Ajker Patrika

ভিন্নধর্মী এক টিভি রিয়েলিটি শো

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ০৯
ভিন্নধর্মী এক টিভি রিয়েলিটি শো

শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে আলোচিত রিয়েলিটি শো। সনি টিভির এই রিয়েলিটি শোতে উদ্যোক্তা হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীরা তাঁদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাতজন বিচারক বা শার্কের সামনে বলেছেন। যে পরিকল্পনা শার্কদের পছন্দ হয়, সেখানে শার্করা করেছেন বিনিয়োগ। সাতজন শার্কের প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অথবা অন্যতম কর্ণধার। সদ্য শেষ হওয়া এই রিয়েলিটি শো প্রথম সিজনে ৩৫ পর্ব হয়েছে। ৬৭ জন উদ্যোক্তা বিনিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৪২ কোটি রুপি। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ৪ ফেব্রুয়ারি। খুব শিগগিরই ফিরবে নতুন সিজন। শেষ হলেও শোর আইডিয়া ও বিভিন্ন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

শার্কদের পরিচয়
বিনীতা সিং: সুগার কসমেটিকসের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা বিনীতা সিং দিল্লি পাবলিক স্কুল থেকেই পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি আইআইটি মাদ্রাজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিটেক এবং আইআইএম আহমেদাবাদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

অনুপম মিত্তাল: সাদি ডট কমের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা অনুপম মিত্তাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজ থেকে অপারেশনস এবং স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্টে এমবিএ করেছেন।

নমিতা থাপার: এমকিউর ফার্মাসিটিক্যালের কার্যনির্বাহী পরিচালক। তিনি আইসিএআই থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন এবং পরে তিনি ডিউকের ফুকা স্কুল অব বিজনেস থেকে এমবিএ পাস করেছেন।

গজল আলাঘ: কসমেটিক ব্র্যান্ড মামাআর্থ-এর প্রধান এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা গজল আলাঘ। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং পরে নিউইয়র্ক আকাডেমি অব আর্টসেও পড়াশোনা করেছেন তিনি।

পীযুষ বনসাল: লেন্সকার্ট-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও পীযুষ বনসাল। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। এ ছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, বেঙ্গালুরু থেকে এন্টারপ্রেনারশিপ ডিগ্রিও অর্জন করেছেন।

আশনীর গ্রোভার: ভারতপে-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা আশনীর। দিল্লি থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি টেক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরে তিনি আইআইএম আহমেদাবাদ থেকে এমবিএ করেন।

আমান গুপ্তা: গ্যাজেট ব্র্যান্ড বোট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আমান গুপ্তা। ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। আমান সিএ পাস করেছেন এবং ফাইন্যান্স ও স্ট্র্যাটেজিতে এমবিএ করেছেন।

প্রাপ্তি ও প্রতিবন্ধকতা
সাতজন শার্কের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নমিতা থাপার। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এই শার্ক ট্যাংকের প্রথম সিজন চলার সময়েই তিনি অন্তত ২৫টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তাঁর বিনিয়োগের মোট পরিমাণ হলো প্রায় ১০ কোটি রুপি। এই বিনিয়োগের প্রতিটিই তিনি করেছেন শার্ক ট্যাংকের প্রতিযোগীদের বলা ব্যবসায়িক পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে। তাঁর মতে প্রতিযোগিতা চলাকালীন প্রায় ১৭০টি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তিনি গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করেছেন। যার মধ্যে অন্তত ২৫টি ছিল খুবই শক্তিশালী আইডিয়া। এর মধ্যে ৭ কোটি টাকা তিনি বিনিয়োগ করেছেন প্রতিযোগিতা চলার সময়, বাকি ৩ কোটি বিনিয়োগ করেছেন প্রতিযোগিতা শেষে।

কিন্তু, তারপরও বিশিষ্ট এই শিল্পপতির আফসোস যায়নি। কেন আফসোস? নমিতা বলেন, ‘খুব আফসোস হয় যখন আইডিয়া পেয়েও বিনিয়োগ বাড়াতে পারিনি।’ তাঁর মতে, ‘ভারতের ব্যবসায়িক জগতের ভবিষ্যতের নেতৃস্থানীয় হিসেবে আমাদের উচিত আরও বেশি করে বিনিয়োগ করা। শুধু যাঁরা এই শোর বিজয়ী হচ্ছেন এবং বড় মুনাফার সম্ভাবনা তৈরি করছেন, তাঁদেরই নয়, পাশাপাশি সেই সব ব্যবসায়িক পরিকল্পনায়ও আমাদের বিনিয়োগ করা উচিত, যেগুলোর প্রবল সম্ভাবনা আছে এবং যা বাস্তব দুনিয়ার সমস্যা সমাধানে বিশেষ উদ্যোগ নেবে।’

কেন এই শো জরুরি
বর্তমানে আমাদের চারপাশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে অনেকটাই। এর মধ্যে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। নিজেদের মতো করে উপার্জনের জন্য অনেকে ব্যবসা শুরু করেছেন। আর তাঁদের মাঝে খুব কম সময়ের মধ্যেই এই বিজনেস রিয়েলিটি শো ‘শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়া’ ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই শো থেকে শেখার রয়েছে অনেক কিছুই। ব্যবসার ঝুঁকি কীভাবে বোঝা যায়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী হতে পারে। বিশেষ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা ভীষণভাবে মাথায় রাখা প্রয়োজন। কারণ যে পরিমাণ অর্থ কোনো এক ব্যবসায়ী তাঁর নিজের ব্যবসায় ইনভেস্ট করছেন, তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ নিতে পারে। এটি বিশেষ করে প্রতিযোগিতার কথা বলে।

এই বিজনেস রিয়েলিটি শোতে প্রায়ই ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করা হয় তাঁরা একাই নিজেদের ব্যবসার মালিক কি না! অর্থাৎ ব্যবসাটা তাঁরা একাই চালান কি না! এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার বাজারে বাকিদের টপকে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। এ ছাড়া নেট লাভ, গ্রস প্রফিট, সেলস, হোয়াইটলেবেলের মতো বিষয়গুলো বোধগম্য করে নেওয়া ভীষণভাবে প্রয়োজন। তাতে ব্যবসাতে সুবিধা হয়। কেউ যদি সব দিক থেকে প্রস্তুত থাকেন তাহলে শার্ক ট্যাংক ইন্ডিয়ার তরফ থেকে ইনভেস্টমেন্ট পেতে পারেন।

এই রিয়েলিটি শোতে বিচারকেরা শুধু কোম্পানি কিংবা মালিকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন না। কোম্পানির বাকি সব কর্মচারী এবং কোম্পানির অন্যান্য বিভাগ নিয়েও আলোচনা করেন। যদি কোনো কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকে কিংবা টিমওয়ার্ক না থাকে, তাহলে বুদ্ধিমান ইনভেস্টর এসে সেই কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত