজার মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের।
পূর্ববঙ্গের পাকিস্তান-পছন্দ জনগোষ্ঠীর ভুল ভাঙতে এক বছরের বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই গণপরিষদে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত আসে। মূল আঘাত আসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। দেশভাগের পরে বাঙালির প্রথম ভুলের বলী সালাম, রফিক, বরকতসহ ভাষা শহীদেরা। এরপরের ইতিহাস তো সবার জানা।
বাঙালির অনুশোচনার পাহাড় জমতে জমতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় তো বাঙালির ঠেকে শেখার ফসল, বাঙালির ভুল শুধরে নেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত।
তাই বলে কি ১৯৭১-এ বাঙালির আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত বোধদয় ঘটে? না, অবশ্যই নয়। মাত্র ৪ বছর পরে ১৯৭৫ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মুক্তিসংগ্রামের অগ্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে, যাঁরা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। যতই সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী এবং উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার দোষ দেওয়া হোক, যতই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলা হোক; এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যেÑ সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল তখন নিশ্চুপ ছিল। নিশ্চুপ ছিল বললেও কম বলা হবে, সে সময় অধিকাংশই এত বড় একটা নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস দেখায়নি। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্থপতিকে এমনভাবে হত্যা করা হলো, অথচ তাঁর নিজের হাতে গড়া বিশাল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগ তো প্রায় নিশ্চুপ থাকল? এ অনুশোচনা এবং ব্যর্থতা থেকে বাঙালি এখনো বেরিয়ে আসতে পেরেছে কি?
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরাজয়ের কুফল তো বাংলাদেশ পেয়েছে। একটি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন এবং লাখো মা-বোনের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে যা অর্জন করেছিল, ১৯৭৫-এ জাতির জনকের হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে তা প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। নিঃশেষ তো হতোই, যদি না জাতির জনকের কন্যা সন্তানদ্বয় বিদেশে থাকার কারণে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে না যেতেন।
১৯৭৫ থেকে আবার অবক্ষয়ের শুরু এবং তা চলছিল অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ১৯৭৫-এর পরেও দেখি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা, অনেক রাজনৈতিক নেতার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ সামরিক একনায়কের কাছে। এই অধঃপতন তো চলতই যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ফিরে না আসতেন, পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে যদি বাঙালির পাশে না দাঁড়াতেন।
তবু কি থেমেছে বিশ্বাসঘাতক বাঙালির ষড়যন্ত্র? বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর জীবননাশের চেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার। দীর্ঘ ২১ বছর লেগেছে বাঙালির ভুল বুঝতে, অনুশোচনায় অনুতপ্ত হতে। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবু কি আত্মঘাতী বাঙালি ভুল শুধরে সঠিক পথ নিয়েছে? মাত্র ৫ বছর পরে ২০০১ সালে আবার সাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছে নানা ষড়যন্ত্রে। আবার চলেছে পেছন যাত্রা, আবার রথের উল্টো টান।
এবার তো ১৯৭৫ সালের অসমাপ্ত কাজকে প্রায় সমাপ্ত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম-নিশানাই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য যদি সফল হতো, তবে
বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার সলতে চিরতরে
নিভে যেত। এবারেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। ক্ষমতাতেও আসেন বাংলাদেশের মানুষের বিশাল সমর্থন নিয়ে ২০০৮
সালের নির্বাচনে।
১৯৭৫ সালে যে প্রদীপ স্তিমিত হয়েছিল, তা আবার জ্বলে উঠেছে। পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ। বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে অভাবনীয়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তবে অবনমনও হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জঙ্গিবাদও গজিয়ে উঠেছিল; যদিও তার বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে আগেই। কিন্তু তার রেশ তো কিছু রয়ে গেছেই।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধ্বংসযজ্ঞ এবং তারপরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের নানা স্থানে অশান্তি সৃষ্টি করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের একটি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে শক্তি প্রদর্শন করতে এসে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গিয়ে বসে থাকেনি এ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীটি। বরং ধর্মের মুখোশ পরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ সরকারকেও ধোঁকা দিতে সমর্থ হয়েছে। নানা পন্থায় সরকারের কাছ থাকে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। নিজেদের আদর্শ চাপিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে পাঠ্যপুস্তকসহ নানা জায়গায়। একই সঙ্গে নিজেরা শক্তি সঞ্চয় করেছে, দল ভারী করে সংগঠিত হয়েছে, যার প্রতিফলন দেখি সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ১৯৭১-এর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এটা তো সত্যি, ১৯৭১-এর সেই পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তি আর বর্তমানের হেফাজতে ইসলামÑ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই একটুকুও। তাই এখন সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি কী করে এমনভাবে ডালপালা গজিয়ে নতুন করে বেঁচে উঠল, সে তাত্ত্বিক আলোচনা হবে এবং করাও যাবে ভবিষ্যতে। কার দায় বেশি, কার দায় কম তার চুলচেরা বিশ্লেষণও করা যাবে।
অনুশোচনার আত্মোপলব্ধি এবং আত্মসমালোচনার সময়ও পরে আছে। কিন্তু এখন সময় হয়েছে এই ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ করার। উপড়ে ফেলতে হবে সাম্প্রদায়িক এই বিষবৃক্ষের শেকড়। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে কালি লেপে দেয়, বাংলা কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এই অপশক্তি একদিন সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নাম-নিশানাও মুছে দেবে। তাই এই হেফাজতি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দুঃসাহসকে এখনই নিশ্চিহ্ন করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের শক্তির ঐক্য বড় প্রয়োজন আজ।
বাঙালির ভুল এবং অনুশোচনার ফিরিস্তি বিশাল। দূর অতীত তো বটেই, ১৯৪৭ সালের দেশভাগ বিবেচনায় নিলেও অনুশোচনার ফিরিস্তি লিখতে কয়েক দিস্তা কাগজ লেগে যাবে। দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি বাঙালির আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী কিংবা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কেউই পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিলেন না। এমনকি পূর্ববঙ্গের প্রায় সব নেতাই পক্ষে ছিলেন হাজার মাইল দূরের পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের।
পূর্ববঙ্গের পাকিস্তান-পছন্দ জনগোষ্ঠীর ভুল ভাঙতে এক বছরের বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরই গণপরিষদে বাংলা ভাষার ওপর আঘাত আসে। মূল আঘাত আসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। দেশভাগের পরে বাঙালির প্রথম ভুলের বলী সালাম, রফিক, বরকতসহ ভাষা শহীদেরা। এরপরের ইতিহাস তো সবার জানা।
বাঙালির অনুশোচনার পাহাড় জমতে জমতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় তো বাঙালির ঠেকে শেখার ফসল, বাঙালির ভুল শুধরে নেওয়ার প্রায়শ্চিত্ত।
তাই বলে কি ১৯৭১-এ বাঙালির আত্মশুদ্ধির চূড়ান্ত বোধদয় ঘটে? না, অবশ্যই নয়। মাত্র ৪ বছর পরে ১৯৭৫ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মুক্তিসংগ্রামের অগ্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে, যাঁরা ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। যতই সামরিক বাহিনীর কিছু বিপথগামী এবং উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তার দোষ দেওয়া হোক, যতই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলা হোক; এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যেÑ সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল তখন নিশ্চুপ ছিল। নিশ্চুপ ছিল বললেও কম বলা হবে, সে সময় অধিকাংশই এত বড় একটা নৃশংস হত্যাকা-ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করার সাহস দেখায়নি। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার স্থপতিকে এমনভাবে হত্যা করা হলো, অথচ তাঁর নিজের হাতে গড়া বিশাল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগ তো প্রায় নিশ্চুপ থাকল? এ অনুশোচনা এবং ব্যর্থতা থেকে বাঙালি এখনো বেরিয়ে আসতে পেরেছে কি?
১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরাজয়ের কুফল তো বাংলাদেশ পেয়েছে। একটি জাতিগোষ্ঠী ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ মানুষের জীবন এবং লাখো মা-বোনের চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে যা অর্জন করেছিল, ১৯৭৫-এ জাতির জনকের হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে তা প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। নিঃশেষ তো হতোই, যদি না জাতির জনকের কন্যা সন্তানদ্বয় বিদেশে থাকার কারণে অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে না যেতেন।
১৯৭৫ থেকে আবার অবক্ষয়ের শুরু এবং তা চলছিল অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ১৯৭৫-এর পরেও দেখি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা, অনেক রাজনৈতিক নেতার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ সামরিক একনায়কের কাছে। এই অধঃপতন তো চলতই যদি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ফিরে না আসতেন, পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে যদি বাঙালির পাশে না দাঁড়াতেন।
তবু কি থেমেছে বিশ্বাসঘাতক বাঙালির ষড়যন্ত্র? বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর জীবননাশের চেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার। দীর্ঘ ২১ বছর লেগেছে বাঙালির ভুল বুঝতে, অনুশোচনায় অনুতপ্ত হতে। ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সরকার ক্ষমতায় এসেছে। তবু কি আত্মঘাতী বাঙালি ভুল শুধরে সঠিক পথ নিয়েছে? মাত্র ৫ বছর পরে ২০০১ সালে আবার সাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছে নানা ষড়যন্ত্রে। আবার চলেছে পেছন যাত্রা, আবার রথের উল্টো টান।
এবার তো ১৯৭৫ সালের অসমাপ্ত কাজকে প্রায় সমাপ্ত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাম-নিশানাই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য যদি সফল হতো, তবে
বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার সলতে চিরতরে
নিভে যেত। এবারেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। ক্ষমতাতেও আসেন বাংলাদেশের মানুষের বিশাল সমর্থন নিয়ে ২০০৮
সালের নির্বাচনে।
১৯৭৫ সালে যে প্রদীপ স্তিমিত হয়েছিল, তা আবার জ্বলে উঠেছে। পরপর তিনবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ। বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে অভাবনীয়। উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তবে অবনমনও হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জঙ্গিবাদও গজিয়ে উঠেছিল; যদিও তার বিষদাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে আগেই। কিন্তু তার রেশ তো কিছু রয়ে গেছেই।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সুনামগঞ্জের শাল্লায় সাম্প্রদায়িক হামলা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধ্বংসযজ্ঞ এবং তারপরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের নানা স্থানে অশান্তি সৃষ্টি করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের একটি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে শক্তি প্রদর্শন করতে এসে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গিয়ে বসে থাকেনি এ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক এবং স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীটি। বরং ধর্মের মুখোশ পরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ সরকারকেও ধোঁকা দিতে সমর্থ হয়েছে। নানা পন্থায় সরকারের কাছ থাকে সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। নিজেদের আদর্শ চাপিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে পাঠ্যপুস্তকসহ নানা জায়গায়। একই সঙ্গে নিজেরা শক্তি সঞ্চয় করেছে, দল ভারী করে সংগঠিত হয়েছে, যার প্রতিফলন দেখি সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ১৯৭১-এর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এটা তো সত্যি, ১৯৭১-এর সেই পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক শক্তি আর বর্তমানের হেফাজতে ইসলামÑ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই একটুকুও। তাই এখন সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।
১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি কী করে এমনভাবে ডালপালা গজিয়ে নতুন করে বেঁচে উঠল, সে তাত্ত্বিক আলোচনা হবে এবং করাও যাবে ভবিষ্যতে। কার দায় বেশি, কার দায় কম তার চুলচেরা বিশ্লেষণও করা যাবে।
অনুশোচনার আত্মোপলব্ধি এবং আত্মসমালোচনার সময়ও পরে আছে। কিন্তু এখন সময় হয়েছে এই ধর্মীয় মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ করার। উপড়ে ফেলতে হবে সাম্প্রদায়িক এই বিষবৃক্ষের শেকড়। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চায়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে কালি লেপে দেয়, বাংলা কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় এই অপশক্তি একদিন সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নাম-নিশানাও মুছে দেবে। তাই এই হেফাজতি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দুঃসাহসকে এখনই নিশ্চিহ্ন করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের শক্তির ঐক্য বড় প্রয়োজন আজ।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫