মুহাম্মদ মিশকাত
আজকাল ই-কমার্স সাইটে কেনাকাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বিক্রেতার প্রতারণার মনোভাব, ক্রেতার অসতর্কতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রতারণার হারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অনলাইন শপিংয়ে যেসব সংকট তৈরি হচ্ছে, তার সুন্দর ও যুগোপযোগী সমাধান দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। কোরআন, হাদিস ও ফিকহের মূলনীতিগুলো মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে এসব সংকট মূলেই বিনষ্ট হবে। ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই কোনোভাবে প্রতারিত কিংবা বঞ্চিত হবেন না।
অনলাইনে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় সংকট প্রতারণা। ইসলামে প্রতারণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জঘন্য অপরাধ। একবার রসুল (স.) বাজারে একটি খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি খাদ্যস্তূপের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলে ভেতরে ভেজা পেলেন। তখন তিনি বললেন, সমস্যা কী হে পণ্যের মালিক? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রসুল। রসুল (স.) তাকে বললেন, ‘তাহলে ভেজা অংশ শস্যের ওপরে রাখলে না কেন, যাতে তা দেখেই ক্রেতা ক্রয় করতে পারে? যে আমাদের প্রতারিত করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০২)
পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তা বিক্রি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। দোষ-ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্রেতাকে তা জানাতে হবে। বিক্রির সময় পণ্যের দুর্বলতা উল্লেখ না করা হারাম। (ইসলামে হালাল-হারামের বিধান, পৃষ্ঠা: ৩৬০)
প্রতারিত না হওয়ার জন্য ইসলাম ক্রেতার এখতিয়ার তথা অধিকারের কথা বলে। রসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি ভঙ্গ করার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় কল্যাণ হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় বরকত উধাও হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৭৯)
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারির পর টাকা পরিশোধ করার আগে প্যাকিং খোলার সুযোগ থাকে না। ফলে, পণ্যের দোষত্রুটি দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এই ক্ষেত্রে ইসলাম পণ্যটি দেখে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়। ফিকহের পরিভাষায় এটিকে খিয়ারে রুইয়াত বলা হয়। দেখার পর দোষ-ত্রুটি পাওয়া গেলে ফেরত দেওয়ার অধিকার গ্রাহকের রয়েছে।
তাই ঝামেলা এড়াতে অনলাইন শপগুলোতে পণ্যের সুস্পষ্ট বিস্তারিত বিবরণ থাকা চাই। পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদনের স্থান, তারিখ, ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি, ওজন-সাইজ ইত্যাদির যথাযথ বর্ণনা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লুকোচুরি করলে, তা প্রতারণা বলে গণ্য হবে, যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং নিজের বিক্রয়ের জন্য ওজন করার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে?’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১-৫)
ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ না রাখায়, অনেক ই-কমার্স সাইটে টাকা আগে পরিশোধ করে গ্রাহক নিরুপায় হয়ে পণ্য গ্রহণ করেন। তাই ক্যাশ অন ডেলিভারি ও পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ার নিয়ম থাকতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতা অবশ্যই ডেলিভারি চার্জ অগ্রিম রাখতে পারেন। এতে করে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ গ্রহণ করে ক্রেতার পক্ষ থেকে কোনো প্রতারণার আশঙ্কা থাকবে না। ফলে বিক্রেতা লোকসান ও সময়ের অপচয় থেকে রেহাই পাবেন।
ক্রয়-বিক্রয়ের আরেকটি মূলনীতি হলো, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। পণ্যের ডেলিভারির সময় উল্লেখ না করলে বেচাকেনা সহিহ হবে না। আর ডেলিভারির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই।
তা ছাড়া কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত লোকদের মাধ্যমে মিথ্যা রিভিউ দিয়ে গ্রাহকদের প্রতারিত করা যাবে না। মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য। এটি একধরনের দালালি, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রসুল (স.) বলেছেন, ‘ক্রেতার বলা মূল্যের ওপর মূল্য বৃদ্ধি করে তোমরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ো না।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ১৫৮১)
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আজকাল ই-কমার্স সাইটে কেনাকাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে বিক্রেতার প্রতারণার মনোভাব, ক্রেতার অসতর্কতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় প্রতারণার হারও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অনলাইন শপিংয়ে যেসব সংকট তৈরি হচ্ছে, তার সুন্দর ও যুগোপযোগী সমাধান দিয়েছে ইসলামি শরিয়ত। কোরআন, হাদিস ও ফিকহের মূলনীতিগুলো মেনে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে এসব সংকট মূলেই বিনষ্ট হবে। ক্রেতা-বিক্রেতার কেউই কোনোভাবে প্রতারিত কিংবা বঞ্চিত হবেন না।
অনলাইনে কেনাকাটার সবচেয়ে বড় সংকট প্রতারণা। ইসলামে প্রতারণা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জঘন্য অপরাধ। একবার রসুল (স.) বাজারে একটি খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি খাদ্যস্তূপের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিলে ভেতরে ভেজা পেলেন। তখন তিনি বললেন, সমস্যা কী হে পণ্যের মালিক? সে বলল, বৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রসুল। রসুল (স.) তাকে বললেন, ‘তাহলে ভেজা অংশ শস্যের ওপরে রাখলে না কেন, যাতে তা দেখেই ক্রেতা ক্রয় করতে পারে? যে আমাদের প্রতারিত করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০২)
পণ্যের দোষ-ত্রুটি গোপন করে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তা বিক্রি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। দোষ-ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্রেতাকে তা জানাতে হবে। বিক্রির সময় পণ্যের দুর্বলতা উল্লেখ না করা হারাম। (ইসলামে হালাল-হারামের বিধান, পৃষ্ঠা: ৩৬০)
প্রতারিত না হওয়ার জন্য ইসলাম ক্রেতার এখতিয়ার তথা অধিকারের কথা বলে। রসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তি ভঙ্গ করার এখতিয়ার থাকবে। যদি তারা উভয়েই সততা অবলম্বন করে এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় কল্যাণ হবে। আর যদি তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন করে, তাহলে তাদের বেচাকেনায় বরকত উধাও হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৭৯)
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী পণ্য ডেলিভারির পর টাকা পরিশোধ করার আগে প্যাকিং খোলার সুযোগ থাকে না। ফলে, পণ্যের দোষত্রুটি দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এই ক্ষেত্রে ইসলাম পণ্যটি দেখে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়। ফিকহের পরিভাষায় এটিকে খিয়ারে রুইয়াত বলা হয়। দেখার পর দোষ-ত্রুটি পাওয়া গেলে ফেরত দেওয়ার অধিকার গ্রাহকের রয়েছে।
তাই ঝামেলা এড়াতে অনলাইন শপগুলোতে পণ্যের সুস্পষ্ট বিস্তারিত বিবরণ থাকা চাই। পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদনের স্থান, তারিখ, ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি, ওজন-সাইজ ইত্যাদির যথাযথ বর্ণনা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের লুকোচুরি করলে, তা প্রতারণা বলে গণ্য হবে, যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং নিজের বিক্রয়ের জন্য ওজন করার সময় কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে?’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত: ১-৫)
ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ না রাখায়, অনেক ই-কমার্স সাইটে টাকা আগে পরিশোধ করে গ্রাহক নিরুপায় হয়ে পণ্য গ্রহণ করেন। তাই ক্যাশ অন ডেলিভারি ও পণ্য পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ার নিয়ম থাকতে হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতা অবশ্যই ডেলিভারি চার্জ অগ্রিম রাখতে পারেন। এতে করে ক্যাশ অন ডেলিভারির সুযোগ গ্রহণ করে ক্রেতার পক্ষ থেকে কোনো প্রতারণার আশঙ্কা থাকবে না। ফলে বিক্রেতা লোকসান ও সময়ের অপচয় থেকে রেহাই পাবেন।
ক্রয়-বিক্রয়ের আরেকটি মূলনীতি হলো, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে। পণ্যের ডেলিভারির সময় উল্লেখ না করলে বেচাকেনা সহিহ হবে না। আর ডেলিভারির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহে গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই।
তা ছাড়া কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত লোকদের মাধ্যমে মিথ্যা রিভিউ দিয়ে গ্রাহকদের প্রতারিত করা যাবে না। মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য। এটি একধরনের দালালি, যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রসুল (স.) বলেছেন, ‘ক্রেতার বলা মূল্যের ওপর মূল্য বৃদ্ধি করে তোমরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ো না।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস: ১৫৮১)
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি দিকের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে যখন পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে, তখন ইসলামি শিক্ষার প্রচলন...
১২ আগস্ট ২০২৫পবিত্র কোরআনের অন্যতম ফজিলতপূর্ণ আয়াত হলো ‘আয়াতুল কুরসি।’ মহানবী (সা.) এই আয়াতটিকে কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। একবার তিনি সাহাবি উবাই ইবনে কাআব (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মতে কোরআনের কোন আয়াতটি সবচেয়ে মহান?’ জবাবে উবাই (রা.) বলেন, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া...’
১২ আগস্ট ২০২৫ক্ষমতা বা রাজত্ব পেলে মানুষ আল্লাহ ভোলা হয়ে যায়। হয়ে ওঠে বেপরোয়া ও অহংকারী। দুর্বলের ওপর অবাধে চালায় অত্যাচার ও নিপীড়ন। আসলে ক্ষমতাসীনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা একটা বড় পরীক্ষা। ক্ষমতা পেয়ে বান্দা কেমন আচরণ করে, সেটাই দেখতে চান আল্লাহ তাআলা। তবে সবাই তো এক না।
১১ আগস্ট ২০২৫আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামতের অবারিত ঠিকানা জান্নাত। জান্নাতকে পার্থিব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তাআলা সাজিয়েছেন—যা কোনো চোখ চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো ব্যক্তির অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি।
১১ আগস্ট ২০২৫