Ajker Patrika

৩৮ আসামি কারাগারে

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ১৩
৩৮ আসামি কারাগারে

পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের মামলায় ৩৮ আসামিকে গতকাল মঙ্গলবার কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর ঘটনাটি পরিকল্পিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সাংসদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪২ আসামির মধ্যে ৩৮ জনকে গতকাল কারাগারে পাঠায় আদালত। বাকি তিন আসামি কিশোর হওয়ায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে এই রায় দেন পীরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী।

আদালত পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আসামিদের সকাল ৭টায় আদালতে আনা হয়। বিকেলে শুনানি শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

গত রোববার রাতে পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় করিমপুর কসবা গ্রামের উত্তরপাড়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাদী হয়ে এই মামলা করেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন।

এদিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল দুপুরে উত্তরপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, হামলার সময় অনেক লোককে তাঁরা চিনতে পারেননি। এদের অনেকেই বহিরাগত ছিলেন। তাঁদের হাতে পেট্রলজাতীয় পদার্থ ছিল। অবশ্যই এটা পরিকল্পিত ঘটনা।’

স্পিকার জানান, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের ধরা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

শিরীন শারমিন বলেন, ‘পীরগঞ্জের মানুষ শান্তিপ্রিয়। এবার পূজাতেও পীরগঞ্জের ৯৮টি মণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদ্‌যাপন হয়েছে। সেখানে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, উপজেলা প্রশাসন ও দলের সহায়তা ছিল। ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় পূজার সময়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু পূজা শেষে হঠাৎ এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা কীভাবে ঘটল, এটার গোড়ায় আমাদের যেতে হবে।’

স্থানীয় সাংসদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করছে। আমরা ওই সময়ে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব ও ফায়ার সার্ভিস পাঠিয়েছি। তাদের চেষ্টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তারপরও ২৮টি বাড়ি পুড়ে গেছে। কিছু গবাদিপশু পুড়ে গেছে এবং অনেকের বাড়িঘরের সমস্ত আসবাবপত্র অগ্নিসংযোগে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক, নাশকতামূলক যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। যাঁরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

স্পিকার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। চাল, ডাল ও একটি করে শাড়িসহ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি নির্মাণ, অর্থ প্রদান এবং ব্যবসায়ীদের পুনরায় ব্যবসা করতে সহযোগিতা ও মন্দির পুনর্নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছেন।

এ সময় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্পিকার এর আগে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।

উল্লেখ, গত রোববার রাতে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত