মামুনুর রশীদ
সম্প্রতি একটি সংবাদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রাজশাহীতে অফিস ঠিক সময়ে শুরু হয় কি না, কর্মচারী-কর্মকর্তারা আসেন কি না, এটা দেখতে দুজন সাংবাদিক গিয়ে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করেন। তখন ওই দুই সাংবাদিককে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেছেন। অফিস প্রশাসক বিলম্বে এসে প্রথমে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বেশিক্ষণ সময় নেননি। একজন গাড়ির ড্রাইভার ও একজন স্টোরকিপারকে পাঠিয়ে দেন। তাঁরা বাকি কাজটি করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাটি ঘটেছে এবং তিনি সব সাংবাদিকের কাছে এ বার্তাটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন যে তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুললে এ রকমই সমস্যা হবে।
রাজশাহীর অফিসটি হয়তো এত বড় নয়। কিন্তু যেখানে বড় অফিস, হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেখান থেকে ওই সাংবাদিকেরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না। আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত কোনো পরিবর্তন গত একান্ন বছরেও হয়নি। তাঁরা এখনো সেই ব্রিটিশ-পাকিস্তানি শাসকদের মতোই মানুষের সঙ্গে আচরণ করতে অভ্যস্ত। জেলা প্রশাসক তো লাট সাহেবের কর্মকর্তা। কালেক্টরেটের রাজা। আর সচিবেরা তো ভাইসরয়ের কর্মকর্তা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁদের ভূমিকা সেই পাকিস্তান আমলের দিনগুলোর মতোই ফিরে এসেছে।
রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা নেই, এমপিদের কথা প্রশাসন শোনে না। সুযোগ বুঝে আমলারা তাঁদের বেতন দ্বিগুণ করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভেবেছিলেন বেতন বাড়ালে দক্ষতা বাড়বে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতি কমবে। দক্ষতা বাড়ানো তো দূরের কথা, শিষ্টাচারবহির্ভূত দুর্নীতিও দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। গাড়ির চালক থেকে শুরু করে একেবারে উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির বাহার। আজকাল দুর্নীতির কোনো মামলা শত শত কোটির নিচে হয় না। সেই সঙ্গে অর্থ পাচার, কানাডা, আমেরিকায় কলোনি স্থাপন—এসবই দিন দিন বেড়েছে। গত বছরগুলোতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বেড়েছে দুর্নীতি।মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস্তব অবস্থা দেখে যেকোনো প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই বাড়তি টাকাটা তাদের পকেটে গিয়েছে। এ রকম একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, তাতে কিছু কাজও হয়েছে। তবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করার কাজে বিষয়টি খুবই কাজে দিয়েছে। আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী দুর্নীতিকে স্পিডমানি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আর এবারের বাজেটে কালোটাকাকে সাদা করার এবং মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিকে হালাল করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গত সোমবার বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তৃতা পড়ছিলাম। তিনি দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে একেবারেই মুক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে দুর্নীতি করে!’ তাঁদের সীমাহীন লোভ-লালসা এবং নানা ধরনের কর্মকাণ্ডকে চিহ্নিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং শাস্তি দেবেন বলেছিলেন। সেই সময়ে বেশ কিছু আমলার চাকরিও গিয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরও কঠোর হতে পারতেন। আমাদের দেশে ভালো ও সৎ মানুষে ঐক্য হয় না।
কিন্তু অসৎ মানুষে মানুষে ঐক্য হয়ে যায় নিমেষেই। অনেকেই লিখিত চুক্তি ভঙ্গ করে। কিন্তু অলিখিত ইশারায় দুর্নীতিবাজদের চুক্তি ভঙ্গ হয় না।
একটি ভ্রান্ত স্লোগান দেখেছিলাম। সেটি হলো, ‘দুর্নীতিকে এখনই না বলুন’। দুর্নীতির শিকড় এত গভীরে যে না বলতে গেলেও কয়েক যুগ লেগে যাবে। কোনো কিছুর ভয়ে দুর্নীতি কমবে না। যারা দুর্নীতি করে, তারা অকুতোভয়। কারণ, প্রশাসনের একটা বড় ক্ষমতা তাদের করায়ত্ত এবং একা টাকাটা খায় না, সবাইকে দিয়ে খায়। এটাও কিন্তু একটা বড় ধরনের সুবিধা। বাংলাদেশে এখন একটা কথা চালু হয়েছে, তা হলো—সিন্ডিকেট। অফিস-আদালতে সিন্ডিকেট, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিন্ডিকেট, ঠিকাদার-প্রকৌশলীদের সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং আরও অসংখ্য সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মধ্যেও ঢুকে গেছে শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট। যেকোনো নিয়োগ, কেনাকাটা ও বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারেও রয়েছে সুশিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকের জোটবদ্ধতা। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কে শোনে, সে কথা! সেদিনও সংবাদ বেরিয়েছে উপসচিব যাচ্ছেন নৌযান চালানো শিখতে। হরহামেশাই দেখা যায়, কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পের যেকোনো বিদেশযাত্রায় সচিবালয়ের সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত থাকছেন। হয়তো পশুপালন শিখে এলেন বিদেশ থেকে। এসেই শুনলেন তাঁর বদলি হয়ে গেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। বিদেশের প্রশিক্ষণ তার জায়গায় থাকল। তিনি অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে গিয়েও বিদেশযাত্রার সুযোগ খুঁজছেন। অবশ্য সুযোগ মিলেও যায়। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় সিন্ডিকেট খুব কাজ করে। এমনিই আমাদের দেশে সরকারি অফিসে কাজকর্ম বিলম্বিত করার একটা নজির আছে। এর বিপরীতে এল ডিজিটাল পদ্ধতি। কাজ হবে রকেটের গতিতে। লাল ফিতা থাকবে না। তার স্থান দখল করবে কম্পিউটারের মাউস। কিন্তু কম্পিউটার তো সার্ভার ছাড়া চলে না। সার্ভার শ্লথ, কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকেছে। তাই আবার ফাইল কার্যকর হলো। এই প্রশাসনকে কোনো কায়দায়ই বিপদে ফেলা যাবে না।
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একটা অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি নিজে ক্যাডার সার্ভিসের লোক। তিনি বলেছেন, ক্যাডার সার্ভিস না থাকলে কী হয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে ক্যাডার সার্ভিস নেই। পৃথিবীর সেই সব দেশে এত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। কর্মচারী তো নেই, গাড়ির চালকও নেই। এক গ্লাস পানি খেতে হলে নিজে ঢেলে খেতে হয়, চা খেতে হলে নিজে বানিয়ে খেতে হয়। এখন আর টাইপরাইটারের বালাই নেই, তাই কম্পিউটারে নিজেকেই টাইপ করতে হয়। আরও বিপদের কথা, একটা সেকশনে মাত্র একজন সরকারি কর্মকর্তা, বাকি সবাই অস্থায়ী। তাঁদের নিয়োগ ১০ মাসের জন্য। এরপরে তাঁর চাকরি দীর্ঘায়িত করা নির্ভর করছে তাঁর দক্ষতার ওপর। তাঁরা পেনশন পান না এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পান না। ফলে সরকারের অর্থের যেমন সাশ্রয় হয়, তেমনি দক্ষতাও প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। আবার যে সরকারি কর্মচারীটি ওখানে বসে আছেন, তিনিও একটা শঙ্কায় ভোগেন—কখন তাঁর অদক্ষতা ও নিয়োগে যথার্থ দক্ষ লোক সংগ্রহে ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। তাই তাঁর গদিতে টান পড়ে যেতে পারে, আর এসব তদারকি করার জন্য আছে ওয়াচ ডগ। নানা ধরনের এজেন্সি এসব দেখার কাজ করে। কর্মী নিয়োগে বয়সের বালাই নেই। ৩০ বছর হলেই চাকরি পাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেল অথবা ৫৯ বছরে প্রকৃত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর তিনি অবসরে চলে গেলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা দেশের কোনো কাজে লাগল না। মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী কিছু যুবক সারা বিশ্বকে লিখে নিল একটি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য। চাকরি তাদের আমৃত্যু নিশ্চয়তা দিয়ে দিল। দক্ষতা বাড়ানোরও সেখানে কোনো প্রয়োজন নেই।
সিন্ডিকেটের সদস্য হলেই পদোন্নতি, উপরি পয়সা, বিদেশযাত্রা থেকে শুরু করে কানাডা, আমেরিকায় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ও কলোনির মালিকানা হয়ে যাওয়া। আর দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক দক্ষতা ও সৃজনশীলতা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। সরকারি অফিসে কাজ করার কোনো সুযোগই আর তার থাকে না। এসব নিয়ে ভাবার কথা রাজনীতিবিদদের এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয়ে বিভাগ আছে, প্রচুর ডক্টরেট থিসিস তৈরি হয় এবং তা পরে আমলাদের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়।
রাজনীতিবিদদের হাতে সময় নেই, ক্ষমতা বাঁচানোর জন্য তাঁরা ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত এবং পার্টি পর্যায়ে এসব নিয়ে কোনো আলোচনা ও গবেষণার সুযোগও নেই। পত্রিকা খুললেই সরকারি দল এবং বিরোধী দলের একটাই উদ্দেশ্য—ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়া। বিরোধী দল থেকে আজ পর্যন্ত জনপ্রশাসন বা গঠনমূলক কাজের জন্য কোনো প্রস্তাব আসেনি। পরিকল্পনামন্ত্রী সরকারের মধ্যে থাকার পরেও তিনি কিন্তু একটা বড় বিতর্কের সূচনা করেছেন। কিন্তু এসব নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বা নানা ধরনের নির্দেশনা থাকে, সেগুলোই-বা কে পড়বে?
আমলা, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ—সবাই সংস্কৃতিকে নাচ-গান মনে করেন। আমলাতন্ত্রকে নিয়ে, রাজনীতিবিদদের নিয়ে, দুর্নীতি নিয়ে কত উপন্যাস-ছোটগল্প, নাটক, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। অথচ কারও বক্তৃতায় এসব বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না। তবে এরও একটা শেষ আছে, কিন্তু শেষটা নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে হোক, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। রাজশাহীর ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সঙ্গে সচেতন মানুষও ছিলেন। তবে এই প্রতিক্রিয়া যে বড় আকারে হবে না, এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।
সম্প্রতি একটি সংবাদ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রাজশাহীতে অফিস ঠিক সময়ে শুরু হয় কি না, কর্মচারী-কর্মকর্তারা আসেন কি না, এটা দেখতে দুজন সাংবাদিক গিয়ে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করেন। তখন ওই দুই সাংবাদিককে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেছেন। অফিস প্রশাসক বিলম্বে এসে প্রথমে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বেশিক্ষণ সময় নেননি। একজন গাড়ির ড্রাইভার ও একজন স্টোরকিপারকে পাঠিয়ে দেন। তাঁরা বাকি কাজটি করেন। একজন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাটি ঘটেছে এবং তিনি সব সাংবাদিকের কাছে এ বার্তাটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন যে তাঁদের কাজকর্ম নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুললে এ রকমই সমস্যা হবে।
রাজশাহীর অফিসটি হয়তো এত বড় নয়। কিন্তু যেখানে বড় অফিস, হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেখান থেকে ওই সাংবাদিকেরা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতেন না। আমাদের সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত কোনো পরিবর্তন গত একান্ন বছরেও হয়নি। তাঁরা এখনো সেই ব্রিটিশ-পাকিস্তানি শাসকদের মতোই মানুষের সঙ্গে আচরণ করতে অভ্যস্ত। জেলা প্রশাসক তো লাট সাহেবের কর্মকর্তা। কালেক্টরেটের রাজা। আর সচিবেরা তো ভাইসরয়ের কর্মকর্তা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাঁদের ভূমিকা সেই পাকিস্তান আমলের দিনগুলোর মতোই ফিরে এসেছে।
রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা নেই, এমপিদের কথা প্রশাসন শোনে না। সুযোগ বুঝে আমলারা তাঁদের বেতন দ্বিগুণ করে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হয়তো ভেবেছিলেন বেতন বাড়ালে দক্ষতা বাড়বে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতি কমবে। দক্ষতা বাড়ানো তো দূরের কথা, শিষ্টাচারবহির্ভূত দুর্নীতিও দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। গাড়ির চালক থেকে শুরু করে একেবারে উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির বাহার। আজকাল দুর্নীতির কোনো মামলা শত শত কোটির নিচে হয় না। সেই সঙ্গে অর্থ পাচার, কানাডা, আমেরিকায় কলোনি স্থাপন—এসবই দিন দিন বেড়েছে। গত বছরগুলোতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে বেড়েছে দুর্নীতি।মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস্তব অবস্থা দেখে যেকোনো প্রকল্পে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই বাড়তি টাকাটা তাদের পকেটে গিয়েছে। এ রকম একটি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন, তাতে কিছু কাজও হয়েছে। তবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করার কাজে বিষয়টি খুবই কাজে দিয়েছে। আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী দুর্নীতিকে স্পিডমানি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আর এবারের বাজেটে কালোটাকাকে সাদা করার এবং মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিকে হালাল করার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গত সোমবার বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তৃতা পড়ছিলাম। তিনি দুর্নীতির কথা বলতে গিয়ে একেবারেই মুক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কীভাবে দুর্নীতি করে!’ তাঁদের সীমাহীন লোভ-লালসা এবং নানা ধরনের কর্মকাণ্ডকে চিহ্নিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং শাস্তি দেবেন বলেছিলেন। সেই সময়ে বেশ কিছু আমলার চাকরিও গিয়েছিল। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরও কঠোর হতে পারতেন। আমাদের দেশে ভালো ও সৎ মানুষে ঐক্য হয় না।
কিন্তু অসৎ মানুষে মানুষে ঐক্য হয়ে যায় নিমেষেই। অনেকেই লিখিত চুক্তি ভঙ্গ করে। কিন্তু অলিখিত ইশারায় দুর্নীতিবাজদের চুক্তি ভঙ্গ হয় না।
একটি ভ্রান্ত স্লোগান দেখেছিলাম। সেটি হলো, ‘দুর্নীতিকে এখনই না বলুন’। দুর্নীতির শিকড় এত গভীরে যে না বলতে গেলেও কয়েক যুগ লেগে যাবে। কোনো কিছুর ভয়ে দুর্নীতি কমবে না। যারা দুর্নীতি করে, তারা অকুতোভয়। কারণ, প্রশাসনের একটা বড় ক্ষমতা তাদের করায়ত্ত এবং একা টাকাটা খায় না, সবাইকে দিয়ে খায়। এটাও কিন্তু একটা বড় ধরনের সুবিধা। বাংলাদেশে এখন একটা কথা চালু হয়েছে, তা হলো—সিন্ডিকেট। অফিস-আদালতে সিন্ডিকেট, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সিন্ডিকেট, ঠিকাদার-প্রকৌশলীদের সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং আরও অসংখ্য সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মধ্যেও ঢুকে গেছে শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সিন্ডিকেট। যেকোনো নিয়োগ, কেনাকাটা ও বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারেও রয়েছে সুশিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকের জোটবদ্ধতা। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কে শোনে, সে কথা! সেদিনও সংবাদ বেরিয়েছে উপসচিব যাচ্ছেন নৌযান চালানো শিখতে। হরহামেশাই দেখা যায়, কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পের যেকোনো বিদেশযাত্রায় সচিবালয়ের সহকারী সচিব থেকে সচিব পর্যন্ত থাকছেন। হয়তো পশুপালন শিখে এলেন বিদেশ থেকে। এসেই শুনলেন তাঁর বদলি হয়ে গেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। বিদেশের প্রশিক্ষণ তার জায়গায় থাকল। তিনি অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে গিয়েও বিদেশযাত্রার সুযোগ খুঁজছেন। অবশ্য সুযোগ মিলেও যায়। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় সিন্ডিকেট খুব কাজ করে। এমনিই আমাদের দেশে সরকারি অফিসে কাজকর্ম বিলম্বিত করার একটা নজির আছে। এর বিপরীতে এল ডিজিটাল পদ্ধতি। কাজ হবে রকেটের গতিতে। লাল ফিতা থাকবে না। তার স্থান দখল করবে কম্পিউটারের মাউস। কিন্তু কম্পিউটার তো সার্ভার ছাড়া চলে না। সার্ভার শ্লথ, কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকেছে। তাই আবার ফাইল কার্যকর হলো। এই প্রশাসনকে কোনো কায়দায়ই বিপদে ফেলা যাবে না।
এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একটা অত্যন্ত মূল্যবান কথা বলেছেন। তিনি নিজে ক্যাডার সার্ভিসের লোক। তিনি বলেছেন, ক্যাডার সার্ভিস না থাকলে কী হয়। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে ক্যাডার সার্ভিস নেই। পৃথিবীর সেই সব দেশে এত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। কর্মচারী তো নেই, গাড়ির চালকও নেই। এক গ্লাস পানি খেতে হলে নিজে ঢেলে খেতে হয়, চা খেতে হলে নিজে বানিয়ে খেতে হয়। এখন আর টাইপরাইটারের বালাই নেই, তাই কম্পিউটারে নিজেকেই টাইপ করতে হয়। আরও বিপদের কথা, একটা সেকশনে মাত্র একজন সরকারি কর্মকর্তা, বাকি সবাই অস্থায়ী। তাঁদের নিয়োগ ১০ মাসের জন্য। এরপরে তাঁর চাকরি দীর্ঘায়িত করা নির্ভর করছে তাঁর দক্ষতার ওপর। তাঁরা পেনশন পান না এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পান না। ফলে সরকারের অর্থের যেমন সাশ্রয় হয়, তেমনি দক্ষতাও প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যায়। আবার যে সরকারি কর্মচারীটি ওখানে বসে আছেন, তিনিও একটা শঙ্কায় ভোগেন—কখন তাঁর অদক্ষতা ও নিয়োগে যথার্থ দক্ষ লোক সংগ্রহে ব্যর্থতা প্রকাশ পায়। তাই তাঁর গদিতে টান পড়ে যেতে পারে, আর এসব তদারকি করার জন্য আছে ওয়াচ ডগ। নানা ধরনের এজেন্সি এসব দেখার কাজ করে। কর্মী নিয়োগে বয়সের বালাই নেই। ৩০ বছর হলেই চাকরি পাওয়ার সময় শেষ হয়ে গেল অথবা ৫৯ বছরে প্রকৃত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর তিনি অবসরে চলে গেলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা দেশের কোনো কাজে লাগল না। মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শী কিছু যুবক সারা বিশ্বকে লিখে নিল একটি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য। চাকরি তাদের আমৃত্যু নিশ্চয়তা দিয়ে দিল। দক্ষতা বাড়ানোরও সেখানে কোনো প্রয়োজন নেই।
সিন্ডিকেটের সদস্য হলেই পদোন্নতি, উপরি পয়সা, বিদেশযাত্রা থেকে শুরু করে কানাডা, আমেরিকায় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ও কলোনির মালিকানা হয়ে যাওয়া। আর দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক দক্ষতা ও সৃজনশীলতা নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। সরকারি অফিসে কাজ করার কোনো সুযোগই আর তার থাকে না। এসব নিয়ে ভাবার কথা রাজনীতিবিদদের এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব বিষয়ে বিভাগ আছে, প্রচুর ডক্টরেট থিসিস তৈরি হয় এবং তা পরে আমলাদের ডাস্টবিনে নিক্ষিপ্ত হয়।
রাজনীতিবিদদের হাতে সময় নেই, ক্ষমতা বাঁচানোর জন্য তাঁরা ২৪ ঘণ্টাই ব্যস্ত এবং পার্টি পর্যায়ে এসব নিয়ে কোনো আলোচনা ও গবেষণার সুযোগও নেই। পত্রিকা খুললেই সরকারি দল এবং বিরোধী দলের একটাই উদ্দেশ্য—ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়া। বিরোধী দল থেকে আজ পর্যন্ত জনপ্রশাসন বা গঠনমূলক কাজের জন্য কোনো প্রস্তাব আসেনি। পরিকল্পনামন্ত্রী সরকারের মধ্যে থাকার পরেও তিনি কিন্তু একটা বড় বিতর্কের সূচনা করেছেন। কিন্তু এসব নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বা নানা ধরনের নির্দেশনা থাকে, সেগুলোই-বা কে পড়বে?
আমলা, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ—সবাই সংস্কৃতিকে নাচ-গান মনে করেন। আমলাতন্ত্রকে নিয়ে, রাজনীতিবিদদের নিয়ে, দুর্নীতি নিয়ে কত উপন্যাস-ছোটগল্প, নাটক, সিনেমা নির্মিত হয়েছে। অথচ কারও বক্তৃতায় এসব বিষয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় না। তবে এরও একটা শেষ আছে, কিন্তু শেষটা নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে হোক, এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। রাজশাহীর ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সঙ্গে সচেতন মানুষও ছিলেন। তবে এই প্রতিক্রিয়া যে বড় আকারে হবে না, এ নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫