Ajker Patrika

বিনিয়োগের মহা আয়োজন অর্থনৈতিক অঞ্চলে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৪৭
বিনিয়োগের মহা আয়োজন অর্থনৈতিক অঞ্চলে

যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশে তেমন কোনো শিল্পকারখানা ছিল না। এরপর স্বাধীন দেশে অল্প অল্প করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন উদ্যোক্তারা। সেসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি সীমিত থাকলেও, আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের সব ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বেড়েছে মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও জিডিপিসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচক। হাতের নাগালে ইন্টারনেট। যার সুফল ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী।

স্বাধীনতার পর উদ্যোক্তাদের মধ্যে যাঁরা সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হন, তাঁদের প্রচেষ্টায় একসময় এই দেশে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। পাশাপাশি আসতে থাকে বিদেশি বিনিয়োগ। পরবর্তী সময়ে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড)। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে তৈরি পোশাক খাতে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়। শিল্প উৎপাদনের জন্য সরকার এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে ৯৮টির অনুমোদন পেয়েছে। ৩০টি উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কয়েকটিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেখানে কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সব মিলে যুদ্ধবিধস্ত তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে এখন উন্নয়নের সিঁড়িতে বাংলাদেশ।

দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চারপাশে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। একদিকে যেমন পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্টোরেল, এক্সপ্রেস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে লাখ লাখ মানুষের।

এ ব্যাপারে বাংলাদশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য হলো অধিক পরিমাণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর উৎপাদন বৃদ্ধি। বিশেষ করে ফেনীর সোনাগাজী, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডকে ঘিরে ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’। এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর কাজের সুযোগ পাবে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।

ইউসুফ হারুন আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে রীতিমতো শিল্পবিপ্লব ঘটবে। বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারা। কর্মসংস্থান হবে কোটি মানুষের। ইতিমধ্যে বিদেশিদের মধ্যে ভারত, জাপান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, জার্মান, হংকং, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগ শুরু করেছে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন পাস করা হয় ২০১০ সালে। তবে কাজ শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে। ৯৮টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০টির কাজ জোরেশোরে চলছে। ১৩টি অঞ্চলে কিছু ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। এই ১৩টিতে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে।

আশির দশকে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পায়নের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। এটা ছিল সীমিত এলাকায় শিল্পায়নের জন্য। পরে তিন দশকে ইপিজেডগুলো রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটোনোর ক্ষেত্রে ইপিজেডগুলোর ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। পরে শ্রমঘন, উচ্চ উৎপাদনশীলতা ও অধিক মূল্য সংযোজনকারী শিল্প স্থাপনের দিকে নজর দেয় সরকার। এ কারণে দেশজুড়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন সংসদে অনুমোদন করা হয়। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থনেতিক অঞ্চল বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। কৃষিজমি নষ্ট না করে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছে সরকার। সেখানে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির জন্য এবং বাড়তি ঝামেলা এড়াতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান কর হয়। সম্প্রতি আমরা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করেছি। সেখানে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত