Ajker Patrika

অর্থ আত্মসাৎ বিমার দাবি পরিশোধে অনীহার কারণ

জয়নাল আবেদীন খান
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২০: ২৯
অর্থ আত্মসাৎ বিমার দাবি পরিশোধে অনীহার কারণ

অর্থনীতিকে সচল এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিমা খাতকে। কিন্তু করোনা মহামারিতে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিমা খাতের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয় বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জয়নাল আবেদীন খান। 

আজকের পত্রিকা: করোনাকালে কেমন চলছিল বিমা খাত?

এস এম নুরুজ্জামান: করোনার আক্রমণের পর আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। আমাদের শঙ্কা ছিল, আমানত সংগ্রহ এবং ব্যবসা পরিচালনা করা থেমে যায় কি না। তবে তা বন্ধ হয়ে না গেলেও মারাত্মক বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে যে হোঁচট খেয়েছিলাম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে এসে আশার আলো দেখলাম। আমাদের আমানত সংগ্রহ বাড়তে থাকে। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে।

আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমা নিয়ে আস্থার ঘাটতি কেন?

নুরুজ্জামান: বিমার বিষয়বস্তু যদি হয় জীবন, তাহলে সে বিমাকে বলা হয় লাইফ ইন্স্যুরন্স। জীবনবিমা চুক্তির বিষয়বস্তু হতে পারে নিজের জীবন এবং অন্যের জীবনের সহায়তা। তবে অন্য যার জীবনের ওপর আর্থিক স্বার্থ বিদ্যমান থাকে, সেখানে শুধু তার জীবনের ওপর বিমা করা যায়। অনেক বিমা কোম্পানির কারণে সাধারণ মানুষ বিমা খাতকে ভয় পায়। আর নন-লাইভ বিমার ক্ষেত্রেও মানুষের ভীতি রয়েছে।

আজকের পত্রিকা: সাধারণ মানুষের মধ্যে বিমার বিষয়ে আস্থা ফেরাতে কী করণীয়?

নুরুজ্জামান: বর্তমানে দেশে জীবনবিমা এবং সাধারণ বিমা রয়েছে। সরকারি বিমা নিয়ে আস্থার তেমন ঘাটতি দেখা যায় না। কিন্তু বেসরকারি বিমা নিয়ে আস্থার সংকট দীর্ঘদিনের। দেশে বিমা খাতে শৃঙ্খলার অভাবের কারণে এটা হয়েছে। মূলত বিমার পাওনা পরিশোধ করা নিয়ে অনেক বিমা কোম্পানির প্রতারণার জন্য এ সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।

আজকের পত্রিকা: বিমা পরিচালনা করতে ত্রুটি বা সমস্যা আছে কি?

নুরুজ্জামান: বর্তমানে দেশে মোট ৪৬টি নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি আছে। বিমা কোম্পানিগুলোর মুনাফার প্রবৃদ্ধি বিবেচনা করলে দেখা যায়, অন্য যেকোনো খাতের তুলনায় এ খাতের মুনাফার পরিমাণ বেশি। কিন্তু পরিচালনা পরিষদের হস্তক্ষেপ অনেক সময় বাধার সৃষ্টি করে। এটা আইনে সুনির্দিষ্টকরণের ব্যবস্থা থাকা দরকার। আর কিছু কোম্পানির বিমার দায় পরিশোধ না করা এবং গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ একটা বড় সমস্যা।

আজকের পত্রিকা: বিমা কোম্পানির বিমা পরিশোধে অনীহা কেন?

নুরুজ্জামান: বিমা পরিশোধের ক্ষেত্রে অনীহার অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ এবং তা আদায়ে সাধারণ গ্রাহক আইনের আশ্রয় নিতে চান না। এতে পার পায় দুর্নীতিবাজ বিমা ব্যবসায়ীরা। ফলে বিমা পরিশোধে অনীহা দেখান তাঁরা।

আজকের পত্রিকা: বিমা পাওনা পরিশোধ না করলে ভুক্তভোগীর করণীয় কী?

নুরুজ্জামান: বর্তমানে বিমা গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে। তারা আইনের অশ্রয় নিতে পারেন। এ ছাড়াও বিমা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিকার চাইতে পারেন।

আজকের পত্রিকা: বঙ্গবন্ধু শিল্পবিমার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কি না?

নুরুজ্জামান: বঙ্গবন্ধু শিল্পবিমার পরিধি বাড়ানোর সময় এসে গেছে। এটা সাবার জন্য উন্মুক্ত করলে বিমা খাতের প্রসার হবে এবং সাধারণ গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। এতে অর্থনীতিতে বিমা খাতের অবদান বেড়ে যাবে।

আজকের পত্রিকা: বিমার পরিধি বাড়ানো সহজ এবং নতুন কোনো পদ্ধতি রয়েছে কী?

নুরুজ্জামান: বিমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের পাওনা শতভাগ পরিশোধ করলে বিমার সুনাম বাড়বে এবং নতুন করে মানুষ বিমায় সঞ্চয় করবে। এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। আর স্বাস্থ্যবিমা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের যাত্রীদের বিমার আওতায় নিয়ে আসতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়াও বহুতল বাড়ি, অফিস ভবন এবং আবাসিক হোটেলের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

আজকের পত্রিকা: বিমার গ্রাহক যেকোনো সময় আমানত এবং মুনাফা ফেরত পেতে পারে কী?

নুরুজ্জামান: বিমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ তাদের আইনি অধিকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। বিমার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ফিরে দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মৃত্যু বা দুর্ঘটনা ছাড়াও যে কেউ বিমার টাকা ফেরত পেতে পারেন।

আজকের পত্রিকা: এনজিও বা ব্যাংক কি বীমার আমানত রাখতে পারে?

নুরুজ্জামান: বিমা কোম্পানির আইন অনুযায়ী এনজিএ কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান বিমার টাকা রাখতে পারে না। তাবে অনেক এনজিও আইন লঙ্ঘন করে বিমাব্যবসা করে, এটা বন্ধ করা দরকার। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে কল্যাণ ফান্ডের মাধ্যমে টাকা জমা রাখে, যা বিমার জন্য ক্ষতিকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত