Ajker Patrika

ভূগোলবিষয়ক জ্ঞানের তথ্যভান্ডার

ড. সাবিহা সুলতানা
ভূগোলবিষয়ক জ্ঞানের তথ্যভান্ডার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রণীত ‘বাংলাদেশের ভূগোল’ পুস্তকটি সম্প্রতি নগর গবেষণা কেন্দ্র ও চন্দ্রাবতী একাডেমি যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ করেছে। পুস্তকটি লেখক রচনা করেছেন পাঠ্যপুস্তক হিসেবে নয়, রচনা করেছেন শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, দেশের জন্য চিন্তা করেন, তাঁদের দেশকে জানার আগ্রহ প্রশমনের নিমিত্তে। এ জন্য পুস্তকটি পরিবেশনার আঙ্গিকটিও ভিন্নতর। পুস্তকটির পাঠক তাঁরাই হবেন, যাঁরা বাংলাদেশের ভূগোলের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়—প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশের বিভিন্ন দিক এবং মানুষ ও পরিবেশের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী। এ ধরনের একটি পুস্তক লেখার ইচ্ছা লেখক বহুদিন ধরে অন্তরে লালন করেছিলেন। ‘বাংলাদেশের ভূগোল’ পুস্তকটি লেখকের সেই কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছার বাস্তব রূপ।

প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে পুস্তকটির নান্দনিক প্রচ্ছদ। লেখক শিল্প সমালোচক নজরুল ইসলামের পরিকল্পনায় সাজানো প্রচ্ছদপটটির বিষয় প্রকাশে নীল ও সবুজ রঙের ব্যবহার প্রাধান্য পেয়েছে। রং দুটি বাংলাদেশের প্রকৃতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিবিম্ব। এটি প্রখ্যাত শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম।

পুস্তকে লেখক বাংলাদেশের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দিতে সচেষ্ট হয়েছেন, প্রকৃতি এবং মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিরূপণের মাধ্যমে। পুস্তকটির রচনাশৈলীতে মৌলিকতা সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যাতে প্রকাশ পেয়েছে লেখকের সুদীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং তাঁর গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞান। পুস্তকটি সহজবোধ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় সারণি, মানচিত্র, চিত্র, বিষয়ভিত্তিক বহু আলোকচিত্র এবং বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্মও যোগ করেছেন।

পুস্তকটির ৩০ অধ্যায়ে লেখক সংক্ষেপে বিভিন্ন মাধ্যমে মৌলিক তথ্য পরিবেশন করেছেন, অনেক ক্ষেত্রে বিশদ বিশ্লেষণে যাননি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ভূগোল জানতে আগ্রহী মানুষের জন্য তাঁর এই প্রয়াস, ফলে তাঁরা নিজেদের আগ্রহ নিরসনে বিষয়ের গভীরে যেতে সচেষ্ট হবেন বা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন।

অধ্যায়ের শুরু বাংলাদেশের তথ্যসমৃদ্ধ কালানুক্রমিক ঐতিহাসিক বিকাশ দিয়ে, যেখানে উঠে এসেছে বিভিন্ন যুগ ও শাসনামল এবং পরিশেষে বাংলাদেশ। এর পরবর্তী অধ্যায়গুলো পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক বিবিধ বৈশিষ্ট্য থেকে শুরু করে আর্থনীতিক, জনমিতিক, সামাজিক ইত্যাদি বিষয়বস্তু। শেষের কয়েকটি অধ্যায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যা বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল আর্থসামাজিক অবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সহযোগিতা জোট, প্রবাসী বাংলাদেশি ও আয়, শিল্প ও শিল্পায়ন উল্লেখযোগ্য। এগুলোর পরিসর এবং উন্নয়ন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনে, পর্যটন, গ্রামীণ বসতি, নগরায়ণ ও গৃহায়ণ, মানব উন্নয়ন, জাতীয় আয় ও দারিদ্র্য, পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন ইত্যাদিতে। এই সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো লেখকের বহুদর্শী এবং দীর্ঘ গবেষণালব্ধ ফসল; বিশেষ করে নগরায়ণ ও ঢাকা লেখকের বহুদিনের গবেষণার ক্ষেত্র, যার বিশেষ প্রতিফলন ঘটেছে এ দুটি অধ্যায়ে (২৪ ও ২৫)।

লেখক জনসংখ্যা অধ্যায়ে অভিবাসন (২২) সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন, যা মূলত অভ্যন্তরীণ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন, বিশেষ করে শ্রমিক ও শিক্ষার্থী এবং বিশেষ সংগতিসম্পন্ন পরিবারের বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা এই অংশে এক বিশেষ মাত্রা যোগ হতে পারত। অবশ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ও আয় শীর্ষক ভিন্ন এক অধ্যায়ে (২১) কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা স্থান পেয়েছে।

পরিশেষে বলতে হয়, ‘বাংলাদেশের ভূগোল’ পুস্তকটি শুধু বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের জন্য নয়, ভূগোলশিক্ষার্থী ও ভূগোলবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার জনগণের জন্য এই দেশের ভূগোলবিষয়ক জ্ঞানের ‘তথ্যভান্ডার’ হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

ড. সাবিহা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত