তাজুল মোহাম্মদ
১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ছিল: ‘সাঁকো দিলাম-স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ হ্যাঁ, ছয় দফার মাধ্যমেই বাংলার জমিনে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।
এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ঘরে বসে থাকেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বের হয়েছিলেন ঝটিকা সফরে। ৩৫ দিন অবধি একটানা দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি চষে বেড়ান। বক্তৃতা করেছেন সে সময় ৩২টি বড় জনসভায়।
১৯৬৬ সালের ৮ মে। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় শ্রমিক-জনতার বিরাট সমাবেশ। উপলক্ষ মে দিবস। প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শ্রমিকেরা সেখানে তাঁকে পাটের মালা দিয়ে বরণ করেছিলেন। রাত ১টায় ফেরেন ঢাকা। বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই পুলিশ। দেশরক্ষা আইনের ৩২/১ ধারাবলে আটক হলেন তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা। মামলা, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৩ মে সারা দেশে পালিত হয় প্রতিবাদ দিবস। শ্রমিকেরা পালন করেন হরতাল। আর ৭ জুন আহ্বান করা হয় দেশব্যাপী হরতাল। ছয় দফা আদায় এবং বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে হরতাল। উত্তাল সারা বাংলা।
আওয়ামী লীগ আহূত হরতাল বানচাল করতে সরকার তখন মরিয়া হয়ে লেলিয়ে দিয়েছিল পুলিশ ও ইপিআর। ঢাকা, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে পুলিশ ও ইপিআর। নিহত হয়েছেন অসংখ্য লোক। যদিও সরকার ১১ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মনু মিয়া। তাঁর পুরো নাম ফখরুল দৌলা। ছিলেন পেপসি কোলার গাড়িচালক। বাস করতেন টঙ্গী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি সিলেট। জন্ম তাঁর বড়দেশ গ্রামে, বিয়ানীবাজার উপজেলায়। বর্তমানে তাঁর পরিবার-পরিজনের বসবাস নয়াগ্রামে। পিতা মনোহর আলী খান, মা রমজান বিবি, সৎমা আলিপজান বিবি। সহোদর: ফখরুল মৌলা খান দুদু মিয়া, ফখরুল আগুলা খান তোতা মিয়া, সোনা মিয়া খান। সৎ ভাই-বোন: ফখরুল হাসান খান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, ইকবাল হোসেন খান, নাজমা বেগম, আছিয়া বেগম, ছালেহা বেগম। মনু মিয়ার একমাত্র কন্যাসন্তান পুতুল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
মনোহর আলী খানের ছিল অনটনের সংসার। পরিবারও বিরাট। যে কারণে প্রাথমিক স্তরের পরে মনু মিয়ার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। যোগ দেন গৃহস্থালি কাজে। তা করতে করতে চলে যায় ২০ বছর। সে সময় গেলেন ঢাকায়। গাড়ি চালানোর বিদ্যা অর্জন করে যোগ দেন পেপসি কোলায়। পেশা তাঁর গাড়ি চালানো। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলন যখন শুরু হয়, মনু মিয়া তখন পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত। রাজপথের আন্দোলন আগুন ধরিয়ে দেয় তাঁর শরীরে। সম্পৃক্ত হয়ে যান আন্দোলনে। শুনতেন রাজনৈতিক এবং শ্রমিকনেতাদের অনলবর্ষী বক্তৃতা। বাংলার মানুষের শ্রমের ফসল পাকিস্তানিরা ভোগ করার কাহিনি দ্রোহের সৃষ্টি করে অন্তরে। কান ভরে শুনতেন সেই সব বক্তৃতা। একসময় নিজেও নেমে আসেন রাজপথে। প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। অবশেষে নিজের জীবনও বিলিয়ে দিতে হয় তাঁকে।
হরতালের দিন। সময় অনুমান করে বলেছেন অনেকে—বেলা ১১টা হতে পারে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা কারখানার চাকা বন্ধ করে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। মিছিল নিয়ে চলে যান তাঁরা রেলের আউটার সিগন্যালের কাছাকাছি। উদ্দেশ্য রেললাইন অবরোধ করা। ট্রেন চলছিল পুলিশ প্রহরায়। তাতেও সম্ভব হচ্ছে না অবরোধ ভাঙা। একপর্যায়ে ট্রেনের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে গুলি ঝরায় পুলিশ। প্রথমেই টার্গেট হলেন মনু মিয়া। বুলেট বিদ্ধ হয় সরাসরি পাঁজরে। শেষনিশ্বাস ফেলার আগে পাশে থাকা ছাত্রলীগের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীকে বলেছিলেন মনু মিয়া, ‘আমাকে ধরতে অইব না। আপনি কইয়া যান, সংগ্রামের কথা কইন।’ তারপরই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শহীদ মনু মিয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তাজুল মোহাম্মদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, লেখক
১৯৬৬ সালে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ছিল: ‘সাঁকো দিলাম-স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’ হ্যাঁ, ছয় দফার মাধ্যমেই বাংলার জমিনে স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।
এই কর্মসূচি ঘোষণা করে ঘরে বসে থাকেননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বের হয়েছিলেন ঝটিকা সফরে। ৩৫ দিন অবধি একটানা দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি চষে বেড়ান। বক্তৃতা করেছেন সে সময় ৩২টি বড় জনসভায়।
১৯৬৬ সালের ৮ মে। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় শ্রমিক-জনতার বিরাট সমাবেশ। উপলক্ষ মে দিবস। প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শ্রমিকেরা সেখানে তাঁকে পাটের মালা দিয়ে বরণ করেছিলেন। রাত ১টায় ফেরেন ঢাকা। বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই পুলিশ। দেশরক্ষা আইনের ৩২/১ ধারাবলে আটক হলেন তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা। মামলা, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৩ মে সারা দেশে পালিত হয় প্রতিবাদ দিবস। শ্রমিকেরা পালন করেন হরতাল। আর ৭ জুন আহ্বান করা হয় দেশব্যাপী হরতাল। ছয় দফা আদায় এবং বঙ্গবন্ধুসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে হরতাল। উত্তাল সারা বাংলা।
আওয়ামী লীগ আহূত হরতাল বানচাল করতে সরকার তখন মরিয়া হয়ে লেলিয়ে দিয়েছিল পুলিশ ও ইপিআর। ঢাকা, টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে পুলিশ ও ইপিআর। নিহত হয়েছেন অসংখ্য লোক। যদিও সরকার ১১ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মনু মিয়া। তাঁর পুরো নাম ফখরুল দৌলা। ছিলেন পেপসি কোলার গাড়িচালক। বাস করতেন টঙ্গী এলাকায়। গ্রামের বাড়ি সিলেট। জন্ম তাঁর বড়দেশ গ্রামে, বিয়ানীবাজার উপজেলায়। বর্তমানে তাঁর পরিবার-পরিজনের বসবাস নয়াগ্রামে। পিতা মনোহর আলী খান, মা রমজান বিবি, সৎমা আলিপজান বিবি। সহোদর: ফখরুল মৌলা খান দুদু মিয়া, ফখরুল আগুলা খান তোতা মিয়া, সোনা মিয়া খান। সৎ ভাই-বোন: ফখরুল হাসান খান যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, ইকবাল হোসেন খান, নাজমা বেগম, আছিয়া বেগম, ছালেহা বেগম। মনু মিয়ার একমাত্র কন্যাসন্তান পুতুল যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
মনোহর আলী খানের ছিল অনটনের সংসার। পরিবারও বিরাট। যে কারণে প্রাথমিক স্তরের পরে মনু মিয়ার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। যোগ দেন গৃহস্থালি কাজে। তা করতে করতে চলে যায় ২০ বছর। সে সময় গেলেন ঢাকায়। গাড়ি চালানোর বিদ্যা অর্জন করে যোগ দেন পেপসি কোলায়। পেশা তাঁর গাড়ি চালানো। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলন যখন শুরু হয়, মনু মিয়া তখন পূর্ণ যৌবনপ্রাপ্ত। রাজপথের আন্দোলন আগুন ধরিয়ে দেয় তাঁর শরীরে। সম্পৃক্ত হয়ে যান আন্দোলনে। শুনতেন রাজনৈতিক এবং শ্রমিকনেতাদের অনলবর্ষী বক্তৃতা। বাংলার মানুষের শ্রমের ফসল পাকিস্তানিরা ভোগ করার কাহিনি দ্রোহের সৃষ্টি করে অন্তরে। কান ভরে শুনতেন সেই সব বক্তৃতা। একসময় নিজেও নেমে আসেন রাজপথে। প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। অবশেষে নিজের জীবনও বিলিয়ে দিতে হয় তাঁকে।
হরতালের দিন। সময় অনুমান করে বলেছেন অনেকে—বেলা ১১টা হতে পারে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকেরা কারখানার চাকা বন্ধ করে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। মিছিল নিয়ে চলে যান তাঁরা রেলের আউটার সিগন্যালের কাছাকাছি। উদ্দেশ্য রেললাইন অবরোধ করা। ট্রেন চলছিল পুলিশ প্রহরায়। তাতেও সম্ভব হচ্ছে না অবরোধ ভাঙা। একপর্যায়ে ট্রেনের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে গুলি ঝরায় পুলিশ। প্রথমেই টার্গেট হলেন মনু মিয়া। বুলেট বিদ্ধ হয় সরাসরি পাঁজরে। শেষনিশ্বাস ফেলার আগে পাশে থাকা ছাত্রলীগের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীকে বলেছিলেন মনু মিয়া, ‘আমাকে ধরতে অইব না। আপনি কইয়া যান, সংগ্রামের কথা কইন।’ তারপরই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
শহীদ মনু মিয়ার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
তাজুল মোহাম্মদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, লেখক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫