এহ্সান ইসলাম, ঢাকা
গণতন্ত্র নিয়ে কথা উঠলেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে অবধারিতভাবে উচ্চারণ করা হয়, ‘নির্বাচন’ শব্দটি। নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলেও এটিই সব নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একেবারে কেন্দ্রের বিষয়। এ জন্যই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষা’।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস আজ। ২০০৭ সাল থেকে দিনটি পালন করে আসছে জাতিসংঘ। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দিবসটি নিয়ে এবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা সংকট সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের গণতন্ত্রের নীতিগুলোও ক্রমাগত হুমকির মধ্যে পড়ছে। গণতন্ত্র আগের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে গেছে। নাগরিক পরিসর সংকুচিত হচ্ছে এবং অবিশ্বাস, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্ম হচ্ছে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিও বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গণতন্ত্র দিবসে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও দেশে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা এখন নির্বাচন ও ভোটাধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ জন্য অবশ্য অনেকে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনকে দায়ী করেন। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা অংশ। মানে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, সেটার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র না। গণতন্ত্রের বিষয়টা আরও প্রসারিত। গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে আছে—এক. সব নাগরিকের অধিকার ও সুযোগের সমতা থাকবে। অধিকার শুধু না, সুযোগও থাকতে হবে; দুই. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে এবং তিন. সর্বস্তরে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই তিনটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।’
দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। তবে দেশে বিদ্যমান ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ (আইসিটি) সাংবাদিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও কথা বলেছে।
সম্প্রতি দেশের আইসিটি এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিসম্মত করতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। গত সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৫১ তম অধিবেশনে বিষয়টি তোলেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ। দেশের বুদ্ধিজীবী মহল থেকেও এ নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা উঠেছে। কিন্তু তেমন বদল হয়নি।
এ নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই দরকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতারই অংশ হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। এটা না থাকলে মানুষ কী চায়, তাদের কী আকাঙ্ক্ষা—এটা বলতে পারবে না। ফলে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা হবে না। সংবাদপত্র থাকলে যে খবর বের হয়, যদি স্বাধীনভাবে খবর দিতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রের যে কর্তা, তাদের একটা জবাবদিহিতে আসতে হয়। কাজেই একদিকে মতপ্রকাশের জন্য, আরেক দিকে জবাবদিহির জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দরকার।’
শুধু গণতন্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবেই নয় বিভিন্ন সময়ই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ সংস্থা আগেও কথা বলেছে। এই প্রশ্নে বারবারই এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সূচক বলছে, ২০২১ সালে মহামারির মধ্যে বিশ্বে গণতন্ত্রের পরিসর সংকীর্ণ হয়েছে। সূচকে একই ফল (৫ দশমিক ৯৯) নিয়ে বাংলাদেশ অবস্থান গেলবারের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ৭৫ হয়েছে। ওই সূচকে বাংলাদেশকে ‘মিশ্র শাসনের’ (হাইব্রিড রেজিম) দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে হিসেবে দেশে নির্বাচনে অনিয়মসহ এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন, দুর্বল আইনি শাসন ও সাংবাদিক নির্যাতনের মতো গুরুতর বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয় এতে।
দেশে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমাজ বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক চিন্তা এবং দেশে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের নামে যে কাজ করছে, এগুলো দিয়ে গণতন্ত্রের কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। বরং গণতন্ত্রবিরোধী নানা চিন্তা সামনে আসছে।’ তিনি বলেন, 'নির্বাচিত সরকার এলেই গণতন্ত্র হবে, এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রের আদলে দল গঠন দরকার। দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকা দরকার। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা নিতান্তই খারাপ। এখানে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এর জন্য কখনো কখনো নির্বাচনও হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে গণতন্ত্র কখনো দানা বাঁধেনি।’
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের এই ভাষ্যের সমর্থন পাওয়া যায় ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত ২০২১ সালের সূচকে। সেখানে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ‘আংশিক মুক্ত’ (পার্টলি ফ্রি) দেশের কাতারে। এতে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩৯ নম্বর। এতে ৪০ নম্বরের রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে ১৫ এবং ৬০ নম্বরের নাগরিক অধিকারের মধ্যে ২৪ নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই সূচকে অবশ্য দুর্নীতিকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারাকেও বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়েছে।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘ভেতর থেকে সত্য কথা বলা না পারা, দেশে গণতন্ত্র না থাকারই ইঙ্গিত। গণতন্ত্র না থাকার পরও প্রশাসনে ন্যূনতম আইনের শাসন বজায় থাকলেও অবস্থা ভালোর দিকে যেতে পারত। সেই অর্থে দেশে আইনের শাসন নাই। রাজনীতির জন্য যে আইনি স্বাধীনতা দরকার, রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতির জন্য চিন্তার যে স্বাধীনতা দরকার, এর একটাও নাই।’
এদিকে অর্থনৈতিক রিআর্টিকুলেশন ছাড়া গণতন্ত্র দিবস পালন তত কার্যকর কিছু নয় বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘উদার গণতন্ত্র বলতে আমরা যা বুঝি, তা অনেক আগেই সংকটে পড়েছে। নয়া-উদারবাদী গণতন্ত্রের নামে বিশ্বে এক ধরনের একনায়কতন্ত্রের উত্থান হয়েছে। নানা ধরনের নজরদারির কারণে গণতন্ত্রের বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক রিআর্টিকুলেশন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব না। গণতন্ত্র দিবস উদ্যাপনও সেখানে ফল দিবে না।’
দেশে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংকট থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা তো আমরা জানি। এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এর থেকে উত্তরণের জায়গাটা হচ্ছে, সমাজে যারা বিবেকবান মানুষ আছেন, কেবল বিবেকবান নয়, বুদ্ধিমানও; তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে, যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র একটা সংস্কৃতির নাম। এটা গড়ে তুলতে হবে। এটা একদিনে হবে না। এর জন্য চিন্তা করতে হবে। যার জন্য আলাপ-আলোচনা, সংস্কৃতির চর্চা, নানা ধরনের বিতর্ক, সাহিত্য দরকার। আমাদের দেশে যারা বিবেকবান, বুদ্ধিমান মানুষ আছেন, তাঁরা এগিয়ে এলে এটা সম্ভব হবে।’
গণতন্ত্র নিয়ে কথা উঠলেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে অবধারিতভাবে উচ্চারণ করা হয়, ‘নির্বাচন’ শব্দটি। নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলেও এটিই সব নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একেবারে কেন্দ্রের বিষয়। এ জন্যই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষা’।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস আজ। ২০০৭ সাল থেকে দিনটি পালন করে আসছে জাতিসংঘ। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দিবসটি নিয়ে এবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা সংকট সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের গণতন্ত্রের নীতিগুলোও ক্রমাগত হুমকির মধ্যে পড়ছে। গণতন্ত্র আগের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে গেছে। নাগরিক পরিসর সংকুচিত হচ্ছে এবং অবিশ্বাস, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্ম হচ্ছে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিও বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গণতন্ত্র দিবসে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও দেশে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা এখন নির্বাচন ও ভোটাধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ জন্য অবশ্য অনেকে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনকে দায়ী করেন। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা অংশ। মানে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, সেটার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র না। গণতন্ত্রের বিষয়টা আরও প্রসারিত। গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে আছে—এক. সব নাগরিকের অধিকার ও সুযোগের সমতা থাকবে। অধিকার শুধু না, সুযোগও থাকতে হবে; দুই. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে এবং তিন. সর্বস্তরে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই তিনটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।’
দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। তবে দেশে বিদ্যমান ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ (আইসিটি) সাংবাদিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও কথা বলেছে।
সম্প্রতি দেশের আইসিটি এবং ওটিটি নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিসম্মত করতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর। গত সোমবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের ৫১ তম অধিবেশনে বিষয়টি তোলেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল নাশিফ। দেশের বুদ্ধিজীবী মহল থেকেও এ নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা উঠেছে। কিন্তু তেমন বদল হয়নি।
এ নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই দরকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতারই অংশ হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। এটা না থাকলে মানুষ কী চায়, তাদের কী আকাঙ্ক্ষা—এটা বলতে পারবে না। ফলে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা হবে না। সংবাদপত্র থাকলে যে খবর বের হয়, যদি স্বাধীনভাবে খবর দিতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রের যে কর্তা, তাদের একটা জবাবদিহিতে আসতে হয়। কাজেই একদিকে মতপ্রকাশের জন্য, আরেক দিকে জবাবদিহির জন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দরকার।’
শুধু গণতন্ত্র দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবেই নয় বিভিন্ন সময়ই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ সংস্থা আগেও কথা বলেছে। এই প্রশ্নে বারবারই এসেছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) সূচক বলছে, ২০২১ সালে মহামারির মধ্যে বিশ্বে গণতন্ত্রের পরিসর সংকীর্ণ হয়েছে। সূচকে একই ফল (৫ দশমিক ৯৯) নিয়ে বাংলাদেশ অবস্থান গেলবারের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ৭৫ হয়েছে। ওই সূচকে বাংলাদেশকে ‘মিশ্র শাসনের’ (হাইব্রিড রেজিম) দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে হিসেবে দেশে নির্বাচনে অনিয়মসহ এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ছাড়া বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন, দুর্বল আইনি শাসন ও সাংবাদিক নির্যাতনের মতো গুরুতর বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করা হয় এতে।
দেশে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমাজ বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক চিন্তা এবং দেশে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রের নামে যে কাজ করছে, এগুলো দিয়ে গণতন্ত্রের কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। বরং গণতন্ত্রবিরোধী নানা চিন্তা সামনে আসছে।’ তিনি বলেন, 'নির্বাচিত সরকার এলেই গণতন্ত্র হবে, এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তার আগে গণতন্ত্রের আদলে দল গঠন দরকার। দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকা দরকার। এদিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা নিতান্তই খারাপ। এখানে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এর জন্য কখনো কখনো নির্বাচনও হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে গণতন্ত্র কখনো দানা বাঁধেনি।’
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের এই ভাষ্যের সমর্থন পাওয়া যায় ফ্রিডম হাউস প্রকাশিত ২০২১ সালের সূচকে। সেখানে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে ‘আংশিক মুক্ত’ (পার্টলি ফ্রি) দেশের কাতারে। এতে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩৯ নম্বর। এতে ৪০ নম্বরের রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে ১৫ এবং ৬০ নম্বরের নাগরিক অধিকারের মধ্যে ২৪ নম্বর পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই সূচকে অবশ্য দুর্নীতিকে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারাকেও বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়েছে।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘ভেতর থেকে সত্য কথা বলা না পারা, দেশে গণতন্ত্র না থাকারই ইঙ্গিত। গণতন্ত্র না থাকার পরও প্রশাসনে ন্যূনতম আইনের শাসন বজায় থাকলেও অবস্থা ভালোর দিকে যেতে পারত। সেই অর্থে দেশে আইনের শাসন নাই। রাজনীতির জন্য যে আইনি স্বাধীনতা দরকার, রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতির জন্য চিন্তার যে স্বাধীনতা দরকার, এর একটাও নাই।’
এদিকে অর্থনৈতিক রিআর্টিকুলেশন ছাড়া গণতন্ত্র দিবস পালন তত কার্যকর কিছু নয় বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘উদার গণতন্ত্র বলতে আমরা যা বুঝি, তা অনেক আগেই সংকটে পড়েছে। নয়া-উদারবাদী গণতন্ত্রের নামে বিশ্বে এক ধরনের একনায়কতন্ত্রের উত্থান হয়েছে। নানা ধরনের নজরদারির কারণে গণতন্ত্রের বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক রিআর্টিকুলেশন ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব না। গণতন্ত্র দিবস উদ্যাপনও সেখানে ফল দিবে না।’
দেশে গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সংকট থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের অবস্থা তো আমরা জানি। এটা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। এর থেকে উত্তরণের জায়গাটা হচ্ছে, সমাজে যারা বিবেকবান মানুষ আছেন, কেবল বিবেকবান নয়, বুদ্ধিমানও; তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে, যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র একটা সংস্কৃতির নাম। এটা গড়ে তুলতে হবে। এটা একদিনে হবে না। এর জন্য চিন্তা করতে হবে। যার জন্য আলাপ-আলোচনা, সংস্কৃতির চর্চা, নানা ধরনের বিতর্ক, সাহিত্য দরকার। আমাদের দেশে যারা বিবেকবান, বুদ্ধিমান মানুষ আছেন, তাঁরা এগিয়ে এলে এটা সম্ভব হবে।’
২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০ টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে। এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।
১২ আগস্ট ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল সোমবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছ
১২ আগস্ট ২০২৫রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক এখন ‘গলার কাঁটা’ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
১২ আগস্ট ২০২৫বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ সই হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে পুত্রজায়ায় এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরি
১২ আগস্ট ২০২৫