উদ্যোক্তা কৃষকদের অনেক বেশি আকৃষ্ট করছে নতুন নতুন ফল-ফসল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঠিক চাষপদ্ধতি জেনে উদ্যোগ গ্রহণ করা। পদ্ধতি ও কৌশল সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত লাভ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আধুনিক কৃষক নানাভাবেই প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে চান, শুধু তাঁর কাছে প্রযুক্তিটা পৌঁছে দিতে হবে, সহজভাবে শিখিয়ে দিতে হবে।
শাইখ সিরাজ
২০০৫ সালে আমি ভিয়েতনামের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথম ড্রাগন ফলের চিত্র তুলে ধরেছিলাম। তখন দেশের মানুষের কাছে ড্রাগন ফল তেমন পরিচিত ছিল না। তারও ১২-১৩ বছর পর বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হতে থাকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে অচেনা ফল ছিল ড্রাগন। এখন এই ফলটি চিনতে কারও বাকি নেই। বলা যেতে পারে, আমাদের দেশের ফলের তালিকায় এটি স্থান করে নিয়েছে।
গত এক দশকে উদ্যোক্তাদের তৎপরতার পাশাপাশি নানা পর্যায়ের গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং সম্প্রচারের ফলে মানুষের কাছে ফলটি দিনে দিনে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা জায়গায় ড্রাগন ফল উৎপাদনের সফলতার গল্প তুলে ধরেছি। অথচ খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০১০ সালে সাভারের আশুলিয়ার মচিরকাটা গ্রামে রুম্পা চক্রবর্তী শুরু করেছিলেন ড্রাগন ফলের চাষ। সেটিই ছিল দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক বাগানের কোনো সাফল্যের খবর। এরপর বাড়ির আনাচকানাচ থেকে শুরু করে বড় বড় খামারে সবখানে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের উৎপাদন।
কৃষক থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, গৃহিণী কিংবা শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ড্রাগন চাষের বাণিজ্যিক ব্যাপারটিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মেহেরপুর জেলা সদরের আশরাফপুর গ্রামের তরুণ মোল্লা তামিম হোসাইনের কথাই বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজখবর না করে কৃষিতেই খুঁজে নিতে চেয়েছেন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ। কিন্তু পড়াশোনা শেষে এমন এক সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল ড্রাগন ফলের চাষ। মাত্র এক বিঘা জমিতে ২০০ পিলারে ৮০০ ড্রাগনের গাছ রোপণ করেছেন তামিম। বছর ঘুরতেই একেকটি পিলারে ড্রাগনের গাছ যেমন ওপরে উঠেছে, তাঁর স্বপ্নও ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠছে সেখান থেকেই। লক্ষ্য ছিল দুই বছর পর লাভ ঘরে আসবে। কিন্তু তার আগেই খরচ উঠে আসে ড্রাগনের বাগান থেকে। এতে করে কৃষিতে বহুমুখী বিনিয়োগের আত্মবিশ্বাস জন্মেছে তাঁর মনে। ২০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন ড্রাগনবাগান। বলছেন ড্রাগন ফলের দাম যদি ৫০ টাকা কেজিতেও নেমে আসে, তখনো লাভ হবে এই ফল চাষে। এমন অনেক উদ্যোক্তার কথাই আমি জানি, যাঁরা ড্রাগন ফল চাষ করে নিজেদের কর্মসংস্থান করেছেন।
ড্রাগন সাধারণত শীতকালে ফলে না। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শীতকালেও ড্রাগন ফলানো সম্ভব। অমৌসুমের ফলনে লাভ বেশি। দেশের অনেক উদ্যোক্তাই ঝুঁকছেন এলইডি লাইট ব্যবহার করে অমৌসুমে ড্রাগন ফলনে।
২০১৮ সালের কথা। চীনের গোয়াংডং প্রদেশের জংশান শহর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে শিনশিং কাউন্টির একটি গ্রামে ঢুকেছি। সঙ্গে ছিলেন জংশানের কৃষিপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের এক উদ্যোক্তা লিউ হে এবং আমার সহকর্মী আদিত্য শাহীন ও তানভীর আশিক। তখন চীনে শীতকাল, শীতের দিনের মতোই মিষ্টি রোদ। গ্রামটিতে যখন প্রবেশ করলাম, সূর্য তখন পশ্চিম দিকে হেলেছে। ঝকঝকে নীল আকাশ। রাস্তার দুই পাশে ফসলের খেত। সোনালি রং নিয়ে ধান পেকে আছে। আছে সবজিবাগান। পালংশাকের চাষ করছেন কেউ। কেউবা সরিষার শাক কিংবা গাজর। মাঠে যেসব কৃষককে চোখে পড়ছে তাঁরা একেবারেই বৃদ্ধ। পুরুষ আর নারী বলে ভেদাভেদ নেই। একই কাজ নারী-পুরুষ মিলেমিশেই করছেন। পাহাড়ের পাশে চীনা ঐতিহ্যে কৃষি-খামার দেখে অভিভূত হলাম। পথ চলতে চলতেই চোখে পড়ল বিশাল ড্রাগন ফলের বাগান। শীতকাল সাধারণত ড্রাগন ফলের মৌসুম নয়। তাই ক্যাকটাস-জাতীয় এই গাছটির বাগান সবুজে ছেয়ে আছে। দিগন্ত বিস্তৃত ড্রাগন ফলের বাগান। দূরে চোখে পড়ল ড্রাগনবাগানে সাদা সাদা কী যেন ঝুলছে! একটা-দুইটা নয়, অসংখ্য। তানভীর আর আদিত্যের কাছে জানতে চাইলাম, ‘দূরের ওই সাদা জিনিসগুলো কী বুঝতে পারছ কিছু?’ তাঁদের চোখেও বিস্ময় ও কৌতূহল। জানতে চাইলাম লিউয়ের কাছে, ‘লিউ, বলো তো সাদা সাদা ওগুলো কী ঝুলছে?’ লিউ বিস্মিত চোখ নিয়ে তাঁর চায়নিজ উচ্চারণে ইংরেজিতে বলল, ‘আই অ্যাম নট শিওর।’ আমি বললাম, ‘খুব সম্ভবত ওগুলো লাইট। দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে অমৌসুমে ফল ফলানোর কোনো কৌশল।’ কারণ, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. মামুনুর রশীদ কন্দাল ফসল আলুর বীজ উৎপাদন নিয়ে কাজ করছিলেন। আমি সে সময় তাঁর গবেষণা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য গিয়েছিলাম। তখন দেখেছি লাইটের আলো ব্যবহার করে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কাজ করছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ধারণা করলাম, ওগুলো লাইট হতে পারে।
আমরা গাড়ি নিয়ে বাগানটিতে প্রবেশ করলাম। কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম সত্যি সেগুলো এলইডি লাইট। এক তরুণ উদ্যোক্তা, নাম লি, ৪০ একর জমি লিজ নিয়ে বিশাল এ ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। এলইডি বাতি লাগিয়ে তিনি সত্যি সত্যি দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর ফলে লাভও পাচ্ছেন। অমৌসুমেও পাচ্ছেন ফল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ঠিক ৬টায় অটোমেটিক জ্বলে উঠল বাতিগুলো। দারুণ প্রযুক্তিটি সত্যি পাল্টে দিয়েছে ড্রাগন ফল উৎপাদনের হিসাব-নিকাশ। প্রতিটি সারিতে মৌসুম শেষে নতুন করে পসরা সাজিয়ে এসেছে ড্রাগন ফল। শুধু বাতির সাহায্যে দিনের দৈর্ঘ্য একটু বাড়িয়ে দিয়েই চার মাসের জন্য ভরপুর ফলন পাওয়ার এক উত্তম ব্যবস্থা। এটি এলইডি বাল্বের এক জাদু।
সেই প্রতিবেদন টেলিভিশনে প্রচারের পর দেশে অনেকেই এলইডি বাতি ব্যবহার করে অমৌসুমেও ড্রাগন ফল উৎপাদন শুরু করেছেন। সেগুলোও আমি টেলিভিশনে তুলে ধরেছি। নওগাঁর হাফানিয়ার আবুল কালাম আজাদ নামের প্রকৌশলী তাঁর মোট ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগানের ২০ বিঘায় ব্যবহার করছেন এলইডি লাইট। হৃদয়ে মাটি ও মানুষে চীনের পর্বটি দেখে তিনিও শুরু করেন লাইট ব্যবহার। এখন অমৌসুমে ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভ পাচ্ছেন। শরীয়তপুরের জহিরুল ইসলাম এ বছর অমৌসুমে ফল পেতে তাঁর বাগানে যুক্ত করেছেন ৭০০ এলইডি লাইট। ফলে শীতের মৌসুমে বাগানে ফুল এসেছে। আরও অনেক উদ্যোক্তাই ড্রাগনবাগানে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
শুরুতেই বলেছি, উদ্যোক্তা কৃষকদের অনেক বেশি আকৃষ্ট করছে নতুন নতুন ফল-ফসল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঠিক চাষপদ্ধতি জেনে উদ্যোগ গ্রহণ করা। পদ্ধতি ও কৌশল সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত লাভ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আধুনিক কৃষক নানাভাবেই প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে চান, শুধু তাঁর কাছে প্রযুক্তিটা পৌঁছে দিতে হবে, সহজভাবে শিখিয়ে দিতে হবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
২০০৫ সালে আমি ভিয়েতনামের কৃষি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রথম ড্রাগন ফলের চিত্র তুলে ধরেছিলাম। তখন দেশের মানুষের কাছে ড্রাগন ফল তেমন পরিচিত ছিল না। তারও ১২-১৩ বছর পর বিদেশি ফল ‘ড্রাগন’ দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হতে থাকে। কয়েক বছর আগেও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে অচেনা ফল ছিল ড্রাগন। এখন এই ফলটি চিনতে কারও বাকি নেই। বলা যেতে পারে, আমাদের দেশের ফলের তালিকায় এটি স্থান করে নিয়েছে।
গত এক দশকে উদ্যোক্তাদের তৎপরতার পাশাপাশি নানা পর্যায়ের গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং সম্প্রচারের ফলে মানুষের কাছে ফলটি দিনে দিনে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে দেশের নানা জায়গায় ড্রাগন ফল উৎপাদনের সফলতার গল্প তুলে ধরেছি। অথচ খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০১০ সালে সাভারের আশুলিয়ার মচিরকাটা গ্রামে রুম্পা চক্রবর্তী শুরু করেছিলেন ড্রাগন ফলের চাষ। সেটিই ছিল দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক বাগানের কোনো সাফল্যের খবর। এরপর বাড়ির আনাচকানাচ থেকে শুরু করে বড় বড় খামারে সবখানে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফলের উৎপাদন।
কৃষক থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, গৃহিণী কিংবা শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ড্রাগন চাষের বাণিজ্যিক ব্যাপারটিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মেহেরপুর জেলা সদরের আশরাফপুর গ্রামের তরুণ মোল্লা তামিম হোসাইনের কথাই বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজখবর না করে কৃষিতেই খুঁজে নিতে চেয়েছেন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ। কিন্তু পড়াশোনা শেষে এমন এক সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল ড্রাগন ফলের চাষ। মাত্র এক বিঘা জমিতে ২০০ পিলারে ৮০০ ড্রাগনের গাছ রোপণ করেছেন তামিম। বছর ঘুরতেই একেকটি পিলারে ড্রাগনের গাছ যেমন ওপরে উঠেছে, তাঁর স্বপ্নও ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠছে সেখান থেকেই। লক্ষ্য ছিল দুই বছর পর লাভ ঘরে আসবে। কিন্তু তার আগেই খরচ উঠে আসে ড্রাগনের বাগান থেকে। এতে করে কৃষিতে বহুমুখী বিনিয়োগের আত্মবিশ্বাস জন্মেছে তাঁর মনে। ২০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তিনি তৈরি করেছেন ড্রাগনবাগান। বলছেন ড্রাগন ফলের দাম যদি ৫০ টাকা কেজিতেও নেমে আসে, তখনো লাভ হবে এই ফল চাষে। এমন অনেক উদ্যোক্তার কথাই আমি জানি, যাঁরা ড্রাগন ফল চাষ করে নিজেদের কর্মসংস্থান করেছেন।
ড্রাগন সাধারণত শীতকালে ফলে না। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে শীতকালেও ড্রাগন ফলানো সম্ভব। অমৌসুমের ফলনে লাভ বেশি। দেশের অনেক উদ্যোক্তাই ঝুঁকছেন এলইডি লাইট ব্যবহার করে অমৌসুমে ড্রাগন ফলনে।
২০১৮ সালের কথা। চীনের গোয়াংডং প্রদেশের জংশান শহর থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে শিনশিং কাউন্টির একটি গ্রামে ঢুকেছি। সঙ্গে ছিলেন জংশানের কৃষিপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের এক উদ্যোক্তা লিউ হে এবং আমার সহকর্মী আদিত্য শাহীন ও তানভীর আশিক। তখন চীনে শীতকাল, শীতের দিনের মতোই মিষ্টি রোদ। গ্রামটিতে যখন প্রবেশ করলাম, সূর্য তখন পশ্চিম দিকে হেলেছে। ঝকঝকে নীল আকাশ। রাস্তার দুই পাশে ফসলের খেত। সোনালি রং নিয়ে ধান পেকে আছে। আছে সবজিবাগান। পালংশাকের চাষ করছেন কেউ। কেউবা সরিষার শাক কিংবা গাজর। মাঠে যেসব কৃষককে চোখে পড়ছে তাঁরা একেবারেই বৃদ্ধ। পুরুষ আর নারী বলে ভেদাভেদ নেই। একই কাজ নারী-পুরুষ মিলেমিশেই করছেন। পাহাড়ের পাশে চীনা ঐতিহ্যে কৃষি-খামার দেখে অভিভূত হলাম। পথ চলতে চলতেই চোখে পড়ল বিশাল ড্রাগন ফলের বাগান। শীতকাল সাধারণত ড্রাগন ফলের মৌসুম নয়। তাই ক্যাকটাস-জাতীয় এই গাছটির বাগান সবুজে ছেয়ে আছে। দিগন্ত বিস্তৃত ড্রাগন ফলের বাগান। দূরে চোখে পড়ল ড্রাগনবাগানে সাদা সাদা কী যেন ঝুলছে! একটা-দুইটা নয়, অসংখ্য। তানভীর আর আদিত্যের কাছে জানতে চাইলাম, ‘দূরের ওই সাদা জিনিসগুলো কী বুঝতে পারছ কিছু?’ তাঁদের চোখেও বিস্ময় ও কৌতূহল। জানতে চাইলাম লিউয়ের কাছে, ‘লিউ, বলো তো সাদা সাদা ওগুলো কী ঝুলছে?’ লিউ বিস্মিত চোখ নিয়ে তাঁর চায়নিজ উচ্চারণে ইংরেজিতে বলল, ‘আই অ্যাম নট শিওর।’ আমি বললাম, ‘খুব সম্ভবত ওগুলো লাইট। দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে অমৌসুমে ফল ফলানোর কোনো কৌশল।’ কারণ, নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. মামুনুর রশীদ কন্দাল ফসল আলুর বীজ উৎপাদন নিয়ে কাজ করছিলেন। আমি সে সময় তাঁর গবেষণা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য গিয়েছিলাম। তখন দেখেছি লাইটের আলো ব্যবহার করে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ানোর কাজ করছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ধারণা করলাম, ওগুলো লাইট হতে পারে।
আমরা গাড়ি নিয়ে বাগানটিতে প্রবেশ করলাম। কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম সত্যি সেগুলো এলইডি লাইট। এক তরুণ উদ্যোক্তা, নাম লি, ৪০ একর জমি লিজ নিয়ে বিশাল এ ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। এলইডি বাতি লাগিয়ে তিনি সত্যি সত্যি দিনের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর ফলে লাভও পাচ্ছেন। অমৌসুমেও পাচ্ছেন ফল। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর ঠিক ৬টায় অটোমেটিক জ্বলে উঠল বাতিগুলো। দারুণ প্রযুক্তিটি সত্যি পাল্টে দিয়েছে ড্রাগন ফল উৎপাদনের হিসাব-নিকাশ। প্রতিটি সারিতে মৌসুম শেষে নতুন করে পসরা সাজিয়ে এসেছে ড্রাগন ফল। শুধু বাতির সাহায্যে দিনের দৈর্ঘ্য একটু বাড়িয়ে দিয়েই চার মাসের জন্য ভরপুর ফলন পাওয়ার এক উত্তম ব্যবস্থা। এটি এলইডি বাল্বের এক জাদু।
সেই প্রতিবেদন টেলিভিশনে প্রচারের পর দেশে অনেকেই এলইডি বাতি ব্যবহার করে অমৌসুমেও ড্রাগন ফল উৎপাদন শুরু করেছেন। সেগুলোও আমি টেলিভিশনে তুলে ধরেছি। নওগাঁর হাফানিয়ার আবুল কালাম আজাদ নামের প্রকৌশলী তাঁর মোট ৪৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগানের ২০ বিঘায় ব্যবহার করছেন এলইডি লাইট। হৃদয়ে মাটি ও মানুষে চীনের পর্বটি দেখে তিনিও শুরু করেন লাইট ব্যবহার। এখন অমৌসুমে ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভ পাচ্ছেন। শরীয়তপুরের জহিরুল ইসলাম এ বছর অমৌসুমে ফল পেতে তাঁর বাগানে যুক্ত করেছেন ৭০০ এলইডি লাইট। ফলে শীতের মৌসুমে বাগানে ফুল এসেছে। আরও অনেক উদ্যোক্তাই ড্রাগনবাগানে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন।
শুরুতেই বলেছি, উদ্যোক্তা কৃষকদের অনেক বেশি আকৃষ্ট করছে নতুন নতুন ফল-ফসল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঠিক চাষপদ্ধতি জেনে উদ্যোগ গ্রহণ করা। পদ্ধতি ও কৌশল সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত লাভ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আধুনিক কৃষক নানাভাবেই প্রযুক্তির ব্যবহার জানতে চান, শুধু তাঁর কাছে প্রযুক্তিটা পৌঁছে দিতে হবে, সহজভাবে শিখিয়ে দিতে হবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫