ইরান-ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি আঘাত
মো. হাবিবুর রহমান
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ শুধু একটি আঞ্চলিক লড়াই নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য, সামরিক প্রযুক্তি, ধর্মীয় মতাদর্শ ও আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে যেভাবে নানা মতপ্রকাশ ঘটছে—কোনোটি ইরানকে দুর্বল, আবার কোনোটি ইসরায়েলকে বিপদে বলছে—তাতে প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যার জন্য নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
সংঘর্ষের সূচনা হয় ১৩ জুন রাতে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামক হঠাৎ বিমান হামলার মাধ্যমে, যা ছিল ইরানের সামরিক স্থাপনা ও পারমাণবিক সুবিধা লক্ষ্য করে পরিচালিত একটি কৌশলগত আক্রমণ। ইসরায়েল দাবি করে, এই অভিযানে তারা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণ ঘাঁটির এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, ইরানের তেহরান, নাতাঞ্জ ও তাবরিজ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং বিদ্যুৎ-বিভ্রাট লক্ষ করা গেছে, যা আক্রমণটির ব্যাপকতা নির্দেশ করে।
অবশ্য ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি। তারা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামের প্রতিহিংসামূলক অভিযান শুরু করে, যাতে ১০০টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং শতাধিক ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ইরান প্রথমবারের মতো ‘হাজ কাসেম’ নামের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা-কৌশলে নতুন ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে ইসরায়েল অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়, যদিও কিছু স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়।
উভয় দেশের সামরিক সাফল্য যেমন আংশিক, তেমনি ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও বিভ্রান্তিকর। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, তারা ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ইরান বলছে—তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোর সিংহভাগ ভূগর্ভস্থ এবং অক্ষত আছে। ইসরায়েলেরও ক্ষয়ক্ষতির কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেলেও সরকারি বিবৃতিতে সে সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। ইরানের ২০০-৪০০ জনের মৃত্যুর কথা শোনা গেলেও নিশ্চিত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, আর ইসরায়েলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ২৪-২৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
এই সংঘর্ষের কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং তার আঞ্চলিক প্রভাব খর্ব করা। তাদের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীরব সমর্থন রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার সময় বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আমরা সমর্থন করি।’ অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলার উদ্দেশ্য ছিল কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং নিজেদের সামরিক সক্ষমতা ও জনসমর্থন তুলে ধরা, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।
কিন্তু যুদ্ধ শুধু সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস বা ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি জনমনে ভয়, আতঙ্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা ছড়ায়। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে মানুষ শরণার্থী হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, যার প্রভাব অর্থনীতি ও সমাজজীবনে প্রবলভাবে পড়ছে। ইসরায়েলের সীমান্ত শহরগুলোতেও একই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় সাধারণ নাগরিকেরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জি৭ জোট, এমনকি রাশিয়া ও চীনও শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। তারা চায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার পথে ফিরে যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেখানে তিনি সরাসরি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘তেহরান শহর পুরোপুরি খালি করে ফেলা উচিত’। ট্রাম্পের এ ভাষা যুদ্ধোন্মাদনা বাড়াতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তবে হোয়াইট হাউস পরবর্তী বিবৃতিতে কিছুটা নরম সুরে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে।
বর্তমানে যুদ্ধের চরিত্র বদলাচ্ছে—মাঠে নয়, আকাশে ও দূরপাল্লার মিসাইলের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে এটি। উভয় পক্ষই ড্রোন, স্যাটেলাইট, সাইবার হামলা ও ব্যালিস্টিক প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। ফলে এই যুদ্ধ ভবিষ্যতে সরাসরি সংঘর্ষের থেকে বেশি কৌশলগত ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই সংঘর্ষ কি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে, নাকি এটি হবে সীমিত আকারের, বারবার আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? বাস্তবতা হলো, উভয় দেশই জানে যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। ইরান যুদ্ধ চালিয়ে নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে চাঙা রাখতে চায়, আবার ইসরায়েল নিজের কৌশলগত নিরাপত্তা রক্ষা করতে চায়। কিন্তু দুই দেশই জানে, এই সংঘর্ষ যদি তৃতীয় পক্ষ—যেমন হিজবুল্লাহ, সৌদি আরব বা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে রূপ নেয়, তাহলে তা একটি বড় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হবে।
এই মুহূর্তে বাস্তবতা হলো—ইসরায়েল আক্রমণে কিছুটা এগিয়ে এবং ইরান কৌশলগতভাবে তা প্রতিহত করেছে। উভয়েরই সামরিক সক্ষমতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, তবে কোনো পক্ষ চূড়ান্ত জয় পায়নি। বরং যুদ্ধের মধ্যেই এখন শান্তির আলোচনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ইরান বলছে, তারা যুদ্ধবিরতির বদলে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে যেতে আগ্রহী। অন্যদিকে ইসরায়েলও বোঝে, পশ্চিমা সমর্থন থাকলেও দীর্ঘকাল এই রকম আকাশযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষেও কঠিন।
এই সংঘর্ষ এখনই থামবে না, কিন্তু সেটি কোন দিকে মোড় নেবে—তা নির্ভর করছে কূটনৈতিক সমঝোতা, আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ এখনো বিজয়ী নয়, বরং উভয়েই ক্ষতবিক্ষত এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় বন্দী। বাস্তবতা হলো, এই সংঘর্ষ যত দীর্ঘ হবে, এর পরিণতি তত ভয়াবহ হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজনের জন্য ততই অশান্তি ডেকে আনবে। সুতরাং শুধু যুদ্ধ বন্ধ নয়, শান্তিও আজ সবচেয়ে জরুরি এবং মানবিক কর্তব্য।
লেখক: মো. হাবিবুর রহমান, উন্নয়ন ও অধিকারকর্মী
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ শুধু একটি আঞ্চলিক লড়াই নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য, সামরিক প্রযুক্তি, ধর্মীয় মতাদর্শ ও আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বন্দ্বের প্রতিফলন। গণমাধ্যমে এ নিয়ে যেভাবে নানা মতপ্রকাশ ঘটছে—কোনোটি ইরানকে দুর্বল, আবার কোনোটি ইসরায়েলকে বিপদে বলছে—তাতে প্রকৃত অবস্থা ব্যাখ্যার জন্য নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ অত্যন্ত প্রয়োজন।
সংঘর্ষের সূচনা হয় ১৩ জুন রাতে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামক হঠাৎ বিমান হামলার মাধ্যমে, যা ছিল ইরানের সামরিক স্থাপনা ও পারমাণবিক সুবিধা লক্ষ্য করে পরিচালিত একটি কৌশলগত আক্রমণ। ইসরায়েল দাবি করে, এই অভিযানে তারা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও সংরক্ষণ ঘাঁটির এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা যায়, ইরানের তেহরান, নাতাঞ্জ ও তাবরিজ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং বিদ্যুৎ-বিভ্রাট লক্ষ করা গেছে, যা আক্রমণটির ব্যাপকতা নির্দেশ করে।
অবশ্য ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি করেনি। তারা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’ নামের প্রতিহিংসামূলক অভিযান শুরু করে, যাতে ১০০টির বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং শতাধিক ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। ইরান প্রথমবারের মতো ‘হাজ কাসেম’ নামের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তা-কৌশলে নতুন ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে ইসরায়েল অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়, যদিও কিছু স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়।
উভয় দেশের সামরিক সাফল্য যেমন আংশিক, তেমনি ক্ষয়ক্ষতির হিসাবও বিভ্রান্তিকর। ইসরায়েলের দাবি অনুযায়ী, তারা ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে কয়েক বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ইরান বলছে—তাদের পরমাণু স্থাপনাগুলোর সিংহভাগ ভূগর্ভস্থ এবং অক্ষত আছে। ইসরায়েলেরও ক্ষয়ক্ষতির কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ পেলেও সরকারি বিবৃতিতে সে সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। ইরানের ২০০-৪০০ জনের মৃত্যুর কথা শোনা গেলেও নিশ্চিত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, আর ইসরায়েলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ২৪-২৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
এই সংঘর্ষের কৌশলগত দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েলের লক্ষ্য ছিল ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং তার আঞ্চলিক প্রভাব খর্ব করা। তাদের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের নীরব সমর্থন রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার সময় বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আমরা সমর্থন করি।’ অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলার উদ্দেশ্য ছিল কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং নিজেদের সামরিক সক্ষমতা ও জনসমর্থন তুলে ধরা, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।
কিন্তু যুদ্ধ শুধু সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস বা ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি জনমনে ভয়, আতঙ্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা ছড়ায়। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে মানুষ শরণার্থী হওয়ার মতো পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, যার প্রভাব অর্থনীতি ও সমাজজীবনে প্রবলভাবে পড়ছে। ইসরায়েলের সীমান্ত শহরগুলোতেও একই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় সাধারণ নাগরিকেরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জি৭ জোট, এমনকি রাশিয়া ও চীনও শান্তির আহ্বান জানিয়েছে। তারা চায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার পথে ফিরে যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেখানে তিনি সরাসরি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘তেহরান শহর পুরোপুরি খালি করে ফেলা উচিত’। ট্রাম্পের এ ভাষা যুদ্ধোন্মাদনা বাড়াতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষকের মত। তবে হোয়াইট হাউস পরবর্তী বিবৃতিতে কিছুটা নরম সুরে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোলা রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে।
বর্তমানে যুদ্ধের চরিত্র বদলাচ্ছে—মাঠে নয়, আকাশে ও দূরপাল্লার মিসাইলের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে এটি। উভয় পক্ষই ড্রোন, স্যাটেলাইট, সাইবার হামলা ও ব্যালিস্টিক প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। ফলে এই যুদ্ধ ভবিষ্যতে সরাসরি সংঘর্ষের থেকে বেশি কৌশলগত ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই সংঘর্ষ কি একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে, নাকি এটি হবে সীমিত আকারের, বারবার আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে? বাস্তবতা হলো, উভয় দেশই জানে যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে ক্ষতিকর। ইরান যুদ্ধ চালিয়ে নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে চাঙা রাখতে চায়, আবার ইসরায়েল নিজের কৌশলগত নিরাপত্তা রক্ষা করতে চায়। কিন্তু দুই দেশই জানে, এই সংঘর্ষ যদি তৃতীয় পক্ষ—যেমন হিজবুল্লাহ, সৌদি আরব বা যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে রূপ নেয়, তাহলে তা একটি বড় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হবে।
এই মুহূর্তে বাস্তবতা হলো—ইসরায়েল আক্রমণে কিছুটা এগিয়ে এবং ইরান কৌশলগতভাবে তা প্রতিহত করেছে। উভয়েরই সামরিক সক্ষমতা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, তবে কোনো পক্ষ চূড়ান্ত জয় পায়নি। বরং যুদ্ধের মধ্যেই এখন শান্তির আলোচনার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ইরান বলছে, তারা যুদ্ধবিরতির বদলে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে যেতে আগ্রহী। অন্যদিকে ইসরায়েলও বোঝে, পশ্চিমা সমর্থন থাকলেও দীর্ঘকাল এই রকম আকাশযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষেও কঠিন।
এই সংঘর্ষ এখনই থামবে না, কিন্তু সেটি কোন দিকে মোড় নেবে—তা নির্ভর করছে কূটনৈতিক সমঝোতা, আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর। যুদ্ধক্ষেত্রে কেউ এখনো বিজয়ী নয়, বরং উভয়েই ক্ষতবিক্ষত এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় বন্দী। বাস্তবতা হলো, এই সংঘর্ষ যত দীর্ঘ হবে, এর পরিণতি তত ভয়াবহ হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মানুষজনের জন্য ততই অশান্তি ডেকে আনবে। সুতরাং শুধু যুদ্ধ বন্ধ নয়, শান্তিও আজ সবচেয়ে জরুরি এবং মানবিক কর্তব্য।
লেখক: মো. হাবিবুর রহমান, উন্নয়ন ও অধিকারকর্মী
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫