Ajker Patrika

উপাচার্যের ছুটির গুঞ্জন শাহজালালের বাতাসে

সাখাওয়াত ফাহাদ ও তানভীর হাসান, সিলেট থেকে
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫৫
উপাচার্যের ছুটির গুঞ্জন শাহজালালের বাতাসে

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে ছুটিতে চলে যাচ্ছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব পাচ্ছেন নতুন কেউ। তবে এই বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত মুখ খোলেনি সংশ্লিষ্ট কেউ।

উপাচার্যের পদত্যাগ, আটক সাবেক শিক্ষার্থীদের জামিন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি পূরণের আশ্বাস বাস্তবায়ন হচ্ছে–এ ধারণাও ছড়িয়ে পড়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এদিকে, ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনগুলোর তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকও।

পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও উপাচার্যের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাংস্কৃতিক সমাবেশ, রোড পেইন্টিংসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, স্বৈরতান্ত্রিকতার শিকল ভেঙে মুক্ত চিন্তাচেতনা চর্চা এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে চান তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আড্ডাস্থল-গুলো বন্ধ করে দেওয়া, ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা কমিয়ে আনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা প্রদান, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে উপাচার্য ফরিদ উদ্দীন আহমেদ শাবিপ্রবিতে স্বৈরতন্ত্রের সিন্ডিকেট প্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত। এ ছাড়া এসব বিষয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের একাংশও। তবে সবাই চান শাবিপ্রবিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।

শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে ‘কেমন শাবিপ্রবি চাই’ শিরোনামে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আলোচনায় একাডেমিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ পুনর্গঠনে খাবারের দোকান ও টং চালু, পরিবহনসংকট নিরসন, রিডিং রুমের ব্যবস্থা করা, ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষা চালু, বাড়তি ফি প্রত্যাহার, সেশনজট কমানোসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এর আগে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনস্থলে রোড পেইন্টিং করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আদিল বলেন, ‘অনশন ভাঙার পরও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ৭ শিক্ষার্থীকে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ৫ শিক্ষার্থী রিলিজ নিয়েছেন। অনশনকারী মাহিন শাহরিয়ার রাতুল এপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। ব্যথা রয়েছে। এ ছাড়া আরও এক শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ থাকায় রাতে হাসপাতালে ছিলেন। পরে তিনিও হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়েছেন।’

এদিকে, উপাচার্যের ছুটির গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও মুখ খুলতে নারাজ শিক্ষকেরা। শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুলসি কুমার দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সবাই চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক। কে দায়িত্বে আসবে, সেটা সম্পূর্ণ সরকারের ওপর নির্ভর করছে। যেই দায়িত্বে আসবে, তাকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা সংকটময় সময় অতিক্রম করছি। এই সময়ের শিক্ষা নিয়ে সবার নিজেদের ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। আর পুরো ঘটনায় যাদের ভুলত্রুটি ও দায় ছিল, তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি সব সংকট কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরতে পারব।’

১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হামলার পর দাবি আদায়ের জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে উপাচার্যকে উদ্ধার করে। এরপর থেকেই উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। টানা ১৬৩ ঘণ্টা অনশনের পর গত বুধবার সকালে অনশন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত