ফারুক মেহেদী, ঢাকা
১০ বছর আগে পঞ্চম জনশুমারির জন্য খরচ হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এ বছর ষষ্ঠ জনশুমারিতে সেই খরচ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে সাত গুণ বেশি। আর প্রাথমিক প্রস্তাবে এই খরচ ছিল ১৫ গুণ বেশি। এ নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা, পরিকল্পনামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা কিছুটা কমেছে। তবে বর্তমান খরচ নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এই জনশুমারির কাজে প্রায় ৪ লাখ ট্যাব কেনার জন্য সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই কাজে কেন ট্যাব কিনতে হবে সেটা যেমন প্রশ্ন, তেমনি এই ট্যাব কেনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান পরস্পরকে অভিযুক্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে দফায় দফায় পিছিয়ে পড়ছে জনগুরুত্বপূর্ণ জনশুমারির বাস্তব কাজ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জনশুমারিতে কেনাকাটা ও অপচয় নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিবিএসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা আনা উচিত। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা দরকার। বাজেট টু বাজেট পর্যালোচনা করা দরকার। এর মধ্যে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে, তা সংশোধন করা দরকার। পুরো বিষয়টি পরিবীক্ষণের আওতায় আনতে হবে। জানা যায়, ২০১১ সালের পঞ্চম জনশুমারিতে ব্যয় হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। আর ১০ বছর পর একই শুমারিতে প্রথম খরচের প্রস্তাব করা হয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগেরবারের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি ছিল। এমন অস্বাভাবিক প্রস্তাবে আপত্তি তোলে পরিকল্পনা কমিশন। পরে তা কাটছাঁট করে ব্যয় নামিয়ে আনা হয় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। কিন্তু সেটিও বেশি মনে হয় কমিশনের কাছে। ফলে আরেক দফা ব্যয় কমিয়ে ১৭৬১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম যখন ব্যয় প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এর সমালোচনা করে এক যুগের ব্যবধানে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ১০-১৫ গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তিনি এ প্রকল্পের নানান অসংগতি নিয়ে কথা বলেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জনশুমারির জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত অনুমোদন হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা খরচ করা হবে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনার জন্য। এই ট্যাব কেনার চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় ওয়ালটন ডিজি টেকের নথিপত্রে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বিবিএসের মূল্যায়ন কমিটি। ট্যাবে যেসব ফিচার থাকার কথা, তাদের দেওয়া ওই সব নমুনা ট্যাবে তা পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত তা ক্রয় কমিটিতে আটকে যায়। এ জন্য ওয়ালটন ডিজি টেককে শোকজ করা হয়।
তবে এই দরপত্রে ওয়ালটনের পাশাপাশি ওই ক্রয় প্রস্তাবে অংশ নেয় ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। তাদের স্যামসাং ব্র্যান্ডের ট্যাবের জন্য ৫৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দর প্রস্তাবের বিপরীতে ওয়ালটন দর দিয়েছিল ৪০২ কোটি টাকা। কিন্তু বিবিএস ১৪৬ কোটি টাকা বেশি দরে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসকেই কাজ দিতে চেয়েছিল বলে জানা যায়। একদিকে ওয়ালটনের ট্যাব নিয়ে নানা অভিযোগ, অন্যদিকে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের ট্যাবের পেছনে সরকারের বাড়তি ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়–এসব কারণে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে দেয়। পরে বিবিএস ট্যাব কিনতে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করে।
এ ব্যাপারে ওয়ালটন ডিজি টেকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শোকজের জবাব দিয়েছি। আমরা আইন ও বিধিবিধান মেনেই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছি। তারা মূলত সুনির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজটি দিতে চাচ্ছে। বিবিএস সফটওয়্যার কেনার দরপত্র আহ্বান করেনি। দরপত্র চেয়েছে হার্ডওয়্যারের। আমরা শর্ত মেনে দরপত্রে অংশ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্রয় প্রস্তাবটি মূল্যায়নের সময় অনৈতিকভাবে তারা আমাদের প্রতিযোগী ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আমরা মনে করি, প্রকল্পের কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে দেশের ক্ষতি করে প্রকল্পটিকে পিছিয়ে দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে জনশুমারির প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওয়ালটনকে নোটিশ করেছিলাম, তারা জবাব দিয়েছে। তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করা হবে।’ একটি জরিপের জন্য এত ট্যাব কেন প্রয়োজন? মোবাইল ফোন দিয়ে তা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এসব বলছে, এ বিষয়ে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই। এখানে তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয় আছে। তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে এর নিরাপত্তা কে দেবে?’ ট্যাবের ক্ষেত্রে কী নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠতে পারে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আসতে পারে। এ জন্য আমরা একটা সিঙ্গেল ব্র্যান্ড নিতে চাই।’
বেশি দামে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের ট্যাব কেনার আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছিল। সমালোচনায় পরে তা-ও বাতিল হয়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভালো জিনিসের দাম একটু বেশি হতে পারে। আমাদের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। এখানে তথ্যের নিরাপত্তা, পণ্যের গুণগত মান সুরক্ষিত। দাম বেশি হলেও এখানে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’
এখন প্রশ্ন উঠেছে ট্যাব কেনার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। কারণ, এতগুলো ট্যাব ব্যবহার হবে শুধু জরিপের সময়। এরপর এগুলোর সুরক্ষা বা ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিবিএসের একটি সূত্র জানায়, বিগত দিনে অনেক প্রকল্পের এমন অনেক ডিভাইস জরিপ শেষে তেমন আর কাজে আসেনি। সুতরাং এত দামি সব ট্যাবও জরিপ শেষে কাজে লাগবে কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এদিকে, পুরো প্রকল্পটির ব্যয় প্রস্তাব দুই দফায় কাটছাঁট করার পরও যা রয়েছে, তা-ও অনেক বেশি বলে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ পর্যন্ত যা চূড়ান্ত হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু খাত কাটছাঁট করা হয়েছে। জানা যায়, প্রতিজন সুপারভাইজার ও গণনাকারীর সম্মানী ১১ হাজার থেকে কমিয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় প্রস্তাবে দেখা যায়, পুনর্গঠিত ডিপিপিতে জেলা পর্যায়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভেন্যু, মাল্টিমিডিয়া এবং যানবাহন ভাড়া বাবদ ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ রকম আরও অনেক খাতে খরচ কমানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন খাতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি টাকা। তা কমিয়ে ২৬ কোটি টাকা করা হলেও সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভ্রমণ খাতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৪২ কোটি টাকা। পরে সেটা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিবিএসের মূল কাজই জরিপ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা। কমবেশি প্রায় সব কর্মকর্তাই কোনো না কোনো সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এসব বিষয়ে জ্ঞান আহরণে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যেহেতু করোনার কারণে ভ্রমণে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে জনশুমারি প্রকল্পে ভ্রমণ খাতে আদৌ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন আছে কি না, এই নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
ম্যাপিং খাতে প্রথমে ব্যয় ৫৮ কোটি টাকা ধরা হয়। পরে তা কমিয়ে ২৮ কোটি টাকায় আনা হয়। টেলেক্স, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট খাতে প্রথম ব্যয় প্রস্তাব ১৫ কোটি টাকা। সমালোচনার মুখে তা কমিয়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ১৮৮ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব কমিয়ে করা হয় ১৪৭ কোটি টাকা। মুদ্রণ ও বাঁধাই খাতে প্রথম ব্যয় প্রস্তাব ৩৩৯ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে করা হয় ১৩৯ কোটি টাকা। অথচ বিবিএসে বিশ্বমানের নিজস্ব ছাপাখানা রয়েছে। সেখানে যাবতীয় প্রকাশনা মুদ্রণ করলে বিপুল অঙ্কের এ অপচয় রোধ করা যায় বলে খোদ বিবিএস থেকেই কথা উঠেছে। এ ছাড়া টেলিফোন, আপ্যায়ন, যানবাহন এবং জ্বালানি ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতের সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাবেও সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১০ বছর আগে পঞ্চম জনশুমারির জন্য খরচ হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। এ বছর ষষ্ঠ জনশুমারিতে সেই খরচ বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে সাত গুণ বেশি। আর প্রাথমিক প্রস্তাবে এই খরচ ছিল ১৫ গুণ বেশি। এ নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা, পরিকল্পনামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা কিছুটা কমেছে। তবে বর্তমান খরচ নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এই জনশুমারির কাজে প্রায় ৪ লাখ ট্যাব কেনার জন্য সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই কাজে কেন ট্যাব কিনতে হবে সেটা যেমন প্রশ্ন, তেমনি এই ট্যাব কেনা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান পরস্পরকে অভিযুক্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে দফায় দফায় পিছিয়ে পড়ছে জনগুরুত্বপূর্ণ জনশুমারির বাস্তব কাজ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জনশুমারিতে কেনাকাটা ও অপচয় নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিবিএসের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা আনা উচিত। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা দরকার। বাজেট টু বাজেট পর্যালোচনা করা দরকার। এর মধ্যে যদি কোনো অস্বাভাবিকতা থাকে, তা সংশোধন করা দরকার। পুরো বিষয়টি পরিবীক্ষণের আওতায় আনতে হবে। জানা যায়, ২০১১ সালের পঞ্চম জনশুমারিতে ব্যয় হয়েছিল ২৩৭ কোটি টাকা। আর ১০ বছর পর একই শুমারিতে প্রথম খরচের প্রস্তাব করা হয় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা, যা আগেরবারের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি ছিল। এমন অস্বাভাবিক প্রস্তাবে আপত্তি তোলে পরিকল্পনা কমিশন। পরে তা কাটছাঁট করে ব্যয় নামিয়ে আনা হয় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। কিন্তু সেটিও বেশি মনে হয় কমিশনের কাছে। ফলে আরেক দফা ব্যয় কমিয়ে ১৭৬১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম যখন ব্যয় প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী এর সমালোচনা করে এক যুগের ব্যবধানে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ১০-১৫ গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তিনি এ প্রকল্পের নানান অসংগতি নিয়ে কথা বলেছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জনশুমারির জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত অনুমোদন হয়েছে, সেখান থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা খরচ করা হবে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব কেনার জন্য। এই ট্যাব কেনার চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় ওয়ালটন ডিজি টেকের নথিপত্রে জাল-জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বিবিএসের মূল্যায়ন কমিটি। ট্যাবে যেসব ফিচার থাকার কথা, তাদের দেওয়া ওই সব নমুনা ট্যাবে তা পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত তা ক্রয় কমিটিতে আটকে যায়। এ জন্য ওয়ালটন ডিজি টেককে শোকজ করা হয়।
তবে এই দরপত্রে ওয়ালটনের পাশাপাশি ওই ক্রয় প্রস্তাবে অংশ নেয় ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। তাদের স্যামসাং ব্র্যান্ডের ট্যাবের জন্য ৫৪৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা দর প্রস্তাবের বিপরীতে ওয়ালটন দর দিয়েছিল ৪০২ কোটি টাকা। কিন্তু বিবিএস ১৪৬ কোটি টাকা বেশি দরে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসকেই কাজ দিতে চেয়েছিল বলে জানা যায়। একদিকে ওয়ালটনের ট্যাব নিয়ে নানা অভিযোগ, অন্যদিকে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের ট্যাবের পেছনে সরকারের বাড়তি ১৪৬ কোটি টাকা ব্যয়–এসব কারণে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে দেয়। পরে বিবিএস ট্যাব কিনতে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করে।
এ ব্যাপারে ওয়ালটন ডিজি টেকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শোকজের জবাব দিয়েছি। আমরা আইন ও বিধিবিধান মেনেই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছি। তারা মূলত সুনির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজটি দিতে চাচ্ছে। বিবিএস সফটওয়্যার কেনার দরপত্র আহ্বান করেনি। দরপত্র চেয়েছে হার্ডওয়্যারের। আমরা শর্ত মেনে দরপত্রে অংশ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্রয় প্রস্তাবটি মূল্যায়নের সময় অনৈতিকভাবে তারা আমাদের প্রতিযোগী ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ দেয়। আমরা মনে করি, প্রকল্পের কিছু কর্মকর্তা ব্যক্তিস্বার্থে দেশের ক্ষতি করে প্রকল্পটিকে পিছিয়ে দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে জনশুমারির প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওয়ালটনকে নোটিশ করেছিলাম, তারা জবাব দিয়েছে। তাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় কী হবে, তা সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী করা হবে।’ একটি জরিপের জন্য এত ট্যাব কেন প্রয়োজন? মোবাইল ফোন দিয়ে তা সম্ভব কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা এসব বলছে, এ বিষয়ে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই। এখানে তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার বিষয় আছে। তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে এর নিরাপত্তা কে দেবে?’ ট্যাবের ক্ষেত্রে কী নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠতে পারে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আসতে পারে। এ জন্য আমরা একটা সিঙ্গেল ব্র্যান্ড নিতে চাই।’
বেশি দামে ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের ট্যাব কেনার আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছিল। সমালোচনায় পরে তা-ও বাতিল হয়। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভালো জিনিসের দাম একটু বেশি হতে পারে। আমাদের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। এখানে তথ্যের নিরাপত্তা, পণ্যের গুণগত মান সুরক্ষিত। দাম বেশি হলেও এখানে ছাড় দেওয়া হয়েছে।’
এখন প্রশ্ন উঠেছে ট্যাব কেনার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও। কারণ, এতগুলো ট্যাব ব্যবহার হবে শুধু জরিপের সময়। এরপর এগুলোর সুরক্ষা বা ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিবিএসের একটি সূত্র জানায়, বিগত দিনে অনেক প্রকল্পের এমন অনেক ডিভাইস জরিপ শেষে তেমন আর কাজে আসেনি। সুতরাং এত দামি সব ট্যাবও জরিপ শেষে কাজে লাগবে কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন আছে।
এদিকে, পুরো প্রকল্পটির ব্যয় প্রস্তাব দুই দফায় কাটছাঁট করার পরও যা রয়েছে, তা-ও অনেক বেশি বলে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ পর্যন্ত যা চূড়ান্ত হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু খাত কাটছাঁট করা হয়েছে। জানা যায়, প্রতিজন সুপারভাইজার ও গণনাকারীর সম্মানী ১১ হাজার থেকে কমিয়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় প্রস্তাবে দেখা যায়, পুনর্গঠিত ডিপিপিতে জেলা পর্যায়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভেন্যু, মাল্টিমিডিয়া এবং যানবাহন ভাড়া বাবদ ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা করা হয়েছে। এ রকম আরও অনেক খাতে খরচ কমানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন খাতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৭৩ কোটি টাকা। তা কমিয়ে ২৬ কোটি টাকা করা হলেও সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভ্রমণ খাতে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ৪২ কোটি টাকা। পরে সেটা কমিয়ে ২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিবিএসের মূল কাজই জরিপ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা। কমবেশি প্রায় সব কর্মকর্তাই কোনো না কোনো সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এসব বিষয়ে জ্ঞান আহরণে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। যেহেতু করোনার কারণে ভ্রমণে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে জনশুমারি প্রকল্পে ভ্রমণ খাতে আদৌ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন আছে কি না, এই নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
ম্যাপিং খাতে প্রথমে ব্যয় ৫৮ কোটি টাকা ধরা হয়। পরে তা কমিয়ে ২৮ কোটি টাকায় আনা হয়। টেলেক্স, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট খাতে প্রথম ব্যয় প্রস্তাব ১৫ কোটি টাকা। সমালোচনার মুখে তা কমিয়ে সাড়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে ১৮৮ কোটি টাকার ব্যয় প্রস্তাব কমিয়ে করা হয় ১৪৭ কোটি টাকা। মুদ্রণ ও বাঁধাই খাতে প্রথম ব্যয় প্রস্তাব ৩৩৯ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে করা হয় ১৩৯ কোটি টাকা। অথচ বিবিএসে বিশ্বমানের নিজস্ব ছাপাখানা রয়েছে। সেখানে যাবতীয় প্রকাশনা মুদ্রণ করলে বিপুল অঙ্কের এ অপচয় রোধ করা যায় বলে খোদ বিবিএস থেকেই কথা উঠেছে। এ ছাড়া টেলিফোন, আপ্যায়ন, যানবাহন এবং জ্বালানি ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতের সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাবেও সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০ টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে। এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।
১২ আগস্ট ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল সোমবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছ
১২ আগস্ট ২০২৫রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক এখন ‘গলার কাঁটা’ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
১২ আগস্ট ২০২৫বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ সই হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে পুত্রজায়ায় এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরি
১২ আগস্ট ২০২৫