Ajker Patrika

রাশিয়ার জ্বালানি ভোগাচ্ছে ইউরোপকে

আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬: ৪৪
রাশিয়ার জ্বালানি ভোগাচ্ছে ইউরোপকে

রাশিয়া থেকে ইউরোপে আসা প্রধান পাইপলাইন থেকে জ্বালানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ মূল্য গুনতে হচ্ছে ইউরোপের ক্রেতাদের। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের শুরু থেকেই ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ কমতে থাকে, যার ফলে জ্বালানি মূল্য ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে বিপাকে পড়েছে ইউরোপ। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউরোপের গ্যাস-সংকটের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করে ইউরোপের দেশগুলো বলেছে, রাশিয়া জ্বালানিকে ব্যবহার করে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ শুরু করতে চাইছে। অন্যদিকে রাশিয়া এই জ্বালানি সরবরাহের সংকটকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও যান্ত্রিক গোলযোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে আসা নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। এই পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়া থেকে ইউরোপের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ জ্বালানি প্রবেশ করত। পুরোপুরি বন্ধ করার আগে পাইপলাইনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুধু ২০ শতাংশ চালু রেখেছিল রাশিয়া। 

ধারণা করা হচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণের পর পুনরায় ২০ শতাংশ কর্মক্ষমতায় পাইপলাইনটি আবার চালু করে দেওয়া হবে। এতে হয়তো জ্বালানির দাম ৪০ শতাংশ কমে আসবে। একই কারণে বিদ্যুতের দামও প্রতি মেগাওয়াট ঘণ্টায় ২০০ ইউরো পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। তবে বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, রাশিয়া তাদের জ্বালানি সাইট রক্ষণাবেক্ষণের সময় আরও বেশ কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে। এ জন্য পাইপলাইনটি চালু হতে আরও সময় লাগবে। 

এদিকে গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সার ও অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিগুলোর মতো বড় বড় শিল্পকে উৎপাদন কমাতে ইইউ সরকার পরস্পরকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়েছে।

 অরোরা এনার্জি রিসার্চের একজন কর্মকর্তা জ্যাকব ম্যান্ডেল বলেছেন, সাম্প্রতিক গ্যাস-সংকটের প্রভাব ইউরোপের অন্যান্য উৎস থেকে গ্যাস আমদানি করার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। এই সময়ে জ্বালানি আমদানি করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। 

রোববার জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বলেছেন, তাঁরা জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ইতিমধ্যে তিন ধাপের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউরোপ রুশ গ্যাসের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনা শুরু করে এবং গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানির বিকল্প সরবরাহকারীদের মুখাপেক্ষী হয়। একই সঙ্গে তারা নবায়নযোগ্য শক্তি সরবরাহের ওপর জোর দেয়। 

এদিকে জার্মানি তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে, যাতে এটি বিশ্বব্যাপী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জ্বালানি পেতে পারে এবং রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি কমাতে পারে। 

ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সি এনার্জি রেগুলেটরের প্রেসিডেন্ট ক্লাউস মুলার আগস্ট মাসে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, জার্মানির জ্বালানির মজুত যদি শতভাগও পূর্ণ হয়, তারপরেও রাশিয়ান জ্বালানি সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আড়াই মাসের মধ্যেই তা খালি হয়ে যাবে। 

গত সপ্তাহে ইউরোপ নভেম্বরের মধ্যে তাদের জ্বালানি মজুতের ৮০ শতাংশ পূরণ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মজুত বর্তমানে ৮১ শতাংশ পূর্ণ এবং গ্যাস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইউরোপ জানিয়েছে, জার্মানির মজুত ৮৫ শতাংশ পূর্ণ। 

রাশিয়ার জ্বালানি এখনো ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এটিও রাশিয়া বন্ধ করে দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত