Ajker Patrika

রাজধানীবাসীর জীবন বদলে যাবে মেট্রোরেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮: ১৪
রাজধানীবাসীর জীবন বদলে যাবে মেট্রোরেলে

রাজধানী ঢাকার মেট্রোরেল দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। বিজয়ের ৫০ বছরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে গর্ব করা যায়, এ প্রকল্প নিঃসন্দেহে তার অন্যতম। কিছুদিনের মধ্যে যাত্রী পরিবহন শুরু করবে মেট্রোরেল। ফলে নগরবাসী পেতে যাচ্ছে উন্নত যোগাযোগসেবা। যার মাধ্যমে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাঁরা বলছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে উড়ালসড়ক, বাসের বিশেষ লেন নির্মাণসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে আধুনিক নগর-পরিকল্পনায় ও গণপরিবহনে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে দেখা হয় মেট্রোরেলকে। যানজট নিরসন, দ্রুত বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য উন্নত বিশ্বে মেট্রোরেল সমাদৃত।

ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ত পথগুলোর একটি হচ্ছে মিরপুর থেকে মতিঝিল। এই পথে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। প্রথমে সেবা সংস্থার লাইন অপসারণ ও বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলে। এরপর পাইলিং, পিলার তৈরিসহ নানা কর্মযজ্ঞ।

ব্যস্ততম সড়কে এই কর্মযজ্ঞ রাজধানীবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। বর্ষায় পানি জমে থাকা, শীতে ধুলার রাজ্য, রাস্তা সরু হওয়ার ফলে তীব্র যানজট, বায়ুদূষণের মতো বিষয়গুলো ঢাকাবাসীকে যন্ত্রণা দিচ্ছে। তবে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর দ্রুতগতির এই সেবা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ঢাকা মেট্রোরেল সম্পূর্ণ উড়াল, যা বাস্তবায়িত হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহর যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, যা দেশের মোট রাজস্বের ১৭ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫ শতাংশের সমান।

ঢাকায় নির্মাণাধীন শহরভিত্তিক রেলব্যবস্থা ঢাকা মেট্রো আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) নামে পরিচিত। ২০১৩ সালে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যার অধীনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে প্রণীত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা অনুসারে মেট্রোরেলের লাইনের সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করা হয়। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬কে নির্বাচন করা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ শুরু হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকার যানজট এবং পরিবেশে মেট্রোরেলের অসামান্য প্রভাব পড়বে। মেট্রোরেল চালু হলে দুই জায়গায় প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। প্রথমত, সময়। উত্তরা থেকে কমলাপুর যেতে এখন ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। মেট্রো হলে সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই ১৭টি স্টেশনের প্রতিটিতে ৩০-৪৫ সেকেন্ড থামবে। এই বেঁচে যাওয়া সময় অন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক কাজে লাগাতে পারবে মানুষ।

দ্বিতীয়ত, তখন শহরে জ্বালানি পোড়ানো অনেক কমে যাবে। এতে ঢাকার পরিবেশের উন্নয়ন হবে। ঢাকার কেবল মেট্রোরেল-৬ প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

কর্মদিবসের ভোরবেলায় ঢাকার মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের অফিস, শিক্ষাঙ্গন, ব্যবসা-বাণিজ্যস্থলে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য যে মানসিক যন্ত্রণা ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করতেন, তা লাঘব হতে যাচ্ছে এই মেট্রোরেলের মাধ্যমে। আবার সঠিক সময়ে বাড়ি ফেরার জন্যও এই সেবাটি মানুষকে একইভাবে উপকৃত করবে।

এ বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেট্রো একটি গণপরিবহনভিত্তিক টেকসই সমাধানের হাতিয়ার। এটা নিঃসন্দেহে গণপরিবহনের ক্ষেত্রে সুখবর। এবং এটা আধুনিক পরিবহনের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম, যা বাস্তবায়ন হচ্ছে। মেট্রো আমি ঘন ঘন চালাতে পারি। দুইটা কম্পার্টমেন্ট চালাতে পারি, ছয়টা কম্পার্টমেন্ট চালাতে পারি, দাঁড় করিয়ে নিয়ে যেতে পারি। হাইস্পিডে চালাতে পারি। লাইন একটাই কিন্তু প্রোডাকটিভিটি অসীম। টেকসই উন্নয়নে দর্শন হলো আমি একবার উন্নয়ন করব কিন্তু ভবিষ্যতের যে চাহিদাটা আসবে সেটাকেও অ্যাড্রেস করতে পারবে, সেই সিস্টেমেই হচ্ছে মেট্রো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত