মাসুদ উর রহমান
শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে দফায় দফায় মোট ৫১টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। সিইসির ভাষ্যে, ‘সার্বিক বিবেচনায় উপনির্বাচনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলেই এমন সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।’ বিগত কয়েকটি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে কমিশনের এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে।
যেকোনো নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া কমিশনের জন্য সুখপ্রদ কোনো ঘটনা নয়, বরং স্পষ্টতই এটি কমিশনের ব্যর্থতা। আবার এটাও তো সত্যি যে ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। সে জন্যই হয়তো কমিশন এই পথে হেঁটেছে কিংবা হাঁটতে বাধ্য হয়েছে, এই জন্য যে গত কয়েক বছরে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে যে আস্থাহীনতার প্রকাশ ঘটেছিল, তাতে সেটি আরও ঘনীভূত হতো। গোঁজামিলের সংস্কৃতি পরিহার করে কমিশনের নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে আমার কাছে সঠিক এবং যৌক্তিক মনে হয়েছে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, মাত্র একটি আসনের উপনির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না যে কমিশন, তারা কেমন করে ৩০০ আসনের নির্বাচন করবে? আমার বিবেচনায় পারবে। আজকের নির্বাচনটিই পারতে সহায়ক হবে। কমিশনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে যদি আজকের নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যেত, তাহলে কমিশনের জন্য সেটি হতো আরও বড় চ্যালেঞ্জ।
নিশ্চয়ই এবারের ব্যর্থতার কারণগুলো কমিশন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করবে এবং সে অনুযায়ী আগামীর পথ চলা নির্ধারণ করবে। আমার ধারণা, অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়গুলো কমিশনের মাথায় ছিল; যে জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিল। তা ছাড়া একটি আভাস পাওয়া গিয়েছিল ৮ অক্টোবরে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে ইসির মতবিনিময় অনুষ্ঠানে। সেদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়।
সেখানে ডিসি-এসপিদের নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভায় লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে, কিন্তু আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণ ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন।’
এই যে অনিয়ম হলো, এর দায় কার? নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের। একটি দল প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বা অতীতে করেছে। কিন্তু সেটির ধারাবাহিকতা কাম্য হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতা। সরকার ও দল যে দুটো আলাদা জিনিস, সেটি গুলিয়ে গিয়েছিল নিকট অতীতে। তেমন ইঙ্গিতই আমরা সিইসির কাছ থেকে পেয়েছিলাম।
জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ইসি নজরদারিতে রাখবে বলেও বৈঠকে হুঁশিয়ার করেছিলেন সিইসি। সরকার ও দল যে দুটো আলাদা ব্যাপার, তা বিবেচনায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে সুকঠোর। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।’
গাইবান্ধার উপনির্বাচনে কি ঠিক তাই হলো না? জনগণ এমনটিই চায়। আপনারা তথা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সংঘাত-সহিংসতা যতই করুন, মনে রাখবেন ঘুড়ির নাটাই কিন্তু কমিশনের হাতে। সংসদই দিয়েছে কমিশনকে সেই শক্তি। আমরা আমজনতা চাই সেই শক্তির প্রত্যাশিত প্রয়োগ। তবেই পাব মজবুত গণতন্ত্র। আর কে না জানে, এর প্রধান অনুষঙ্গ সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এর কোনো বিকল্প নেই, হতে পারে না। কাজেই সেই বাস্তবতায় ফিরতে গেলে বিড়াল মারতে হবে বিয়ের রাতেই।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
শেষ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে দফায় দফায় মোট ৫১টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল। সিইসির ভাষ্যে, ‘সার্বিক বিবেচনায় উপনির্বাচনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলেই এমন সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।’ বিগত কয়েকটি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিলে কমিশনের এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে।
যেকোনো নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া কমিশনের জন্য সুখপ্রদ কোনো ঘটনা নয়, বরং স্পষ্টতই এটি কমিশনের ব্যর্থতা। আবার এটাও তো সত্যি যে ফেইলিউর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। সে জন্যই হয়তো কমিশন এই পথে হেঁটেছে কিংবা হাঁটতে বাধ্য হয়েছে, এই জন্য যে গত কয়েক বছরে নির্বাচনী সংস্কৃতিতে যে আস্থাহীনতার প্রকাশ ঘটেছিল, তাতে সেটি আরও ঘনীভূত হতো। গোঁজামিলের সংস্কৃতি পরিহার করে কমিশনের নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে আমার কাছে সঠিক এবং যৌক্তিক মনে হয়েছে।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, মাত্র একটি আসনের উপনির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না যে কমিশন, তারা কেমন করে ৩০০ আসনের নির্বাচন করবে? আমার বিবেচনায় পারবে। আজকের নির্বাচনটিই পারতে সহায়ক হবে। কমিশনের দ্বিধা-দ্বন্দ্বে যদি আজকের নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যেত, তাহলে কমিশনের জন্য সেটি হতো আরও বড় চ্যালেঞ্জ।
নিশ্চয়ই এবারের ব্যর্থতার কারণগুলো কমিশন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করবে এবং সে অনুযায়ী আগামীর পথ চলা নির্ধারণ করবে। আমার ধারণা, অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়গুলো কমিশনের মাথায় ছিল; যে জন্য পুরো প্রক্রিয়াটি বিশেষ নজরদারিতে রেখেছিল। তা ছাড়া একটি আভাস পাওয়া গিয়েছিল ৮ অক্টোবরে ডিসি-এসপিদের সঙ্গে ইসির মতবিনিময় অনুষ্ঠানে। সেদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়।
সেখানে ডিসি-এসপিদের নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভায় লিখিত বক্তব্যে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে, কিন্তু আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণ ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন।’
এই যে অনিয়ম হলো, এর দায় কার? নিশ্চয়ই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের। একটি দল প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বা অতীতে করেছে। কিন্তু সেটির ধারাবাহিকতা কাম্য হতে পারে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতা। সরকার ও দল যে দুটো আলাদা জিনিস, সেটি গুলিয়ে গিয়েছিল নিকট অতীতে। তেমন ইঙ্গিতই আমরা সিইসির কাছ থেকে পেয়েছিলাম।
জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ইসি নজরদারিতে রাখবে বলেও বৈঠকে হুঁশিয়ার করেছিলেন সিইসি। সরকার ও দল যে দুটো আলাদা ব্যাপার, তা বিবেচনায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে সুকঠোর। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।’
গাইবান্ধার উপনির্বাচনে কি ঠিক তাই হলো না? জনগণ এমনটিই চায়। আপনারা তথা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা সংঘাত-সহিংসতা যতই করুন, মনে রাখবেন ঘুড়ির নাটাই কিন্তু কমিশনের হাতে। সংসদই দিয়েছে কমিশনকে সেই শক্তি। আমরা আমজনতা চাই সেই শক্তির প্রত্যাশিত প্রয়োগ। তবেই পাব মজবুত গণতন্ত্র। আর কে না জানে, এর প্রধান অনুষঙ্গ সুষ্ঠু, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এর কোনো বিকল্প নেই, হতে পারে না। কাজেই সেই বাস্তবতায় ফিরতে গেলে বিড়াল মারতে হবে বিয়ের রাতেই।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫