Ajker Patrika

মদ নিয়ে সংসদে তুলকালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
মদ নিয়ে সংসদে তুলকালাম

ঢাকা: ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন চিত্র নায়িকা পরীমণি। বিষয়টি নিয়ে গত দুদিন জাতীয় সাংসদে আলোচনা করছেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। দেশে ক্লাব, ডিজে সংস্কৃতি, মদ ও জুয়া নিয়েও উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনা শুরু করেন। দেশে মদের ব্যবসার লাইসেন্স দেওয়ার থেকে শুরু অভিজাতদের ক্লাব সংস্কৃতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। পরে এ নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্য দলের সংসদ সদস্যরাও। দেশে মদের অনুমোদন নিয়ে পরস্পরের ওপর দোষারোপ করা হয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ অধিবেশন।

মুজিবুল হক চুন্নু আলোচনার শুরুতে বলেন, কয়েকদিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, ঢাকা বোট ক্লাব। কে করলো এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? শুনেছি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ক্লাবের সদস্য হতে হয়। এতো টাকা দিয়ে কারা ক্লাবের সদস্য হয়? আমরাতো ভাবতেই পারি না। সারা জীবন এত ইনকামও করি না।

রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবের নাম উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খেতে হলে এত মদতো বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হয়? এত টাকা কোথা থেকে আসে?

চুন্নুর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ সেলিম ফ্লোর নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এত বোট ক্লাব। জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিল। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিল। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিল। যাঁরা অপরাধের শুরু করেছে, তাঁদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।

এর প্রতিবাদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের মাননীয় সিনিয়র সদস্য (শেখ ফজলুল করিম সেলিম) আপনি কোথায় গেলেন? মদের লাইসেন্স তো দেওয়া হয়েছে, রেস্ট্রিকশন দেওয়া হয়েছে। এখানে কি মুসলমানদের মদ খাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে? বাংলাদেশে তো ফরেন ওয়ার্কাররা কাজ করে। সাঁওতাল, হিন্দুসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা আছেন। তাঁদের প্রয়োজন হয়। যাঁরা হাসপাতালে পোস্টমর্টেমের কাজ করেন তাঁরা মদ পান করেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, যদি ওই আইনের মধ্যে দেখাতে পারেন যে, মুসলমানদের ক্লাবে মদ খাওয়ার বৈধতা জিয়াউর রহমান দিয়ে গেছেন, আমি তাহলে এই সংসদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যাব।

তিনি বলেন, এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আপনি ব্যবস্থা নিন, তদন্ত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন দলের নয়, রাষ্ট্রের। তিনি এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। অযৌক্তিকভাবে ৪০ / ৫০ বছর আগের ঘটনা দিয়ে বর্তমান ইস্যুকে ঢাকার চেষ্টা করা অযৌক্তিক।

ঢাকার গুলশান-বনানী অভিজাত এলাকায় যে সমস্ত হোটেল–বার রয়েছে সেখানে রাতের বেলা মদ পানের আয়োজন করা হয়। সিসা এবং এই ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডও চলে। তবে সেখানে কোনো এমপি-মন্ত্রী জড়িত নন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিএনপির হারুন। এসব জায়গা থেকে সংশ্লিষ্ট থানা প্রতি মাসে মাসে টাকা আদায় করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিস ইউজ করে এটা করা হয়েছে। বিদেশিদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিতে হবে। তারপর লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।

পরীমণির ঘটনায় গ্রেপ্তার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিষয়ে রাঙ্গাঁ বলেন, পরীমণি অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার হবে। দোষী হলে শাস্তি হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত