চলে গেলেন সন্জীদা খাতুন
জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আজ মঙ্গলবার, বেলা তিনটা কুড়ির দিকে একটা ফোন এল। কালের কণ্ঠের অলকানন্দার ফোন। ও বলল, ‘সন্জীদা খাতুনও চলে গেলেন!’ মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কিছু একটা বলে ওকে নিরস্ত করে হোয়াটসঅ্যাপে ‘হাসপাতাল ২৫’ নামের থ্রেডটির দিকে ভয়ে ভয়ে চোখ রাখি। হাসপাতালে তিনি কেমন আছেন, তা কাছের মানুষের জানানোর জন্য এই থ্রেড তৈরি করা হয়েছিল। নাহ্! সেখানে এ রকম কোনো দুঃসংবাদ নেই। একটু স্বস্তি পাই।
‘হাসপাতাল ২৫’ থ্রেড শঙ্কা দূর করলেও খচখচ করছিল মন। ফোন করি সন্জীদা আপার ঘনিষ্ঠ একজন, ফওজিয়া মান্নানকে। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ঘরে। তিনিও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। এরপর খুব বেশিক্ষণ যায়নি, বিকেল প্রায় ৪টার দিকে ‘হাসপাতাল ২৫’ থ্রেডে ভেসে ওঠে পুত্রবধূ শিল্পী লাইসা আহমদ লিসার একটি বাক্য: ‘মা দুপুর ৩টা ১০-এ চলে গেছেন।’ পাথরের চেয়ে ভারী হয়ে ওঠা বলে বোধ হয় এ রকম বাক্যকেই! চারদিক হঠাৎ করে শূন্য মনে হয়। আরমা দত্ত, শাহীন সামাদ, তানিয়া মান্নান, খায়রুল আনাম শাকিল, বুলবুল ইসলাম, মোমিনুল হক দুলু, শোয়েব আহমেদসহ হৃদয়ের পড়শিরা লিখতে থাকেন হোয়াটসঅ্যাপের সেই থ্রেডে। সন্জীদা খাতুনের ছেলে সাংবাদিক পার্থ তানভীর নভেদ লেখেন, ‘আপা মুক্তি নিয়েছেন, কাল বুধবার বেলা সাড়ে বারোটায় ছায়ানটে শেষ দেখা মিলবে।’
গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ সন্জীদা খাতুন ছিলেন সেই প্রজন্মের শেষতম মহিরুহ, যে প্রজন্ম ভাষা ও সংস্কৃতিকে মহীয়ান করে তুলেছিল। সেই প্রজন্মের কথা বলা হচ্ছে, ‘যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা, মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা’। অনেকখানি বদলে যাওয়া এই সময়ে তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা অনুভব করাও হয়তো কঠিন। সন্জীদা খাতুনরাই তো ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবতার জয়গান করেছিলেন। অখণ্ড পাকিস্তানের রাজনীতিতে তখনো উর্দুকে মহিমান্বিত করার পাঁয়তারা চলছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রবীন্দ্রনাথকে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের পরই অবশ্য ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল, বাঙালি এগোবে ভাষা ও সংস্কৃতির পথ ধরে। ধর্ম যার যার, দেশ সবার—এই জায়গায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। সেই পথের শুরুতে, সেই বায়ান্ন সালেই সন্জীদা খাতুনকে দেখা যায় আপন সংস্কৃতির পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে হাঁটতে। বাবা কাজী মোতাহার হোসেনের সুযোগ্য কন্যা তিনি। নজরুলপ্রীতির সঙ্গে তখন যোগ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীর সেই দ্রোহের কাল কাটিয়ে তাঁরা কয়েকজন মিলে তৈরি করলেন ছায়ানট। ‘বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন’কে এক করার কাজটি তাঁরা করেছেন।
সেই যে শুরু, এর পর থেকে এ ভূখণ্ডের সব আন্দোলনেই তাঁকে পাওয়া গিয়েছে। সেই ষাটের দশকেই এক সভায় বঙ্গবন্ধু তাঁকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাইতে বলেছিলেন। সেটাই পরে হয়ে ওঠে এই দেশের জাতীয় সংগীত।
রাজনীতি এগিয়েছে, সেই সঙ্গে এগিয়েছেন সন্জীদা খাতুন। তবে রাজনীতির পথে নয়, বরাবর ওই সংস্কৃতিতেই আস্থা তাঁর। মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, রোজ বু, ওয়াহিদুল হকসহ সবার কথাই লিখেছেন তিনি। খেয়াল করে দেখেছি, তাঁর লেখালেখিতে রয়েছে সমসাময়িক সবার প্রতি শ্রদ্ধার নিবেদন।
ছায়ানট, কণ্ঠশীলন, নালন্দা, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ কত প্রতিষ্ঠানকে যে ছায়া দিয়েছেন তিনি, তার যেন ইয়ত্তা নেই।
খুব কাছে থেকে দেখেছি তাঁকে। আমাকে সযত্ন প্রশ্রয় দিয়েছেন। সবার সঙ্গে সহজে মিশতেন না। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাকে ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’-এ নামিয়ে এনেছিলেন। একটা সময় প্রায় প্রতিদিন ফোন করে কথা বলতেন, সেটা শুধু এ কারণে নয় যে তিনি ছিলেন আবৃত্তিচর্চার সংগঠন কণ্ঠশীলনের সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক। মূল কারণটা ছিল, যে জায়গাগুলোয় আঘাত পেতেন, তা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলে হালকা হওয়া। এমন অনেক কথাই তিনি আমাকে বলেছেন, যেগুলো নিয়ে কোনো দিন কারও সঙ্গে কথা বলা হবে না। সন্জীদা খাতুন আক্ষেপ করে বলতেন, ‘সংস্কৃতিকে যেখানে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম, সেখানে পৌঁছে দিতে পারিনি। এখন সাধনা নেই বললেই চলে। ছায়ানটের আদর্শকে সবাই অন্তরে নেয় না।’ আর বলতেন, ‘আমরা হয়ে পড়লাম শহরকেন্দ্রিক। গ্রামে গিয়ে পৌঁছতে পারিনি।’
বাংলাদেশকে ছুঁতে হলে যে গ্রামে যেতে হবে, সে কথা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতেন সন্জীদা খাতুন।
এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল ২৫ মার্চ। তবে আমরা বলব, তিনি চলে গেলেও তো থেকে যাবেন এই নশ্বর পৃথিবীতে। থেকে যাবেন দেশের প্রতি তাঁর প্রবল ভালোবাসা দিয়ে। ভরা থাক স্মৃতিসুধায় বিদায়ের পাত্রখানি।
আজ মঙ্গলবার, বেলা তিনটা কুড়ির দিকে একটা ফোন এল। কালের কণ্ঠের অলকানন্দার ফোন। ও বলল, ‘সন্জীদা খাতুনও চলে গেলেন!’ মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কিছু একটা বলে ওকে নিরস্ত করে হোয়াটসঅ্যাপে ‘হাসপাতাল ২৫’ নামের থ্রেডটির দিকে ভয়ে ভয়ে চোখ রাখি। হাসপাতালে তিনি কেমন আছেন, তা কাছের মানুষের জানানোর জন্য এই থ্রেড তৈরি করা হয়েছিল। নাহ্! সেখানে এ রকম কোনো দুঃসংবাদ নেই। একটু স্বস্তি পাই।
‘হাসপাতাল ২৫’ থ্রেড শঙ্কা দূর করলেও খচখচ করছিল মন। ফোন করি সন্জীদা আপার ঘনিষ্ঠ একজন, ফওজিয়া মান্নানকে। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ঘরে। তিনিও এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। এরপর খুব বেশিক্ষণ যায়নি, বিকেল প্রায় ৪টার দিকে ‘হাসপাতাল ২৫’ থ্রেডে ভেসে ওঠে পুত্রবধূ শিল্পী লাইসা আহমদ লিসার একটি বাক্য: ‘মা দুপুর ৩টা ১০-এ চলে গেছেন।’ পাথরের চেয়ে ভারী হয়ে ওঠা বলে বোধ হয় এ রকম বাক্যকেই! চারদিক হঠাৎ করে শূন্য মনে হয়। আরমা দত্ত, শাহীন সামাদ, তানিয়া মান্নান, খায়রুল আনাম শাকিল, বুলবুল ইসলাম, মোমিনুল হক দুলু, শোয়েব আহমেদসহ হৃদয়ের পড়শিরা লিখতে থাকেন হোয়াটসঅ্যাপের সেই থ্রেডে। সন্জীদা খাতুনের ছেলে সাংবাদিক পার্থ তানভীর নভেদ লেখেন, ‘আপা মুক্তি নিয়েছেন, কাল বুধবার বেলা সাড়ে বারোটায় ছায়ানটে শেষ দেখা মিলবে।’
গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ সন্জীদা খাতুন ছিলেন সেই প্রজন্মের শেষতম মহিরুহ, যে প্রজন্ম ভাষা ও সংস্কৃতিকে মহীয়ান করে তুলেছিল। সেই প্রজন্মের কথা বলা হচ্ছে, ‘যারা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা, মৌন মলিন মুখে জাগালো ভাষা’। অনেকখানি বদলে যাওয়া এই সময়ে তাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা অনুভব করাও হয়তো কঠিন। সন্জীদা খাতুনরাই তো ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবতার জয়গান করেছিলেন। অখণ্ড পাকিস্তানের রাজনীতিতে তখনো উর্দুকে মহিমান্বিত করার পাঁয়তারা চলছে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রবীন্দ্রনাথকে অপ্রাসঙ্গিক করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের পরই অবশ্য ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল, বাঙালি এগোবে ভাষা ও সংস্কৃতির পথ ধরে। ধর্ম যার যার, দেশ সবার—এই জায়গায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। সেই পথের শুরুতে, সেই বায়ান্ন সালেই সন্জীদা খাতুনকে দেখা যায় আপন সংস্কৃতির পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে হাঁটতে। বাবা কাজী মোতাহার হোসেনের সুযোগ্য কন্যা তিনি। নজরুলপ্রীতির সঙ্গে তখন যোগ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকীর সেই দ্রোহের কাল কাটিয়ে তাঁরা কয়েকজন মিলে তৈরি করলেন ছায়ানট। ‘বাঙালির ঘরে যত ভাইবোন’কে এক করার কাজটি তাঁরা করেছেন।
সেই যে শুরু, এর পর থেকে এ ভূখণ্ডের সব আন্দোলনেই তাঁকে পাওয়া গিয়েছে। সেই ষাটের দশকেই এক সভায় বঙ্গবন্ধু তাঁকে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাইতে বলেছিলেন। সেটাই পরে হয়ে ওঠে এই দেশের জাতীয় সংগীত।
রাজনীতি এগিয়েছে, সেই সঙ্গে এগিয়েছেন সন্জীদা খাতুন। তবে রাজনীতির পথে নয়, বরাবর ওই সংস্কৃতিতেই আস্থা তাঁর। মোখলেসুর রহমান সিধু ভাই, রোজ বু, ওয়াহিদুল হকসহ সবার কথাই লিখেছেন তিনি। খেয়াল করে দেখেছি, তাঁর লেখালেখিতে রয়েছে সমসাময়িক সবার প্রতি শ্রদ্ধার নিবেদন।
ছায়ানট, কণ্ঠশীলন, নালন্দা, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ কত প্রতিষ্ঠানকে যে ছায়া দিয়েছেন তিনি, তার যেন ইয়ত্তা নেই।
খুব কাছে থেকে দেখেছি তাঁকে। আমাকে সযত্ন প্রশ্রয় দিয়েছেন। সবার সঙ্গে সহজে মিশতেন না। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাকে ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’-এ নামিয়ে এনেছিলেন। একটা সময় প্রায় প্রতিদিন ফোন করে কথা বলতেন, সেটা শুধু এ কারণে নয় যে তিনি ছিলেন আবৃত্তিচর্চার সংগঠন কণ্ঠশীলনের সভাপতি আর আমি সাধারণ সম্পাদক। মূল কারণটা ছিল, যে জায়গাগুলোয় আঘাত পেতেন, তা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলে হালকা হওয়া। এমন অনেক কথাই তিনি আমাকে বলেছেন, যেগুলো নিয়ে কোনো দিন কারও সঙ্গে কথা বলা হবে না। সন্জীদা খাতুন আক্ষেপ করে বলতেন, ‘সংস্কৃতিকে যেখানে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম, সেখানে পৌঁছে দিতে পারিনি। এখন সাধনা নেই বললেই চলে। ছায়ানটের আদর্শকে সবাই অন্তরে নেয় না।’ আর বলতেন, ‘আমরা হয়ে পড়লাম শহরকেন্দ্রিক। গ্রামে গিয়ে পৌঁছতে পারিনি।’
বাংলাদেশকে ছুঁতে হলে যে গ্রামে যেতে হবে, সে কথা অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতেন সন্জীদা খাতুন।
এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল ২৫ মার্চ। তবে আমরা বলব, তিনি চলে গেলেও তো থেকে যাবেন এই নশ্বর পৃথিবীতে। থেকে যাবেন দেশের প্রতি তাঁর প্রবল ভালোবাসা দিয়ে। ভরা থাক স্মৃতিসুধায় বিদায়ের পাত্রখানি।
২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২,২৪০ কোটি টাকা) ব্যয় করে ১৬০ টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে। এসব প্রযুক্তি প্রায়শই অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় আনা হয়েছে।
১২ আগস্ট ২০২৫জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল সোমবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছ
১২ আগস্ট ২০২৫রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক এখন ‘গলার কাঁটা’ পর্যায়ে চলে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
১২ আগস্ট ২০২৫বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ সই হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে পুত্রজায়ায় এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরি
১২ আগস্ট ২০২৫