স্বপ্না রেজা
বয়সে তরুণ আমার এক নারী স্বজন তাঁর ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে এইভাবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী পুতুলকে শাড়ি পরিয়ে ও তার গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে টুপি, পাঞ্জাবি পরনে কয়েকজন ব্যক্তি যেভাবে স্যান্ডেল দিয়ে আঘাত করেছে, একপর্যায়ে নারী পুতুলকে বিবস্ত্র করেছে, অসম্মান করেছে, সেটা কিন্তু এই সমাজের জন্য আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘটনা হতো যদি না ধর্মীয় উগ্রবাদী টুপি ও পাঞ্জাবি পরনে কোনো পুরুষ পুতুলকে এভাবে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে বিবস্ত্র করে আঘাত করা হতো এবং কাজটি করত কয়েকজন নারী। তখন সমাজের অনেকেই এটাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করত। তাদের ঘুম হারাম হতো। রাষ্ট্রও নড়েচড়ে উঠত। এককথায়, তখন একটা ঘটনা হতো। এ রকম ঘটনা ঘটলে বা ঘটাতে পারলেই নারীর প্রতি অসম্মানজনক ও সহিংস আচরণ কমবে, তার আগে নয়। এই সমাজে পাল্টা আঘাতই অসভ্যতাকে দূর করতে পারে। নারীকেই পাল্টা জবাব দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
যাহোক, লেখার ভাষা নেই। জনসমক্ষে, প্রকাশ্যে নারীর প্রতি এমন ও এতটা জঘন্য আচরণ প্রদর্শন করার ধৃষ্টতা সম্ভবত এই প্রথম। ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী অতীতে নারীর প্রতি নানান ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি নানান ধরনের নৃশংসতায় তাদের কেউ কেউ লিপ্ত হয়েছে। কথায় কথায় নারীর পথচলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, এমন সব কার্যকলাপ ও বক্তব্য নির্বিচারে প্রদান করেছে। নারীবিদ্বেষী মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনে তারা সব সময়ই সক্রিয় থেকেছে, থাকছে। ওয়াজ মাহফিল বা যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও অসম্মানজনক বক্তব্যই মূল লক্ষ্য হয়ে থাকছে এবং সেটা যুগ যুগ ধরে। সবকিছুকে যেন ছাপিয়ে গেছে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটি। ধৃষ্টতা প্রদর্শনের সীমা ছাড়িয়েছে। শুধু নারী কেন, ধর্মীয় লেবাসধারী দ্বারা অনেক ছেলেশিশু, কিশোরও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। ছেলেশিশু, কিশোররা নিরাপদ থাকছে না। হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে সেই ক্ষেত্রে। সংবাদমাধ্যমে বিষয়গুলো খবর হয়ে এলেও তার প্রতিকার সেই অর্থে হয়নি, হতে দেখা যায়নি। কারণ, বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি যে চরম বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ তা অতীতের অপরাধ ও তার বিচারবহির্ভূত অবস্থানেরই পরিণতি বলা যায়।
বাংলাদেশ ক্ষমতাকেন্দ্রিক অপরাজনৈতিক চর্চার এক দেশ। রাজনীতি ক্ষমতা, প্রভাব ও অর্থ আয়ের এক উত্তম পেশা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে আদর্শচ্যুত, বিবেকবর্জিত কিছু স্বার্থবাদী ব্যক্তির কারণে। রাজনীতি তাদের স্বার্থ হাসিলের অবলম্বন। এদের অনুসারী দিন দিন বাড়ে বৈ কমে না। কারণ, এত সহজ উপায়ে অর্থে-বিত্তে এবং প্রভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অন্য কোনো পথ নেই। এই চেতনায় কমবেশি প্রায় সবাই রাজনীতিতে তালিকাভুক্ত হয়। ক্ষমতামুখী হয়। আর ক্ষমতায় আসীন হতে, অবস্থান পাকাপোক্ত করতে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে ধর্মীয় গোষ্ঠীসহ অন্যান্য ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে চলতে হয়। অতীতে এমন নজির রয়েছে যে ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে রাষ্ট্র পরিচালনা হয়েছে, ক্ষমতায় আসীন হতে তাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। যারা পুরো জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশ নাগরিক তথা নারীকে অবমাননা করে চলে, চলেছে তাদের সঙ্গে আঁতাতের পরিণাম নারী জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য যে কতটা হুমকির কারণ হতে পারে, সেটা যে কেউ বোঝে না বা বোঝেনি তাও কিন্তু নয়। সব বোঝাবুঝি ক্ষমতার মোহে চাপা পড়েছে। জনগণের কল্যাণ, সুরক্ষার চেয়ে ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থই বড় ও মুখ্য হয়ে থেকেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাবনা করেছে, তার বিরোধিতা করতে গিয়েই ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী অশোভন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে বসে। কমিশনের নারী সদস্য সম্পর্কে অকথ্য, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে শুরু করে। এমনকি এসব প্রস্তাবনাকে ‘বেশ্যা নীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের আচরণ ও বক্তব্যে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছে যে এই শ্রেণির লোকের ঘরে নারীর কোনো অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না, থাকলে তা কী অবস্থায় আছে! নিশ্চয়ই মানবমর্যাদাকর অবস্থায় নেই।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধার্মিক। সব ধর্মের মানুষের বসবাস এই ভূখণ্ডে। ধর্ম অনুযায়ী ধর্ম অনুসারীদের থাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভীতি। প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি কখনোই ধর্মকে ব্যবহার করে, অবলম্বন করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয় না, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি অশোভন, বিদ্বেষমূলক আচরণ করে না। ধর্মকে ব্যবহার করে যারা রাজনীতি করে, ব্যবসা করে তারা মূলত ধর্ম নয়, অন্য অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে। সমাজ ও রাষ্ট্রে তার বহু নজির ও দৃষ্টান্ত আছে। এটা না বললেই নয় যে আমাদের রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই জনগণের মর্যাদা সুরক্ষা ও কল্যাণমুখী হতে পারেনি এবং সেটা সম্ভব হয়নি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর জন্য।
অবাক হয়ে ভাবছি, ড. ইউনূস যে দেশের নারীদের সংগঠিত করে আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং এখন তিনি যে দেশের প্রধান উপদেষ্টা, সেই দেশে নারীদের প্রতি এমন বিদ্বেষ, সহিংসতা ও অসভ্য আচরণ করে কী করে একটা শ্রেণির মানুষ ধর্মীয় অজুহাতে? দুঃসাহসই-বা পায় কী করে? আশা করেছিলাম নারীদের নিয়ে কাজ করা ড. ইউনূস নারীর প্রতি জঘন্য আচরণের প্রতিবাদে জ্বলে উঠবেন। সহ্য করতে পারবেন না। তাৎক্ষণিক তাঁর প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম। যেমন আমার মতো অনেক উন্নয়নকর্মী পারছে না সহ্য করতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে তাদের প্রতিক্রিয়া। তবে দেখা গেল খানিকটা বিরতি নিয়ে আইন উপদেষ্টা কেশে জানান দিলেন যে নারীর প্রতি কোনো ধরনের অবমাননাকর কথা, বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
পরিশেষে বলব, রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয় নারীর প্রতি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে, সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে সরকারের যদি উপযুক্ত তাড়না না থাকে, উদ্যোগ না থাকে, তাহলে নারীকেই উদ্যোগী হতে হবে। নারী ভোটার বেশি যে দেশে সেই দেশে নারীর প্রতি বিদ্বেষ কীভাবে রুখতে হয় তা নারীকেই আজ খুঁজে বের করতে হবে। যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বেশি, সেই দেশটাকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে কী করা লাগবে, সেটাও নারীকে নির্ধারণ করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার সময়ও আজ এসেছে। অন্তত একদিন নারীরা সব কাজ থেকে বিরত থেকে পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে পারে। যে নারী জাতি মায়ের সম্মান পান না, তিনি যদি গর্ভে সন্তান ধারণের ইচ্ছে প্রকাশ না করেন তাহলে কিন্তু এই দেশ কেন, গোটা বিশ্বই মানবশূন্য হয়ে যাবে।
বয়সে তরুণ আমার এক নারী স্বজন তাঁর ফেসবুক পেজে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে এইভাবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী পুতুলকে শাড়ি পরিয়ে ও তার গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে টুপি, পাঞ্জাবি পরনে কয়েকজন ব্যক্তি যেভাবে স্যান্ডেল দিয়ে আঘাত করেছে, একপর্যায়ে নারী পুতুলকে বিবস্ত্র করেছে, অসম্মান করেছে, সেটা কিন্তু এই সমাজের জন্য আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়। আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘটনা হতো যদি না ধর্মীয় উগ্রবাদী টুপি ও পাঞ্জাবি পরনে কোনো পুরুষ পুতুলকে এভাবে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে বিবস্ত্র করে আঘাত করা হতো এবং কাজটি করত কয়েকজন নারী। তখন সমাজের অনেকেই এটাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করত। তাদের ঘুম হারাম হতো। রাষ্ট্রও নড়েচড়ে উঠত। এককথায়, তখন একটা ঘটনা হতো। এ রকম ঘটনা ঘটলে বা ঘটাতে পারলেই নারীর প্রতি অসম্মানজনক ও সহিংস আচরণ কমবে, তার আগে নয়। এই সমাজে পাল্টা আঘাতই অসভ্যতাকে দূর করতে পারে। নারীকেই পাল্টা জবাব দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
যাহোক, লেখার ভাষা নেই। জনসমক্ষে, প্রকাশ্যে নারীর প্রতি এমন ও এতটা জঘন্য আচরণ প্রদর্শন করার ধৃষ্টতা সম্ভবত এই প্রথম। ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী অতীতে নারীর প্রতি নানান ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ইত্যাদি নানান ধরনের নৃশংসতায় তাদের কেউ কেউ লিপ্ত হয়েছে। কথায় কথায় নারীর পথচলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, এমন সব কার্যকলাপ ও বক্তব্য নির্বিচারে প্রদান করেছে। নারীবিদ্বেষী মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শনে তারা সব সময়ই সক্রিয় থেকেছে, থাকছে। ওয়াজ মাহফিল বা যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও অসম্মানজনক বক্তব্যই মূল লক্ষ্য হয়ে থাকছে এবং সেটা যুগ যুগ ধরে। সবকিছুকে যেন ছাপিয়ে গেছে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটি। ধৃষ্টতা প্রদর্শনের সীমা ছাড়িয়েছে। শুধু নারী কেন, ধর্মীয় লেবাসধারী দ্বারা অনেক ছেলেশিশু, কিশোরও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে। ছেলেশিশু, কিশোররা নিরাপদ থাকছে না। হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে সেই ক্ষেত্রে। সংবাদমাধ্যমে বিষয়গুলো খবর হয়ে এলেও তার প্রতিকার সেই অর্থে হয়নি, হতে দেখা যায়নি। কারণ, বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি যে চরম বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ তা অতীতের অপরাধ ও তার বিচারবহির্ভূত অবস্থানেরই পরিণতি বলা যায়।
বাংলাদেশ ক্ষমতাকেন্দ্রিক অপরাজনৈতিক চর্চার এক দেশ। রাজনীতি ক্ষমতা, প্রভাব ও অর্থ আয়ের এক উত্তম পেশা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে এবং সেটা সম্ভব হয়েছে আদর্শচ্যুত, বিবেকবর্জিত কিছু স্বার্থবাদী ব্যক্তির কারণে। রাজনীতি তাদের স্বার্থ হাসিলের অবলম্বন। এদের অনুসারী দিন দিন বাড়ে বৈ কমে না। কারণ, এত সহজ উপায়ে অর্থে-বিত্তে এবং প্রভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার অন্য কোনো পথ নেই। এই চেতনায় কমবেশি প্রায় সবাই রাজনীতিতে তালিকাভুক্ত হয়। ক্ষমতামুখী হয়। আর ক্ষমতায় আসীন হতে, অবস্থান পাকাপোক্ত করতে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে ধর্মীয় গোষ্ঠীসহ অন্যান্য ব্যক্তি-গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে চলতে হয়। অতীতে এমন নজির রয়েছে যে ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে রাষ্ট্র পরিচালনা হয়েছে, ক্ষমতায় আসীন হতে তাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। যারা পুরো জনগোষ্ঠীর ৫১ শতাংশ নাগরিক তথা নারীকে অবমাননা করে চলে, চলেছে তাদের সঙ্গে আঁতাতের পরিণাম নারী জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য যে কতটা হুমকির কারণ হতে পারে, সেটা যে কেউ বোঝে না বা বোঝেনি তাও কিন্তু নয়। সব বোঝাবুঝি ক্ষমতার মোহে চাপা পড়েছে। জনগণের কল্যাণ, সুরক্ষার চেয়ে ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থই বড় ও মুখ্য হয়ে থেকেছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত নারী সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাবনা করেছে, তার বিরোধিতা করতে গিয়েই ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী অশোভন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করে বসে। কমিশনের নারী সদস্য সম্পর্কে অকথ্য, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিতে শুরু করে। এমনকি এসব প্রস্তাবনাকে ‘বেশ্যা নীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের আচরণ ও বক্তব্যে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছে যে এই শ্রেণির লোকের ঘরে নারীর কোনো অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না, থাকলে তা কী অবস্থায় আছে! নিশ্চয়ই মানবমর্যাদাকর অবস্থায় নেই।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধার্মিক। সব ধর্মের মানুষের বসবাস এই ভূখণ্ডে। ধর্ম অনুযায়ী ধর্ম অনুসারীদের থাকে ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভীতি। প্রকৃত ধার্মিক ব্যক্তি কখনোই ধর্মকে ব্যবহার করে, অবলম্বন করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয় না, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি অশোভন, বিদ্বেষমূলক আচরণ করে না। ধর্মকে ব্যবহার করে যারা রাজনীতি করে, ব্যবসা করে তারা মূলত ধর্ম নয়, অন্য অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে। সমাজ ও রাষ্ট্রে তার বহু নজির ও দৃষ্টান্ত আছে। এটা না বললেই নয় যে আমাদের রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই জনগণের মর্যাদা সুরক্ষা ও কল্যাণমুখী হতে পারেনি এবং সেটা সম্ভব হয়নি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর জন্য।
অবাক হয়ে ভাবছি, ড. ইউনূস যে দেশের নারীদের সংগঠিত করে আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন এবং এখন তিনি যে দেশের প্রধান উপদেষ্টা, সেই দেশে নারীদের প্রতি এমন বিদ্বেষ, সহিংসতা ও অসভ্য আচরণ করে কী করে একটা শ্রেণির মানুষ ধর্মীয় অজুহাতে? দুঃসাহসই-বা পায় কী করে? আশা করেছিলাম নারীদের নিয়ে কাজ করা ড. ইউনূস নারীর প্রতি জঘন্য আচরণের প্রতিবাদে জ্বলে উঠবেন। সহ্য করতে পারবেন না। তাৎক্ষণিক তাঁর প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলাম। যেমন আমার মতো অনেক উন্নয়নকর্মী পারছে না সহ্য করতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে তাদের প্রতিক্রিয়া। তবে দেখা গেল খানিকটা বিরতি নিয়ে আইন উপদেষ্টা কেশে জানান দিলেন যে নারীর প্রতি কোনো ধরনের অবমাননাকর কথা, বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
পরিশেষে বলব, রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয় নারীর প্রতি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে, সামাজিক মূল্যবোধ তৈরিতে সরকারের যদি উপযুক্ত তাড়না না থাকে, উদ্যোগ না থাকে, তাহলে নারীকেই উদ্যোগী হতে হবে। নারী ভোটার বেশি যে দেশে সেই দেশে নারীর প্রতি বিদ্বেষ কীভাবে রুখতে হয় তা নারীকেই আজ খুঁজে বের করতে হবে। যে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ বেশি, সেই দেশটাকে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে কী করা লাগবে, সেটাও নারীকে নির্ধারণ করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়ার সময়ও আজ এসেছে। অন্তত একদিন নারীরা সব কাজ থেকে বিরত থেকে পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে পারে। যে নারী জাতি মায়ের সম্মান পান না, তিনি যদি গর্ভে সন্তান ধারণের ইচ্ছে প্রকাশ না করেন তাহলে কিন্তু এই দেশ কেন, গোটা বিশ্বই মানবশূন্য হয়ে যাবে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫