Ajker Patrika

ভার্চ্যুয়াল ক্লিনিক

ডা. মাজহারুল হক তানিম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ৪১
ভার্চ্যুয়াল ক্লিনিক

গত দেড় বছরে চিকিৎসাসেবা নেওয়া ও দেওয়ার ধরন পাল্টেছে। কোভিড-১৯-এর কারণে অনেকে সরাসরি হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

অনলাইনে এখন যেহেতু কেনাকাটা, পড়াশোনাসহ সব কাজ করা যাচ্ছে, তাহলে চিকিৎসাসেবা কেন নয়? এ থেকে আমাদের মাথায় আসে ভার্চুয়াল ক্লিনিক বা অনলাইনে চিকিৎসা দেওয়া বা চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়ার চিন্তা।

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা নিজেদের এবং রোগীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনলাইনে ভিডিও কলের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছেন এখন। চিকিৎসকের পরামর্শ ও রিপোর্ট দেখার কাজ এখন মোবাইলেই 
করা যাচ্ছে।

রোগী দেখার প্রক্রিয়া
প্রথমে ফোন দিয়ে চিকিৎসকের অ্যাপে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন রোগী। মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্য অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টাকা পাঠানোর মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত করতে হয়। চিকিৎসকের দেওয়া সময় অনুযায়ী, রোগীরা ভিডিও কলে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। চিকিৎসকেরা তাঁদের সমস্যাগুলো শোনেন এবং সেই অনুসারে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

টেস্ট বা রিপোর্ট কীভাবে দেখানো যায়
যে টেস্টগুলো করতে হবে তা প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন চিকিৎসক। রোগী তাঁর নিকটস্থ ভালো কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট টেস্টগুলো করান। রিপোর্টগুলো হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমোর মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে পাঠান। চিকিৎসক সেই রিপোর্ট দেখে রোগীকে চূড়ান্ত প্রেসক্রিপশন দেন এবং ফলোআপের তারিখ জানিয়ে দেন।

সুবিধা
অনলাইনে রোগী দেখার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে:

  • প্যান্ডেমিকের এ সময়ে চিকিৎসকের কাছে আসা অনেক মানুষের সংস্পর্শে না গিয়ে একেবারে নিরাপদে চিকিৎসাসেবা নেওয়া যায় বাড়িতে বসেই।
  • রাস্তার জ্যামে কিংবা চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে অপেক্ষা করে মূল্যবান সময় নষ্ট করতে হয় না।
  • যাঁরা বড় শহর থেকে দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন, অল্প আয়াসে তাঁরাও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা নিতে পারবেন। এতে সবার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা পাওয়া সহজ হবে।
  • প্রবাসীরাও দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন। ভাষা সমস্যার কারণে যাঁদের প্রবাসে চিকিৎসাসেবা নিতে সমস্যা হয়, তাঁদের সে সমস্যা দূর হবে।
  • চিকিৎসকদের ঝুঁকিমুক্ত জীবিকার চাকা সচল থাকবে এবং সেবাগ্রহণকারীরাও অতিরিক্ত ঝুঁকিতে পড়বেন না।
  • বয়স্ক ও গর্ভবতী বা এ রকম বিশেষ মানুষ, যাঁদের বাড়ির বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়, দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে তাঁদেরও সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব।

অসুবিধা 
প্রতিটি নতুন নিয়মের কিছু সমস্যা থাকে। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়। ভার্চুয়ালি চিকিৎসায় যেসব জায়গায় রোগীর তাৎক্ষণিক কিছু তথ্য দরকার, সেগুলো পাওয়ার সুবিধা নেই।

যেমন পালস রেট, জ্বরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ মাপানোর সুযোগ, যেগুলো চিকিৎসকেরা চিকিৎসার জন্যই করতেন, সেগুলো অনলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসায় সম্ভব নয়। এ ছাড়া চিকিৎসক এবং রোগীর নির্ভরশীলতার যে মানসিক সম্পর্ক, সেগুলো অনেকাংশে ভার্চুয়াল চিকিৎসায় সম্ভব না-ও হতে পারে। যেমন রোগীদের রোগ প্রতিরোধে মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করা। ভার্চুয়ালি চিকিৎসার মূল মাধ্যম ইন্টারনেট ও ভালো মানের ডিভাইস। এগুলো সবার যে কেনার ক্ষমতা থাকবে, সে রকম না-ও হতে পারে।

রোগী দেখার ডিভাইস
অনলাইনে রোগী দেখার জন্য উচ্চগতির ইন্টারনেট ও হাই রেজল্যুশন ক্যামেরাসম্পন্ন মোবাইল প্রয়োজন। অনেকে অ্যাপের মাধ্যমে রোগী দেখেন। অনেকে আবার অ্যাপ ছাড়াই ইমো ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে রোগী দেখেন।

যাঁরা এ সেবা পাচ্ছেন
শহর-গ্রাম সব জায়গার মানুষই এ সেবা নিচ্ছেন। যাঁরা শহর থেকে দূরে থাকেন, বড় শহরে আসতে পারছেন না, তাঁরা অনলাইনে সেবা নিচ্ছেন। বয়স্করাও কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে সেবা নিচ্ছেন। গর্ভবতী যাঁরা হাসপাতালে আসতে পারছেন না, তাঁরাও অনলাইনে ফলোআপ সেরে ফেলছেন। সবকিছুরই ভালো-মন্দ দুটি দিক আছে, সুবিধা-অসুবিধা আছে। অনলাইনে রোগী দেখাও এর ব্যতিক্রম নয়। অনলাইন চিকিৎসাসেবার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এর অসুবিধাগুলোও ধীরে ধীরে দূর হবে।

লেখক: হরমোন ও থাইরয়েড বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত