মাসুমা হক প্রিয়াংকা
পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
সার্কুলার অর্থনৈতিক মডেলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় হয়। ১৯৯০ সালে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ কেনেথই বোল্ডিং উৎপাদনের এই বৃত্তাকার পদ্ধতি নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন। তিনি তাঁর গবেষণাপত্র ‘দ্য ইকোনমিকস অব দ্য কামিং স্পেসশিপ আর্থ’-এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে একটি বৃত্তাকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে মানবজীবনের স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য একটি পূর্বশর্ত। ‘দ্য ইকোনমিকস অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট’ বইয়ে অ্যালান নিস অর্থনীতির পরিভাষা হিসেবে প্রথম ‘সার্কুলার অর্থনীতি’ অভিধাটি ব্যবহার করেন ১৯৮৮ সালে।
সার্কুলার বা বৃত্তাকার অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যা একটি চক্রাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, পুনর্বণ্টন, পুনঃউৎপাদন নিশ্চিত করে এবং বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসে। বৃত্তাকার অর্থনীতির লক্ষ্য এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং বর্জ্য ও দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। এর আরও একটি লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই সমাজ গড়ে তোলা, সমাজকে বর্জ্য থেকে রক্ষা করা এবং এমন একটি মডেল তৈরি করতে সক্ষম হওয়া, যা সম্পদকে আর অসীম হিসেবে বিবেচনা করে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই নতুন মডেলটি পরিবেশগত এবং সামাজিক খরচ বিবেচনা করে পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদনের ওপর দৃষ্টি দেয়। তাই সার্কুলার ডেভেলপমেন্ট নতুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থায়িত্বের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন সমাজ তৈরি করতে বৃত্তাকার অর্থনীতিকে সমর্থন করে, যা নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করে। এটি অর্থনীতি এবং সমাজকে আরও টেকসই হতে সক্ষম করে।
বিশ্বে এখন কেউ বর্জ্যকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে না। বিশ্বের অনেক দেশে বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে অন্য শিল্পের জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল পৌরসভা একটি ‘জিরো ওয়েস্ট’ নীতি বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে পুনর্ব্যবহার, কম্পোস্টিং এবং বর্জ্য কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। শহরটি ২০৪০ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বৃত্তাকার অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া চীন, ব্রাজিল, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের কাজ করছে।
বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহার ৭ থেকে ৮ কেজি। যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমাণ প্রায় ১৩০ কেজি অথচ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনরায় সম্পদে রূপান্তর করছে দেশটি। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত ফিনল্যান্ড সার্কুলার অর্থনীতির উন্নয়ন এবং তা ব্যবহারে বিশ্বের একটি পাইওনিয়ার দেশ হিসেবে প্রথম সার্কুলার অর্থনীতি ব্যবসা মডেলের রোডম্যাপ ২০১৬-২৫ তৈরি করে। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট, ফিলিপস, অ্যালেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এবং অন্য ৪০টির বেশি অংশীদার সার্কুলার ইকোনমি ত্বরান্বিত করার জন্য প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, কাঁচামালের স্বল্পতা, দূষণ, জ্বালানি-সংকট, কর্মসংস্থান, সুপেয় পানির অভাব ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা উচিত সার্কুলার অর্থনীতিকে। সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর এ সম্পর্কিত নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ব্যাপকভাবে সার্কুলার অর্থনীতির প্রয়োগ আবশ্যক। বিগত কিছু বছর সার্কুলার অর্থনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা হলেও দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এবং ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে এই বিষয়টাকে পরিচিত করার উদ্যোগও নেই। সীমিত সম্পদকে বিপুলসংখ্যক জনগণের মধ্যে বৈষম্যহীনভাবে বণ্টনের জন্য আমাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে।
লেখক: সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থী
পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
সার্কুলার অর্থনৈতিক মডেলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় হয়। ১৯৯০ সালে আমেরিকান অর্থনীতিবিদ কেনেথই বোল্ডিং উৎপাদনের এই বৃত্তাকার পদ্ধতি নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন। তিনি তাঁর গবেষণাপত্র ‘দ্য ইকোনমিকস অব দ্য কামিং স্পেসশিপ আর্থ’-এ যুক্তি দিয়েছিলেন যে একটি বৃত্তাকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পৃথিবীতে মানবজীবনের স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য একটি পূর্বশর্ত। ‘দ্য ইকোনমিকস অব ন্যাচারাল রিসোর্স অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট’ বইয়ে অ্যালান নিস অর্থনীতির পরিভাষা হিসেবে প্রথম ‘সার্কুলার অর্থনীতি’ অভিধাটি ব্যবহার করেন ১৯৮৮ সালে।
সার্কুলার বা বৃত্তাকার অর্থনীতি হচ্ছে এমন একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া, যা একটি চক্রাকার সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বণ্টনকাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, পুনর্বণ্টন, পুনঃউৎপাদন নিশ্চিত করে এবং বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসে। বৃত্তাকার অর্থনীতির লক্ষ্য এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা, যা সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং বর্জ্য ও দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। এর আরও একটি লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য সম্পদের ওপর ভিত্তি করে একটি টেকসই সমাজ গড়ে তোলা, সমাজকে বর্জ্য থেকে রক্ষা করা এবং এমন একটি মডেল তৈরি করতে সক্ষম হওয়া, যা সম্পদকে আর অসীম হিসেবে বিবেচনা করে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই নতুন মডেলটি পরিবেশগত এবং সামাজিক খরচ বিবেচনা করে পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদনের ওপর দৃষ্টি দেয়। তাই সার্কুলার ডেভেলপমেন্ট নতুন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থায়িত্বের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন সমাজ তৈরি করতে বৃত্তাকার অর্থনীতিকে সমর্থন করে, যা নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করে। এটি অর্থনীতি এবং সমাজকে আরও টেকসই হতে সক্ষম করে।
বিশ্বে এখন কেউ বর্জ্যকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে না। বিশ্বের অনেক দেশে বর্জ্যকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে অন্য শিল্পের জন্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল পৌরসভা একটি ‘জিরো ওয়েস্ট’ নীতি বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে পুনর্ব্যবহার, কম্পোস্টিং এবং বর্জ্য কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে। শহরটি ২০৪০ সালের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ বৃত্তাকার অর্থনীতি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া চীন, ব্রাজিল, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের কাজ করছে।
বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহার ৭ থেকে ৮ কেজি। যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমাণ প্রায় ১৩০ কেজি অথচ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনরায় সম্পদে রূপান্তর করছে দেশটি। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত ফিনল্যান্ড সার্কুলার অর্থনীতির উন্নয়ন এবং তা ব্যবহারে বিশ্বের একটি পাইওনিয়ার দেশ হিসেবে প্রথম সার্কুলার অর্থনীতি ব্যবসা মডেলের রোডম্যাপ ২০১৬-২৫ তৈরি করে। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট, ফিলিপস, অ্যালেন ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এবং অন্য ৪০টির বেশি অংশীদার সার্কুলার ইকোনমি ত্বরান্বিত করার জন্য প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, কাঁচামালের স্বল্পতা, দূষণ, জ্বালানি-সংকট, কর্মসংস্থান, সুপেয় পানির অভাব ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা উচিত সার্কুলার অর্থনীতিকে। সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর এ সম্পর্কিত নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়ার এখনই সময়। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে ব্যাপকভাবে সার্কুলার অর্থনীতির প্রয়োগ আবশ্যক। বিগত কিছু বছর সার্কুলার অর্থনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা হলেও দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না এবং ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে এই বিষয়টাকে পরিচিত করার উদ্যোগও নেই। সীমিত সম্পদকে বিপুলসংখ্যক জনগণের মধ্যে বৈষম্যহীনভাবে বণ্টনের জন্য আমাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে।
লেখক: সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থী
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫