ইমরান উদ্দিন
ইসলামের সোনালি ইতিহাসে অনেক মুসলিম মনীষী বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে মুসলিম মনীষীরা অবদান রাখেননি। তেমনই এক মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম ইবনে বাইতার। তাঁর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ মালেকি। আন্দালুসিয়ার মালেকা গ্রামে তাঁর জন্ম। জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে মালেকি হিসেবে ডাকা হয়।
ইবনে বাইতারের বাবা দক্ষ পশুচিকিৎসক ছিলেন। পশুচিকিৎসককে আরবিতে বাইতার বলা হয়। এই বাইতার থেকে তাঁর উপনাম হয় ইবনে বাইতার। ছোটবেলা থেকেই ইবনে বাইতার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। ধীরে ধীরে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। এই প্রকৃতিপ্রেম থেকে তিনি ধীরে ধীরে উদ্ভিদ, গাছপালা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। প্রকৃতি নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন।
বনজঙ্গলই হয়ে ওঠে তাঁর বিদ্যালয়। তবে এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও তিনি গ্রহণ করেছেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতির কাছে উদ্ভিদবিজ্ঞানে পাঠ গ্রহণ করেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতি ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের বড় পণ্ডিত। ইবনে বাইতার দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁর ওস্তাদকেও ছাড়িয়ে যান।
সেকালের মুসলিম মনীষীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্ঞান আহরণের জন্য ভ্রমণ করতেন। ইবনে বাইতারও তার ব্যতিক্রম নন। তাঁর জ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। বয়স যখন ২০ বছর, তখন তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করতে বেরিয়ে যান। তিনি ছুটে যান গ্রিস, রোম, মরক্কো, মারাকেশ, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া, এশিয়া মাইনর, আনতাকিয়া, সিরিয়া, হিজাজ, গাজা, জেরুজালেম, বৈরুত ও মিসরে। এসব দেশে জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য লাভ করেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে উদ্ভিদের প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তাঁর সফরসঙ্গী আরেক বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘দামেস্কের বাইরে তাঁর সঙ্গে বনজঙ্গলে প্রচুর গাছপালা দেখেছি।’
ইবনে বাইতার সুলতান আল-কামিলের শাসনকালে মিসরে অবস্থান গ্রহণ করেন। সুলতান তাঁকে প্রধান ভেষজবিজ্ঞানী নিযুক্ত করেন। তিনি উদ্ভিদ ও ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রে সুলতানের আস্থাভাজন ছিলেন। সুলতান আল-কামিলের ইন্তেকালের পর সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবের অধীনে তিনি কাজ শুরু করেন। তাঁর দরবারেও তিনি বেশ সমাদৃত ছিলেন। ইবনে বাইতারের ভ্রমণসঙ্গী ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘আমি তাঁর কাছে ডায়োসকোরাইডসের মেটেরিয়া মেডিকা গ্রন্থের ব্যাখ্যা পড়েছি। তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও অনুধাবনশক্তি আমাকে মুগ্ধ এবং সমৃদ্ধ করেছে। গ্যালেন, গাফিকি ও ডায়োসকোরাইডসসহ এই শাস্ত্রের দিকপালদের গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হতাম।’
ইবনে বাইতার তাঁর আগের ও সমকালীন গবেষক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন। ইবনে সিনা, আল-ইদরিসি, ইবনুল আব্বাস নাবাতি প্রমুখের গ্রন্থাদি তিনি পাঠ করেন এবং সেসব গ্রন্থের নিগূঢ় মর্ম ব্যাখ্যা করেছেন। এ গ্রন্থগুলোর সংশোধন-সংযোজন ও সমালোচনাও করেছেন বলে জানা যায়। রম ল্যান্ডো তাঁর লেখা ইসহামু উলামাইল আরব ফিল হাজারাতিল উরুব্বিয়া গ্রন্থে বলেন, ‘উদ্ভিদবিজ্ঞানে ইবনে বাইতারের অবদান ডায়োসকোরাইডসসহ পূর্ববর্তীদের সব অবদান ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব দশম হিজরি শতক পর্যন্ত বলবৎ ছিল।’
আল জামি লি মুফরাদাতিল আদভিয়া ওয়াল আগজিয়া (ওষুধপত্রের শব্দকোষ) তাঁর লেখা বইগুলোর অন্যতম। এই বইয়ে কোন উদ্ভিদ থেকে কোন ওষুধ তৈরি হয়, সেগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিটি উদ্ভিদের আলাদা আলাদা গুণ, ওষুধের উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। প্রতিটি জায়গায় সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছেন। তাঁর বইয়ের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, বইয়ে উদ্ভিদের ওষুধের নাম লিখতেন, তারপর সেগুলোর বর্ণনাও করে দিতেন। ফলে, বিশ্ববিপ্লবের আগে পর্যন্ত এই বইই ছিল ইউরোপের চিকিৎসাবিজ্ঞানের একমাত্র ভরসাস্থল।
ইবনে বাইতার প্রসঙ্গে ইউরোপীয়রা বলেছেন, তিনি সেকালের আরব বিশ্বের সেরা লেখক ও ভেষজ উদ্ভিদবিশারদ। ১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দামেস্ক শহরে তিনি ইন্তেকাল করেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামের সোনালি ইতিহাসে অনেক মুসলিম মনীষী বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই, যেখানে মুসলিম মনীষীরা অবদান রাখেননি। তেমনই এক মুসলিম বিজ্ঞানীর নাম ইবনে বাইতার। তাঁর পুরো নাম আবু মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ মালেকি। আন্দালুসিয়ার মালেকা গ্রামে তাঁর জন্ম। জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাঁকে মালেকি হিসেবে ডাকা হয়।
ইবনে বাইতারের বাবা দক্ষ পশুচিকিৎসক ছিলেন। পশুচিকিৎসককে আরবিতে বাইতার বলা হয়। এই বাইতার থেকে তাঁর উপনাম হয় ইবনে বাইতার। ছোটবেলা থেকেই ইবনে বাইতার ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী। বনজঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। ধীরে ধীরে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। এই প্রকৃতিপ্রেম থেকে তিনি ধীরে ধীরে উদ্ভিদ, গাছপালা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। প্রকৃতি নিয়ে গবেষণায় নেমে পড়েন।
বনজঙ্গলই হয়ে ওঠে তাঁর বিদ্যালয়। তবে এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও তিনি গ্রহণ করেছেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতির কাছে উদ্ভিদবিজ্ঞানে পাঠ গ্রহণ করেন। ইবনে ফায়াজ নাবাতি ছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের বড় পণ্ডিত। ইবনে বাইতার দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁর ওস্তাদকেও ছাড়িয়ে যান।
সেকালের মুসলিম মনীষীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জ্ঞান আহরণের জন্য ভ্রমণ করতেন। ইবনে বাইতারও তার ব্যতিক্রম নন। তাঁর জ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। বয়স যখন ২০ বছর, তখন তিনি বিভিন্ন দেশ সফর করতে বেরিয়ে যান। তিনি ছুটে যান গ্রিস, রোম, মরক্কো, মারাকেশ, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া, এশিয়া মাইনর, আনতাকিয়া, সিরিয়া, হিজাজ, গাজা, জেরুজালেম, বৈরুত ও মিসরে। এসব দেশে জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য লাভ করেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে উদ্ভিদের প্রকার, বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তাঁর সফরসঙ্গী আরেক বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘দামেস্কের বাইরে তাঁর সঙ্গে বনজঙ্গলে প্রচুর গাছপালা দেখেছি।’
ইবনে বাইতার সুলতান আল-কামিলের শাসনকালে মিসরে অবস্থান গ্রহণ করেন। সুলতান তাঁকে প্রধান ভেষজবিজ্ঞানী নিযুক্ত করেন। তিনি উদ্ভিদ ও ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রে সুলতানের আস্থাভাজন ছিলেন। সুলতান আল-কামিলের ইন্তেকালের পর সুলতান নাজমুদ্দিন আইয়ুবের অধীনে তিনি কাজ শুরু করেন। তাঁর দরবারেও তিনি বেশ সমাদৃত ছিলেন। ইবনে বাইতারের ভ্রমণসঙ্গী ইবনে আবি উসাইবিয়া বলেন, ‘আমি তাঁর কাছে ডায়োসকোরাইডসের মেটেরিয়া মেডিকা গ্রন্থের ব্যাখ্যা পড়েছি। তাঁর বিস্তৃত জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও অনুধাবনশক্তি আমাকে মুগ্ধ এবং সমৃদ্ধ করেছে। গ্যালেন, গাফিকি ও ডায়োসকোরাইডসসহ এই শাস্ত্রের দিকপালদের গুরুত্বপূর্ণ বই নিয়ে আমি তাঁর কাছে উপস্থিত হতাম।’
ইবনে বাইতার তাঁর আগের ও সমকালীন গবেষক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছেন। ইবনে সিনা, আল-ইদরিসি, ইবনুল আব্বাস নাবাতি প্রমুখের গ্রন্থাদি তিনি পাঠ করেন এবং সেসব গ্রন্থের নিগূঢ় মর্ম ব্যাখ্যা করেছেন। এ গ্রন্থগুলোর সংশোধন-সংযোজন ও সমালোচনাও করেছেন বলে জানা যায়। রম ল্যান্ডো তাঁর লেখা ইসহামু উলামাইল আরব ফিল হাজারাতিল উরুব্বিয়া গ্রন্থে বলেন, ‘উদ্ভিদবিজ্ঞানে ইবনে বাইতারের অবদান ডায়োসকোরাইডসসহ পূর্ববর্তীদের সব অবদান ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব দশম হিজরি শতক পর্যন্ত বলবৎ ছিল।’
আল জামি লি মুফরাদাতিল আদভিয়া ওয়াল আগজিয়া (ওষুধপত্রের শব্দকোষ) তাঁর লেখা বইগুলোর অন্যতম। এই বইয়ে কোন উদ্ভিদ থেকে কোন ওষুধ তৈরি হয়, সেগুলো বর্ণনা করেছেন। তিনি প্রতিটি উদ্ভিদের আলাদা আলাদা গুণ, ওষুধের উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বর্ণনা করেছেন। প্রতিটি জায়গায় সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছেন। তাঁর বইয়ের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হলো, বইয়ে উদ্ভিদের ওষুধের নাম লিখতেন, তারপর সেগুলোর বর্ণনাও করে দিতেন। ফলে, বিশ্ববিপ্লবের আগে পর্যন্ত এই বইই ছিল ইউরোপের চিকিৎসাবিজ্ঞানের একমাত্র ভরসাস্থল।
ইবনে বাইতার প্রসঙ্গে ইউরোপীয়রা বলেছেন, তিনি সেকালের আরব বিশ্বের সেরা লেখক ও ভেষজ উদ্ভিদবিশারদ। ১২৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দামেস্ক শহরে তিনি ইন্তেকাল করেন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি দিকের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে যখন পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে, তখন ইসলামি শিক্ষার প্রচলন...
১২ আগস্ট ২০২৫পবিত্র কোরআনের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ আয়াত হলো ‘আয়াতুল কুরসি।’ মহানবী (সা.) এই আয়াতটিকে কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। একবার তিনি সাহাবি উবাই ইবনে কাআব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মতে কোরআনের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মহান?’ জবাবে উবাই (রা.) বলেন, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া...’
১২ আগস্ট ২০২৫ক্ষমতা বা রাজত্ব পেলে মানুষ আল্লাহ ভোলা হয়ে যায়। হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও অহংকারী। দুর্বলের ওপর অবাধে চালায় অত্যাচার ও নিপীড়ন। আসলে ক্ষমতাসীনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা একটা বড় পরীক্ষা। ক্ষমতা পেয়ে বান্দা কেমন আচরণ করে, সেটাই দেখতে চান আল্লাহ তাআলা। তবে সবাই তো এক না।
১১ আগস্ট ২০২৫আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামতের অবারিত ঠিকানা জান্নাত। জান্নাতকে পার্থিব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তাআলা সাজিয়েছেন—যা কোনো চোখ চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো ব্যক্তির অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি।
১১ আগস্ট ২০২৫