Ajker Patrika

তাজমহল

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ০৬
তাজমহল

তখন শামসুর রাহমান ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ১৯৪৫ সালের কথা। আব্বা-আম্মা আজমির যাবেন বলে ঠিক করেছেন।এর আগেও অবশ্য সপরিবারে আজমির শরিফে গিয়েছেন তাঁরা, শামসুর রাহমান ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার জন্য যেতে পারেননি। এবার সুযোগ এল।

মাজারে অসম্ভব ভিড়। সেখানে তিনি দেখলেন বিখ্যাত অভিনেত্রী সরদার আখতারকে। বলিউডের তারকা তিনি। আওরাত, রোটি, আন্দাজ ছবি করেছেন। কিন্তু শামসুর রাহমান কথা বলতে পারলেন না সংকোচের কারণে।

মাজারে সবই ভালো লাগল, শুধু বুক চাপড়াতে চাপড়াতে ‘ইয়া খাজা দে দে’ বলা হচ্ছিল যখন, তখন তা খুব খারাপ লাগল তাঁর। আজমির শরিফের মাজারের ভেতর থেকে ভেসে আসা ফুলের ঘ্রাণ আর সেখানকার কাওয়ালি খুব মনে ধরেছিল শামসুরের। এ রকম কাওয়ালি খুব একটা শোনেননি তিনি।

শামসুর রাহমানের খুব ইচ্ছে হলো আগ্রায় যাবেন তাজমহল দেখতে। কিন্তু আলাভোলা ছেলেটিকে আব্বা একা ছাড়লেন না। আজমিরের খাদেমের ছোট ভাই শাহাবুদ্দিনকে সঙ্গে দিলেন রাহাখরচসহ।

আগ্রায় পৌঁছে দুপুরে রুটি-গোশত খাওয়া হলো। এরপর রওনা হলেন তাজমহলের উদ্দেশে এবং শুরুতেই আশা ভঙ্গ হলো! এটাকেই পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য বলা হয়! রবীন্দ্রনাথ আর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এই তাজমহল নিয়েই কবিতা লিখেছেন! অনেকেই বলে, তাজমহল দেখার সেরা সময় হলো পূর্ণিমা রাত। কিন্তু সে অপেক্ষা আর কে করে!

শামসুর রাহমান ক্লান্ত হয়ে তাজমহলের শ্রেণিবদ্ধ ঝাউগাছের নিচে শুয়ে পড়লেন এবং তারপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলেন। ঘুম ভাঙতেই দেখলেন, তাঁর মাথা ঘাসের ওপরে নেই। শাহাবুদ্দিন সাহেব তাঁর জানু পেতে সেখানেই রেখেছেন শামসুর রাহমানের মাথাটা।

সে সময় তাজমহলের সৌন্দর্য নিয়ে হতাশ হয়েছিলেন বলে পরে লজ্জাও পেয়েছেন। অনেকেই তাঁকে এ নিয়ে খেপাত। আর তখন চিত্তে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলত রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি পঙ্‌ক্তি: হীরা মুক্তো মাণিক্যের ঘটা/যেন শূন্য দিগন্তের ইন্দ্রজাল ইন্দ্রচ্ছটা/যায় যদি লুপ্ত হয়ে যাক/শুধু থাক/একবিন্দু নয়নের জল/কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল/এ তাজমহল। 

সূত্র: শামসুর রাহমানের গদ্যসংগ্রহ, সম্পাদনা গৌতম রায়, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত