ড. আর এম দেবনাথ
কয়েক দিন আগে অর্থ আত্মসাতের একটি খবর পাঠ করলাম। অবশ্য তা আমাদের দেশের নয়। দেশের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রতিদিন কাগজে ছাপা হয়, পড়ি আর বিস্মিত হই। ক্ষুব্ধ হই। অসহায়ত্ব প্রকাশ করি। এই প্রেক্ষাপটে যখন ভিন্ন দেশের খবর পড়ি, তখনো কিছুটা অবাকই হই। অবশ্য প্রতিবেশী ভারতের আত্মসাতের খবর হলে এত বিস্মিত হতাম না। কারণ, ওদের খবরও আমাদের মতোই বরাবর পড়ি। বলাই বাহুল্য, খবরটি আমার প্রিয় একটি দেশের। দেশটির নাম ভিয়েতনাম। আজকের প্রজন্মের যুবকেরা হয়তো জিনিসটা এতটা জানে না। প্রাক্-স্বাধীনতাকালে আমাদের প্রজন্মের কাছে ভিয়েতনাম ছিল আদর্শ দেশ। কেন? কারণ, তারা লড়াকু দেশ। লড়াই করছে একমাত্র শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। লোমহর্ষক সব খবর। হাজার হাজার লোক বাংকারে থেকে লড়াই করছে। মার্কিনরা বিমান থেকে বোমা ফেলছে। হাজার হাজার লোক প্রাণ দিচ্ছে। লোকের বাড়িঘর নেই। সমাজ নেই। অর্থনীতি নেই। এসব দৈনন্দিন খবর ছিল আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। নেতা হো চি মিন, যাঁর নামে এখন রাজধানী শহর। হো চি মিন আমাদের নেতা। কাস্ত্রো, সুকর্ণ, সাদ্দাম—এঁরা আমাদের নেতা। তাঁদের নামে আমরা বামপন্থীরা স্লোগান দিই, সমাজতন্ত্রের কথা বলি। কী আদর্শরে বাবা! নিম্নমধ্যবিত্তের স্বপ্নের আদর্শ—সবার ভাত-কাপড়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসের জায়গা। অসম্ভব কল্পনা! সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে লড়ছি আমরা। নিজ দেশেও চলছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। ৬ দফা থেকে ১১ দফা আন্দোলন।
সেই ভিয়েতনাম আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই স্বাধীনতা লাভ করে। উন্নয়নের পথ ধরে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে। দারুণ খবর! তার সফলতায় খুশি হই। ব্যর্থতায় ব্যথিত হই। এখনকার দিনে ভিয়েতনাম একটি নাম। এশিয়ায় আরও ছিল জাপানের আধিপত্য। আমাদের বাজারে ছিল শুধুই জাপানি মাল। ঢাকার বাজারে আজকের দিনে চীনা মাল। তখন ছিল জাপানি মাল। জাপান আজ নেই। আজ ভিয়েতনাম আমাদের অঞ্চলে নয় শুধু, সারা বিশ্বে উদীয়মান উন্নয়নের দেশ। তৈরি পোশাকে এবার তারা আমাদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা প্রচুর। চাল রপ্তানি করে তারা। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তাদের। তাদের জিডিপি বাড়ছে ৭ শতাংশ হারে। অর্থনীতির আকার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন=শত কোটি) ডলার। প্রতিবছর রপ্তানি করে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মাল। পিপিপি (পারচেইজিং পাওয়ার প্যারিটি) হারে মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫ হাজার ডলার। তারা প্রাধান্য দিচ্ছে উৎপাদন ও সেবা শিল্পকে। শিক্ষার হার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। দেশে দারিদ্র্য নেই বললেই চলে।
যে খবরটির কথা বলছিলাম, তা ওই দেশটির। কী খবর? খবরটি হচ্ছে টাকা আত্মসাতের। বলে কী! এমন একটি দেশে টাকা আত্মসাতের ঘটনা? যে দেশ ছিল সারা বিশ্বের অনুকরণীয় একটি দেশ। দেখা যাচ্ছে, ভিয়েতনামের শীর্ষ একজন নারী ব্যবসায়ী, যাঁর নাম ট্রুয়ং মাই লান। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা একটি ব্যাংক থেকে মাত্র ৪৪ বিলিয়ন ডলার মেরে দিয়েছেন, মাত্র ১২ বছরে! এর মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। এ জন্য তাঁর ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। তবে মজার ঘটনা এই যে আদালত বলেছেন যদি তিনি আত্মসাৎকৃত ডলারের তিন ভাগের দুই ভাগ ফেরত দেন তাহলে তাঁর শাস্তি মৃত্যু থেকে যাবজ্জীবনে পর্যবসিত হবে। এদিকে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাংকের বারোটা বাজার উপক্রম! কোনো ক্রেতা নেই।
খবরটি ভালো করে পড়ে একটু ভাবলাম রাশিয়া, ভারত, চীনসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের কথা। দেখলাম সর্বত্র একই চিত্র। বাজার অর্থনীতির সব দেশে একই চিত্র। রাশিয়া এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগামী। দেখলাম আমাদের ব্যাংকে দেশে যেমন চুরিচামারি, অর্থ পাচারের বিশাল বিশাল ঘটনা, ওইসব দেশেও একই ঘটনা। এই ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের এক নারী ব্যবসায়ী আবাসন ব্যবসা করে শুধু একটি ব্যাংক থেকেই ৪৪ বিলিয়ন ডলার মেরে দিয়েছেন! ভাবা যায়! আমাদের বাংলাদেশে কয়জন ব্যবসায়ী এককভাবে ৪৪ বিলিয়ন ডলার ব্যাংক থেকে মেরে দিয়েছেন? নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। তবে সরকারের একটি কমিটি রিপোর্ট থেকে কত টাকা দেশ থেকে গত ১৫ বছরে পাচার হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়। সেই হিসাবে দেখা যায়, ১৫ বছরে সবাই মিলে দেশ থেকে পাচার করেছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই অর্থ কোথায় কোথায় গিয়েছে। এখন প্রশ্ন একটি। আর সেটি হচ্ছে, আমাদের দেশে যা ঘটছে, দেখা যাচ্ছে লড়াকু দেশ ভিয়েতনামেও তা ঘটছে। বস্তুত চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিলের মতো যত দেশ আছে, সব দেশেই একই ঘটনা ঘটছে। ধনীরা ‘মারুপার্টিরা’ কেউ নিজ দেশে টাকা রাখতে চায় না। টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে না। তারা অর্থ লুট করে দেশে। ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দেয় বিদেশে। সেখানে বাড়িঘর করে, সম্পত্তি-সম্পদ করে, ভোগের জীবন যাপন করে। এটা কি আজকের ঘটনা? আমার মনে হয় না। বহুদিন ধরে চলে আসছে। পাকিস্তান আমলেও (১৯৪৭-১৯৭১) একই কথা শুনেছি। তখন যুক্তি হিসেবে আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন ‘বর্ডারের’ কথা। তাঁরা বলতেন, যত দিন দেশে চুরির ব্যবস্থা আছে, ঘুষ-দুর্নীতির ব্যবস্থা আছে, তত দিন চোরেরা চুরির টাকা বিদেশে রাখতে আগ্রহী হবে। আর বিদেশিরাও ওইসব টাকা আদরে গ্রহণ করবে। ‘বর্ডার’ এর কারণ। বর্ডার মানে আলাদা দেশ। আলাদা আইন। একেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান একেক রকমের। একেকজনের প্রয়োজন একেক রকমের। তাই একেকজনের অর্থনৈতিক নীতিও ভিন্ন রকমের। বিদেশিরা পছন্দ করে বিনিয়োগ-ব্যবসা। ডলার কোত্থেকে এল, তা নিয়ে তারা ভাবে না।
বর্তমান ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ঘটনাটি থেকে কী শিক্ষা? আমাদের এখানে যা ঘটছে, ওখানেও তা-ই ঘটছে। আবার বিচার-আচারও হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশেও চোরাদের বিচার-আচার শুরু হয়েছে। প্রাথমিক কাজ হিসেবে অর্থ পাচারের এবার রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা স্বয়ং বলেছেন, তিনি রিপোর্টটি দেখেছেন। তবে এতে খুব বেশি কিছু নেই। যা-ই আছে, তা-ই আমাদের কাছে অবাক করা বিষয় অবশ্যই। আমরা আশা করি, ভিয়েতনামের মতো আমাদের দেশেও ‘টপ চোরাদের’ বিচার সম্পন্ন হবে। দেশে এমন একটা ব্যবস্থা দরকার, যাতে চোরাদের, অর্থ পাচারকারীদের ছেলেমেয়েরা ওই ধনসম্পদ ভোগ করতে না পারে। এটা হলে চুরি বন্ধে একটি বড় কাজ হবে। যদি চোরাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজনেরা দেখে চুরির টাকা ভোগ করা যাবে না, তাহলে চুরি করার প্রবণতা কমবে। আরেকটি কথা, ভালো কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, অর্থ পাচারকারীদের ঘুম-শান্তি তিনি বিনষ্ট করে দেবেন। খুবই ভালো অঙ্গীকার। তিনি যখন বলেছেন, কাজেই নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করে বলেছেন। আমরাও আসলে চাই, চোরারা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে না পারুক। এটা কঠিন কিছু বিষয় নয়। টাকা চোরাদের বা অর্থ পাচারকারীদের যদি শাস্তি ফাঁসি হয়, আর দুই-একটাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষ বুঝবে দেশের বিচারব্যবস্থা কাজ করছে। আমরা এখন এটাই চাই। তবে শর্ত, কলকারখানা যাতে চালু থাকে।
কয়েক দিন আগে অর্থ আত্মসাতের একটি খবর পাঠ করলাম। অবশ্য তা আমাদের দেশের নয়। দেশের অর্থ আত্মসাতের খবর প্রতিদিন কাগজে ছাপা হয়, পড়ি আর বিস্মিত হই। ক্ষুব্ধ হই। অসহায়ত্ব প্রকাশ করি। এই প্রেক্ষাপটে যখন ভিন্ন দেশের খবর পড়ি, তখনো কিছুটা অবাকই হই। অবশ্য প্রতিবেশী ভারতের আত্মসাতের খবর হলে এত বিস্মিত হতাম না। কারণ, ওদের খবরও আমাদের মতোই বরাবর পড়ি। বলাই বাহুল্য, খবরটি আমার প্রিয় একটি দেশের। দেশটির নাম ভিয়েতনাম। আজকের প্রজন্মের যুবকেরা হয়তো জিনিসটা এতটা জানে না। প্রাক্-স্বাধীনতাকালে আমাদের প্রজন্মের কাছে ভিয়েতনাম ছিল আদর্শ দেশ। কেন? কারণ, তারা লড়াকু দেশ। লড়াই করছে একমাত্র শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। লোমহর্ষক সব খবর। হাজার হাজার লোক বাংকারে থেকে লড়াই করছে। মার্কিনরা বিমান থেকে বোমা ফেলছে। হাজার হাজার লোক প্রাণ দিচ্ছে। লোকের বাড়িঘর নেই। সমাজ নেই। অর্থনীতি নেই। এসব দৈনন্দিন খবর ছিল আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। নেতা হো চি মিন, যাঁর নামে এখন রাজধানী শহর। হো চি মিন আমাদের নেতা। কাস্ত্রো, সুকর্ণ, সাদ্দাম—এঁরা আমাদের নেতা। তাঁদের নামে আমরা বামপন্থীরা স্লোগান দিই, সমাজতন্ত্রের কথা বলি। কী আদর্শরে বাবা! নিম্নমধ্যবিত্তের স্বপ্নের আদর্শ—সবার ভাত-কাপড়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসের জায়গা। অসম্ভব কল্পনা! সেই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে লড়ছি আমরা। নিজ দেশেও চলছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। ৬ দফা থেকে ১১ দফা আন্দোলন।
সেই ভিয়েতনাম আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই স্বাধীনতা লাভ করে। উন্নয়নের পথ ধরে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে। দারুণ খবর! তার সফলতায় খুশি হই। ব্যর্থতায় ব্যথিত হই। এখনকার দিনে ভিয়েতনাম একটি নাম। এশিয়ায় আরও ছিল জাপানের আধিপত্য। আমাদের বাজারে ছিল শুধুই জাপানি মাল। ঢাকার বাজারে আজকের দিনে চীনা মাল। তখন ছিল জাপানি মাল। জাপান আজ নেই। আজ ভিয়েতনাম আমাদের অঞ্চলে নয় শুধু, সারা বিশ্বে উদীয়মান উন্নয়নের দেশ। তৈরি পোশাকে এবার তারা আমাদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা প্রচুর। চাল রপ্তানি করে তারা। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তাদের। তাদের জিডিপি বাড়ছে ৭ শতাংশ হারে। অর্থনীতির আকার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন=শত কোটি) ডলার। প্রতিবছর রপ্তানি করে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মাল। পিপিপি (পারচেইজিং পাওয়ার প্যারিটি) হারে মাথাপিছু আয় প্রায় ১৫ হাজার ডলার। তারা প্রাধান্য দিচ্ছে উৎপাদন ও সেবা শিল্পকে। শিক্ষার হার থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়। দেশে দারিদ্র্য নেই বললেই চলে।
যে খবরটির কথা বলছিলাম, তা ওই দেশটির। কী খবর? খবরটি হচ্ছে টাকা আত্মসাতের। বলে কী! এমন একটি দেশে টাকা আত্মসাতের ঘটনা? যে দেশ ছিল সারা বিশ্বের অনুকরণীয় একটি দেশ। দেখা যাচ্ছে, ভিয়েতনামের শীর্ষ একজন নারী ব্যবসায়ী, যাঁর নাম ট্রুয়ং মাই লান। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা একটি ব্যাংক থেকে মাত্র ৪৪ বিলিয়ন ডলার মেরে দিয়েছেন, মাত্র ১২ বছরে! এর মধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আদালতে। এ জন্য তাঁর ফাঁসির দণ্ডাদেশ হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। তবে মজার ঘটনা এই যে আদালত বলেছেন যদি তিনি আত্মসাৎকৃত ডলারের তিন ভাগের দুই ভাগ ফেরত দেন তাহলে তাঁর শাস্তি মৃত্যু থেকে যাবজ্জীবনে পর্যবসিত হবে। এদিকে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধারকৃত সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে ব্যাংকের বারোটা বাজার উপক্রম! কোনো ক্রেতা নেই।
খবরটি ভালো করে পড়ে একটু ভাবলাম রাশিয়া, ভারত, চীনসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের কথা। দেখলাম সর্বত্র একই চিত্র। বাজার অর্থনীতির সব দেশে একই চিত্র। রাশিয়া এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগামী। দেখলাম আমাদের ব্যাংকে দেশে যেমন চুরিচামারি, অর্থ পাচারের বিশাল বিশাল ঘটনা, ওইসব দেশেও একই ঘটনা। এই ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের এক নারী ব্যবসায়ী আবাসন ব্যবসা করে শুধু একটি ব্যাংক থেকেই ৪৪ বিলিয়ন ডলার মেরে দিয়েছেন! ভাবা যায়! আমাদের বাংলাদেশে কয়জন ব্যবসায়ী এককভাবে ৪৪ বিলিয়ন ডলার ব্যাংক থেকে মেরে দিয়েছেন? নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। তবে সরকারের একটি কমিটি রিপোর্ট থেকে কত টাকা দেশ থেকে গত ১৫ বছরে পাচার হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়। সেই হিসাবে দেখা যায়, ১৫ বছরে সবাই মিলে দেশ থেকে পাচার করেছে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই অর্থ কোথায় কোথায় গিয়েছে। এখন প্রশ্ন একটি। আর সেটি হচ্ছে, আমাদের দেশে যা ঘটছে, দেখা যাচ্ছে লড়াকু দেশ ভিয়েতনামেও তা ঘটছে। বস্তুত চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিলের মতো যত দেশ আছে, সব দেশেই একই ঘটনা ঘটছে। ধনীরা ‘মারুপার্টিরা’ কেউ নিজ দেশে টাকা রাখতে চায় না। টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে না। তারা অর্থ লুট করে দেশে। ছেলেমেয়ে পাঠিয়ে দেয় বিদেশে। সেখানে বাড়িঘর করে, সম্পত্তি-সম্পদ করে, ভোগের জীবন যাপন করে। এটা কি আজকের ঘটনা? আমার মনে হয় না। বহুদিন ধরে চলে আসছে। পাকিস্তান আমলেও (১৯৪৭-১৯৭১) একই কথা শুনেছি। তখন যুক্তি হিসেবে আমাদের শিক্ষকেরা বলতেন ‘বর্ডারের’ কথা। তাঁরা বলতেন, যত দিন দেশে চুরির ব্যবস্থা আছে, ঘুষ-দুর্নীতির ব্যবস্থা আছে, তত দিন চোরেরা চুরির টাকা বিদেশে রাখতে আগ্রহী হবে। আর বিদেশিরাও ওইসব টাকা আদরে গ্রহণ করবে। ‘বর্ডার’ এর কারণ। বর্ডার মানে আলাদা দেশ। আলাদা আইন। একেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থান একেক রকমের। একেকজনের প্রয়োজন একেক রকমের। তাই একেকজনের অর্থনৈতিক নীতিও ভিন্ন রকমের। বিদেশিরা পছন্দ করে বিনিয়োগ-ব্যবসা। ডলার কোত্থেকে এল, তা নিয়ে তারা ভাবে না।
বর্তমান ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ঘটনাটি থেকে কী শিক্ষা? আমাদের এখানে যা ঘটছে, ওখানেও তা-ই ঘটছে। আবার বিচার-আচারও হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশেও চোরাদের বিচার-আচার শুরু হয়েছে। প্রাথমিক কাজ হিসেবে অর্থ পাচারের এবার রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা স্বয়ং বলেছেন, তিনি রিপোর্টটি দেখেছেন। তবে এতে খুব বেশি কিছু নেই। যা-ই আছে, তা-ই আমাদের কাছে অবাক করা বিষয় অবশ্যই। আমরা আশা করি, ভিয়েতনামের মতো আমাদের দেশেও ‘টপ চোরাদের’ বিচার সম্পন্ন হবে। দেশে এমন একটা ব্যবস্থা দরকার, যাতে চোরাদের, অর্থ পাচারকারীদের ছেলেমেয়েরা ওই ধনসম্পদ ভোগ করতে না পারে। এটা হলে চুরি বন্ধে একটি বড় কাজ হবে। যদি চোরাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজনেরা দেখে চুরির টাকা ভোগ করা যাবে না, তাহলে চুরি করার প্রবণতা কমবে। আরেকটি কথা, ভালো কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। কিছুদিন আগে তিনি বলেছিলেন, অর্থ পাচারকারীদের ঘুম-শান্তি তিনি বিনষ্ট করে দেবেন। খুবই ভালো অঙ্গীকার। তিনি যখন বলেছেন, কাজেই নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করে বলেছেন। আমরাও আসলে চাই, চোরারা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে না পারুক। এটা কঠিন কিছু বিষয় নয়। টাকা চোরাদের বা অর্থ পাচারকারীদের যদি শাস্তি ফাঁসি হয়, আর দুই-একটাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষ বুঝবে দেশের বিচারব্যবস্থা কাজ করছে। আমরা এখন এটাই চাই। তবে শর্ত, কলকারখানা যাতে চালু থাকে।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫