Ajker Patrika

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৩১
অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

পীরগঞ্জে সরকারিভাবে নেই কোনো বালুমহাল। কিন্তু উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বালু তোলার ফলে তিন ইউনিয়নের ১১ গ্রামে চলছে নদীভাঙন। দীর্ঘদিন কর্মযজ্ঞ চললেও প্রশাসন প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সরেজমিনে করতোয়ার জয়ন্তিপুর ঘাটে দেখা যায়, ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যা স্তূপ করে রাখা হয়েছে নদীর পাড়ে। সেগুলো আবার ১০ চাকার ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে।

জয়ন্তিপুরে নবনির্মিত সেতু ও কাচদহ ওয়াজেদ মিয়া সেতুর পাশসহ গোটা উপজেলার প্রায় ৪০টি পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

বালু তোলার কারণে চতরা ইউনিয়নের কুমারপুর, মাটিয়ালপাড়া, কুয়াতপুর ও পার কুয়াতপুর, আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুরিয়া, তাঁতারপুর ও শিমুলবাড়ী এবং টুকুরিয়া ইউনিয়নের জয়ন্তিপুর, বিছনা, পার বোয়ালমারী ও সুজারকুটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকাগুলোর প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা নিজেদের জমি, বাড়িঘর ও রাস্তা রক্ষায় বারবার বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনের কাছে অভিযোগও দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের উল্টো বালু ব্যবসায়ীদের হুমকি-ধমকি এমনকি মারধরেরও শিকার হতে হয়েছে।

আবদুর রহমান নামে একজন বলেন, ‘করতোয়া নদীর জয়ন্তিপুর ঘাটে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন প্রভাবশালীরা। প্রশাসনকে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়।’

বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমার ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। আমার মতো শতাধিক মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জয়ন্তিপুর ঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন কয়েকজন প্রভাবশালী সরকারদলীয় নেতা। তাঁদের মধ্যে আছেন আরিফুল ইসলাম আরিফ, উজ্জ্বল মিয়া, মিলনপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা রব্বানী, রবিউল ইসলাম রবি ও চতরা ইউনিয়নের কুয়াতপুর মাটিয়াল পাড়ায় নুর মোহাম্মদ গোল্লা। আর কাচদহ ওয়াজেদ মিয়া সেতুর পাশে রবিউল ইসলাম রবি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন।

কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, জয়ন্তিপুর ঘাট থেকে ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে ভেঙে যাচ্ছে স্থানীয় রাস্তাগুলো। ফাটল দেখা দিয়েছে পীরগঞ্জ-নবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ থাকা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলন করিনি। গত বছর বালু উত্তোলন করা ছিল, সেগুলো বিক্রি করেছি।’

এভাবে বালু সংগ্রহের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে আরিফুল বলেন, ‘বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি নেই। আমরা বালুগুলো অপসারণ করেছি মাত্র। আমি আর অবৈধ বালু ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই।’

এ বিষয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরোদা রানী রায় জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তাঁরা নদীর পাড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত