উপসম্পাদকীয়
কখনো কোনো ব্যক্তি বা সমমনা কিছু মানুষ বহুদিন ধরে বা হঠাৎই জনগণের জন্য চিন্তা করল। হোক সে বড় জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র—তাদের জন্য কিছু একটা করবে। তারপর জন্ম নিল একটা সংগঠন। সেই সংগঠনের নেতা ঠিক হলো। কর্মীদের দায়িত্ব এসে পড়ল। সঠিকভাবে চলতে চলতে ওই সংগঠনটি একসময় পরিণত হলো একটি প্রতিষ্ঠানে। ওই প্রতিষ্ঠান যদি হয় রাজনৈতিক দল, তাহলে সে কালক্রমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। তবে যদি তার মধ্যে কিছু মানুষ আত্মসচেতন হয়ে পড়ে এবং সর্বক্ষণ তার ব্যক্তিগত প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে থাকে, তাহলে তা আর জনকল্যাণের কাজটি করতে পারে না। এর মধ্যে একজন স্বৈরাচার হয়ে উঠবে এবং তার সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কোথাও কিছু ঘটবে না।
একদা রাষ্ট্রের মালিকানায় ছিলেন রাজা-বাদশাহরা। বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী নিয়ে রাজ্য সৃষ্টি করে তার মালিকানায় বসতেন তাঁরা। রাষ্ট্র ছিল যোদ্ধাদের হাতে। একসময় রাজা অনুভব করলেন, নিরস্ত্র প্রজাদের শাসনের জন্য লোক দরকার। পেশির বদলে চাই বুদ্ধি। বুদ্ধির জয় হতে থাকল। বিনা অস্ত্রেও রাজ্য শাসন করা যায়, কিংবা রাজ্যের সম্প্রসারণ করাও সম্ভব। আর এর মধ্যেই বুদ্ধিদীপ্ত কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসে রাজা একটু মানবিকও হতে থাকেন, এর মধ্য দিয়ে কিছু কল্যাণ চিন্তা, কিছু সুবিচারের বিধানও ভাবনার মধ্যে আসতে থাকে। এসবের জন্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে, সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রতিষ্ঠানও জন্ম নেয়। বীরযোদ্ধা বাবর ভারতবর্ষে এসে অস্ত্র নামিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাও করতে থাকেন। তাঁর প্রপৌত্র আকবর নবরত্ন সভা করে এত বড় দেশকে শাসন করার একটা সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
শাসনের জন্য কিছু নিয়মকানুনও তৈরি করেছিলেন। সেই নিয়ম অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতারাই সিংহাসনে বসতেন। নিয়মও মাঝেমধ্যে প্রাচীন হয়ে যায়। আওরঙ্গজেবের সময় আবার পেশিশক্তি প্রবল হয়ে পড়ে। একসময় তা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের ভয়াবহ রূপ নেয়। তাই তাঁর মৃত্যুর ৫৭ বছর পর একটি বিদেশি ব্যবসায়িক কোম্পানি ভারতবর্ষকে পদানত করে। আওরঙ্গজেবের পর দেশীয় রাজা-নবাবরা মোটামুটি স্বাধীনভাবেই চলছিলেন। কিন্তু বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁর উত্তরাধিকারের বিষয়টি স্নেহ বাৎসল্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
কেউ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এই সুযোগে ব্যবসায়ী ধূর্ত ইংরেজরা দেশটা কেড়ে নেয়। এখানে এসে আবার প্রমাণ হয় পেশিশক্তিই বড় ব্যাপার নয়। তাই যদি হতো তাহলে নবাব সিরাজউদদৌলা লক্ষাধিক সেনাদল নিয়ে মুষ্টিমেয় ক্লাইভের বাহিনীর সঙ্গে পরাজিত হতেন না। ইংরেজরা পরবর্তীকালে রাজস্ব আদয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, লুটপাট, প্রতারণা এবং শঠতার আশ্রয় নিয়ে দেশটাকে একধরনের অচলায়তনে পরিণত করে। রাজা শাসিত ইংরেজ জাতি শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর থাকায়, সে দেশেও কিছু বিবেকবান মানুষের জন্ম হয়েছিল। যাঁরা সে দেশের বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা এবং সুশাসনের ভাবনা ভাবতেন।
তাঁরা এই দুঃশাসনের হাত থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করে ব্রিটিশের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার পথ খুঁজতে শুরু করলেন। তাঁরা ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদিতে মনোযোগ দিলেন। এই সময়ে ভারতের অচলায়তন থেকে কিছু মনীষীর জন্ম হয়। যেমন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ। তাঁরা কিছু সংস্কারকাজে মনোনিবেশ করার সময়ে ইংরেজ শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পশ্চিমের কিছু মূল্যবোধ ও শিক্ষার আলো ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। দেশপ্রেম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সংগঠন চিন্তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রবেশ করে। ইংল্যান্ডের আইনশাস্ত্র পড়ে ব্যারিস্টার হয়ে কিছু আলোকিত মানুষ এ দেশে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কালক্রমে সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়ে। যার ফলাফল আমরা ভারত বিভাগের সময়ে দেখেছি। প্রতিষ্ঠানের যে ভাঙন বা দ্বৈত চরিত্র, এসব আমরা দেখতে দেখতে এ পর্যায়ে এসে পড়েছি। যাঁরা সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রগতিশীল, তাঁরাই সবচেয়ে ভাঙনপ্রিয়। আর যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় যান, তাঁরা রাষ্ট্র শাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু জনকল্যাণের স্বার্থে ব্যবহার করেন না। একেবারে নিজস্ব ও দলীয় স্বার্থে এসব ব্যবহার করার ফলে তাঁর মধ্যে আর কোনো নিরপেক্ষ চরিত্র থাকে না। সবাই আমলা-পুলিশকে বশংবদ করে ফেলেন।
শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোতেও যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখার স্বার্থে যে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাখা প্রয়োজন, সেখানেও নিজেদের লোক বসিয়ে, তাঁর আনুগত্য প্রয়োজন মনে করেন। পুঁজিবাদ যেসব কারণে বেঁচে থাকে তা হলো, তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন রাখেন। বিচারব্যবস্থা ও মিডিয়াকে যতটা সম্ভব মুক্ত রাখেন। যদিও তাঁরা যখন যুদ্ধ করেন, তখন মিডিয়া আর স্বাধীন থাকতে পারে না। যত অযোগ্য লোকই সেখানে নির্বাচিত হোক না কেন নির্বাচন কমিশন সাধারণত প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এসব প্রতিষ্ঠান কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারে না।
আমরা এখন সেই সমস্যায় পড়েছি। যদি নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকত, তাহলে ৫২ বছরে এই সংগঠন একটি প্রাতিষ্ঠানিক গৌরব অর্জন করত। তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। আমলাতন্ত্র নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অনুগত থাকত। কিন্তু ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দলই এই সুযোগ রাখেনি। তাই নিরপেক্ষতার বিষয়টি সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ থেকেছে। এই প্রশ্ন থেকে কোনো বিচারপতি, আমলা বা অন্য কোনো ব্যক্তি রেহাই পাননি। আবার নির্বাচনকালীন কোনো অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দিলেও সেটা ন্যায়সংগত নয়। কারণ সরকার একটি মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি। এই টানাপোড়েনের মীমাংসার জন্য বিরোধী দল আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
আর সরকার সংবিধানের পথে এই সমস্যার নিরসন করতে চাইছে। ফলাফলে জিম্মি নিরপেক্ষ জনগণ কোনো পক্ষেই নেই। তারা কোনো দলে নেই। তাদের আন্দোলন করার কোনো ক্ষমতা নেই। মুখ বুজে তারা সবকিছু সহ্য করে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে ব্যয় বাড়ে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, বাড়ির ভালো ছেলেটাকে অকারণে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, বিপুল অর্থ ব্যয় করে তাকে ছাড়িয়ে আনতে হয়। নির্বাচনের সময়ে তারা সুযোগ পায় কখনো ভোট দেওয়ার আবার কখনো ফিরে আসে। হরতাল, অবরোধের সময়ে ভয়ে দিন কাটায় সেই সব জনগণ, যারা সাধারণত একা জাগে না, প্রতিবাদহীন, শিশুপুত্রটাকে ঠিকমতো পড়ালেখাও করাতে পারে না। সেই সব জনগণের কথা ক্ষমতাসীনেরাও ভাবে না, বিরোধীরাও ভাবে না। তারা কি কোনো দিন প্রতিবাদের কণ্ঠ আর ফিরে পাবে?
কখনো কোনো ব্যক্তি বা সমমনা কিছু মানুষ বহুদিন ধরে বা হঠাৎই জনগণের জন্য চিন্তা করল। হোক সে বড় জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র—তাদের জন্য কিছু একটা করবে। তারপর জন্ম নিল একটা সংগঠন। সেই সংগঠনের নেতা ঠিক হলো। কর্মীদের দায়িত্ব এসে পড়ল। সঠিকভাবে চলতে চলতে ওই সংগঠনটি একসময় পরিণত হলো একটি প্রতিষ্ঠানে। ওই প্রতিষ্ঠান যদি হয় রাজনৈতিক দল, তাহলে সে কালক্রমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। তবে যদি তার মধ্যে কিছু মানুষ আত্মসচেতন হয়ে পড়ে এবং সর্বক্ষণ তার ব্যক্তিগত প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে থাকে, তাহলে তা আর জনকল্যাণের কাজটি করতে পারে না। এর মধ্যে একজন স্বৈরাচার হয়ে উঠবে এবং তার সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কোথাও কিছু ঘটবে না।
একদা রাষ্ট্রের মালিকানায় ছিলেন রাজা-বাদশাহরা। বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী নিয়ে রাজ্য সৃষ্টি করে তার মালিকানায় বসতেন তাঁরা। রাষ্ট্র ছিল যোদ্ধাদের হাতে। একসময় রাজা অনুভব করলেন, নিরস্ত্র প্রজাদের শাসনের জন্য লোক দরকার। পেশির বদলে চাই বুদ্ধি। বুদ্ধির জয় হতে থাকল। বিনা অস্ত্রেও রাজ্য শাসন করা যায়, কিংবা রাজ্যের সম্প্রসারণ করাও সম্ভব। আর এর মধ্যেই বুদ্ধিদীপ্ত কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসে রাজা একটু মানবিকও হতে থাকেন, এর মধ্য দিয়ে কিছু কল্যাণ চিন্তা, কিছু সুবিচারের বিধানও ভাবনার মধ্যে আসতে থাকে। এসবের জন্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে, সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রতিষ্ঠানও জন্ম নেয়। বীরযোদ্ধা বাবর ভারতবর্ষে এসে অস্ত্র নামিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাও করতে থাকেন। তাঁর প্রপৌত্র আকবর নবরত্ন সভা করে এত বড় দেশকে শাসন করার একটা সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
শাসনের জন্য কিছু নিয়মকানুনও তৈরি করেছিলেন। সেই নিয়ম অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতারাই সিংহাসনে বসতেন। নিয়মও মাঝেমধ্যে প্রাচীন হয়ে যায়। আওরঙ্গজেবের সময় আবার পেশিশক্তি প্রবল হয়ে পড়ে। একসময় তা ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের ভয়াবহ রূপ নেয়। তাই তাঁর মৃত্যুর ৫৭ বছর পর একটি বিদেশি ব্যবসায়িক কোম্পানি ভারতবর্ষকে পদানত করে। আওরঙ্গজেবের পর দেশীয় রাজা-নবাবরা মোটামুটি স্বাধীনভাবেই চলছিলেন। কিন্তু বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দী খাঁর উত্তরাধিকারের বিষয়টি স্নেহ বাৎসল্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
কেউ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। এই সুযোগে ব্যবসায়ী ধূর্ত ইংরেজরা দেশটা কেড়ে নেয়। এখানে এসে আবার প্রমাণ হয় পেশিশক্তিই বড় ব্যাপার নয়। তাই যদি হতো তাহলে নবাব সিরাজউদদৌলা লক্ষাধিক সেনাদল নিয়ে মুষ্টিমেয় ক্লাইভের বাহিনীর সঙ্গে পরাজিত হতেন না। ইংরেজরা পরবর্তীকালে রাজস্ব আদয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়। শুধু তা-ই নয়, লুটপাট, প্রতারণা এবং শঠতার আশ্রয় নিয়ে দেশটাকে একধরনের অচলায়তনে পরিণত করে। রাজা শাসিত ইংরেজ জাতি শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর থাকায়, সে দেশেও কিছু বিবেকবান মানুষের জন্ম হয়েছিল। যাঁরা সে দেশের বিচারব্যবস্থা, শিক্ষা এবং সুশাসনের ভাবনা ভাবতেন।
তাঁরা এই দুঃশাসনের হাত থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করে ব্রিটিশের শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করার পথ খুঁজতে শুরু করলেন। তাঁরা ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদিতে মনোযোগ দিলেন। এই সময়ে ভারতের অচলায়তন থেকে কিছু মনীষীর জন্ম হয়। যেমন রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ। তাঁরা কিছু সংস্কারকাজে মনোনিবেশ করার সময়ে ইংরেজ শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পশ্চিমের কিছু মূল্যবোধ ও শিক্ষার আলো ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। দেশপ্রেম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং সংগঠন চিন্তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রবেশ করে। ইংল্যান্ডের আইনশাস্ত্র পড়ে ব্যারিস্টার হয়ে কিছু আলোকিত মানুষ এ দেশে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোও কালক্রমে সাম্প্রদায়িক হয়ে পড়ে। যার ফলাফল আমরা ভারত বিভাগের সময়ে দেখেছি। প্রতিষ্ঠানের যে ভাঙন বা দ্বৈত চরিত্র, এসব আমরা দেখতে দেখতে এ পর্যায়ে এসে পড়েছি। যাঁরা সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রগতিশীল, তাঁরাই সবচেয়ে ভাঙনপ্রিয়। আর যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় যান, তাঁরা রাষ্ট্র শাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু জনকল্যাণের স্বার্থে ব্যবহার করেন না। একেবারে নিজস্ব ও দলীয় স্বার্থে এসব ব্যবহার করার ফলে তাঁর মধ্যে আর কোনো নিরপেক্ষ চরিত্র থাকে না। সবাই আমলা-পুলিশকে বশংবদ করে ফেলেন।
শিক্ষাব্যবস্থার নীতিনির্ধারণী জায়গাগুলোতেও যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেন না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল রাখার স্বার্থে যে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাখা প্রয়োজন, সেখানেও নিজেদের লোক বসিয়ে, তাঁর আনুগত্য প্রয়োজন মনে করেন। পুঁজিবাদ যেসব কারণে বেঁচে থাকে তা হলো, তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন রাখেন। বিচারব্যবস্থা ও মিডিয়াকে যতটা সম্ভব মুক্ত রাখেন। যদিও তাঁরা যখন যুদ্ধ করেন, তখন মিডিয়া আর স্বাধীন থাকতে পারে না। যত অযোগ্য লোকই সেখানে নির্বাচিত হোক না কেন নির্বাচন কমিশন সাধারণত প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এসব প্রতিষ্ঠান কখনোই নিরপেক্ষ হতে পারে না।
আমরা এখন সেই সমস্যায় পড়েছি। যদি নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকত, তাহলে ৫২ বছরে এই সংগঠন একটি প্রাতিষ্ঠানিক গৌরব অর্জন করত। তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাধীনভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। আমলাতন্ত্র নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অনুগত থাকত। কিন্তু ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দলই এই সুযোগ রাখেনি। তাই নিরপেক্ষতার বিষয়টি সব সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ থেকেছে। এই প্রশ্ন থেকে কোনো বিচারপতি, আমলা বা অন্য কোনো ব্যক্তি রেহাই পাননি। আবার নির্বাচনকালীন কোনো অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে দিলেও সেটা ন্যায়সংগত নয়। কারণ সরকার একটি মুখ্য রাজনৈতিক শক্তি। এই টানাপোড়েনের মীমাংসার জন্য বিরোধী দল আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছে।
আর সরকার সংবিধানের পথে এই সমস্যার নিরসন করতে চাইছে। ফলাফলে জিম্মি নিরপেক্ষ জনগণ কোনো পক্ষেই নেই। তারা কোনো দলে নেই। তাদের আন্দোলন করার কোনো ক্ষমতা নেই। মুখ বুজে তারা সবকিছু সহ্য করে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে ব্যয় বাড়ে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, বাড়ির ভালো ছেলেটাকে অকারণে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, বিপুল অর্থ ব্যয় করে তাকে ছাড়িয়ে আনতে হয়। নির্বাচনের সময়ে তারা সুযোগ পায় কখনো ভোট দেওয়ার আবার কখনো ফিরে আসে। হরতাল, অবরোধের সময়ে ভয়ে দিন কাটায় সেই সব জনগণ, যারা সাধারণত একা জাগে না, প্রতিবাদহীন, শিশুপুত্রটাকে ঠিকমতো পড়ালেখাও করাতে পারে না। সেই সব জনগণের কথা ক্ষমতাসীনেরাও ভাবে না, বিরোধীরাও ভাবে না। তারা কি কোনো দিন প্রতিবাদের কণ্ঠ আর ফিরে পাবে?
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার একসময় ছিল আন্তর্জাতিক নৈতিকতার শীর্ষ সম্মান—যেখানে পুরস্কার পেতেন তাঁরা, যাঁদের জীবন ও কর্ম বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ সেই পুরস্কার অনেকটা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক সৌজন্য উপহার। যা দেওয়া হয় যখন কারও হাত মলতে হয়, অহংকারে তেল দিতে হয় বা নিজের অ্যাজেন্ডা...
১২ আগস্ট ২০২৫গত বছর জুলাই মাস থেকে আমাদের আন্দোলনকারী তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুখে ও কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মুখে, বেশি বেশি করে কয়েকটি বাক্য উচ্চারিত হয়ে আসছিল। বাকিগুলোর মধ্যে প্রথম যে বাক্যটি সবার কানে বেধেছে, সেটা হলো ‘বন্দোবস্ত’।
১২ আগস্ট ২০২৫প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় যে কথাগুলো বলেছেন, তা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১২ আগস্ট ২০২৫জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
১১ আগস্ট ২০২৫