রাজীব কুমার সাহা
বাঙালির কতিপয় সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে একটি হলো ‘আমি সবজান্তা’ এমন ভাব প্রকাশ। অর্থাৎ আমি সব বিষয়ে জানি তথা আমি সর্বজ্ঞ। ঠিক এখান থেকেই যাপিত জীবনে আমরা ‘সবজান্তা শমসের’ প্রবচনটি লোকমুখে পাই। যদিও এটি ব্যঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়। বোধকরি শমসের নামে কোনো এক ব্যক্তি সবজান্তার ভাব ধরেছিলেন বলেই এমন শব্দবন্ধের উৎপত্তি। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের কল্যাণে সমাজে এখন সবজান্তা শমসেরদের বাড়বাড়ন্ত। ঠিক এখান থেকেই আঁতলামির শুরু। যাই হোক, আঁতেল বা আঁতলামির গল্প আরেক দিন করব। এবার ফিরি জান্তার গল্পে। জানে এমন বা সবজান্তা অর্থে জান্তা শব্দটি ছাড়াও সামরিক জান্তা হিসেবে আমরা জান্তা শব্দের একটি প্রয়োগ লক্ষ করি। এই জান্তা শব্দের মানে কী? বাংলা ভাষায় কীভাবে এল শব্দটি? তবে চলুন আজ জানব জান্তা শব্দের ইতিবৃত্ত।
বাংলায় জান্তা শব্দের অভিন্ন বানানের দুটি স্বতন্ত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। একটি—জান্তা এবং অপরটি জান্তা। বাংলা শব্দ—জান্তা শব্দটির স্বতন্ত্র ব্যবহার নেই বললেই চলে। এই—জান্তা শব্দটি অপর একটি পূর্ণ শব্দের পরে বসে একটি নতুন অর্থ তৈরি করে। যেমন: সবজান্তা (সব বিষয়ে জানে এমন, সর্বজ্ঞাতা), ভবিষ্যজান্তা (ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানে এমন, ভবিষ্যজ্ঞাতা); অভিজ্ঞ। সবজান্তা শব্দের একটি ব্যঙ্গার্থও রয়েছে সেটি হলো ‘যে ব্যক্তি না জেনেও সবকিছু জানার ভান করে’। পূর্ণ শব্দ হিসেবে আমরা সামরিক জান্তা অর্থে জান্তা শব্দের একধরনের প্রয়োগ পাই। এই জান্তা শব্দের অর্থ অপেক্ষাকৃত নেতিবাচক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এই জান্তা শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাচারী দল বা হরণকারী দল; কোনো সংঘবদ্ধ বা দলবদ্ধ গ্যাং। এই জান্তা শব্দটি সংশ্লিষ্ট বাক্যে পূর্ববর্তী শব্দ থেকে আলাদা হয়ে বসে। যেমন: সামরিক জান্তা। খেয়াল রাখতে হবে, লেখার সময়ে পূর্ববর্তী—জান্তা শব্দের সঙ্গে পূর্ণ শব্দ জান্তা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে না যায়।
ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ ‘জুন্টা’ শব্দ থেকে বাংলা ‘জান্তা’ শব্দের উৎপত্তি। স্প্যানিশ ভাষায় জুন্টা শব্দের একটি অর্থ হলো গ্যাং বা দল। এর অপর একটি অর্থ সভা বা সমিতিও। সাধারণত জান্তা শব্দের আমরা দুটি অর্থ পাই, এক. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী কোনো দেশের সামরিক পদস্থ ব্যক্তিবর্গ; দুই. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত চক্র। স্প্যানিশ জুন্টা শব্দটি বাংলায় এসে জান্তা রূপ ধারণ করেছে। জুন্টা শব্দটি বাংলায় জান্তা হয়ে এলেও তার মূল অর্থটি হারায়নি। বরং শব্দটি আমাদের যাপিত জীবনে নেতিবাচক অর্থে আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। সাধারণত জান্তা গোষ্ঠীশাসনতান্ত্রিক সামরিক একনায়কতন্ত্র দ্বারা চিহ্নিত একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায়। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, কোনো দেশের সামরিক বাহিনী কর্তৃক সেই দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর ওই বাহিনীর যে গ্রুপ বা দল জনগণের সামষ্টিক স্বার্থ উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সামরিক জান্তা বলে।
যখন কোনো দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাসদস্যরা সেই দেশের শাসনব্যবস্থা চালাতে সেনা কমিটি গঠন করে এবং সেই কমিটির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে তখন সেই কমিটিকে বলা হয় সামরিক জান্তা কমিটি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮০৮ সালে স্পেনে সম্রাট নেপোলিয়নের আক্রমণের সময় তৎকালীন স্পেন শাসকেরা দেশ চালাতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই কমিটির প্রয়োগ করে। একটি জান্তা সরকার প্রায়ই একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। জান্তা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির শাসক সংস্থা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে বা নামমাত্র বেসামরিক সরকারের ওপর বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সামরিক জান্তা শাসনের এই দুইটি রূপকে কখনো কখনো খোলা শাসন এবং ছদ্মবেশী শাসন বলা হয়। বর্তমানে মালি, সুদান, নাইজার, গিনি, চাদ এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সামরিক জান্তা কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
জান্তা শব্দের ব্যুৎপত্তি বিষয়ে আরেকটি মত আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। অনেকের মতে তৎসম জান্তব [জন্তু+অ] শব্দ থেকে তদ্ভব জান্তা শব্দটি জাত। এই ব্যুৎপত্তিটি নির্ধারণের একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক আপামর বাঙালির ওপর জান্তব বা জন্তুসদৃশ কর্মকাণ্ড সাধন। এই নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকেই ঘৃণা প্রকাশার্থে জান্তা শব্দটির বিস্তার ঘটে। সুতরাং বলা যায়, সবজান্তা শমসের কিংবা সামরিক জান্তা উভয়ই অপকর্মে লিপ্ত হয়ে নেতিবাচক রূপ পরিগ্রহ করেছে।
লেখক:– আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাঙালির কতিপয় সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যে একটি হলো ‘আমি সবজান্তা’ এমন ভাব প্রকাশ। অর্থাৎ আমি সব বিষয়ে জানি তথা আমি সর্বজ্ঞ। ঠিক এখান থেকেই যাপিত জীবনে আমরা ‘সবজান্তা শমসের’ প্রবচনটি লোকমুখে পাই। যদিও এটি ব্যঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়। বোধকরি শমসের নামে কোনো এক ব্যক্তি সবজান্তার ভাব ধরেছিলেন বলেই এমন শব্দবন্ধের উৎপত্তি। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের কল্যাণে সমাজে এখন সবজান্তা শমসেরদের বাড়বাড়ন্ত। ঠিক এখান থেকেই আঁতলামির শুরু। যাই হোক, আঁতেল বা আঁতলামির গল্প আরেক দিন করব। এবার ফিরি জান্তার গল্পে। জানে এমন বা সবজান্তা অর্থে জান্তা শব্দটি ছাড়াও সামরিক জান্তা হিসেবে আমরা জান্তা শব্দের একটি প্রয়োগ লক্ষ করি। এই জান্তা শব্দের মানে কী? বাংলা ভাষায় কীভাবে এল শব্দটি? তবে চলুন আজ জানব জান্তা শব্দের ইতিবৃত্ত।
বাংলায় জান্তা শব্দের অভিন্ন বানানের দুটি স্বতন্ত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। একটি—জান্তা এবং অপরটি জান্তা। বাংলা শব্দ—জান্তা শব্দটির স্বতন্ত্র ব্যবহার নেই বললেই চলে। এই—জান্তা শব্দটি অপর একটি পূর্ণ শব্দের পরে বসে একটি নতুন অর্থ তৈরি করে। যেমন: সবজান্তা (সব বিষয়ে জানে এমন, সর্বজ্ঞাতা), ভবিষ্যজান্তা (ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানে এমন, ভবিষ্যজ্ঞাতা); অভিজ্ঞ। সবজান্তা শব্দের একটি ব্যঙ্গার্থও রয়েছে সেটি হলো ‘যে ব্যক্তি না জেনেও সবকিছু জানার ভান করে’। পূর্ণ শব্দ হিসেবে আমরা সামরিক জান্তা অর্থে জান্তা শব্দের একধরনের প্রয়োগ পাই। এই জান্তা শব্দের অর্থ অপেক্ষাকৃত নেতিবাচক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়। এই জান্তা শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাচারী দল বা হরণকারী দল; কোনো সংঘবদ্ধ বা দলবদ্ধ গ্যাং। এই জান্তা শব্দটি সংশ্লিষ্ট বাক্যে পূর্ববর্তী শব্দ থেকে আলাদা হয়ে বসে। যেমন: সামরিক জান্তা। খেয়াল রাখতে হবে, লেখার সময়ে পূর্ববর্তী—জান্তা শব্দের সঙ্গে পূর্ণ শব্দ জান্তা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে না যায়।
ধারণা করা হয়, স্প্যানিশ ‘জুন্টা’ শব্দ থেকে বাংলা ‘জান্তা’ শব্দের উৎপত্তি। স্প্যানিশ ভাষায় জুন্টা শব্দের একটি অর্থ হলো গ্যাং বা দল। এর অপর একটি অর্থ সভা বা সমিতিও। সাধারণত জান্তা শব্দের আমরা দুটি অর্থ পাই, এক. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী কোনো দেশের সামরিক পদস্থ ব্যক্তিবর্গ; দুই. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গঠিত চক্র। স্প্যানিশ জুন্টা শব্দটি বাংলায় এসে জান্তা রূপ ধারণ করেছে। জুন্টা শব্দটি বাংলায় জান্তা হয়ে এলেও তার মূল অর্থটি হারায়নি। বরং শব্দটি আমাদের যাপিত জীবনে নেতিবাচক অর্থে আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। সাধারণত জান্তা গোষ্ঠীশাসনতান্ত্রিক সামরিক একনায়কতন্ত্র দ্বারা চিহ্নিত একটি কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায়। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে, কোনো দেশের সামরিক বাহিনী কর্তৃক সেই দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর ওই বাহিনীর যে গ্রুপ বা দল জনগণের সামষ্টিক স্বার্থ উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সামরিক জান্তা বলে।
যখন কোনো দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাসদস্যরা সেই দেশের শাসনব্যবস্থা চালাতে সেনা কমিটি গঠন করে এবং সেই কমিটির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে তখন সেই কমিটিকে বলা হয় সামরিক জান্তা কমিটি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮০৮ সালে স্পেনে সম্রাট নেপোলিয়নের আক্রমণের সময় তৎকালীন স্পেন শাসকেরা দেশ চালাতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই কমিটির প্রয়োগ করে। একটি জান্তা সরকার প্রায়ই একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে। জান্তা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির শাসক সংস্থা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে বা নামমাত্র বেসামরিক সরকারের ওপর বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সামরিক জান্তা শাসনের এই দুইটি রূপকে কখনো কখনো খোলা শাসন এবং ছদ্মবেশী শাসন বলা হয়। বর্তমানে মালি, সুদান, নাইজার, গিনি, চাদ এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সামরিক জান্তা কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
জান্তা শব্দের ব্যুৎপত্তি বিষয়ে আরেকটি মত আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। অনেকের মতে তৎসম জান্তব [জন্তু+অ] শব্দ থেকে তদ্ভব জান্তা শব্দটি জাত। এই ব্যুৎপত্তিটি নির্ধারণের একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ হলো মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক আপামর বাঙালির ওপর জান্তব বা জন্তুসদৃশ কর্মকাণ্ড সাধন। এই নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকেই ঘৃণা প্রকাশার্থে জান্তা শব্দটির বিস্তার ঘটে। সুতরাং বলা যায়, সবজান্তা শমসের কিংবা সামরিক জান্তা উভয়ই অপকর্মে লিপ্ত হয়ে নেতিবাচক রূপ পরিগ্রহ করেছে।
লেখক:– আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫