বিভুরঞ্জন সরকার
শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনই এবার টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তাঁকে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে কবরে শুইয়ে দিয়ে যারা ভেবেছিল, সব শেষ, বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে, তারা ভুল বুঝেছিল। বঙ্গবন্ধু এখনো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়জুড়ে আছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখন প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ টুঙ্গিপাড়া যান, ফুল দেন সমাধিতে, কবরের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকে, যাঁর বুকজুড়েই বাংলাদেশ।
তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অনেক হয়েছে, তাঁর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতিহাসের মহানায়ককে বাদ দিয়ে খলনায়ককে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি; বরং এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে শেখ মুজিবুর রহমান আর বাংলাদেশ অভিন্ন।
আগস্ট মাস এলেই আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পঁচাত্তরের সেই ভয়ংকর দিনটি। পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। প্রথমে তিনি জগন্নাথ হলে গণকবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তারপর টিএসসিতে গিয়ে ভাষণ দেবেন। আশা করা হচ্ছিল তিনি এমন কিছু বলবেন, যা জাতিকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করে তুলবে।
বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিক দিয়ে, অর্থাৎ জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে উত্তরবাড়ির সামনে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে উত্তর গেট, অর্থাৎ শামসুন্নাহার হলের সামনে দিয়ে বেরিয়ে টিএসসিতে যাবেন। যেহেতু তিনি জগন্নাথ হলে প্রথম আসবেন, সেহেতু হলের ছাত্র হিসেবে আমাদের ওপর স্বেচ্ছাসেবকের বাড়তি দায়িত্ব ছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বানানো হয়েছিল বিশেষ ক্যাপ (টুপি) ও স্কার্ফ। জগন্নাথ হলের উত্তরবাড়ির নিচতলায় একটি রুমে এসব টুপি ও স্কার্ফ রাখা ছিল, ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বিতরণের জন্য।
১৪ আগস্ট গভীর রাত পর্যন্ত আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খুব অল্প সময় হয়তো ঘুমিয়েছিলাম। শেষ রাতে ঘুম চোখেই গোলাগুলির শব্দ শুনে মনে নানা আশঙ্কা তৈরি হলেও আমাদের এক ‘দাদা’ এই বলে আশ্বস্ত করেন যে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে কোনো হলের ছাত্ররা হয়তো বাজি ফুটিয়ে উল্লাস করছে।
খুব ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে প্রস্তুত হয়ে সকাল ৬টার মধ্যেই হলের উত্তরবাড়ির ক্যানটিনে নাশতা করতে যাই। নাশতা শেষে ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে পান-সিগারেটের ছোট দোকানের সামনে আসতেই দোকানমালিক জিতেনদা কাঁপতে কাঁপতে ছোট একটি রেডিও আমার সামনে এগিয়ে ধরে বলেন: ‘বাবু, রেডিওতে এসব কী বলছে!’
আমি স্পষ্ট শুনতে পাই রেডিওর ঘোষণা: ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’
আমারও হাত-পা কাঁপতে থাকে। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হয় না। পা অবশ হয়ে আসে। সামনে এগিয়ে কাউকে যে কিছু বলব, তা-ও পারি না। কয়েক মুহূর্ত এ রকম কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকার পর চোখ যায় হলের স্মৃতিসৌধের দিকে। দেখি নিরাপত্তাকর্মীরা কী এক যন্ত্র দিয়ে মাঠ পরীক্ষা করছেন। বঙ্গবন্ধু এই সৌধে ফুল দেবেন বলেই এ ব্যবস্থা।
ধীর পায়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে রেডিওর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তাঁরা ধমক দিয়ে বলে ওঠেন: ‘কী গাঁজাখুরি কথা বলছেন? ওটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানি রেডিওর কাজ।’
আহা, ওই ধারণাটা যদি সত্যি হতো! এর মধ্যেই লক্ষ করি হলের ছাত্ররা একে একে রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। সবার চোখে-মুখেই আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। অথচ রেডিওতে ঘোষণা ক্রমাগত চলতে থাকায় বিহ্বলতাও কাটছে না।
ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ নিশ্চয়ই অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ফেটে পড়বে—সেটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। জগন্নাথ হলে জাতীয় ছাত্রলীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা থাকেন। তাঁরা কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু বলতে পারলেন না। খবরাখবর জানার জন্য তাঁরা দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। সত্যি কি বঙ্গবন্ধু আর বেঁচে নেই? কী হবে এখন তাহলে? সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে চেপে জগন্নাথ হলে আসেন জাতীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা—ইসমত কাদির গামা এবং কাজী আকরাম হোসেন। তাঁরা জানান, ঘটনা সত্য। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসায় ঢুকে ঘাতকেরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ হত্যা করেছে।
এখন আমরা কী করব?তাঁরা বললেন: ‘আপনারা অপেক্ষা করুন। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছি।’ তাঁরা চলে গেলেন। হলের ছাত্ররা সবাই একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়ল। এতক্ষণ যে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব চলছিল, তা-ও দূর হলো। সত্যি সত্যি বঙ্গবন্ধু আর নেই!
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যে উল্টোপথে যাত্রা শুরু করছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ১৫ আগস্ট প্রভাতেই বাংলাদেশ বেতারের নাম পাকিস্তানের স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ বলার মধ্য দিয়ে। সবাই যখন কিছু একটা করার জন্য ছটফট করছে, কিন্তু হতবিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, তখন আমার হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখেই আসি না কী ঘটেছে বা ঘটছে! অসীম দাশগুপ্তকে (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন) বলায় তিনিও আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলেন। আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশে। জগন্নাথ হল থেকে বেরিয়ে দেখতে পাই শামসুন্নাহার হল ও রোকেয়া হলের ভেতরে ছাত্রীরা ভয়ে-আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছে। চিৎকার করে জানতে চাইছে, তারা কী করবে? কিন্তু কে তাদের করণীয় জানাবে? সবাই তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়-বিমূঢ়। বঙ্গবন্ধুকে কেউ মেরে ফেলতে পারে, সেটা যেমন ছিল ভাবনার বাইরে, তেমনি তাঁকে হত্যা করলে কী করণীয়, সেটাও তো কারও ভাবনার মধ্যে ছিল না।
শামসুন্নাহার হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল: ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারই হোক জয়’। তোরণ পার হওয়ার সময় লক্ষ করলাম, কেউ একজন কাঁচা হাতে এক কোনায় লিখে রেখেছে, ‘দেশকে যারা গোষ্ঠীচক্রের হাত থেকে রক্ষা করল তাদের সালাম’।
আমার বিস্ময়ের শেষ থাকে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কে এই নতুন স্লোগান লিখল? সে কি খুব দূরের কেউ? নাকি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত-স্তাবকদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল?
আমি আর অসীম দাশগুপ্ত রোকেয়া হলের দিকে মোড় নেওয়ার আগেই দেখতে পাই, শাহবাগের দিক থেকে একটি ট্যাংক টিএসসির দিকে এগিয়ে আসছে। ট্যাংক আসতে দেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। যে যেদিকে পারে ছুটতে থাকে। আমরা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি অতিক্রমের সময় দেখি ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরাও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের কাছে তাঁদের কিছু করার আছে কি না, জানতে চাইছেন। কিন্তু নির্দেশনা দেওয়ার মতো কাউকেই যে পাওয়া যায়নি।
আমরা নিউমার্কেট হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডির দিকে এগোতে থাকি। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। দু-এক জায়গায় ছোট জটলা। কেউ উচ্চ স্বরে কথাও বলছে না। কলাবাগান মাঠের কাছে গিয়ে দেখি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কালো পোশাক পরা সামরিক লোকজন। আমাদেরও আর সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। রাস্তা ফাঁকা। আমার মনে হয়েছিল, অসংখ্য মানুষ হয়তো ততক্ষণে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে গেছে। কিন্তু তেমন কিছু না দেখে যারপরনাই হতাশ ও ব্যথিত হলাম।
দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ার জন্য দলে দলে মানুষকে মসজিদের দিকে যেতে দেখি। এর আগে ঢাকা শহরে এত নামাজি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। হঠাৎ আমার ভেতর একটি ভাবনা ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ভালো হবে যদি নামাজ শেষে এই মানুষেরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। আমিও ওই মিছিলে শামিল হব। কিন্তু নামাজ শেষে কাউকে মিছিল করতে দেখি না। কারও মুখে স্লোগান নেই। সবাই চুপচাপ। যার যার গন্তব্যে সবাই হাঁটতে থাকে। এ কি অধিক শোকে পাথর, নাকি অন্য কিছু?
মানুষের এই প্রতিক্রিয়া আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বঙ্গবন্ধু এত বড় নেতা। এত তাঁর ভক্ত। অথচ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পর মানুষের এই নীরবতার কোনো ব্যাখ্যা তখন খুঁজে পাইনি।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। আমরা বসে থাকি কলাবাগানের এক গলির মধ্যে। হলে ফিরব কি না, ফিরলে কী হবে, এসব যখন ভাবছি, তখন সঙ্গী অসীমদা প্রস্তাব দেন কলাবাগানে তাঁর এক বোন-ভগ্নীপতির বাসায় যাওয়ার। কিছু না ভেবেই সন্ধ্যার দিকে ওই বাসায় গিয়ে উঠি আমরা দুজন। আমাদের দেখে বোন-ভগ্নীপতি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আমরাও অশ্রু সংবরণ করতে পারি না। এভাবে কতক্ষণ অশ্রুপাতের পর যেন কিছুটা হালকা বোধ করলাম। বঙ্গবন্ধুর জন্য আর কিছু না হোক কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলার সান্ত্বনা নিয়েই কেটে যায় ঘোর দুঃস্বপ্নের ১৫ আগস্ট দিনটি। আমাদের পেটে সারা দিন আর দানাপানি পড়েনি। যে বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম, সেই বাসায়ও সারা দিন চুলায় হাঁড়ি চড়েনি। ঘাতকদের বিরুদ্ধে সেদিন এটাই আমার কাছে একধরনের প্রতিবাদ বলে মনে হয়েছিল।
এত বছর পেরিয়ে এসে ভাবি, আজ বঙ্গবন্ধুর ভক্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মুজিব কোট পরিহিত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু আবার যদি কখনো কোনো খারাপ সময় আসে, যদি আওয়ামী লীগকে বসতে হয় বিরোধী দলের আসনে, তাহলে তখন এই মুজিব-ভক্তরা অবিচল থাকবেন তো?
কয়েকজন উর্দিপরা সামরিক ব্যক্তি হয়তো গুলি করে বঙ্গবন্ধুর বুক ঝাঁঝরা করেছিল, কিন্তু ওই প্রকাশ্য ঘাতকদের পেছনে যারা ছিল, তারা কিন্তু এখনো অধরা। সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, সম্প্রতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে শোনা একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।
তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ারেরে পঁচাত্তরের পর কোনো এক সময় মহিউদ্দিন আহমেদকে এক সাক্ষাতে বলেছিলেন, ‘যিনি তোমাদের একটি রাষ্ট্র দিয়েছেন, তাঁকে তোমরাই হত্যা করেছ!’
এই ‘তোমরা’ মানে নিশ্চয়ই মহিউদ্দিন আহমেদ কিংবা তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধব নন, ‘তোমরা’ মানে এখানে সমগ্র বাঙালি জাতি। সত্যি তো, বস্তুত নিরর্থক, জাতির মর্যাদাবিধ্বংসী, সর্বনেশে এই হত্যার পেছনে মোটা দাগে কি পুরো বাঙালি জাতিই দায়ী নয়?
লেকক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
শোকের মাস আগস্টের প্রথম দিনই এবার টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তাঁকে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে কবরে শুইয়ে দিয়ে যারা ভেবেছিল, সব শেষ, বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে, তারা ভুল বুঝেছিল। বঙ্গবন্ধু এখনো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়জুড়ে আছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখন প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ টুঙ্গিপাড়া যান, ফুল দেন সমাধিতে, কবরের সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁকে, যাঁর বুকজুড়েই বাংলাদেশ।
তাঁকে ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অনেক হয়েছে, তাঁর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ইতিহাসের মহানায়ককে বাদ দিয়ে খলনায়ককে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তা সফল হয়নি; বরং এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে শেখ মুজিবুর রহমান আর বাংলাদেশ অভিন্ন।
আগস্ট মাস এলেই আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে পঁচাত্তরের সেই ভয়ংকর দিনটি। পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। প্রথমে তিনি জগন্নাথ হলে গণকবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তারপর টিএসসিতে গিয়ে ভাষণ দেবেন। আশা করা হচ্ছিল তিনি এমন কিছু বলবেন, যা জাতিকে নতুনভাবে উদ্দীপ্ত করে তুলবে।
বঙ্গবন্ধু কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিক দিয়ে, অর্থাৎ জগন্নাথ হলের দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে উত্তরবাড়ির সামনে নির্মিত স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে উত্তর গেট, অর্থাৎ শামসুন্নাহার হলের সামনে দিয়ে বেরিয়ে টিএসসিতে যাবেন। যেহেতু তিনি জগন্নাথ হলে প্রথম আসবেন, সেহেতু হলের ছাত্র হিসেবে আমাদের ওপর স্বেচ্ছাসেবকের বাড়তি দায়িত্ব ছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বানানো হয়েছিল বিশেষ ক্যাপ (টুপি) ও স্কার্ফ। জগন্নাথ হলের উত্তরবাড়ির নিচতলায় একটি রুমে এসব টুপি ও স্কার্ফ রাখা ছিল, ১৫ আগস্ট প্রত্যুষে স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে বিতরণের জন্য।
১৪ আগস্ট গভীর রাত পর্যন্ত আমরা ব্যস্ত ছিলাম। খুব অল্প সময় হয়তো ঘুমিয়েছিলাম। শেষ রাতে ঘুম চোখেই গোলাগুলির শব্দ শুনে মনে নানা আশঙ্কা তৈরি হলেও আমাদের এক ‘দাদা’ এই বলে আশ্বস্ত করেন যে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে কোনো হলের ছাত্ররা হয়তো বাজি ফুটিয়ে উল্লাস করছে।
খুব ভোরে উঠে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে প্রস্তুত হয়ে সকাল ৬টার মধ্যেই হলের উত্তরবাড়ির ক্যানটিনে নাশতা করতে যাই। নাশতা শেষে ক্যানটিন থেকে বেরিয়ে পান-সিগারেটের ছোট দোকানের সামনে আসতেই দোকানমালিক জিতেনদা কাঁপতে কাঁপতে ছোট একটি রেডিও আমার সামনে এগিয়ে ধরে বলেন: ‘বাবু, রেডিওতে এসব কী বলছে!’
আমি স্পষ্ট শুনতে পাই রেডিওর ঘোষণা: ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে।’
আমারও হাত-পা কাঁপতে থাকে। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। মুখ দিয়ে কোনো কথাও বের হয় না। পা অবশ হয়ে আসে। সামনে এগিয়ে কাউকে যে কিছু বলব, তা-ও পারি না। কয়েক মুহূর্ত এ রকম কিংকর্তব্যবিমূঢ় থাকার পর চোখ যায় হলের স্মৃতিসৌধের দিকে। দেখি নিরাপত্তাকর্মীরা কী এক যন্ত্র দিয়ে মাঠ পরীক্ষা করছেন। বঙ্গবন্ধু এই সৌধে ফুল দেবেন বলেই এ ব্যবস্থা।
ধীর পায়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে রেডিওর ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে, তাঁরা ধমক দিয়ে বলে ওঠেন: ‘কী গাঁজাখুরি কথা বলছেন? ওটা নিশ্চয়ই পাকিস্তানি রেডিওর কাজ।’
আহা, ওই ধারণাটা যদি সত্যি হতো! এর মধ্যেই লক্ষ করি হলের ছাত্ররা একে একে রুম থেকে বেরিয়ে আসছে। সবার চোখে-মুখেই আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। অথচ রেডিওতে ঘোষণা ক্রমাগত চলতে থাকায় বিহ্বলতাও কাটছে না।
ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশ নিশ্চয়ই অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ফেটে পড়বে—সেটাই ছিল আমার প্রত্যাশা। জগন্নাথ হলে জাতীয় ছাত্রলীগের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা থাকেন। তাঁরা কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু বলতে পারলেন না। খবরাখবর জানার জন্য তাঁরা দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ভীষণ উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি। সত্যি কি বঙ্গবন্ধু আর বেঁচে নেই? কী হবে এখন তাহলে? সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে চেপে জগন্নাথ হলে আসেন জাতীয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা—ইসমত কাদির গামা এবং কাজী আকরাম হোসেন। তাঁরা জানান, ঘটনা সত্য। বঙ্গবন্ধুকে তাঁর বাসায় ঢুকে ঘাতকেরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ হত্যা করেছে।
এখন আমরা কী করব?তাঁরা বললেন: ‘আপনারা অপেক্ষা করুন। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছি।’ তাঁরা চলে গেলেন। হলের ছাত্ররা সবাই একেবারে বিমর্ষ হয়ে পড়ল। এতক্ষণ যে আশা-নিরাশার দ্বন্দ্ব চলছিল, তা-ও দূর হলো। সত্যি সত্যি বঙ্গবন্ধু আর নেই!
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা যে উল্টোপথে যাত্রা শুরু করছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ১৫ আগস্ট প্রভাতেই বাংলাদেশ বেতারের নাম পাকিস্তানের স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ বলার মধ্য দিয়ে। সবাই যখন কিছু একটা করার জন্য ছটফট করছে, কিন্তু হতবিহ্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না, তখন আমার হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখেই আসি না কী ঘটেছে বা ঘটছে! অসীম দাশগুপ্তকে (পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হয়েছিলেন) বলায় তিনিও আমার সঙ্গে যেতে রাজি হলেন। আমরা দুজন বেরিয়ে পড়লাম ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের উদ্দেশে। জগন্নাথ হল থেকে বেরিয়ে দেখতে পাই শামসুন্নাহার হল ও রোকেয়া হলের ভেতরে ছাত্রীরা ভয়ে-আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ কান্নাকাটিও করছে। চিৎকার করে জানতে চাইছে, তারা কী করবে? কিন্তু কে তাদের করণীয় জানাবে? সবাই তো ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়-বিমূঢ়। বঙ্গবন্ধুকে কেউ মেরে ফেলতে পারে, সেটা যেমন ছিল ভাবনার বাইরে, তেমনি তাঁকে হত্যা করলে কী করণীয়, সেটাও তো কারও ভাবনার মধ্যে ছিল না।
শামসুন্নাহার হলের সামনে বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল: ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারই হোক জয়’। তোরণ পার হওয়ার সময় লক্ষ করলাম, কেউ একজন কাঁচা হাতে এক কোনায় লিখে রেখেছে, ‘দেশকে যারা গোষ্ঠীচক্রের হাত থেকে রক্ষা করল তাদের সালাম’।
আমার বিস্ময়ের শেষ থাকে না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কে এই নতুন স্লোগান লিখল? সে কি খুব দূরের কেউ? নাকি বঙ্গবন্ধুর ভক্ত-স্তাবকদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল?
আমি আর অসীম দাশগুপ্ত রোকেয়া হলের দিকে মোড় নেওয়ার আগেই দেখতে পাই, শাহবাগের দিক থেকে একটি ট্যাংক টিএসসির দিকে এগিয়ে আসছে। ট্যাংক আসতে দেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। যে যেদিকে পারে ছুটতে থাকে। আমরা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি অতিক্রমের সময় দেখি ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরাও ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাত্রদের কাছে তাঁদের কিছু করার আছে কি না, জানতে চাইছেন। কিন্তু নির্দেশনা দেওয়ার মতো কাউকেই যে পাওয়া যায়নি।
আমরা নিউমার্কেট হয়ে হাঁটতে হাঁটতে ধানমন্ডির দিকে এগোতে থাকি। রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। দু-এক জায়গায় ছোট জটলা। কেউ উচ্চ স্বরে কথাও বলছে না। কলাবাগান মাঠের কাছে গিয়ে দেখি রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কালো পোশাক পরা সামরিক লোকজন। আমাদেরও আর সামনে যেতে দেওয়া হয়নি। রাস্তা ফাঁকা। আমার মনে হয়েছিল, অসংখ্য মানুষ হয়তো ততক্ষণে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে ছুটে গেছে। কিন্তু তেমন কিছু না দেখে যারপরনাই হতাশ ও ব্যথিত হলাম।
দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাজ পড়ার জন্য দলে দলে মানুষকে মসজিদের দিকে যেতে দেখি। এর আগে ঢাকা শহরে এত নামাজি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। হঠাৎ আমার ভেতর একটি ভাবনা ঝিলিক দিয়ে ওঠে। ভালো হবে যদি নামাজ শেষে এই মানুষেরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। আমিও ওই মিছিলে শামিল হব। কিন্তু নামাজ শেষে কাউকে মিছিল করতে দেখি না। কারও মুখে স্লোগান নেই। সবাই চুপচাপ। যার যার গন্তব্যে সবাই হাঁটতে থাকে। এ কি অধিক শোকে পাথর, নাকি অন্য কিছু?
মানুষের এই প্রতিক্রিয়া আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। বঙ্গবন্ধু এত বড় নেতা। এত তাঁর ভক্ত। অথচ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যার পর মানুষের এই নীরবতার কোনো ব্যাখ্যা তখন খুঁজে পাইনি।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। আমরা বসে থাকি কলাবাগানের এক গলির মধ্যে। হলে ফিরব কি না, ফিরলে কী হবে, এসব যখন ভাবছি, তখন সঙ্গী অসীমদা প্রস্তাব দেন কলাবাগানে তাঁর এক বোন-ভগ্নীপতির বাসায় যাওয়ার। কিছু না ভেবেই সন্ধ্যার দিকে ওই বাসায় গিয়ে উঠি আমরা দুজন। আমাদের দেখে বোন-ভগ্নীপতি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। আমরাও অশ্রু সংবরণ করতে পারি না। এভাবে কতক্ষণ অশ্রুপাতের পর যেন কিছুটা হালকা বোধ করলাম। বঙ্গবন্ধুর জন্য আর কিছু না হোক কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলার সান্ত্বনা নিয়েই কেটে যায় ঘোর দুঃস্বপ্নের ১৫ আগস্ট দিনটি। আমাদের পেটে সারা দিন আর দানাপানি পড়েনি। যে বাসায় গিয়ে উঠেছিলাম, সেই বাসায়ও সারা দিন চুলায় হাঁড়ি চড়েনি। ঘাতকদের বিরুদ্ধে সেদিন এটাই আমার কাছে একধরনের প্রতিবাদ বলে মনে হয়েছিল।
এত বছর পেরিয়ে এসে ভাবি, আজ বঙ্গবন্ধুর ভক্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বেড়েছে মুজিব কোট পরিহিত মানুষের সংখ্যা। কিন্তু আবার যদি কখনো কোনো খারাপ সময় আসে, যদি আওয়ামী লীগকে বসতে হয় বিরোধী দলের আসনে, তাহলে তখন এই মুজিব-ভক্তরা অবিচল থাকবেন তো?
কয়েকজন উর্দিপরা সামরিক ব্যক্তি হয়তো গুলি করে বঙ্গবন্ধুর বুক ঝাঁঝরা করেছিল, কিন্তু ওই প্রকাশ্য ঘাতকদের পেছনে যারা ছিল, তারা কিন্তু এখনো অধরা। সাবেক পররাষ্ট্রসচিব, সম্প্রতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদের কাছে শোনা একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে।
তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ারেরে পঁচাত্তরের পর কোনো এক সময় মহিউদ্দিন আহমেদকে এক সাক্ষাতে বলেছিলেন, ‘যিনি তোমাদের একটি রাষ্ট্র দিয়েছেন, তাঁকে তোমরাই হত্যা করেছ!’
এই ‘তোমরা’ মানে নিশ্চয়ই মহিউদ্দিন আহমেদ কিংবা তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধব নন, ‘তোমরা’ মানে এখানে সমগ্র বাঙালি জাতি। সত্যি তো, বস্তুত নিরর্থক, জাতির মর্যাদাবিধ্বংসী, সর্বনেশে এই হত্যার পেছনে মোটা দাগে কি পুরো বাঙালি জাতিই দায়ী নয়?
লেকক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫