Ajker Patrika

যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না

হারুনুর রশিদ, জবি
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২২, ১২: ১৭
যে স্বপ্ন ঘুমাতে দেয় না

আকাশ দাস, তারিফ মাহমুদ চৌধুরী ও তৃণা আক্তার সেতু। তিনজনের বাড়ি তিন জেলায়। তবে তিনজনের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। তিনজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁরা বয়সে তরুণ। তিনজনই প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানার পাত্র নন। চোখের আলো নেই বটে, তাঁরা পথ চলেন মনের জোরে। সব প্রতিকূলতা পায়ে দলে সামনে এগিয়ে চলেন। ইতিমধ্যে তিনজনই এইচএসসি পাস করেছেন। এখন স্বপ্ন দেখছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আর এই স্বপ্ন তাঁদের দিনরাত তাড়া করে, ঘুমাতে দেয় না।

স্বপ্ন পূরণের অংশ হিসেবে তিনজনই গতকাল শনিবার অংশ নিয়েছেন ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়। দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তাঁরা।

এর মধ্যে রাজবাড়ীর তারিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু হিসাববিজ্ঞান বিভাগে পড়ার আগ্রহ নেই তাঁর। তারিফ পড়তে চান ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। তাই তিনি এ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

দৃষ্টিহীনতার পাশাপাশি তারিফ মাহমুদ চৌধুরী জন্ম থেকেই নানা রোগে আক্রান্ত। কিন্তু থেমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। রাজবাড়ীর বেগগাছি মুজাম্মেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও ২০২১ সালে রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারিফের মা আফরোজা খান মজলিশ বলেন, ‘তারিফ জন্ম থেকেই ত্রুটিপূর্ণ। তবে পড়াশোনায় অত্যন্ত মনোযোগী সে। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ অনেক বেশি। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের স্বপ্ন দেখে।’

নরসিংদীর আকাশ দাস মৌলভি কারারচর তোফাজ্জেল হোসেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাজধানীর মিরপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। জানতে চাইলে আকাশ দাস বলেন, ‘আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও এটাকে প্রতিবন্ধকতা মনে করি না। আমার ইচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। আমি উচ্চশিক্ষিত হতে চাই। এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এ জন্যই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি।’

গোপালগঞ্জের তৃণা আক্তার সেতু এসেছেন তাঁর বড় ভাইয়ের সঙ্গে। তৃণা গোপালগঞ্জ লোহাচূড়া আলিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) শেষ করে ভর্তি হন মোকছেদপুর সরকারি কলেজে। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষায় বসছেন। প্রথমবার কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রস্তুত করেছেন নিজেকে।

তৃণা বলেন, ‘আমার ইচ্ছা কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তাই দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তি পরীক্ষায় বসছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহযোগী হিসেবে একজনকে দিয়েছে। এতে আমি খুশি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের উপপরিচালক মিতা শবনম বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, তিনজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা দেবেন। আমরা সে অনুযায়ী তাঁদের জন্য ব্যবস্থা করেছি। তাঁরা চিকিৎসক মিতা শবনমের তত্ত্বাবধানে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের সুবিধার্থে তিনজন সহযোগীও দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত