অজয় দাশগুপ্ত
কোথাও শান্তি নেই। ঢাকায় নেই, লন্ডনে নেই, ইরানে নেই। বাসে নেই, রেলগাড়িতে নেই, উড়োজাহাজে নেই। শুধু মৃত্যু, অপমান আর অশান্তি আছে।
আমাদের জীবনে সবচেয়ে মিসিং বিষয়টা হচ্ছে শান্তি। সত্যি কথা বলতে, গত কয়েক মাস ধরে ভালো থাকার আশায় পথ চাওয়া মানুষ এখন শান্তির জন্য মরিয়া। ভাবছেন, দেশের কথা বলছি? জি না। দুনিয়ার সব দেশের বাংলাদেশিদের চাওয়া এখন শান্তি।
দেশের জনগণ যা চায়, তা দিতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়। দুনিয়ার কোনো দেশ বা সমাজ তা পারেনি। আমরা আমেরিকাকে এক নম্বর দেশ বলে জানি। বহু দেশের মেধাবী মানুষেরা সে দেশে গিয়ে তাদের মেধা আর শ্রমে আমেরিকা নির্মাণ করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় দারিদ্র্য আর দরিদ্র দেখলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কোনোভাবেই বলা যাবে না সে দেশে সবাই ভালো আছে। চীন এখন পরাশক্তি। সে দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরেও দারিদ্র্যের প্রকোপ আছে। এমন করে আমরা সব দেশেই দরিদ্র মানুষ পাব, পাব অভাব-অনটন। কিন্তু কথা ওই একটাই—যখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তখন আমরা যে শান্তি আর সহমর্মিতা দেখেছি, তা কি আজ আছে?
মিডিয়ায় চোখ রাখলেই মব জাস্টিসের কাহিনি। গোড়ার দিকে এসব মেনে নেওয়া গেলেও এখন কি আসলেই তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না? যাঁরা আমাদের শান্তি দেবেন বা দিতে পারেন, তাঁরা জানেন কোথায় গলদ। কোথায় শান্তির চাবিকাঠি। তাঁরা যত তাড়াতাড়ি তা বের করে আনবেন, তত স্বস্তি লাভ করবে মানুষ। এ বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকাও জোরালো হওয়ার দরকার আছে।
জনসাধারণের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে মিডিয়ার গভীর প্রভাব রয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং সমাধানের ওপর জোর দেয় এমন ইতিবাচক বর্ণনাকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করার মাধ্যমে মিডিয়া শান্তির সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
যখন মিডিয়া স্থিতিস্থাপকতা, সহানুভূতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের গল্পগুলোতে ফোকাস করে, তখন তা মানুষকে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপে জড়িত হতে উৎসাহিত করতে পারে। গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোকেরা কীভাবে জটিল বিষয়গুলো উপলব্ধি করে এবং বোঝে তা প্রভাবিত করার ক্ষমতা মিডিয়ার রয়েছে নিউজ রিপোর্টিং, ডকুমেন্টারি এবং মতামতের মাধ্যমে।
শান্তি না থাকলে আমাদের সমাজজীবন বা দেশ তো বটেই, দুনিয়ার কোথাও আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব না। পারব যে না, তার প্রমাণ এখন চোখের সামনে। আমরা নিশ্চয়ই তেমন দেশ বা সমাজ চাইনি, যা দিনরাত খালি হুমকি-ধমকি আর মারামারিতে লেগে থাকবে। পরাজিতরা আস্ফালন না করে মার্জনা চায় না। তারা দখলবাজি করে আসতে চায়। এ-ও এক অসুস্থ প্রবণতা।
গৌতম বুদ্ধের গল্পে পড়েছি, শান্তি এমন এক বস্তু বা বিষয়, যা ইগো, মেজাজ আর অধৈর্য থাকলে পাওয়া যায় না। এর সবগুলোই এখন টগবগ করছে। সবাই কেমন জানি অস্থির। নাটক ভালো না, গান ভালো না, সিনেমা ভালো না। এ ভালো না, ও ভালো না। তাহলে ভালো কী? ভালো কে? এমন করতে থাকলে তো সুকুমার রায়ের ছড়ার মতো ‘কিন্তু সবার চাইতে ভালো পাউরুটি আর ঝোলা গুড়’ বলেই দিন কাটাতে হবে।
একটি গল্পের কথা মনে পড়ল। মহাভারতের এই গল্প অনেকেরই জানা। অর্জুনপুত্র মহাবীর অভিমুন্য তখন তাঁর মা সুভদ্রার গর্ভে। অর্জুন পুত্রবতী পত্নীকে গল্প বলতেন। একদিন তিনি গুরু দ্রোণাচার্যের তৈরি করা চক্রব্যূহের গল্প শোনাচ্ছিলেন। ব্যূহ ভেদ করার অংশটুকু শুনেছিলেন, কিন্তু ব্যূহ থেকে বের হওয়ার গল্প শোনার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সন্তানসম্ভবা জননী সুভদ্রা। মাতৃগর্ভে সন্তান অভিমুন্য ওইটুকুই জানতেন। কুরুক্ষেত্রের মহারণে বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতে চক্রব্যূহ ভেদ করলেও বের হতে পারেননি অভিমুন্য। সেখানেই তাঁকে বধ করে কৌরবেরা। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অর্জুনপুত্রের এই পরিণাম স্মরণ করিয়ে দেয়, যেকোনো জালে ঢোকার
আগে বেরোবার পথ জানতে হয়। নয়তো পরিণাম ঠেকানো যায় না।
এর মানে আপনি যে কাজেই নামুন না কেন, আগে জেনে নেবেন এর পরিণাম বা পরিত্রাণ কী, কীভাবে উদ্ধার সম্ভব। তা যদি না হয়, আপনি তো আটকালেনই, আপনাকে যারা বিশ্বাস করেছিল, তাদেরও আটকে থাকতে হবে।
মানুষে মানুষে হানাহানি আর শিকারের প্রবণতা পুরোনো। আমরা তার খপ্পরে পড়ি বারবার। দিন শেষে সে একই মানুষ। সে কারণেই আজ শান্তির দরকার সবচাইতে অধিক। আপনি দেশের এবং দেশের বাইরের যেকোনো বাঙালিকে প্রশ্ন করে দেখুন, সবাই বলবে—আমরা আর কিছু চাই না, শুধু শান্তি চাই।
মহাত্মা গান্ধী বলতেন, চোখের বদলে চোখ চাইলে দুনিয়া একসময় অন্ধ হয়ে পড়বে। আমরা চোখ নয়, চাই দৃষ্টি। চাই শান্তিপূর্ণ বাঙালি জীবন।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
কোথাও শান্তি নেই। ঢাকায় নেই, লন্ডনে নেই, ইরানে নেই। বাসে নেই, রেলগাড়িতে নেই, উড়োজাহাজে নেই। শুধু মৃত্যু, অপমান আর অশান্তি আছে।
আমাদের জীবনে সবচেয়ে মিসিং বিষয়টা হচ্ছে শান্তি। সত্যি কথা বলতে, গত কয়েক মাস ধরে ভালো থাকার আশায় পথ চাওয়া মানুষ এখন শান্তির জন্য মরিয়া। ভাবছেন, দেশের কথা বলছি? জি না। দুনিয়ার সব দেশের বাংলাদেশিদের চাওয়া এখন শান্তি।
দেশের জনগণ যা চায়, তা দিতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়। দুনিয়ার কোনো দেশ বা সমাজ তা পারেনি। আমরা আমেরিকাকে এক নম্বর দেশ বলে জানি। বহু দেশের মেধাবী মানুষেরা সে দেশে গিয়ে তাদের মেধা আর শ্রমে আমেরিকা নির্মাণ করেছেন। কিন্তু আমেরিকায় দারিদ্র্য আর দরিদ্র দেখলে আপনার মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কোনোভাবেই বলা যাবে না সে দেশে সবাই ভালো আছে। চীন এখন পরাশক্তি। সে দেশের সাধারণ মানুষের ভেতরেও দারিদ্র্যের প্রকোপ আছে। এমন করে আমরা সব দেশেই দরিদ্র মানুষ পাব, পাব অভাব-অনটন। কিন্তু কথা ওই একটাই—যখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তখন আমরা যে শান্তি আর সহমর্মিতা দেখেছি, তা কি আজ আছে?
মিডিয়ায় চোখ রাখলেই মব জাস্টিসের কাহিনি। গোড়ার দিকে এসব মেনে নেওয়া গেলেও এখন কি আসলেই তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না? যাঁরা আমাদের শান্তি দেবেন বা দিতে পারেন, তাঁরা জানেন কোথায় গলদ। কোথায় শান্তির চাবিকাঠি। তাঁরা যত তাড়াতাড়ি তা বের করে আনবেন, তত স্বস্তি লাভ করবে মানুষ। এ বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকাও জোরালো হওয়ার দরকার আছে।
জনসাধারণের ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে মিডিয়ার গভীর প্রভাব রয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং সমাধানের ওপর জোর দেয় এমন ইতিবাচক বর্ণনাকে সক্রিয়ভাবে প্রচার করার মাধ্যমে মিডিয়া শান্তির সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
যখন মিডিয়া স্থিতিস্থাপকতা, সহানুভূতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের গল্পগুলোতে ফোকাস করে, তখন তা মানুষকে শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপে জড়িত হতে উৎসাহিত করতে পারে। গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লোকেরা কীভাবে জটিল বিষয়গুলো উপলব্ধি করে এবং বোঝে তা প্রভাবিত করার ক্ষমতা মিডিয়ার রয়েছে নিউজ রিপোর্টিং, ডকুমেন্টারি এবং মতামতের মাধ্যমে।
শান্তি না থাকলে আমাদের সমাজজীবন বা দেশ তো বটেই, দুনিয়ার কোথাও আমরা স্বস্তিতে থাকতে পারব না। পারব যে না, তার প্রমাণ এখন চোখের সামনে। আমরা নিশ্চয়ই তেমন দেশ বা সমাজ চাইনি, যা দিনরাত খালি হুমকি-ধমকি আর মারামারিতে লেগে থাকবে। পরাজিতরা আস্ফালন না করে মার্জনা চায় না। তারা দখলবাজি করে আসতে চায়। এ-ও এক অসুস্থ প্রবণতা।
গৌতম বুদ্ধের গল্পে পড়েছি, শান্তি এমন এক বস্তু বা বিষয়, যা ইগো, মেজাজ আর অধৈর্য থাকলে পাওয়া যায় না। এর সবগুলোই এখন টগবগ করছে। সবাই কেমন জানি অস্থির। নাটক ভালো না, গান ভালো না, সিনেমা ভালো না। এ ভালো না, ও ভালো না। তাহলে ভালো কী? ভালো কে? এমন করতে থাকলে তো সুকুমার রায়ের ছড়ার মতো ‘কিন্তু সবার চাইতে ভালো পাউরুটি আর ঝোলা গুড়’ বলেই দিন কাটাতে হবে।
একটি গল্পের কথা মনে পড়ল। মহাভারতের এই গল্প অনেকেরই জানা। অর্জুনপুত্র মহাবীর অভিমুন্য তখন তাঁর মা সুভদ্রার গর্ভে। অর্জুন পুত্রবতী পত্নীকে গল্প বলতেন। একদিন তিনি গুরু দ্রোণাচার্যের তৈরি করা চক্রব্যূহের গল্প শোনাচ্ছিলেন। ব্যূহ ভেদ করার অংশটুকু শুনেছিলেন, কিন্তু ব্যূহ থেকে বের হওয়ার গল্প শোনার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন সন্তানসম্ভবা জননী সুভদ্রা। মাতৃগর্ভে সন্তান অভিমুন্য ওইটুকুই জানতেন। কুরুক্ষেত্রের মহারণে বীরের মতো যুদ্ধ করতে করতে চক্রব্যূহ ভেদ করলেও বের হতে পারেননি অভিমুন্য। সেখানেই তাঁকে বধ করে কৌরবেরা। শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অর্জুনপুত্রের এই পরিণাম স্মরণ করিয়ে দেয়, যেকোনো জালে ঢোকার
আগে বেরোবার পথ জানতে হয়। নয়তো পরিণাম ঠেকানো যায় না।
এর মানে আপনি যে কাজেই নামুন না কেন, আগে জেনে নেবেন এর পরিণাম বা পরিত্রাণ কী, কীভাবে উদ্ধার সম্ভব। তা যদি না হয়, আপনি তো আটকালেনই, আপনাকে যারা বিশ্বাস করেছিল, তাদেরও আটকে থাকতে হবে।
মানুষে মানুষে হানাহানি আর শিকারের প্রবণতা পুরোনো। আমরা তার খপ্পরে পড়ি বারবার। দিন শেষে সে একই মানুষ। সে কারণেই আজ শান্তির দরকার সবচাইতে অধিক। আপনি দেশের এবং দেশের বাইরের যেকোনো বাঙালিকে প্রশ্ন করে দেখুন, সবাই বলবে—আমরা আর কিছু চাই না, শুধু শান্তি চাই।
মহাত্মা গান্ধী বলতেন, চোখের বদলে চোখ চাইলে দুনিয়া একসময় অন্ধ হয়ে পড়বে। আমরা চোখ নয়, চাই দৃষ্টি। চাই শান্তিপূর্ণ বাঙালি জীবন।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫