মযহারুল ইসলাম বাবলা
শেখ হাসিনা সরকার নিজেদের যেমন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বলে দাবি করত তা যে কত অসাড় ছিল, সেটা আমরা ১৫ বছরের শাসনামলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বারবার হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক রচনা বাতিল করেছিল। বাতিল করেছিল পাঠ্যসূচি থেকে জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী ডারউইনের রচনা। অথচ মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকারের কোনোরূপ হস্তক্ষেপ দেখা যায় না। একইভাবে দেখা যায় না ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্রমেও। কিন্তু কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং তৎকালীন সরকার মাধ্যমিকের সিলেবাস, পাঠ্যসূচিতে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ চালিয়ে আমাদের মূলধারার শিক্ষাক্রমকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়েছে। কোন অধিকারে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলাম মূলধারার শিক্ষাক্রমে হস্তক্ষেপ করে, তা আমাদের জানা নেই। সরকারও রাজনৈতিক সমঝোতা করে মাধ্যমিকে ব্যাপক পরিবর্তন করেছিল। সরকার এবং হেফাজত মুখোমুখি অবস্থান থেকে পরস্পর সখ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনমাত্র তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শামিল হয়ে ভাস্কর্য ভাঙা থেকে শুরু করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে দ্রুত যুক্ত হয়ে পড়ে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের নাম পরিবর্তনে শহিদী চত্বর নামকরণের তৎপরতা চালালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে শাপলা চত্বরের নাম পরিবর্তন করতে পারেনি।
আমাদের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জাতীয় নির্ধারিত বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা নতুন নয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনে একটি মহল দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে ছিল। তৎকালীন বিমানবাহিনীর প্রধান তোয়াব তো পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের উদ্যোগ পর্যন্ত নিয়েছিলেন। যেমনটি নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক, কুমিল্লার সংসদ সদস্য জহুরুল কাইয়ূমসহ কতিপয় ব্যক্তি। অস্থায়ী সরকারপ্রধান তাজউদ্দীন আহমদ বিষয়টি জানামাত্র খন্দকার মোশতাককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের উদ্যোগকে রুখে দিয়েছিলেন।
বাঙালি কৃষ্টি, সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানি আমলের দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারা পঁচাত্তর-পরবর্তী সেই যে শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় সংগীত, পতাকা, শহীদ মিনার, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য ভাঙা, সূর্যসেন হলের নাম বদলে ফয়সল হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বি. বাড়িয়া, বিক্রমপুরকে মুন্সিগঞ্জ ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকীকরণের প্রক্রিয়া চলেছিল। কিন্তু কোনোটি সফল হতে পারেনি। কেননা তখন প্রগতিশীল ছাত্র, যুব এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শক্তিমত্তায় বলবান ছিল। বর্তমানের মতো ক্ষয়িষ্ণু ছিল না বলেই প্রতিরোধ গড়ে তুলে অনাচার রোখা সম্ভব হয়েছিল।
সাম্প্রতিক চাকরিতে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটা অনিবার্য রূপে অরাজনৈতিক এবং নিরীহ আন্দোলন ছিল। কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা এই আন্দোলনে যুক্ত ছিল না। আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নামকরণ করা হয়। তবে সে বৈষম্য ৫৬ শতাংশ কোটা বৈষম্য হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছিল। সামাজিক বৈষম্য নিরসনের কোনো দাবি আন্দোলনকারীরা তোলেননি। আন্দোলন চলাকালীন যেসব গান আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল, সেগুলো দেশাত্মবোধক ডি এল রায়ের ‘ধনধান্যে পুষ্প ভরা’সহ মোহিনী চৌধুরী, সলিল চৌধুরী, সুকান্ত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী গান। এবং স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত গানও। কোনো ইসলামি গান তাঁরা কণ্ঠে তোলেননি। নিয়মিত তাঁদের কণ্ঠে শোনা গিয়েছে জাতীয় সংগীত। আন্দোলনকারীদের মাথায় বাধা ছিল জাতীয় পতাকা। যার সঙ্গে আন্দোলন-পরবর্তী ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জাতি মেনে নেবে না।
আন্দোলনকারীরা সংবিধান সংস্কারের দাবি করেছেন; সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। কিন্তু সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তোলেননি। অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে। এখন এই সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনে কিন্তু এই সরকারের অস্তিত্ব থাকে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের দায়িত্বের সীমা বা পরিসর সম্পর্কে সচেতন থাকবে বলেই ভরসা করতে চাই।
শেখ হাসিনা সরকার নিজেদের যেমন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বলে দাবি করত তা যে কত অসাড় ছিল, সেটা আমরা ১৫ বছরের শাসনামলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বারবার হেফাজতে ইসলামের দাবি অনুযায়ী মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক রচনা বাতিল করেছিল। বাতিল করেছিল পাঠ্যসূচি থেকে জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী ডারউইনের রচনা। অথচ মাদ্রাসা শিক্ষায় সরকারের কোনোরূপ হস্তক্ষেপ দেখা যায় না। একইভাবে দেখা যায় না ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাক্রমেও। কিন্তু কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতসহ মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং তৎকালীন সরকার মাধ্যমিকের সিলেবাস, পাঠ্যসূচিতে ক্রমাগত হস্তক্ষেপ চালিয়ে আমাদের মূলধারার শিক্ষাক্রমকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিয়েছে। কোন অধিকারে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতে ইসলাম মূলধারার শিক্ষাক্রমে হস্তক্ষেপ করে, তা আমাদের জানা নেই। সরকারও রাজনৈতিক সমঝোতা করে মাধ্যমিকে ব্যাপক পরিবর্তন করেছিল। সরকার এবং হেফাজত মুখোমুখি অবস্থান থেকে পরস্পর সখ্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনমাত্র তারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শামিল হয়ে ভাস্কর্য ভাঙা থেকে শুরু করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে দ্রুত যুক্ত হয়ে পড়ে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের নাম পরিবর্তনে শহিদী চত্বর নামকরণের তৎপরতা চালালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধে শাপলা চত্বরের নাম পরিবর্তন করতে পারেনি।
আমাদের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জাতীয় নির্ধারিত বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করা নতুন নয়। পঁচাত্তরে পটপরিবর্তনে একটি মহল দেশকে পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে ছিল। তৎকালীন বিমানবাহিনীর প্রধান তোয়াব তো পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের উদ্যোগ পর্যন্ত নিয়েছিলেন। যেমনটি নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক, কুমিল্লার সংসদ সদস্য জহুরুল কাইয়ূমসহ কতিপয় ব্যক্তি। অস্থায়ী সরকারপ্রধান তাজউদ্দীন আহমদ বিষয়টি জানামাত্র খন্দকার মোশতাককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের উদ্যোগকে রুখে দিয়েছিলেন।
বাঙালি কৃষ্টি, সংস্কৃতির ওপর পাকিস্তানি আমলের দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারা পঁচাত্তর-পরবর্তী সেই যে শুরু হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা এখনো চলমান। তারই অংশ হিসেবে জাতীয় সংগীত, পতাকা, শহীদ মিনার, স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য ভাঙা, সূর্যসেন হলের নাম বদলে ফয়সল হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বি. বাড়িয়া, বিক্রমপুরকে মুন্সিগঞ্জ ইত্যাদি সাম্প্রদায়িকীকরণের প্রক্রিয়া চলেছিল। কিন্তু কোনোটি সফল হতে পারেনি। কেননা তখন প্রগতিশীল ছাত্র, যুব এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শক্তিমত্তায় বলবান ছিল। বর্তমানের মতো ক্ষয়িষ্ণু ছিল না বলেই প্রতিরোধ গড়ে তুলে অনাচার রোখা সম্ভব হয়েছিল।
সাম্প্রতিক চাকরিতে যে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটা অনিবার্য রূপে অরাজনৈতিক এবং নিরীহ আন্দোলন ছিল। কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা এই আন্দোলনে যুক্ত ছিল না। আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নামকরণ করা হয়। তবে সে বৈষম্য ৫৬ শতাংশ কোটা বৈষম্য হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছিল। সামাজিক বৈষম্য নিরসনের কোনো দাবি আন্দোলনকারীরা তোলেননি। আন্দোলন চলাকালীন যেসব গান আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল, সেগুলো দেশাত্মবোধক ডি এল রায়ের ‘ধনধান্যে পুষ্প ভরা’সহ মোহিনী চৌধুরী, সলিল চৌধুরী, সুকান্ত, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী গান। এবং স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত গানও। কোনো ইসলামি গান তাঁরা কণ্ঠে তোলেননি। নিয়মিত তাঁদের কণ্ঠে শোনা গিয়েছে জাতীয় সংগীত। আন্দোলনকারীদের মাথায় বাধা ছিল জাতীয় পতাকা। যার সঙ্গে আন্দোলন-পরবর্তী ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হিসেবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা জাতি মেনে নেবে না।
আন্দোলনকারীরা সংবিধান সংস্কারের দাবি করেছেন; সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। কিন্তু সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি তোলেননি। অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছে। এখন এই সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান পুনর্লিখনে কিন্তু এই সরকারের অস্তিত্ব থাকে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারও তাদের দায়িত্বের সীমা বা পরিসর সম্পর্কে সচেতন থাকবে বলেই ভরসা করতে চাই।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫