ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
সিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে। এমনকি খাবারেও সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) একটি গবেষণায় দেখা গেছে খোলা, প্যাকেটজাত দুধ এবং দইয়ে সিসা, ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি। সিসা নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও ধূমপান, পানীয় জল, নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া পেট্রল, পেইন্ট, ব্যাটারি, খেলনা ইত্যাদির দ্বারাও সিসা ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে বছরে দুই লাখ টন সিসা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। মাটিতে মিশছে। তারপর উদ্ভিদের শরীরে যাচ্ছে। এরপর প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে। এভাবে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে মানুষের শরীরেও।
বাতাসের সিসা মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে, যার পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যুও। এ ছাড়া খাবারের মাধ্যমে শরীরের ভেতর সিসা প্রবেশ করলে বিভিন্ন অঙ্গ স্থায়ী বা সাময়িকভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন কিডনি বিকল হতে পারে। সিসা সরাসরি দেহের কোষকে ক্ষতি করে। এরপর অস্থিমজ্জা, লিভার ও কিডনিকেও আক্রান্ত করে। রোগী রক্তশূন্যতায় ভোগে। বন্ধ হয়ে যায় শ্বেতকণিকা উৎপাদন। শ্বেতকণিকা আমাদের দেহে রোগপ্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। এর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কমে যায়। ফলে নানা রকম রোগের সংক্রমণ ঘটতে থাকে।
এ ছাড়া সিসা আচরণগত সমস্যাও সৃষ্টি করে। শরীরে একবার সিসা প্রবেশ করলে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে বাহিত হতে থাকে। অল্প অল্প করে সিসা শরীরে জমা হতে থাকে। এটি প্রথমে হাড়ে জমা হয়। সব বয়সী মানুষের ওপরই এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে শিশুদের শরীরে এর প্রভাব অনেক বেশি। শিশুরা যখন হামাগুড়ি দিয়ে খেলে বা খেলনা ও অন্যান্য জিনিসে মুখ রাখে, তখন সিসা শরীরে প্রবেশ করে। তবে সমস্যা যেটা হলো, এর বিষক্রিয়া শিগগির বোঝা যায় না। এটি ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করে। যদি শরীরে সিসার বিষক্রিয়া আছে শনাক্ত করা না যায়, তবে পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি ও মারাত্মক মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বয়স্কদের প্রজনন সমস্যা, হজমের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, পেশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সিসাঘটিত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষকে অসুস্থ দেখায় না বলে রোগটা অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। এ জন্য রক্তে সিসার উপস্থিতি পরীক্ষা করা দরকার।
সিসার নানা রকম উৎস রয়েছে। বাতাস, মাটি, পানি ছাড়াও এটি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ভবন, সেতু, সুড়ঙ্গ নির্মাণ বা ভাঙার কাজ, ওয়েল্ডিং করা, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র ভাঙা, গাড়ি-নৌকা মেরামত করা, সিসা আছে এমন রঞ্জক বা গ্লেজ ব্যবহার করা, দাগযুক্ত কাচ, মাটির পাত্র বা গয়না নিয়ে কাজ—এ রকম নানা উৎস থেকে সিসা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ব্যাটারি তৈরির কারখানায় সিসা ব্যবহৃত হয়। লেড পেইন্ট দিয়ে বাড়ি রং করা হলে সেসব সিসা বাতাসে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে লেড এভিয়েশন গ্যাস ব্যবহার হয়। এসব শিশুর রক্তের সঙ্গে মিশে সিসার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সিসা থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদের কিছু করণীয় আছে। যেসব শিল্পকারখানায় সিসা ব্যবহার করা হয়, সেসব কারখানায় কাজ করলে ঘরে যাওয়ার আগে গোসল করে প্রবেশ করতে হবে। এ ছাড়া ঘর পরিষ্কার ও ধুলামুক্ত রাখতে হবে। জুতা খুলে ঘরে প্রবেশ করতে হবে। শিশুরা যেখানে খেলাধুলা করে, সেখানে ময়লা পড়ে থাকা জায়গাগুলো ঢেকে রাখা যেতে পারে।
সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সিসাদূষণ মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা গবেষণার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে তারা একটি বৈঠকও করে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেমন সিসাদূষণ মোকাবিলায় আইন তৈরি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা, দূষণের উৎসগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্রের আওতায় নিয়ে আসা, দূষণের উৎসগুলোকে চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা ইত্যাদি। যেহেতু সিসার বিষক্রিয়া সহজে ধরা পড়ে না, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়, সেহেতু সিসাদূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা জনসচেতনতার মাধ্যমে মোকাবিলা করাকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।
লেখক: ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র , শিক্ষক ও গবেষক
সিসা একটি নরম ধাতু। এটি ঈষৎ নীলাভ ধূসর বর্ণের। এর পারমাণবিক সংখ্যা ৮২। ধাতুটি এতটাই নরম যে একটি ছুরির সাহায্যে একে কাটা যায়। সিসা কিন্তু মারাত্মক ক্ষতিকর বিষ। এই বিষের ভেতরেই বাস করছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ। বাংলাদেশের বাতাসে যেমন সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে, তেমনি মাটিতে-পানিতেও পাওয়া গেছে। এমনকি খাবারেও সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) একটি গবেষণায় দেখা গেছে খোলা, প্যাকেটজাত দুধ এবং দইয়ে সিসা, ক্রোমিয়ামসহ অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি। সিসা নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। খাদ্যদ্রব্য ছাড়াও ধূমপান, পানীয় জল, নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করছে। এ ছাড়া পেট্রল, পেইন্ট, ব্যাটারি, খেলনা ইত্যাদির দ্বারাও সিসা ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানে বছরে দুই লাখ টন সিসা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্রকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। মাটিতে মিশছে। তারপর উদ্ভিদের শরীরে যাচ্ছে। এরপর প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করছে। এভাবে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে মানুষের শরীরেও।
বাতাসের সিসা মানুষের দেহে প্রবেশ করলে ক্যানসারসহ নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে, যার পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যুও। এ ছাড়া খাবারের মাধ্যমে শরীরের ভেতর সিসা প্রবেশ করলে বিভিন্ন অঙ্গ স্থায়ী বা সাময়িকভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন কিডনি বিকল হতে পারে। সিসা সরাসরি দেহের কোষকে ক্ষতি করে। এরপর অস্থিমজ্জা, লিভার ও কিডনিকেও আক্রান্ত করে। রোগী রক্তশূন্যতায় ভোগে। বন্ধ হয়ে যায় শ্বেতকণিকা উৎপাদন। শ্বেতকণিকা আমাদের দেহে রোগপ্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। এর সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও কমে যায়। ফলে নানা রকম রোগের সংক্রমণ ঘটতে থাকে।
এ ছাড়া সিসা আচরণগত সমস্যাও সৃষ্টি করে। শরীরে একবার সিসা প্রবেশ করলে রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে বাহিত হতে থাকে। অল্প অল্প করে সিসা শরীরে জমা হতে থাকে। এটি প্রথমে হাড়ে জমা হয়। সব বয়সী মানুষের ওপরই এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে শিশুদের শরীরে এর প্রভাব অনেক বেশি। শিশুরা যখন হামাগুড়ি দিয়ে খেলে বা খেলনা ও অন্যান্য জিনিসে মুখ রাখে, তখন সিসা শরীরে প্রবেশ করে। তবে সমস্যা যেটা হলো, এর বিষক্রিয়া শিগগির বোঝা যায় না। এটি ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করে। যদি শরীরে সিসার বিষক্রিয়া আছে শনাক্ত করা না যায়, তবে পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি ও মারাত্মক মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া বয়স্কদের প্রজনন সমস্যা, হজমের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, পেশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সিসাঘটিত বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষকে অসুস্থ দেখায় না বলে রোগটা অনেক দূর পর্যন্ত চলে যায়। এ জন্য রক্তে সিসার উপস্থিতি পরীক্ষা করা দরকার।
সিসার নানা রকম উৎস রয়েছে। বাতাস, মাটি, পানি ছাড়াও এটি নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ভবন, সেতু, সুড়ঙ্গ নির্মাণ বা ভাঙার কাজ, ওয়েল্ডিং করা, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র ভাঙা, গাড়ি-নৌকা মেরামত করা, সিসা আছে এমন রঞ্জক বা গ্লেজ ব্যবহার করা, দাগযুক্ত কাচ, মাটির পাত্র বা গয়না নিয়ে কাজ—এ রকম নানা উৎস থেকে সিসা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন ব্যাটারি তৈরির কারখানায় সিসা ব্যবহৃত হয়। লেড পেইন্ট দিয়ে বাড়ি রং করা হলে সেসব সিসা বাতাসে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে লেড এভিয়েশন গ্যাস ব্যবহার হয়। এসব শিশুর রক্তের সঙ্গে মিশে সিসার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
সিসা থেকে বাঁচতে আমাদের নিজেদের কিছু করণীয় আছে। যেসব শিল্পকারখানায় সিসা ব্যবহার করা হয়, সেসব কারখানায় কাজ করলে ঘরে যাওয়ার আগে গোসল করে প্রবেশ করতে হবে। এ ছাড়া ঘর পরিষ্কার ও ধুলামুক্ত রাখতে হবে। জুতা খুলে ঘরে প্রবেশ করতে হবে। শিশুরা যেখানে খেলাধুলা করে, সেখানে ময়লা পড়ে থাকা জায়গাগুলো ঢেকে রাখা যেতে পারে।
সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সিসাদূষণ মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা গবেষণার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে তারা একটি বৈঠকও করে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেমন সিসাদূষণ মোকাবিলায় আইন তৈরি ও নীতিমালা প্রণয়ন করা, দূষণের উৎসগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্রের আওতায় নিয়ে আসা, দূষণের উৎসগুলোকে চিহ্নিত করা এবং সে অনুযায়ী ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা ইত্যাদি। যেহেতু সিসার বিষক্রিয়া সহজে ধরা পড়ে না, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হয়, সেহেতু সিসাদূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা জনসচেতনতার মাধ্যমে মোকাবিলা করাকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।
লেখক: ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র , শিক্ষক ও গবেষক
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫