Ajker Patrika

তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক তলানি থেকে শিখরে

তাসনিম মহসিন, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ২৬
তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক   তলানি থেকে শিখরে

যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড নিয়ে বিরোধিতার কারণে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। তবে সেই সম্পর্কের মোড় ঘুরেছে। গত তিন বছরে দুই দেশের সম্পর্ক শুধু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি, স্মরণকালের সেরা সম্পর্ক এখন দুই দেশের মধ্যে। আর দিন দিন এ সম্পর্ক শুধু বাড়ছে।

বাংলাদেশে তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের নামে একটি পার্ক হতে যাচ্ছে। একইভাবে তুরস্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি পার্ক হতে যাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধুর নামের পার্কটি উদ্বোধন করতে ১২ ডিসেম্বর তুরস্ক যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তুরস্ক সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তুরস্কের প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। সেই সঙ্গে বিশ্বে একটি নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের জনগণ তুরস্কের অনেক কিছুই পছন্দ করে এবং অনেক কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক বাড়ানোর সব প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। আমাদের মাঝে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। এগুলো এখন দূর হয়ে গিয়েছে।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ইচ্ছা বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরির। আর তুরস্কের এ প্রস্তাবে রাজি বাংলাদেশ। হাসপাতাল তৈরিতে ঢাকার পাশে ঝিলমিল প্রকল্পে সাড়ে ছয় একর জায়গা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটি ছোট হয়ে যায় উল্লেখ করে আরও বড় জায়গা দেওয়ার অনুরোধ করে তুরস্ক। এখন আড়াই লাখ বর্গমিটারের বিশ্বমানের হাসপাতাল বানানো হবে।

তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়টি কূটনীতিতে একটি বৈচিত্র্য এনেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কূটনীতি ও সামরিক দিক থেকে তুরস্ক বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ। আর বাংলাদেশের জন্য দেশটি বাণিজ্যিক পণ্যের বড় বাজার। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে পারে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনে। এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেয় তুরস্ক। দেশটি বিবৃতি দিয়ে এ বিচারের বিরোধিতা করে এবং বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। সে সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছায়। ২০১৬ সালে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর একটি অংশ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রথম চিঠি দেয় বাংলাদেশ। আর এ চিঠি দুই দেশের সম্পর্কের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। এর পাল্টা জবাবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এলে তুরস্কও সঙ্গে সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ‘ফার্স্ট লেডি’কে বাংলাদেশে সফরে পাঠায়। এর পর থেকে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে দুই দেশ।

দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য দুই বছর আগেও প্রায় ৮৫ কোটি ডলার থাকলেও বর্তমানে করোনার মধ্যেও ১২০ কোটির ওপর হয়েছে। আগামী তিন বছরে তা ৩০০ কোটিতে নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

চলতি বছরের জুনে তুরস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও সমরাস্ত্রবিষয়ক চুক্তি করাসহ ১০০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্রের আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ। তুরস্ক অস্ত্র বিক্রিতে কোনো শর্ত দেয়নি। আর তাদের অস্ত্র দামেও সাশ্রয়ী। চলতি বছর দুই দেশের সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তুরস্ক ও বাংলাদেশে একাধিকবার সফর করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হ‌ুমায়ূন কবির মনে করেন, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়লে সামরিক, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উন্নয়ন, অর্থনীতি, প্রযুক্তিগত, সামরিক সব দিক থেকেই তুরস্ক এগিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে। আর ওআইসির সদস্যরাষ্ট্র হওয়ার কারণে মুসলিম বিশ্বে এবং ন্যাটো সদস্য হওয়ার কারণে পরাশক্তির দেশগুলোতে তুরস্কের প্রভাব রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত