জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আগেই বলা হয়েছে, বাঙালি মুসলমানকে মুঘল আমলেও দেশের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হয়নি। বাইরে থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা এই অঞ্চলের হিন্দুদেরই দেশ শাসনে সঙ্গে নিয়েছিলেন। ফলে মুসলিম শাসকদের ইংরেজরা হটিয়ে দিলেও বাংলার গরিব মুসলমানদের তাতে কিছু আসে যায়নি। কিন্তু বাঙালি মুসলমান একসময় ভাবতে শুরু করে, তারাই একসময় এই দেশ শাসন করেছে। সবাই নিজেকে বহিরাগত অভিজাত মুসলমানের বংশধর হিসেবে ভাবতে থাকে। এই ভাবনায় ইতিহাসের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া নেই।
এই ভাবনাকে পোক্ত করার একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। শ্রাবণ, ১৩২৪ তারিখের ‘আল এসলাম’ পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘আমাদের নব্য যুবক এবং ছাত্রছাত্রীগণ প্রাণের সহিত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন যে, তাহারা সেই সমস্ত জগদ্বিজয়ী, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশারদ, মহাপরাক্রান্ত বিশ্বধন্য আরব-তুর্কী ও পাঠানের বংশধর।’
যাঁরা জোর করে বাংলা ভাষায় আরবি ফারসি শব্দ ঢোকাতে চেয়েছেন, তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে মোহাম্মদ গোলাম মওলা বলেছেন, ‘ধর্মের গোঁড়ামী একবার আমাদিগকে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্ধ শতাব্দী পিছাইয়া ফেলিয়া দিয়াছে, আবার যেন “মুসলমানী” বাঙ্গালার মোহ আমাদের পথ না ভুলায়।’ (সাহিত্যিক, আশ্বিন, ১৩৩৪)।
সৈয়দ ইমদাদ আলী সরল ভাষায় লিখেছেন, ‘একযোগে কতকগুলি আরবী ফারসী শব্দের প্রচলন করিয়া আমরা ভাষার দিক দিয়া কখনই লাভবান হইব না।...আমরা মনপ্রাণ দিয়া বঙ্গভাষার সেবা করিলে, প্রয়োজনীয় আরবী ফারসী শব্দ ধীরে ধীরে আপনিই বঙ্গভাষায় স্থান করিয়া নিবে। তজ্জন্য আমাদের স্বতন্ত্র চেষ্টা করিতে হইবে না।’ (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, শ্রাবণ, ১৩২৫)।
ভাষাতত্ত্বে পড়াশোনা করে জেনেছি, ভাষা কোনোরকম জবরদস্তি পছন্দ করে না। ভাষা প্রবহমান থাকে তার জীবন্ত ব্যবহারে। জোর করে চাপিয়ে দিলেও তা ক্ষণকাল রাজত্ব করতে পারে বটে, কিন্তু সেটা ভাষাভাষী মানুষ গ্রহণ করে না। তাই সৈয়দ ইমদাদ আলীর এই কথাকে মূল্য দিলে পরবর্তীকালের বহু সংকট মোকাবিলা করা যেত।
হামেদ আলী অবশ্য কোনো দ্বিধার অবকাশ রাখেননি। তিনি সোজাসাপটা বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হউন, আর এতদ্দেশীয় হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী,—আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা।...কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্তে উর্দ্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর! দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্ন দর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আটিয়া থাকে।’ (বাসনা, ২য় ভাগ, বৈশাখ, ১৩১৬)।
তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করলে ভূরি ভূরি উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু এই উদাহরণগুলো থেকেই বোঝা যায়, বাংলা ভাষা প্রশ্নে যে দোদুল্যমানতা ছিল, সে কারণেই ১৯৪৮ সালে যখন ভাষার প্রশ্নটি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলো, তখনো তা সমগ্র দেশবাসীর ভাবনাকে আন্দোলিত করেনি। কিন্তু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় যে বাঙালি ধাক্কা খেয়েছিল, সে কথা অনায়াসেই বলা যায়।
আগেই বলা হয়েছে, বাঙালি মুসলমানকে মুঘল আমলেও দেশের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত করা হয়নি। বাইরে থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরা এই অঞ্চলের হিন্দুদেরই দেশ শাসনে সঙ্গে নিয়েছিলেন। ফলে মুসলিম শাসকদের ইংরেজরা হটিয়ে দিলেও বাংলার গরিব মুসলমানদের তাতে কিছু আসে যায়নি। কিন্তু বাঙালি মুসলমান একসময় ভাবতে শুরু করে, তারাই একসময় এই দেশ শাসন করেছে। সবাই নিজেকে বহিরাগত অভিজাত মুসলমানের বংশধর হিসেবে ভাবতে থাকে। এই ভাবনায় ইতিহাসের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া নেই।
এই ভাবনাকে পোক্ত করার একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। শ্রাবণ, ১৩২৪ তারিখের ‘আল এসলাম’ পত্রিকায় ছাপা হয়, ‘আমাদের নব্য যুবক এবং ছাত্রছাত্রীগণ প্রাণের সহিত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন যে, তাহারা সেই সমস্ত জগদ্বিজয়ী, জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশারদ, মহাপরাক্রান্ত বিশ্বধন্য আরব-তুর্কী ও পাঠানের বংশধর।’
যাঁরা জোর করে বাংলা ভাষায় আরবি ফারসি শব্দ ঢোকাতে চেয়েছেন, তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে মোহাম্মদ গোলাম মওলা বলেছেন, ‘ধর্মের গোঁড়ামী একবার আমাদিগকে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্ধ শতাব্দী পিছাইয়া ফেলিয়া দিয়াছে, আবার যেন “মুসলমানী” বাঙ্গালার মোহ আমাদের পথ না ভুলায়।’ (সাহিত্যিক, আশ্বিন, ১৩৩৪)।
সৈয়দ ইমদাদ আলী সরল ভাষায় লিখেছেন, ‘একযোগে কতকগুলি আরবী ফারসী শব্দের প্রচলন করিয়া আমরা ভাষার দিক দিয়া কখনই লাভবান হইব না।...আমরা মনপ্রাণ দিয়া বঙ্গভাষার সেবা করিলে, প্রয়োজনীয় আরবী ফারসী শব্দ ধীরে ধীরে আপনিই বঙ্গভাষায় স্থান করিয়া নিবে। তজ্জন্য আমাদের স্বতন্ত্র চেষ্টা করিতে হইবে না।’ (বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, শ্রাবণ, ১৩২৫)।
ভাষাতত্ত্বে পড়াশোনা করে জেনেছি, ভাষা কোনোরকম জবরদস্তি পছন্দ করে না। ভাষা প্রবহমান থাকে তার জীবন্ত ব্যবহারে। জোর করে চাপিয়ে দিলেও তা ক্ষণকাল রাজত্ব করতে পারে বটে, কিন্তু সেটা ভাষাভাষী মানুষ গ্রহণ করে না। তাই সৈয়দ ইমদাদ আলীর এই কথাকে মূল্য দিলে পরবর্তীকালের বহু সংকট মোকাবিলা করা যেত।
হামেদ আলী অবশ্য কোনো দ্বিধার অবকাশ রাখেননি। তিনি সোজাসাপটা বলেছেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হউন, আর এতদ্দেশীয় হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী,—আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা।...কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্তে উর্দ্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর! দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্ন দর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আটিয়া থাকে।’ (বাসনা, ২য় ভাগ, বৈশাখ, ১৩১৬)।
তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করলে ভূরি ভূরি উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু এই উদাহরণগুলো থেকেই বোঝা যায়, বাংলা ভাষা প্রশ্নে যে দোদুল্যমানতা ছিল, সে কারণেই ১৯৪৮ সালে যখন ভাষার প্রশ্নটি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলো, তখনো তা সমগ্র দেশবাসীর ভাবনাকে আন্দোলিত করেনি। কিন্তু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় যে বাঙালি ধাক্কা খেয়েছিল, সে কথা অনায়াসেই বলা যায়।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫