Ajker Patrika

বঙ্গবন্ধুকে সেই শেষ দেখা হবে ভাবেননি মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বঙ্গবন্ধুকে  সেই শেষ দেখা হবে ভাবেননি মোশাররফ

ফরিদপুর জেলার মধুখালীর মোশাররফ হোসেন ছিলেন গণভবনের রান্নাঘরের স্টোরকিপার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খাবার পরিবেশন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে পাঠানো দুপুরের খাবার গণভবনে বসেই খেয়েছেন বঙ্গবন্ধু বলে জানান মোশাররফ হোসেন। সেই দেখাই যে শেষ দেখা হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।

মোশাররফ হোসেন গতকাল আজকের পত্রিকাকে বললেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত গণভবনেই ছিলাম। জানতাম বঙ্গবন্ধু কী খেতে পছন্দ করেন আর কী অপছন্দ করেন। তাঁর খাবারে সব সময়ই দেশি মাছ থাকত, সঙ্গে পাতলা ডাল। নাশতায় সমুচা একটু বেশিই পছন্দ ছিল বঙ্গবন্ধুর।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা গণভবন কম্পাউন্ডেই থাকতাম। প্রতিদিনের মতো ১৪ তারিখ রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছি। ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দেখি গণভবনের বাউন্ডারি ঘেষে ট্যাঙ্ক দাঁড়ানো। পরিস্থিতি কিছু বুঝতে পারছি না। যার কিছু পরে রেডিওতে প্রথম এ খবর পাই যে বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে। ১৫ আগস্ট বেলা ১০-১১টা নাগাদ খুনি মেজর ডালিম ও মোসলেমউদ্দিন দলবল নিয়ে গণভবনে প্রবেশ করে। তারা বিভিন্ন রুমে তল্লাশি করে আমাদের সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় পাওয়ার পরে খুনিরা আমাদের ছেড়ে দেয়। এরপর প্রায় দুই মাস গণভবনে নজরবন্দিতে ছিলাম। পরে আমাকে বঙ্গভবনে বদলি করা হয়। এরশাদ সরকার আসার পরে ফরিদপুরে বদলি হয়ে যাই। শেষ সময় পর্যন্ত ফরিদপুরেই ছিলাম।’

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ১ মার্চ আমি বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের দাওয়াত বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলাম। তখন তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কোথায় বিয়ে করছি? বউ কী করে, কতটুকু পড়াশোনা করেছে, শ্বশুর কী করে–এমন অনেক প্রশ্ন। উত্তর দেওয়ার পরে বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে ডেকে বললেন, ‘ওকে এক হাজার টাকা দিয়ে দে। আর আমাকে বললেন, তোর বউকে একটা বেনারসি শাড়ি ও একটা ঘড়ি কিনে দিস। সবার জন্য একই রকমের ভালোবাসা ছিল তাঁর। ভালোবাসায় রকমফের দেখিনি।’

শোকের মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি 
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরই মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে আওয়ামী লীগ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটা সীমিত করা হয়েছে। শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগঘোষিত সব কর্মসূচি সীমিত পরিসরে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে পালনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শোকের মাসের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের উদ্যোগে রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে তাঁর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদলের শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা।

১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা। ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে সকাল ৯টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ঘরোয়াভাবে আলোচনা সভা।
২৭ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর উদ্যোগে পৃথক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের উচ্চমাত্রার বিষয়টি মাথায় রেখে এবং কর্মসূচির ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে ঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য ওবায়দুল কাদের আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত