Ajker Patrika

চিন্তক

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১২: ২৩
চিন্তক

প্রতিভা বসু আর বুদ্ধদেব বসুর দ্বিতীয় কন্যা রুমি যে বছর জন্মাল, সে বছরই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সাজ সাজ রব উঠেছিল। কলকাতায় ব্রিটিশ সরকার ট্রেঞ্চ খুঁড়তে শুরু করে দিয়েছে। অনেকেই পরিবারবর্গকে দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মের ছুটিতে প্রতিভা বসুরা সাধারণত যান ঢাকায়। এবার গেলেন শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ, সে খবর পেয়েই সেবার শান্তিনিকেতন-যাত্রা।

শান্তিনিকেতনে থাকতে থাকতেই রবীন্দ্রনাথের শরীর আরও খারাপ হলো। সচরাচর তিনি পেছনের বারান্দায় এসে বসতেন। সেই বসাও বন্ধ হয়ে গেল। তাই ফিরে আসার কথা ভাবলেন তাঁরা। বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথকে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেটা জানালেন। ভ্রু কুঁচকে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘আমার তো যদ্দুর ধারণা, গ্রীষ্মের ছুটি ফুরোতে আরও বেশ কিছুদিন দেরি আছে। সে কটা দিন থাকা যেতে পারে।’

যেন বাতাসে ভর করে তাঁরা ফিরে এলেন রতনকুঠিতে। রবীন্দ্রনাথ নিজের মুখে থাকতে বলেছেন, এর চেয়ে বেশি সুখ আর কিসে হতে পারে?

কয়েক দিনের মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের শরীর আরও খারাপ হলো। তখন আর থাকার অর্থ রইল না। প্রতিমা দেবী আর রথীন্দ্রনাথের কাছ থেকে বিদায় নিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রতিভা বসুর খুব ইচ্ছে করছিল, রবীন্দ্রনাথকে প্রণাম করে আসতে। প্রতিমা দেবীকে বললেন সে ইচ্ছার কথা। অনুমতি মিলল। দিনের বেলায়ই ঘর অন্ধকার করে রাখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ কেবলই কথা বলেন বলে এই ব্যবস্থা। ‘রাত হয়েছে, শুয়ে পড়ুন’—এ কথা বলে তাঁকে কথা বলা থেকে নিবৃত্ত করা হয়।

যখন তাঁরা দুজন রবীন্দ্রনাথের ঘরে ঢুকলেন, তখন রবীন্দ্রনাথ বসে ছিলেন আরাম কেদারায়। চোখ ছিল বন্ধ। বুদ্ধদেব আর প্রতিভা সে ঘরে ঢুকতেই তিনি চোখ মেলে চাইলেন। তারপর মৃদুস্বরে বললেন, ‘আমাকে এরা চুপ করিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু চিন্তা তো কেড়ে নিতে পারে না!’

সজলচোখে তাঁরা বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে।

সূত্র: প্রতিভা বসু, জীবনের জলছবি, পৃষ্ঠা ১৫২-১৫৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত