অজয় দাশগুপ্ত
তারুণ্য ঝলমল বাংলাদেশ এখন এক নতুন পথের সন্ধানে। সে পথ ও মত কী বা কতটা, তার প্রমাণ মিলবে সময়ে। আপাতত আমরা এটা দেখছি, বাংলাদেশ ও তার ইতিহাস আর যা-ই মানুক, একক কোনো কিছু মানে না। এককের নামে যেকোনো দানবই আমাদের দেশে পরাজিত হয়েছে। কারণ, এই মাটি আর জাতির চরিত্রে একক দৈত্য বা দানবের জায়গা নেই। অতিকায় কিছু নয়, সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝলেই বাংলাদেশকে জানা সম্ভব। বাংলাদেশ সব সময় একটি মায়াময় সমাজের দেশ। বাইরে থেকে যত ইন্ধন আর উসকানি থাক না কেন, মানুষ ভুল করে না। এই মানুষ বা জাতির স্বপ্ন আর আশা বাস্তবায়ন করা গেলেই ঝলমল করে উঠবে বাংলাদেশ। একটা কথা বলা দরকার—বাংলাদেশ স্বাধীন ও আশাপ্রিয় জাতির দেশ। তার স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ সেদিক থেকে অসীম।
এই পজিটিভ বাংলাদেশকে সময়ের হাতে ছেড়ে দিলে আমাদের জাতি এগোতে পারবে না। আশপাশে তাকালে দেখব, অন্য দেশগুলো তরতর করে এগিয়ে চলেছে। অনেক সময় পরিসংখ্যান আমাদের হয়ে কথা বললেও মূল সমস্যা অন্যত্র। মনে রাখতে হবে, পরিসংখ্যান বা সমস্ত উপাত্তকে পিছে ফেলে এখন পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেন ভয়াবহ? তারা পরিশ্রমী, মেধাবী হলেও তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আগামীর কারণ রাজনীতি। রাজনীতি ও নেতৃত্ব দূরদৃষ্টি সম্পন্ন না হলে কোনো জাতি এগোতে পারে না। তার প্রমাণ উপমহাদেশের এই দুই দেশ। অন্যদিকে নানাভাবে পিছিয়ে থাকলেও নেপাল বা শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। শ্রীলঙ্কা তাদের সর্বনাশের রাত কাটিয়ে এখন আবার জয়রথে। সম্প্রতি তাদের মূল্যস্ফীতি নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়। এটা কোনো ম্যাজিক না, এমন উজ্জ্বল উদাহরণ তখনই সম্ভব যখন জাতি সবকিছু বাদ দিয়ে দেশ গঠনে এক থাকে।
আমাদের সুসময় ছিল, যেমন ধরুন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এই অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ঈর্ষণীয় বলে বর্ণনা করেন। এ দেশের জনগণ নিজেদের সাফল্যের জন্য গর্ব করতে পারেন। কারণ, দেশের অর্থনীতি এখন অনেক মজবুত। এ দেশের এই বিপুল সম্ভাবনার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ‘আউট অব দ্য বাস্কেট’ নিবন্ধে বলেছে, ‘কী করা যায়, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।’ ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এশিয়ান টাইগার। এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যতম। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আজ বিশ্ববাসীর কাছেও অনুকরণীয়। তিনি বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
গত ২ অক্টোবর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের অর্জন অবিস্মরণীয়। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের মতো দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
এই অক্টোবরেই ইকোনমিস্ট ‘বাংলাদেশ টাইগার ইন দ্য নাইট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, ৩০ বছরে বাংলাদেশ পাল্টেছে অনেকখানি। বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে প্রবৃদ্ধি, ঠিক চীনের মতো। অনেক সামাজিক সূচকের দিক দিয়ে বিশাল প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। দেশের উদীয়মান পোশাকশিল্প রপ্তানির দিক দিয়ে পিছিয়ে কেবল চীন থেকে। এ শিল্প এবং প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মঠ শ্রমিকের পাঠানো টাকায় বাংলাদেশ গত ১০ বছরে একবার বাদে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত ভোগ করেছে।
বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু গ্রামীণ জীবন। সেখানে নানা অনাচার, মিথ্যা আর কপটতা আছে। আছে শোষণ। বহুকাল আগে আমাদের দেশের সমাজ বিষয়ে বলা হয়েছিল, এখানে মাৎস্যন্যায় চলে। যার মানে সবাই মাছের মতো এক পানি এক জলাশয়ে বসবাস করে, কিন্তু প্রয়োজনে বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন এমনকি জুলাই বিপ্লবের মতো পরিবর্তন হলেও সমাজের এসব বিষয়ে উদাসীন। আমরা সবাই জানি, শহর ও গ্রামকেন্দ্রিক উভয় সমাজে ধর্ম, ন্যায়, অন্যায়—এসব চলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। এসব প্রাগৈতিহাসিক কাহিনি জাদুঘরে পাঠানোর কথা শুনলেও তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। অচিরে হবে, তেমন কোনো আশাও দেখি না।
অথচ বাংলাদেশ মন খুলে সবুর করছে। বহুকাল থেকে তার স্বাধীনতা, সম্মান আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা রাজনীতি—এসব দিকে তাকানোর সময় পায় না। তার নজর অন্যদিকে। টাকাপয়সা কামানো বা টাকা পাচারের যে সংস্কৃতি—সেটি বিগত ১৬ বছর ধরে দেশকে সর্বস্বান্ত করার চেষ্টা করে গেছে।
সেই বাংলাদেশকে আমরা আমাদের মনের মতো করে সাজাতে হলে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অমীমাংসিত সব বিষয়ে মতভেদ দূর করে যদি নিজেদের একক ও একমাত্র বাংলাদেশি পরিচয়ে সতেজ রাখা যায়, তাহলেই তা সম্ভব। মনে রাখা দরকার, কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা। সে কথা বলার আগে বলি, ‘আমরা’ বলতে এখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দেখা প্রজন্মের কথা বলছি। আমাদের বালক বেলার শেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পুরো তারুণ্য আর যৌবনজুড়ে আমরা যে দেশ দেখেছি, তার গায়ে অভাব আর অসচ্ছলতার চিহ্ন থাকলেও মায়া-মমতার কমতি ছিল না কোথাও। আমরা জানতাম স্বাধীনতার ব্যাপ্তি ও সীমাবদ্ধতা কতটা। স্বাধীনতা মানে কি যার যা ইচ্ছে করতে পারা? তাহলে তো উগ্রতা, সংকীর্ণতা বা দেশবিরোধিতা করাও স্বাধীনতা। মূলত স্বাধীনতা একটি জাতির সুশৃঙ্খল জীবন ও মুক্ত থাকার অধিকার। এমন একটি বাংলাদেশই চেয়েছিলাম আমরা।
বাংলাদেশ এবং তার মুক্তিযুদ্ধ আগাগোড়াই রাজনীতির সুবর্ণ ফসল। রাজনীতিই তখন আমাদের পথ দেখাত। আজ মানুষ যাদের ভয় পায় বা যাদের কথা বিশ্বাস করে না, তাঁরাই ছিলেন তখন মুক্তিদাতা। মানে রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলছি। যাঁরা তখন রাজনীতি করতেন, তাঁরা মেপে কথা বলতেন। কাজ করতেন অধিক। পরবর্তী সময় হয়ে গেল এর উল্টো।
আমি আজকাল কোনো বিরোধিতা দেখি না। যা দেখি, তার নাম অপপ্রচার আর কুৎসা। এটাও আমাদের সমাজ বিকৃতির ফসল। খেয়াল করবেন, কোনো শুভ বিষয় বা ভালো কিছু আজকাল মানুষকে টানে না। সামাজিক মিডিয়া চালু হওয়ার পর সবকিছু চলে গেছে অপপ্রচারের দখলে। যাঁরা এখন মাথার ওপর আছেন, তাঁদের দেখলে করুণা হয়। করুণা এই কারণে—একটা সময় আমাদের সমাজে যখন অবরুদ্ধ মানুষ কথা বলতে ভয় পেত বা তাদের সামাজিক জগৎ অন্ধকারে থাকত, তখন রাজনীতিবিদেরা পথ দেখাতেন। এখন এঁরাই অন্ধ।
বাংলাদেশ আসলে কোন পথে যাবে বা কোনটি তার পথ? এই জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক। তার চেয়েও জরুরি আমাদের অন্ধকারত্ব আর পরাধীনতার চিহ্নগুলো মুছে দেওয়া। আগামী দিনের বাংলাদেশ মূলত তারুণ্যের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞান, মানবিকতা আর বিশ্বাস—এই তিন বিষয় হাত ধরাধরি করে না চললে আমরা এগোতে পারব না। অভ্যন্তরীণ ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর অনৈক্য দূরীভূত করা এখন জরুরি।
তারুণ্য ঝলমল বাংলাদেশ এখন এক নতুন পথের সন্ধানে। সে পথ ও মত কী বা কতটা, তার প্রমাণ মিলবে সময়ে। আপাতত আমরা এটা দেখছি, বাংলাদেশ ও তার ইতিহাস আর যা-ই মানুক, একক কোনো কিছু মানে না। এককের নামে যেকোনো দানবই আমাদের দেশে পরাজিত হয়েছে। কারণ, এই মাটি আর জাতির চরিত্রে একক দৈত্য বা দানবের জায়গা নেই। অতিকায় কিছু নয়, সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝলেই বাংলাদেশকে জানা সম্ভব। বাংলাদেশ সব সময় একটি মায়াময় সমাজের দেশ। বাইরে থেকে যত ইন্ধন আর উসকানি থাক না কেন, মানুষ ভুল করে না। এই মানুষ বা জাতির স্বপ্ন আর আশা বাস্তবায়ন করা গেলেই ঝলমল করে উঠবে বাংলাদেশ। একটা কথা বলা দরকার—বাংলাদেশ স্বাধীন ও আশাপ্রিয় জাতির দেশ। তার স্বপ্ন আর ভবিষ্যৎ সেদিক থেকে অসীম।
এই পজিটিভ বাংলাদেশকে সময়ের হাতে ছেড়ে দিলে আমাদের জাতি এগোতে পারবে না। আশপাশে তাকালে দেখব, অন্য দেশগুলো তরতর করে এগিয়ে চলেছে। অনেক সময় পরিসংখ্যান আমাদের হয়ে কথা বললেও মূল সমস্যা অন্যত্র। মনে রাখতে হবে, পরিসংখ্যান বা সমস্ত উপাত্তকে পিছে ফেলে এখন পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেন ভয়াবহ? তারা পরিশ্রমী, মেধাবী হলেও তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন আগামীর কারণ রাজনীতি। রাজনীতি ও নেতৃত্ব দূরদৃষ্টি সম্পন্ন না হলে কোনো জাতি এগোতে পারে না। তার প্রমাণ উপমহাদেশের এই দুই দেশ। অন্যদিকে নানাভাবে পিছিয়ে থাকলেও নেপাল বা শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। শ্রীলঙ্কা তাদের সর্বনাশের রাত কাটিয়ে এখন আবার জয়রথে। সম্প্রতি তাদের মূল্যস্ফীতি নেমে গেছে শূন্যের কোঠায়। এটা কোনো ম্যাজিক না, এমন উজ্জ্বল উদাহরণ তখনই সম্ভব যখন জাতি সবকিছু বাদ দিয়ে দেশ গঠনে এক থাকে।
আমাদের সুসময় ছিল, যেমন ধরুন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এই অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ঈর্ষণীয় বলে বর্ণনা করেন। এ দেশের জনগণ নিজেদের সাফল্যের জন্য গর্ব করতে পারেন। কারণ, দেশের অর্থনীতি এখন অনেক মজবুত। এ দেশের এই বিপুল সম্ভাবনার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ‘আউট অব দ্য বাস্কেট’ নিবন্ধে বলেছে, ‘কী করা যায়, সেটা দেখিয়ে দেওয়ার মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। কী করে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।’ ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. কৌশিক বসু বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এশিয়ান টাইগার। এশিয়ার নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যতম। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আজ বিশ্ববাসীর কাছেও অনুকরণীয়। তিনি বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।
গত ২ অক্টোবর প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের অর্জন অবিস্মরণীয়। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের মতো দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
এই অক্টোবরেই ইকোনমিস্ট ‘বাংলাদেশ টাইগার ইন দ্য নাইট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, ৩০ বছরে বাংলাদেশ পাল্টেছে অনেকখানি। বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে প্রবৃদ্ধি, ঠিক চীনের মতো। অনেক সামাজিক সূচকের দিক দিয়ে বিশাল প্রতিবেশী ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। দেশের উদীয়মান পোশাকশিল্প রপ্তানির দিক দিয়ে পিছিয়ে কেবল চীন থেকে। এ শিল্প এবং প্রায় এক কোটি প্রবাসী কর্মঠ শ্রমিকের পাঠানো টাকায় বাংলাদেশ গত ১০ বছরে একবার বাদে প্রতিবছর উদ্বৃত্ত ভোগ করেছে।
বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দু গ্রামীণ জীবন। সেখানে নানা অনাচার, মিথ্যা আর কপটতা আছে। আছে শোষণ। বহুকাল আগে আমাদের দেশের সমাজ বিষয়ে বলা হয়েছিল, এখানে মাৎস্যন্যায় চলে। যার মানে সবাই মাছের মতো এক পানি এক জলাশয়ে বসবাস করে, কিন্তু প্রয়োজনে বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন এমনকি জুলাই বিপ্লবের মতো পরিবর্তন হলেও সমাজের এসব বিষয়ে উদাসীন। আমরা সবাই জানি, শহর ও গ্রামকেন্দ্রিক উভয় সমাজে ধর্ম, ন্যায়, অন্যায়—এসব চলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। এসব প্রাগৈতিহাসিক কাহিনি জাদুঘরে পাঠানোর কথা শুনলেও তার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। অচিরে হবে, তেমন কোনো আশাও দেখি না।
অথচ বাংলাদেশ মন খুলে সবুর করছে। বহুকাল থেকে তার স্বাধীনতা, সম্মান আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলা রাজনীতি—এসব দিকে তাকানোর সময় পায় না। তার নজর অন্যদিকে। টাকাপয়সা কামানো বা টাকা পাচারের যে সংস্কৃতি—সেটি বিগত ১৬ বছর ধরে দেশকে সর্বস্বান্ত করার চেষ্টা করে গেছে।
সেই বাংলাদেশকে আমরা আমাদের মনের মতো করে সাজাতে হলে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অমীমাংসিত সব বিষয়ে মতভেদ দূর করে যদি নিজেদের একক ও একমাত্র বাংলাদেশি পরিচয়ে সতেজ রাখা যায়, তাহলেই তা সম্ভব। মনে রাখা দরকার, কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম আমরা। সে কথা বলার আগে বলি, ‘আমরা’ বলতে এখানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা দেখা প্রজন্মের কথা বলছি। আমাদের বালক বেলার শেষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পুরো তারুণ্য আর যৌবনজুড়ে আমরা যে দেশ দেখেছি, তার গায়ে অভাব আর অসচ্ছলতার চিহ্ন থাকলেও মায়া-মমতার কমতি ছিল না কোথাও। আমরা জানতাম স্বাধীনতার ব্যাপ্তি ও সীমাবদ্ধতা কতটা। স্বাধীনতা মানে কি যার যা ইচ্ছে করতে পারা? তাহলে তো উগ্রতা, সংকীর্ণতা বা দেশবিরোধিতা করাও স্বাধীনতা। মূলত স্বাধীনতা একটি জাতির সুশৃঙ্খল জীবন ও মুক্ত থাকার অধিকার। এমন একটি বাংলাদেশই চেয়েছিলাম আমরা।
বাংলাদেশ এবং তার মুক্তিযুদ্ধ আগাগোড়াই রাজনীতির সুবর্ণ ফসল। রাজনীতিই তখন আমাদের পথ দেখাত। আজ মানুষ যাদের ভয় পায় বা যাদের কথা বিশ্বাস করে না, তাঁরাই ছিলেন তখন মুক্তিদাতা। মানে রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলছি। যাঁরা তখন রাজনীতি করতেন, তাঁরা মেপে কথা বলতেন। কাজ করতেন অধিক। পরবর্তী সময় হয়ে গেল এর উল্টো।
আমি আজকাল কোনো বিরোধিতা দেখি না। যা দেখি, তার নাম অপপ্রচার আর কুৎসা। এটাও আমাদের সমাজ বিকৃতির ফসল। খেয়াল করবেন, কোনো শুভ বিষয় বা ভালো কিছু আজকাল মানুষকে টানে না। সামাজিক মিডিয়া চালু হওয়ার পর সবকিছু চলে গেছে অপপ্রচারের দখলে। যাঁরা এখন মাথার ওপর আছেন, তাঁদের দেখলে করুণা হয়। করুণা এই কারণে—একটা সময় আমাদের সমাজে যখন অবরুদ্ধ মানুষ কথা বলতে ভয় পেত বা তাদের সামাজিক জগৎ অন্ধকারে থাকত, তখন রাজনীতিবিদেরা পথ দেখাতেন। এখন এঁরাই অন্ধ।
বাংলাদেশ আসলে কোন পথে যাবে বা কোনটি তার পথ? এই জিজ্ঞাসা স্বাভাবিক। তার চেয়েও জরুরি আমাদের অন্ধকারত্ব আর পরাধীনতার চিহ্নগুলো মুছে দেওয়া। আগামী দিনের বাংলাদেশ মূলত তারুণ্যের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞান, মানবিকতা আর বিশ্বাস—এই তিন বিষয় হাত ধরাধরি করে না চললে আমরা এগোতে পারব না। অভ্যন্তরীণ ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর অনৈক্য দূরীভূত করা এখন জরুরি।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫