Ajker Patrika

পল্লি শিক্ষার্থীদের আমানত তলানিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ০৪
পল্লি শিক্ষার্থীদের আমানত তলানিতে

খুদে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ-সংকট এড়াতে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালে এই ব্যাংকিং পদ্ধতির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরের বছরই ৬-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা হিসাব চালু করেন। প্রথম দিকে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলার কথা বলা হলেও, পরবর্তীতে তা ১০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। জনপ্রিয়তাও পেয়েছে অভিনব এই ব্যাংকিং কার্যক্রম। এমনকি করোনাকালেও এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। তবে পল্লি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় একেবারে তলানিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, খুদে শিক্ষার্থীদের মোট হিসাবের সংখ্যা ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩টি। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীর হিসাব রয়েছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৬৭০টি এবং পল্লি অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের হিসাবের সংখ্যা ১৩ লাখ ২০ হাজার ৪১৩টি। তাদের হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ১ হাজার ৬০১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর পল্লি শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ মাত্র ৫৬৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। যা মোট আমানতের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।

বিদায়ী অর্থবছরের জুন মাসে এসব হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ২০৯টি। এর মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ১৫ লাখ ২৩ হাজার ৯১০টি এবং পল্লি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ছিল ১৩ লাখ ১৫ হাজার ২৯৯টি হিসাব। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৫৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। যেখানে শহরের শিক্ষার্থীদের আমানত ছিল ১ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। আর পল্লি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আমানত ছিল ৫৭৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

দেশে ৫৫টি ব্যাংক বর্তমানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মেয়েদের আমানতের (শতকরা ৪৬ ভাগ) তুলনায় ছেলেদের আমানতের (শতকরা ৫৬ ভাগ) পরিমাণ ১০ ভাগ বেশি।

রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মালিবাগ শাখার গ্রেড-৩ এ পড়ুয়া মিথিলা নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে তাঁর হিসাবটি নিয়ম অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় এবং তা সাধারণ গ্রাহক হিসেবে পরিণত হয়। এটা শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া পর্যন্ত বা ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত বৃদ্ধি করা দরকার।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, আগে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হিসাব খোলা হতো। তখন দ্রুত অনেক হিসাব খোলা সম্ভব হয়েছিল। ভালো আমানতও এসেছিল। তবে করোনা শুরু হওয়ার পর তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অনেক অভিভাবক এসে তাঁদের সন্তানের নামে ব্যাংকে হিসাব খুলছেন। এ জন্য হিসাব সংখ্যা বাড়ছে, তবে শ্লথগতিতে।

করোনার কারণে নতুন হিসাব খোলা এবং আমানতের গতি মন্থর হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে ব্যাংকিং চ্যানেলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে। এ জন্য যাদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাব নেই তাঁদের কাছেও এখন হিসাব খোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাম এবং শহরের অভিভাবকদের আয়ের পার্থক্যের কারণে শহরের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ কম। আগ্রহ এবং সচেতনতার ঘাটতিও এই আমানতের বৈষম্যের জন্য দায়ী হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত