Ajker Patrika

নিজের সমস্যা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

ডা. রাহুল মিত্র, চিফ কনসালট্যান্ট
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৪৯
নিজের সমস্যা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

দাঁতের সমস্যা
প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০। বেশ কিছুদিন ধরে আমার দাঁতে ব্যথা করছে। ঠান্ডা পানি (ফ্রিজের ঠান্ডা পানি নয়) খেলে দাঁত শিরশির ও ব্যথা করে। ডান পাশের ওপরের দিকের দাঁত, অর্থাৎ পেষণ দাঁতের একটি বেশি ব্যথা করে। হাত দিয়ে টের পেলাম দাঁতের কিছু অংশ ক্ষয়ে গেছে। সমাধান কী?

—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মাগুরা

দাঁতের ওপরের আবরণ এনামেলের ক্ষয়জনিত কারণে শীতকালে দাঁত শিরশির করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ থেকে দাঁতে ব্যথাও হতে পারে। ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে কিছু ক্ষেত্রে শিরশির কমে যায়। টুথপেস্ট ব্যবহার করে শিরশির ভাব না কমলে অবশ্যই ডেন্টিস্টের কাছে যেতে হবে।

—ডা. রাহুল মিত্র, চিফ কনসালট্যান্ট
-ডা. রাহুল’স ডেন্টাল সলিউশন, মিরপুর-১০, ঢাকা

হাড়ের সমস্যা
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৭ বছর। আমার হাত ও পায়ের আঙুল খুব বেশি ফোটে। বিশেষ করে পায়ের গোড়ালির জয়েন্টের অংশ খুব শব্দ করে ফোটে। হাঁটার সময়ও ফোটে আবার অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকার পর উঠতে গেলেও গোড়ালির জয়েন্ট ফোটে। একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর অন্যদিকে ঘুরতে গেলেও ফোটে। এটা কি কোনো রোগ? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। এর সমাধান কী? 

—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আপনি যে জয়েন্টগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো সাইনোভিয়াল জয়েন্ট। সেগুলোর মধ্যে থাকা পিচ্ছিল তরল সাইনোভিয়াল ফ্লুইড হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণকে প্রতিহত করে। বিভিন্ন সময়ে সেই ফ্লুইডে থাকা নাইট্রোজেন গ্যাস বুদ্‌বুদ তৈরি করে। নড়াচড়ার সময় বুদ্‌বুদগুলো ভেঙে গিয়ে একধরনের শব্দ তৈরি করে। খুব সম্ভবত আপনার ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে জয়েন্টগুলো স্ট্রেচিং ও ব্যায়ামের মাধ্যমে বারবার নড়াচড়ার ওপরে রাখুন। যতই নড়াচড়া করে জয়েন্টগুলো সচল রাখা যাবে, ততই সেগুলো মসৃণ থাকবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে স্ট্রেচিং ও ব্যায়ামের পরও যদি আপনার সমস্যা থেকে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি অস্টিওপরোসিস বা আর্থরাইটিস কোনো জটিলতায় ভুগছেন। আপনার জন্য পরামর্শ, পর্যাপ্ত স্ট্রেচিং ও ব্যায়ামের পরও সমস্যা থেকে গেলে এবং সেটা বাড়তে থাকলে, সেই সঙ্গে জয়েন্টগুলোয় অসারতা অথবা ব্যথা বাড়তে থাকলে একজন অর্থোপেডিক ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

—ডা. মালিহা আহমেদ
মেডিকেল অফিসার, অর্থোপেডিকস, মা ও শিশু মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম

ডাক্তারের-পরামর্শমানসিক সমস্যা
প্রশ্ন: আমার বর্তমান বয়স ২২ বছর। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এক বস্তিতে। বর্তমানে সে জায়গায়ই আছি। নানা অন্যায় ও নেতিবাচক অনেক কিছু দেখতে দেখতে বড় হয়েছি। স্কুল-কলেজেও তেমন ভালো পরিবেশ এবং ভালো কোনো বন্ধু পাইনি। শারীরিক, আবেগীয় ও মানসিকভাবে আমি যেমন আঘাত পেয়েছি, তেমনি যৌন সহিংসতার শিকারও হয়েছি। এ ছাড়া আমি কৈশোরে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে অনাচারে জড়িয়ে পড়ি। সেই থেকে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। শৈশব ও কৈশোরের এই মানসিক আঘাত আমায় এখনো অস্থির করে রেখেছে। আমার সুইসাইড করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি বাঁচতে চাই। আমার এই ট্রমা কীভাবে সারিয়ে তুলতে পারি?

আর একটি কথা, বর্তমানে আমি সেক্সের প্রতি আরও আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। আমার বন্ধুসংখ্যা কম এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই বললেই চলে। তাই কোনো সমস্যাই কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না।

-মোহাম্মদ রাসেল, নাছিরাবাদ, চট্টগ্রাম

বিষয়টি খোলাখুলিভাবে শেয়ার করে ভালো করেছেন। সুস্থভাবে বাঁচতে চাওয়া ভালো থাকার দিকে এক ধাপ অগ্রসর হওয়া। আপনি যে পরিবেশে আছেন, সেই পরিবেশের সামগ্রিক আচরণ, চিন্তা, অনুভূতি অনুকরণ করবেন এটি খুবই স্বাভাবিক।

নিজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারছেন—এটা দরকারি বিষয়। স্থান-কাল-পাত্রভেদে নিজের সচেতনতার জায়গা জিইয়ে রাখতে পারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেসব শিশু ছোটবেলায় যৌন সহিংসতার শিকার হয়; দেখা গেছে, পরবর্তী সময়ে তারা যৌন নিপীড়কের ভূমিকাও নেয়। একমাত্র সচেতনতাই পারে নিজেকে সেই জায়গা থেকে সরিয়ে আনতে। মানুষের উপকার হয় এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত হলে একধরনের মানসিক তৃপ্তি পাবেন। একবার একটু চেষ্টা করে দেখুন।
কষ্টের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই শুধু মানুষ আত্মহত্যার কথা ভাবে। অন্যের কথায় কষ্ট পেয়ে কোনো লাভ নেই; বরং নিজে যা ভাবছেন, তা করার চেষ্টা করুন, দেখবেন আত্মহত্যার কথা আর মাথায়ই আসছে না। পৃথিবীতে নতুন করে করার অনেক কিছু আছে। আপনাকে চাইতে হবে, আত্মহত্যার মতো চরম নেতিবাচক বিষয় থেকে আপনি ঘুরে দাঁড়াবেন। দেখবেন অনেক রাস্তা খুলে গেছে। মানুষ গভীরভাবে কোনো কিছু চাইলে, যেভাবেই হোক সেটা খুঁজে নেওয়ার সামর্থ্য রাখে।

২২ বছর বয়সে যৌনতার চাহিদা থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যদি অসম্মানজনক আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়, তবে তার দায়ভার সেই মানুষটির। আপনি ইতিমধ্যে যথেষ্ট নোংরামি দেখে ফেলেছেন। এবার বলুন, একটু থামা যাক। একটু একটু করে নিজেকে ‘না’ বলতে বলতে দেখবেন একটা সময় ‘না’ বলা এবং ‘না’ শোনা দুটোরই অভ্যাস হয়ে গেছে।

মনের বল সব থেকে বড় বল। জীবন একটা পছন্দের ব্যাপার। হয় আপনি বেছে নেবেন দুঃখ পেতে, না হলে জীবন উপভোগ করতে। তবে কোনোটাই অন্যের বা নিজের ক্ষতি করে নয়।

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত