মন্টি বৈষ্ণব
আজ পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এই বসন্তে গাছে গাছে ফুটবে ফুল। ১৯৮৩ সালেও প্রকৃতিতে এসেছিল ঋতুরাজ বসন্ত। কিন্তু সে বছরের বসন্তটা ছিল অনেক বেদনার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বসন্তের শিমুল, পলাশ ফুলেরা লুটিয়ে পড়েছিল সেদিন রাস্তায়। এ দিনের কথা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে।
সময়টা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর তাঁর শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। কী ছিল সেই শিক্ষানীতিতে? সেই শিক্ষানীতিতে ছিল প্রথম শ্রেণি থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আর উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি ধরা হয় মেধা আর ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই শিক্ষানীতি বাতিলের পক্ষে ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা দিবসে ছাত্রসংগঠনগুলো একমত হয়। শুরু হয় গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলতে থাকে মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আন্দোলন। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সর্বদলীয় ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন। তাঁরা সেখান থেকে সচিবালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। হঠাৎ সেই মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল, জলকামান ও গুলি বর্ষণ করে। এতে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীসহ আরও অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। সেদিন পুলিশের গুলিতে রাজপথেই জীবন দেন তাঁরা। অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত ও গ্রেপ্তার হন। আন্দোলনের মুখে মজিদ খানের শিক্ষানীতি স্থগিত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’। বলা যায়, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের পথ দিয়েই ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে পতন হয় স্বৈরাচার এরশাদের।
এখন ২০২৩ সাল। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা বহু ধারায় বিভক্ত। এরশাদের মজিদ খানের শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি ছিল ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। বর্তমানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথ প্রায় একই রকম। ধনীর সন্তানদের জন্য রয়েছে এক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা, আবার নিম্নবিত্তের সন্তানদের জন্য রয়েছে আরেক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হলেও এই অধিকার থেকে অনেকেই বঞ্চিত। করোনা-পরবর্তী সময়ে নিম্নবিত্তের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা আমাদের সুযোগ নয়, অধিকার। সেই অধিকারটুকু যেন ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাই পেতে পারে। এর দায়িত্ব নেওয়া উচিত রাষ্ট্রের কর্ণধারদের। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কী কী অসংগতি রয়েছে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ বের করা উচিত।
এ বছর নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ভ্রান্তি ছিল অনেক বেশি। ছাপার মান নিয়ে ছিল প্রশ্ন। দফায় দফায় পরিবর্তিত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক। কয়েক বছর আগে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়ে পুরোনো ২২টি কবিতা এবং গল্প-প্রবন্ধ। এসব গল্প-কবিতা ও প্রবন্ধ বাদ পড়ে হেফাজতে ইসলামের সুপারিশে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কথায় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনগুলো দুঃখজনক।
আমাদের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল বলেই বাতিল হয়েছিল গণবিরোধী মজিদ খানের শিক্ষানীতি। এই আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে ধনী-গরিব সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল। উচ্চশিক্ষার পথে বাধা ছিল না কোনো অর্থ। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয়, এই দিনের কথা কেউ মনে রাখে না। অথচ ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ইতিহাসের পথ বেয়ে এসেছিল ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
মন্টি বৈষ্ণব, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজ পয়লা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। এই বসন্তে গাছে গাছে ফুটবে ফুল। ১৯৮৩ সালেও প্রকৃতিতে এসেছিল ঋতুরাজ বসন্ত। কিন্তু সে বছরের বসন্তটা ছিল অনেক বেদনার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর রাজপথ রক্তাক্ত হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। বসন্তের শিমুল, পলাশ ফুলেরা লুটিয়ে পড়েছিল সেদিন রাস্তায়। এ দিনের কথা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে একটু পেছনে।
সময়টা ছিল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর তাঁর শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। কী ছিল সেই শিক্ষানীতিতে? সেই শিক্ষানীতিতে ছিল প্রথম শ্রেণি থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আর উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি ধরা হয় মেধা আর ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। এই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই শিক্ষানীতি বাতিলের পক্ষে ১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা দিবসে ছাত্রসংগঠনগুলো একমত হয়। শুরু হয় গণবিরোধী শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলতে থাকে মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আন্দোলন। ১৯৮২ সালের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সর্বদলীয় ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন। তাঁরা সেখান থেকে সচিবালয়ের অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। হঠাৎ সেই মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস শেল, জলকামান ও গুলি বর্ষণ করে। এতে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীসহ আরও অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। সেদিন পুলিশের গুলিতে রাজপথেই জীবন দেন তাঁরা। অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত ও গ্রেপ্তার হন। আন্দোলনের মুখে মজিদ খানের শিক্ষানীতি স্থগিত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’। বলা যায়, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের পথ দিয়েই ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে পতন হয় স্বৈরাচার এরশাদের।
এখন ২০২৩ সাল। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা বহু ধারায় বিভক্ত। এরশাদের মজিদ খানের শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের মাপকাঠি ছিল ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা। বর্তমানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পথ প্রায় একই রকম। ধনীর সন্তানদের জন্য রয়েছে এক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা, আবার নিম্নবিত্তের সন্তানদের জন্য রয়েছে আরেক ধারার শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হলেও এই অধিকার থেকে অনেকেই বঞ্চিত। করোনা-পরবর্তী সময়ে নিম্নবিত্তের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষা আমাদের সুযোগ নয়, অধিকার। সেই অধিকারটুকু যেন ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাই পেতে পারে। এর দায়িত্ব নেওয়া উচিত রাষ্ট্রের কর্ণধারদের। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কী কী অসংগতি রয়েছে, তা বিচার-বিশ্লেষণ করে সমাধানের পথ বের করা উচিত।
এ বছর নতুন পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ভ্রান্তি ছিল অনেক বেশি। ছাপার মান নিয়ে ছিল প্রশ্ন। দফায় দফায় পরিবর্তিত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক। কয়েক বছর আগে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়ে পুরোনো ২২টি কবিতা এবং গল্প-প্রবন্ধ। এসব গল্প-কবিতা ও প্রবন্ধ বাদ পড়ে হেফাজতে ইসলামের সুপারিশে। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কথায় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনগুলো দুঃখজনক।
আমাদের ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ছাত্রদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল বলেই বাতিল হয়েছিল গণবিরোধী মজিদ খানের শিক্ষানীতি। এই আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে ধনী-গরিব সবার জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল। উচ্চশিক্ষার পথে বাধা ছিল না কোনো অর্থ। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয়, এই দিনের কথা কেউ মনে রাখে না। অথচ ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ইতিহাসের পথ বেয়ে এসেছিল ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’।
মন্টি বৈষ্ণব, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫