Ajker Patrika

বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষ ধর্মীয় বিভেদ ‍সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মার্কিন বিশেষ দূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষ ধর্মীয় বিভেদ ‍সৃষ্টির চেষ্টা করছে: মার্কিন বিশেষ দূত

বাংলাদেশে তৃতীয় পক্ষ ধর্মীয় বিভেদ ‍সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত রাশেদ হোসাইন। আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে সনাতন ধর্মের অনুষ্ঠানের সময়ে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে বেশ উদ্বেগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের থেকে শক্ত বিবৃতি দেখতে চাই। আমি সকালে বেশ কিছু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তাদের (সনাতন ধর্মীয়দের) নিজেদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশ হিন্দু ও মুসলিম একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এ পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে কিছু মানুষ এসে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ মানুষগুলোকে আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করতে দেওয়া যাবে না। আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে একত্রে বসবাস করতে হবে।’

কারা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে জানতে চাইলে রাশেদ হোসাইন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে বড় সংখ্যক মানুষ একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চায়। আর কারা বিভেদ সৃষ্টি করছে এ প্রশ্নটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের জন্য রেখে দিচ্ছি।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে রাশেদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে বার্মায় যখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, অদূর ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন একটি কঠিন বিষয়। যদিও প্রত্যাবাসন হতে দেখলে আমরা সবাই খুশি হব। এটিতে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে।’

বিভিন্ন ধর্মীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে রাশেদ হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীরা একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, এটি দেখে অনুপ্রাণিত বোধ করেছি। অবশ্য এখানে এমনও রয়েছেন যারা আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চান এবং সংঘাত করাতে চান। কিন্তু আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে হিন্দু ও মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।’

রাশেদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা সকল ধর্মের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। কারণ আমরা সকল ধর্মের জন্যই ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বের সকল বিশ্বাসীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দেখতে চাই।’

এরপর বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেছেন। এটা যে চ্যালেঞ্জিং উপাদান পৃথিবীর সব দেশের জন্য, সেটা আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ করেছি। দুর্ভাগ্যবশত ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এ অঞ্চলে মাঝে মাঝে অন্য রকম পরিস্থিতিতে নিয়ে ফেলে। এটাকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এটা যেন রাজনীতিবিদরা না করেন। ধর্মীয় সংবেদনশীলতার মতো বিষয়গুলোতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে বুঝেশুনে এবং সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বন্ধু রাষ্ট্রের পদক্ষেপ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাস্তবতা না বোঝা বা সঠিক তথ্যটা যথেষ্ট বিনিয়োগ না করা। সঠিক স্থান থেকে থেকে আপনি তথ্য নিচ্ছেন কিনা।’

বৈঠকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো উত্থান এবং তাদের নানামুখী তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ বা সরকারের অবস্থান বিশেষ দূতকে জানানো হলো কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, একটা পর্যায়ে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উত্থান শুরু হয়েছিল, যেটা প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। এটার ধারাবাহিকভাবে চলবে এবং আমি এটা বলেছি এটা করতে গিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হয়। তখনই মাঝে মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে ওনার সঙ্গে আলোচনা করেছি। এটাতে যে কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে আলাপ করেছি। ওই ঘটনায় তিনি সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করেছি, ভাসানচর নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

বাইডেনের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক দূত চার দিনের সফরে রোববার ঢাকায় আসেন। সফরের শেষ দিন তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাতে এলেন। 

রোজায় ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ প্রতিমন্ত্রীর 
রোজার মধ্যে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর হামলার ঘটনা অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনের ওপর রমজানেও হামলা করছে। আমরা এটার প্রতিবাদ জানাই। এটা অগ্রহণযোগ্য।

সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপের মতো সভ্য দেশেও এ ধরনের চেষ্টা বা অপচেষ্টা হচ্ছে। ইউরোপ বলে একটা কাজ করে মাফ পেয়ে যাবে বা পশ্চিমা বিশ্ব বলে একটা কাজ করে মাফ পেতে পারে না। সরকার তড়িৎ গতিতে নিয়ন্ত্রণ না করে এর প্রভাব কিন্তু বাংলাদেশ বা পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর পড়তে পারে।’

সব ইস্যুকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনে যে সহায়তা পৌঁছেছে আমরা সেটার প্রশংসা করছি। অন্যান্য জায়গায় যে নিপীড়ন অত্যাচার হচ্ছে, সেখানে সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা যেটা করার চেষ্টা করি সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। আমাদের এখানে যেন কোনো ঝামেলা না হয়, আমাদের প্রচেষ্টা কিন্তু সেদিকেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত