প্রশ্ন: বাংলাদেশে বর্তমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইনশৃঙ্খলা। এই মুহূর্তে কে দায়িত্বে আছেন এবং এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. ইউনূস: অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মূলত প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) পদত্যাগের দাবির মধ্য দিয়ে এবং অবশেষে সেই দাবি অর্জিত হয়েছে। আজ তারা (জনগণ) উদ্যাপন করছে। এ ধরনে উদ্যাপন আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যখন আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।
আজ আমরা একধরনে কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। তাই কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই এ ধরনের উদ্যাপন চলছে। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আজ তারা তাদের স্বাধীনতা উদ্যাপন করছে। কারণ, আমরা যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, তা থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছি। যারা তাদের (জনগণকে) নির্যাতন করেছে, তাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে, দুর্নীতি করেছে, তাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয় না, সামনে আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? এটি কী আপনার দুশ্চিন্তার কারণ নয়?
ড. ইউনূস: আমি আশা করি, এই অস্থিতিশীলতা শেষ করা সম্ভব। এই অস্থিতিশীলতা সেখানেই ফেরত পাঠানো সম্ভব, যেখান থেকে তা এসেছে। আর এই অস্থিতিশীলতার—যেটা শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছেন—সৃষ্টি হয়েছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্যই। আমরা জানি, স্থিতিশীলতার চূড়ান্ত লক্ষ্য, চূড়ান্ত ওষুধ হলো গণতন্ত্র, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। এই প্রথম আমরা একটি প্রকৃত ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি, যা এই বিপ্লবের অন্যতম মূল ধারণা ছিল।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অবশ্যই গণতন্ত্র আনতে হবে। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তীকালে বাংলাদেশে ইসলামপন্থা ও কট্টরপন্থার উদ্ভব হতে পারে—এটি কি দুশ্চিন্তার বিষয় নয়? নইলে কী কারণে ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙবে? তারা কি উসকানি দিচ্ছে না? এটি কি স্রেফ শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের ক্ষোভ?
ড. ইউনূস: এর জন্য হাসিনাই দায়ী। তিনিই দেশকে তাঁর পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছেন। তিনি দেশে একটি তিক্ত আবহ তৈরি করেছেন। তাই তারা (জনগণ) যা করছে, সে বিষয়ে কোনো অনুতাপ তাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যা করেছেন, সেগুলোর কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পেরেছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারবে? আমরা একটু আগেই আমাদের প্রতিনিধি মারফত খবর পেলাম, মানুষ পুলিশ স্টেশন লুট করে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস: এ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষ্যই হলো আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। যেটা শেখ হাসিনা করতে পারেননি। যে কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সরকারের পতন হয়েছে। তিনি যদি আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পারতেন, তাহলে এমনটা ঘটত না। এটি মূলত হাসিনা সরকারেরই ধারাবাহিকতার ফসল।
এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, মানুষ যেন উদ্যাপন শেষে নিজ নিজ ঘরে, কাজে ও ব্যবসায় ফিরে যায় এবং তারা যেন আগের চেয়ে আরও স্বাধীন ও নতুন উপায়ে নিজেদের কাজগুলো করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন: হাসিনার ব্যাপারে কী বলবেন? তিনি এই মুহূর্তে ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা জানি না, তিনি সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন কি না। কিছু কিছু খবরে বলা হচ্ছে, তিনি যুক্তরাজ্যেও যেতে পারেন। আমরা জানি না যুক্তরাজ্য সেই প্রস্তাব বা আবেদন গ্রহণ করবে কি না। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী? কোন দেশ তাঁকে আশ্রয় দিতে পারে?
ড. ইউনূস: এ বিষয়ে আমার একেবারেই কোনো ধারণা নেই। আপনার কাছ থেকেই আমি শুনলাম যে তিনি ভারতে আছেন। আমি তো সরকারে নেই। এ বিষয়ে আমার কারও সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি।
প্রশ্ন: তাঁর (হাসিনা) সরকারের অন্যান্য নেতার ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? আমরা জেনেছি, ঢাকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্য সদস্যরাও লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন আক্রমণ-হামলার। এটি কি ব্যাপক উদ্বেগের বিষয় নয়?
ড. ইউনূস: এটি অবশ্যই খুবই উদ্বেগের বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে হবে। যে রাগ-ক্ষোভের কারণে মানুষ এমনটা করছে, তা প্রশমন করে তারা যাতে অতি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন: অধ্যাপক ইউনূস, আপনি জানেন আমরা যারা বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি, তাদের মতে—বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সময়টা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। কারা এই আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করছে? এখানে কী কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জড়িত আছে? অন্যান্য গোষ্ঠীও কি বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি চেষ্টা করছে? ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি যদি জানতে চাই যে, বিষয়টি কি পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে? এমন আশঙ্কা আছে কি?
ড. ইউনূস: আমি যতগুলো সাক্ষাৎকার দিয়েছি সবখানেই বলেছি, আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলেন, তাহলে তা চারপাশে ছড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে মিয়ানমার, সেভেন সিস্টার্স এবং পশ্চিমবঙ্গ—সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। আমি আনন্দিত যে, বিষয়টি উপলব্ধি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি দরজা খুলে দেবেন। কারণ এই পরিস্থিতির কারণে যারা বাংলাদেশ থেকে যাবেন তাঁদের তো গ্রহণ করতে হবে।
যদি এই অস্থিতিশীলতা মাসের পর মাস চলতে থাকে, তাহলে এটি কেবল সর্বত্র ছড়িয়েই পড়বে না; মানুষ যে ক্ষোভ বহন করে যেখানে যাবে সেই ক্ষোভ সেখানেই ছড়িয়ে পড়বে এবং সেখান থেকে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করবে। এটি মোটেও একটি সুখকর বিষয় হবে না। বিষয়টি হবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো।
আমরা দেখছি, এখন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে প্রায়ই গোলা আসছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে এটি আরও বাড়বে এবং দুই দেশই একটি নোংরা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাবে। কারণ, বাংলাদেশে এখন লাখো রোহিঙ্গা আছে। তারা তাদের দেশে ফিরে যেতে চাইবে। তাই বাংলাদেশ যদি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত না হয়, তাহলে কেউই ভালো থাকবে না। বাংলাদেশ সমস্যায় পড়লে বাকিরাও সমস্যায় পড়বে।
এ দেশের ১৭ কোটি মানুষের দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ-যুবক। তাই আপনাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা সন্তুষ্ট এবং তারা আইন মেনে চলা সুনাগরিক। তাদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তাদের দেশে গণতন্ত্র আছে এবং সেই গণতন্ত্রের চর্চা হয়। এই তরুণ প্রজন্ম জীবনেও ভোট দিতে পারেনি। তাদের চোখের সামনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলো ছিল অর্থহীন। তারা সেখানে যায়নি, কারণ তাদের বিবেচনায় এসব নির্বাচনই হয়নি। এই অবস্থান থেকেই আমাদের নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসছে, গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। এই দায়িত্ব তাদেরও নিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আবারও সিস্টেমেটিক হামলার শিকার হতে পারে?
ড. ইউনূস: অন্তর্বর্তী সময়ে কী হবে আমি জানি না। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে তাদের কণ্ঠস্বর থাকবে, তাদের আওয়াজ আমলে নেওয়া হবে। ভারতে যেমনটা নেওয়া হয়—সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে বর্তমানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আইনশৃঙ্খলা। এই মুহূর্তে কে দায়িত্বে আছেন এবং এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
ড. ইউনূস: অবশ্যই আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে মূলত প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) পদত্যাগের দাবির মধ্য দিয়ে এবং অবশেষে সেই দাবি অর্জিত হয়েছে। আজ তারা (জনগণ) উদ্যাপন করছে। এ ধরনে উদ্যাপন আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যখন আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।
আজ আমরা একধরনে কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। তাই কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই এ ধরনের উদ্যাপন চলছে। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আজ তারা তাদের স্বাধীনতা উদ্যাপন করছে। কারণ, আমরা যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম, তা থেকে অবশেষে মুক্তি পেয়েছি। যারা তাদের (জনগণকে) নির্যাতন করেছে, তাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে, দুর্নীতি করেছে, তাদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার কী মনে হয় না, সামনে আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? এটি কী আপনার দুশ্চিন্তার কারণ নয়?
ড. ইউনূস: আমি আশা করি, এই অস্থিতিশীলতা শেষ করা সম্ভব। এই অস্থিতিশীলতা সেখানেই ফেরত পাঠানো সম্ভব, যেখান থেকে তা এসেছে। আর এই অস্থিতিশীলতার—যেটা শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছেন—সৃষ্টি হয়েছে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্যই। আমরা জানি, স্থিতিশীলতার চূড়ান্ত লক্ষ্য, চূড়ান্ত ওষুধ হলো গণতন্ত্র, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। এই প্রথম আমরা একটি প্রকৃত ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি, যা এই বিপ্লবের অন্যতম মূল ধারণা ছিল।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে অবশ্যই গণতন্ত্র আনতে হবে। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু নির্বাচন আয়োজনের আগে অন্তর্বর্তীকালে বাংলাদেশে ইসলামপন্থা ও কট্টরপন্থার উদ্ভব হতে পারে—এটি কি দুশ্চিন্তার বিষয় নয়? নইলে কী কারণে ছাত্ররা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙবে? তারা কি উসকানি দিচ্ছে না? এটি কি স্রেফ শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের ক্ষোভ?
ড. ইউনূস: এর জন্য হাসিনাই দায়ী। তিনিই দেশকে তাঁর পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছেন। তিনি দেশে একটি তিক্ত আবহ তৈরি করেছেন। তাই তারা (জনগণ) যা করছে, সে বিষয়ে কোনো অনুতাপ তাদের নেই। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যা করেছেন, সেগুলোর কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পেরেছে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পারবে? আমরা একটু আগেই আমাদের প্রতিনিধি মারফত খবর পেলাম, মানুষ পুলিশ স্টেশন লুট করে অস্ত্র নিয়ে যাচ্ছে।
ড. ইউনূস: এ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষ্যই হলো আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। যেটা শেখ হাসিনা করতে পারেননি। যে কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সরকারের পতন হয়েছে। তিনি যদি আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পারতেন, তাহলে এমনটা ঘটত না। এটি মূলত হাসিনা সরকারেরই ধারাবাহিকতার ফসল।
এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, মানুষ যেন উদ্যাপন শেষে নিজ নিজ ঘরে, কাজে ও ব্যবসায় ফিরে যায় এবং তারা যেন আগের চেয়ে আরও স্বাধীন ও নতুন উপায়ে নিজেদের কাজগুলো করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন: হাসিনার ব্যাপারে কী বলবেন? তিনি এই মুহূর্তে ভারতে অবস্থান করছেন। আমরা জানি না, তিনি সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন কি না। কিছু কিছু খবরে বলা হচ্ছে, তিনি যুক্তরাজ্যেও যেতে পারেন। আমরা জানি না যুক্তরাজ্য সেই প্রস্তাব বা আবেদন গ্রহণ করবে কি না। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কী? কোন দেশ তাঁকে আশ্রয় দিতে পারে?
ড. ইউনূস: এ বিষয়ে আমার একেবারেই কোনো ধারণা নেই। আপনার কাছ থেকেই আমি শুনলাম যে তিনি ভারতে আছেন। আমি তো সরকারে নেই। এ বিষয়ে আমার কারও সঙ্গে কোনো কথাও হয়নি।
প্রশ্ন: তাঁর (হাসিনা) সরকারের অন্যান্য নেতার ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? আমরা জেনেছি, ঢাকায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্য সদস্যরাও লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন আক্রমণ-হামলার। এটি কি ব্যাপক উদ্বেগের বিষয় নয়?
ড. ইউনূস: এটি অবশ্যই খুবই উদ্বেগের বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে হবে। যে রাগ-ক্ষোভের কারণে মানুষ এমনটা করছে, তা প্রশমন করে তারা যাতে অতি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশ্ন: অধ্যাপক ইউনূস, আপনি জানেন আমরা যারা বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি, তাদের মতে—বাংলাদেশের এই অন্তর্বর্তী সময়টা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। কারা এই আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করছে? এখানে কী কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী জড়িত আছে? অন্যান্য গোষ্ঠীও কি বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি চেষ্টা করছে? ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি যদি জানতে চাই যে, বিষয়টি কি পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে? এমন আশঙ্কা আছে কি?
ড. ইউনূস: আমি যতগুলো সাক্ষাৎকার দিয়েছি সবখানেই বলেছি, আপনি যদি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলেন, তাহলে তা চারপাশে ছড়িয়ে যাবে। বিশেষ করে মিয়ানমার, সেভেন সিস্টার্স এবং পশ্চিমবঙ্গ—সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। আমি আনন্দিত যে, বিষয়টি উপলব্ধি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি দরজা খুলে দেবেন। কারণ এই পরিস্থিতির কারণে যারা বাংলাদেশ থেকে যাবেন তাঁদের তো গ্রহণ করতে হবে।
যদি এই অস্থিতিশীলতা মাসের পর মাস চলতে থাকে, তাহলে এটি কেবল সর্বত্র ছড়িয়েই পড়বে না; মানুষ যে ক্ষোভ বহন করে যেখানে যাবে সেই ক্ষোভ সেখানেই ছড়িয়ে পড়বে এবং সেখান থেকে তারা বাংলাদেশে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করবে। এটি মোটেও একটি সুখকর বিষয় হবে না। বিষয়টি হবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো।
আমরা দেখছি, এখন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের দিকে প্রায়ই গোলা আসছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে এটি আরও বাড়বে এবং দুই দেশই একটি নোংরা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাবে। কারণ, বাংলাদেশে এখন লাখো রোহিঙ্গা আছে। তারা তাদের দেশে ফিরে যেতে চাইবে। তাই বাংলাদেশ যদি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিচালিত না হয়, তাহলে কেউই ভালো থাকবে না। বাংলাদেশ সমস্যায় পড়লে বাকিরাও সমস্যায় পড়বে।
এ দেশের ১৭ কোটি মানুষের দুই-তৃতীয়াংশই তরুণ-যুবক। তাই আপনাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, তারা সন্তুষ্ট এবং তারা আইন মেনে চলা সুনাগরিক। তাদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তাদের দেশে গণতন্ত্র আছে এবং সেই গণতন্ত্রের চর্চা হয়। এই তরুণ প্রজন্ম জীবনেও ভোট দিতে পারেনি। তাদের চোখের সামনে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলো ছিল অর্থহীন। তারা সেখানে যায়নি, কারণ তাদের বিবেচনায় এসব নির্বাচনই হয়নি। এই অবস্থান থেকেই আমাদের নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। তাই আমাদের তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসছে, গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। এই দায়িত্ব তাদেরও নিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন, এই অন্তর্বর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা আবারও সিস্টেমেটিক হামলার শিকার হতে পারে?
ড. ইউনূস: অন্তর্বর্তী সময়ে কী হবে আমি জানি না। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে তাদের কণ্ঠস্বর থাকবে, তাদের আওয়াজ আমলে নেওয়া হবে। ভারতে যেমনটা নেওয়া হয়—সংখ্যালঘুরা ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন।
২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০ টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে। এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।
১২ আগস্ট ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল সোমবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছ
১২ আগস্ট ২০২৫রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক এখন ‘গলার কাঁটা’ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
১২ আগস্ট ২০২৫বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ সই হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে পুত্রজায়ায় এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরি
১২ আগস্ট ২০২৫