Ajker Patrika

খুলনা মহানগরে আধিপত্য ও মাদকের বিরোধে একের পর এক খুনোখুনি

কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনা মহানগরে আধিপত্য ও মাদকের বিরোধে একের পর এক খুনোখুনি

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীতে মাদক কারবারের সঙ্গে কয়েকটি গ্রুপ সম্পৃক্ত। এর মধ্যে মহানগরীর বড় একটি অংশে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন রনি চৌধুরী ওরফে গ্রেনেড বাবু গ্রুপ। শহরের অলিগলি ও বস্তিতে গ্রেনেড বাবুর একক আধিপত্য ছিল। তবে সাবেক এক সংসদ সদস্যের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী নুর আজিম গ্রুপের উত্থান ঘটে। এ দুটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছে নগরের প্রায় সাড়ে তিন শ মাদক কারবারি। ফলে গ্রুপ দুটির মধ্যে প্রকাশ্য বিবাদ চলছে।

সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা গত বছর মাদক কারবারি, এর পৃষ্ঠপোষক ও সহায়তাকারীদের তালিকা তৈরি করে। পরে যাচাই-বাছাই করে ৩৪৬ জনের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর তালিকাটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) সে বছরের ১৫ মার্চ ওই তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্দেশনা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। মাঝেমধ্যে নামমাত্র অভিযান চালানো হলেও সিন্ডিকেটের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন।

এদিকে বিবাদের জেরে গত বছরের ৫ আগস্ট সোনাডাঙ্গা এলাকায় গ্রেনেড বাবু ও নুর আজিম গ্রুপের গোলাগুলিতে খুন হন ইমন শেখ নামের এক যুবক। মঙ্গলবার রাতে নিহত বিহারি রানা ছিলেন গ্রেনেড বাবু গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। সম্প্রতি তিনি ওই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে নুর আজিম গ্রুপে যোগ দিয়েছিলেন।

পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বোমা তৈরি করে চরমপন্থীদের কাছে সরবরাহ এবং নাশকতায় জড়িত থাকায় পুলিশ-র‍্যাবের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় উঠে আসে গ্রেনেড বাবুর নাম। এরপর গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। ২০১০ সালের ১০ জুন সন্ধ্যায় ট্যাংক রোডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন কচিকে হত্যা করেন গ্রেনেড বাবু ও তাঁর সহযোগীরা। এ মামলায় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ রনি চৌধুরী ওরফে গ্রেনেড বাবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এর আগে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যান বাবু। বর্তমানে দেশের বাইরে থেকে মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন।

এদিকে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর নগরীর টুটপাড়া এলাকায় পলাশ নামের এক যুবককে হত্যা করেন সন্ত্রাসী নুর আজিম ও তাঁর সহযোগীরা।

এ হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন নুর আজিম। এরপর ২৯ অক্টোবর নুর আজিমের অন্যতম সহযোগী নাহিদ হাসান সরদারকে দুটি পিস্তল, একটি গুলির খোসাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপন করেন নাহিদ। এ ছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের পর নুর আজিমও আত্মগোপনে থেকে মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করছেন।

এদিকে বিহারি রানা খুনের ঘটনায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় গত মঙ্গলবার রাতে হত্যা মামলা হয়েছে। তবে বিহারি রানার বিরুদ্ধে দুটি থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই এবং মাদকের ছয়টি মামলার রেকর্ড থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুমন মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, মাদক পাচার এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে।

মাদকের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে, জানতে চাইলে খুলনা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রতিটি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মাদক প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। অচিরেই মাদকের অবৈধ ব্যবসা উৎখাত করা হবে। নিহত বিহারি রানাও একজন অপরাধী। তিনি সম্প্রতি নিজেই একটি গ্রুপ তৈরির চেষ্টা করছিলেন। তবে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে কয়েকটি দল কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত