মামলার নামে হয়রানি না করতে পুলিশকে নির্দেশনা: প্রেস উইং

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মামলার নামে যেন কাউকে হয়রানি না করা হয়, সে ব্যাপারে সরকার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। একই সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলার অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ নেই, তাঁদের নাম দ্রুত বাদ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আদিবাসীসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মতামত সরকার নেবে বলেও জানানো হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন—প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর।

ভুক্তভোগীকে মামলা না করতে সরকার নির্দেশনা দিতে পারে না জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘পুলিশকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দ্রুত তদন্ত করে মামলার নামে যাদের হয়রানি করা হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য। যাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই, তাঁদের যেন দ্রুত বাদ দেওয়া হয়।’

মামলার বিষয়ে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরাতো বলেছি ঢালাওভাবে মামলা না দেওয়া হয়। তবে যে কেউ মামলা দিতেই পারে। কিন্তু যার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই, সে ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তাঁদের যেন বাদ দেওয়া হয়।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সরকার নেবে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের অংশীজন। তাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত হবে ১৯৭২ সালের যে সংবিধান হয়েছে সেটি সংশোধন হবে নাকি কী হবে। সেটা ওনারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বাংলাদেশে যত আদিবাসী কমিউনিটি আছে, তাঁদের সবার সঙ্গে কথা হবে। এটা নিয়ে কোনো ধরনের কনফিউশন দেখছি না।’

সংস্কার কমিশনের সদস্যদের বিষয়ে নানান মহলের আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সদস্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কমিশনের প্রধানদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘গণমাধ্যমের যে কাঠামোগত পরিবর্তন আমরা চাচ্ছি, তাঁর জন্য ভালো একটা প্রতিবেদন ওনারা তৈরি করতে পারবেন বলে আশা করি।’

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বিএনপি আশাহত—এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করাতো নির্বাচনী রোডম্যাপের অংশ।

দুই একটা কারখানা ছাড়া অন্য কোনো পোশাক কারখানায় অস্থিরতা নেই জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। গত মাসে ২১ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেয়াদ নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাৎকারে বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম, ‘তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন সংবিধানের বিষয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে, সেখানে বলা হচ্ছে সংসদের মেয়াদ চার বছরে আনা হোক। এ প্রেক্ষিতে হচ্ছে, এটা কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে না। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনার ক্ষেত্রেও চার বছর কিনা? তারপর বলেছেন চার বছরের কম। এখানে পরিষ্কার করা হয়েছে, চার বছরের কথা বলা হয়নি। আপনারা ভালোমতো শোনেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেকেই ভালোমতো না শুনে একটা হেডলাইন দিয়ে দিচ্ছেন।’

সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে টিআইবির দেওয়া প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সরকারের উদ্যোগের কারণে ডিমের দাম কমেছে। অন্যান্য দ্রব্যের দামও নিম্নমুখী। গত বছর কাঁচা মরিচের দাম ১২শ টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। আমাদের চেষ্টার অন্ত নেই। আমরা দেখলাম দুটো পত্রিকায় আলুর দাম চার শ টাকা, এমন একটা তথ্য দিচ্ছে মনে হচ্ছে মূল আলুর দামই চার শ টাকা। এটা খণ্ডিত চিত্র। মিসলিডিং প্রতিবেদন।’

সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়ে সরকার সচেতন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশের দেওয়া অপরাধ পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে আইনশৃঙ্খলার ভালো উন্নতি হয়েছে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ভালোর দিকে যাচ্ছে।’

প্রশাসনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, ‘যাদেরকে আমরা যোগ্য মনে করছি, যারা কাজগুলো করতে পারবেন, প্রশাসনকে ডায়নামিজম আনতে পারবেন, তাঁদের নেওয়া হচ্ছে। যাদের নেওয়া হচ্ছে, তাদের ভালো ট্র্যাক রেকর্ড আছে।’

আন্দোলনের কারণে আরব আমিরাতের জেলে বন্দী বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি সেরকম অবস্থা হলে জানানো হবে।

সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের কারণে নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে—এ নিয়ে সরকারের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, পিআইডি অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল হওয়ায় যেসব সাংবাদিক মনে করছেন তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে, তাদের আবার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তারা যদি আবেদন করে এবং সরকার যদি মনে করে তাদের যৌক্তিকভাবে অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৫ হাজার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আমরা মনে করি না সংখ্যাটা খুব বেশি। গত সরকারের সময় অনেক দলীয় পরিচয়ে সাংবাদিক অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারা এ কার্ডের অপব্যবহার করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদবিরসহ নানান কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।’