Ajker Patrika

তেল-লোহার গরম অর্থনীতিতে

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৪৬
তেল-লোহার গরম অর্থনীতিতে

করোনাভাইরাসের মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে আবার চাঙা হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রায় সব খাতের কর্মযজ্ঞ। শিল্প, সেবা, উৎপাদন—সব খাতে এখন ব্যস্ততা। রপ্তানিতে বিপুল সাড়া। এর প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। ব্যাপক হারে আসছে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ। বিনিয়োগও বাড়ছে। এদিকে জ্বালানি তেল, সোনা ও লোহার দাম এবং মার্কিন ডলারের মূল্যমানের ঊর্ধ্বগতি অর্থনীতিতে বিপরীত ধাক্কা দিয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থায়। এ অবস্থায় দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত জুনে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধারের হার ছিল ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২১ শতাংশ বলেছে, পুনরুদ্ধার শক্তিশালী হচ্ছে। পুনরুদ্ধার মধ্যমমানের হচ্ছে বলে মত দিয়েছে ৫২ শতাংশ। আর দুর্বল হচ্ছে বলে জানিয়েছে ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

তবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের গতি কমিয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাঁরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। ফলে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পিছিয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামী আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি দুই ধরনের নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। একটি মূল্যস্ফীতি, অন্যটি বেকারত্ব। এমনিতেই করোনার কারণে বৈশ্বিক মন্দা চলছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পিছিয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার প্রকোপ কমে আসায় আমদানি যতটা বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে আমদানি খরচ। অনেক ক্ষেত্রে তা প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। এদিকে ডলারের মূল্যমানের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সব মিলিয়ে চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। একইভাবে বৈশ্বিক চাহিদা বাড়ায় সোনার দামও বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। সম্প্রতি দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি।

এদিকে এখন নির্মাণকাজের ভরা মৌসুম। বছরের এ সময়টায় রডের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই দামও বেড়ে যায়। গত বছর ঠিক এ সময়ই রডের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। এবারও বেড়েছে। মূলত বিশ্ববাজারে রডের কাঁচামালের দাম বাড়ার সঙ্গে উৎপাদকেরা সমানতালে দাম বাড়িয়ে চলেছেন। খুচরা বাজারে এখন শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন ৭৭ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে ৬-৭ হাজার টাকা বেশি। গত বছরের এই সময়ে কোম্পানিভেদে প্রতি টন রড বিক্রি হয়েছিল ৫২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫৫ হাজার ৫০০ টাকায়। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রডের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।

এ ব্যাপারে কদমতলী স্টিল মিলস লিমিটেডের (কেএসএম) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে বিশ্ববাজারে বাড়তি চাহিদার কারণে আমাদের রডের কাঁচামাল বেশি দামে আনতে হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাজারে দাম বেড়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’ তিনি বলেন, কাঁচামালের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় আমদানিতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। সব মিলিয়েই দামে প্রভাব পড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত