Ajker Patrika

সংসদে বিএনপির হারুনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সংসদে বিএনপির হারুনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ

সামরিক শাসন আমলে পাস হওয়া আইনগুলো নতুন করে পাস করার বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির দলীয় সাংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি দাবি করেছেন, সরকারকে সন্তুষ্ট করতে আদালতে রায় দেওয়া হয়। তাঁর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে এক্সপাঞ্জ করার দাবি করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মন্ত্রীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার সেই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেছেন। 

গতকাল শুক্রবার পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দেওয়ার সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বোট ক্লাবের সভাপতি হওয়ার জন্য অনুমতি নিয়েছিলেন কি-না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন এমপি হারুন। আজ শনিবার এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ চেয়েছেন সরকার দলীয় হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ দাবি জানান। তবে বিষয়টি নিয়ে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

 
আজ সংসদে গান্ধী আশ্রম (ট্রাস্টি বোর্ড) বিল ২০২১ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের বক্তব্য দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার কারণে প্রথমে এক্সপাঞ্জের মুখোমুখি হন বিএনপির এমপি হারুন। 

বক্তব্যে তিনি সামরিক শাসনামলে পাস হওয়া আইনগুলো নতুন করে পাস করার বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রশ্নে তোলেন। হারুন বলেন, কিছু আইন রাখা আর কিছু বাদ দেওয়াটা আইনের একটি অসংগতি। আওয়ামী মার্কা বিচারকেরা আপনাদের সন্তুষ্ট করার জন্য, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার জন্য এ ধরনের রায় প্রদান করেছেন। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে। আমরা সামরিক আইনের পক্ষে নই। সামরিক আইনের বিরোধিতা করে জেল খেটেছি। অবশ্যই সামরিক আইন সংবিধানসম্মত নয়। কিন্তু আইনের অস্পষ্টতা ও অপপ্রয়োগ কাম্য নয়। 

এর আগে অন্য একটি বিলের ওপর আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে বিএনপির এই এমপি বলেন, আইনমন্ত্রীর কাছে এমন কোনো বক্তব্য আমরা আশা করি না। আপনাদের আওয়ামী মার্কা বিচারকেরা সন্তুষ্ট করছেন। আপনারা এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন। এর প্রয়োজন নেই। 

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ তাঁর আসল রূপ আজ বের করে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে নির্মম হত্যাকাণ্ড তাঁরা ঘটিয়েছিলেন ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫-এ যে ইনডেমনিটি অরডিন্যান্স তাঁরা বানিয়েছিলেন। এটা নিয়ে তখন তাঁরা বলেননি যে উনি এখন বললেন, এটা আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবী (হারুন বলেছেন আওয়ামী সমর্থিত বিচারক)। সংসদ সদস্য ভুলে যান, একটা দেশের জনগণ সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপারে এভাবে উক্তি করতে পারেন, এটা দুঃখজনক। 

আইনমন্ত্রী বলেন, ব্যাপারটা হচ্ছে, উনি তখন কোথায় ছিলেন? বলেছেন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। ওনার নেতা জাতির পিতাকে খুন করার পরে যে একুশ বছর দেশ চালিয়ে গেছেন একটি এফআইআর হয়নি। ইনডেমনিটি যখন হয় সেটা একটি প্যাকেটের মধ্যে ভরে সবগুলো আইন এই সংসদের মধ্যে বসে আইন করে ফেললেন, তখন উনি কোথায় ছিলেন? তাঁরা এখন বলছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা হচ্ছে আমাদের মতের। 

হারুনকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, তাঁদের আচরণ হচ্ছে এমনই। তাঁদের থেকে গণতন্ত্রের বার্তা শুনতে এখানে বসিনি। গণতন্ত্রের বার্তা শুনব সেটাও আমার বিশ্বাস নয়। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক সংসদে দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে এ রকম কথা বলতে পারে এটা ‍দুঃখজনক। আমি আবারও অনুরোধ করছি, এক্সপাঞ্জ করার জন্য। 

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ওই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে বলে সংসদকে জানান। 

এদিকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, তিনি (হারুনুর রশীদ) পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ প্রধান থেকে শুরু করে অনেকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আমি আজকের এই মহান সংসদে গতকাল (শুক্রবার) হারুনুর রশিদের প্রদত্ত বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। 

অবশ্য স্পিকার এই বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। 

হুইপ বলেন, তিনি কী কারণে যেন পরীমণির বিষয়ে বড় বেশি আগ্রহী। আমি জানি না তাঁর বাসায় কী অবস্থা! এর আগেও তিনি পরীমণির বিষয়ে সংসদে কথা বলেছিলেন। গতকালও সুযোগ পেয়ে ওর বিষয়ে সংসদে উপস্থাপন করেছেন। 

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আরও বলেন, স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মদ, জুয়া, হাউজি, রেসকোর্স সবকিছু আইন করে বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর (হারুনের) প্রয়াত নেতা জিয়াউর রহমান সাহেব বিসমিল্লাহের রহমানের রহিম বলে বাংলাদেশে মদ, জয়া, হাউজি সবকিছু জায়েজ করে দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশে মদ, জুয়া, হাইজির বন্ধ করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত